পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
5

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#অন্তিম_পর্ব
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

দিদার মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে তাদের বড় সোফা রুমে।রেহানা বানু ও দামিনী বেগম মুখে ভাতের সব আয়োজন করছে।

“খাবারের আয়োজন আরো বেশি করে করো ছোট মা মামি। মিষ্টির পরিমাণ টাও বেশি রেখো।কারণ আরো একটা সু-খবর শুনলে তোমাদের কারো কারো হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।

হঠাৎ বলা এই কথায় চমকে যায় দামিনী ও রেহানা।এটা তো ইকরা।সাথে জামাই ও আছে।নিজের স্বামীকে দেখেও অবাক হয় রেহানা বানু।তখন এতো করে বলার পর ও যেই মানুষ টা তাদের সাথে আসেনি সেখানে মেয়ে জামাই সহ এখানে হাজির হয়েছে মানে বড় কোনো কারণ আছে।কিন্তু কি সেই কারণ। তাহলে কি সব কিছু ইকরা জেনে গেছে।ভাবতেই পিলে চমকে উঠলো রেহানা বানুর।

দামিনী বেগম রেহানার কানে কানে বললো-
” ভাবি আপনি তো বললেন ভাইজান আসবেন না।কিন্তু এখন তো মেয়ে জামাই নিয়ে হাজির।

“আমিও সেটাই ভাবছি। কি হয়েছে বলুন তো।

” সেটা আমি কি করে বলবো আপনি যেখানে আমিও তো সেখানেই।দেখি জিগ্যেস করে।আপনিই জিগ্যেস করুন না একবার।

“কি ব্যাপার ইরার বাবা তুমি তো বললে আসবে না। আর এখন মেয়ে জামাই নিয়ে হাজির হলে যে!

” এলাম তোমার খবর নিতে।কারণ এখানে বড়সড় পর্দা ফাঁস হবে বুঝলে ইরার মা।

“পর্দা মানে এখানে কি পর্দার দোকান বসেছে নাকি ভাইজান।কি ধরনের মজা করেন না আপনি।

” না ভাবি এটা একদমই মজা না।

“বাবা আমি কথা বলছি।মামি ডক্টর মিশ্মি তোমার কথা বলছিল জানো তো।জানতে চেয়েছে তুমি কেমন আছো।শুনলাম তুমি নাকি তার সাথে অনেক দিন হলো দেখা করো না?

” হ্যাঁ তা তো করিই না।

“ভাবি এটা আপনি কি বলছেন।আপনি আমি কোনো মিশ্মিকে চিনি না।

” আমি তো একদম ভুলে গেছিলাম ভাবি।ইশ মনের ভুলে খুব বড় ভুল করে ফেলেছি।এবার কি বলবো।

“কিছু একটা তো করতেই হবে নয়তো আমরা খুব বড় ফাঁসা ফেসে যাব।

” তুই কার কথা বলছিস বলতো ইকরা।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

“নিজের বান্ধবীকে ভুলে গেলে কি করে চলবে মামি?তোমরা দুজনে মিলে আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিলে।কেন করলে এমন? আমাকে তোমার পছন্দ নয় এটা সরাসরি কেন বলনি?আমি নিজে থেকে সরে যেতাম।এতোগুলো বছর তোমাদের কথা বিশ্বাস করে আমি অন্য কোনো ডক্টর দেখাইনি পর্যন্ত। ভুল করেছি আমি।অনেক বড় ভুল।

” মা তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো বলবে?কি করেছো তোমরা ইকরার সাথে?

“দিদার তুই ঘরে যা।আমরা কথা বলছি।

” কেউ কোথাও যাবে না মামি।যা হবে সবার সামনে।

“ইকরা কি হয়েছে বল আমাকে।

” তার আগে বলো মামা কোথায়।অনকে দিন মামাকে দেখি না।

“আমি এখানেই আছি।সব শুনেছি আমি।তোর বাবা সব বলেছে আমায়।আমি ভাবতে পারছি না দামিনী তুমি এতো নিচে নামতে পারো।

” বাবা তুমিও জানো।আসলে এখানে কি হচ্ছে তোমরা বলবে আমায়?

তারপর ইকরা একে একে সবকিছু বিস্তারিত বললো দিদারকে।যা শুনে দিদার একেবারে ভেঙ্গে পরেছে।

“মা এসব কি সত্যি!

” আমি আসলে। দিদার বলছি বাবা আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো।তুই ঘরে যা।

“কেন এসব করলে মা।তুমি নিজের ছেলের সাথে এটা কেন করলে।তোমার জন্য আমি ইকরাকে ঠকিয়েছি মা।শুধু তোমার জন্য।

“আপা আমরা মনে হয় ধরা পরে গেছি।আর কোনো উপায় নেই।ইরার বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে।

” ইকরা যা কিছু করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দে মা।আমি অনেক বড় ভুল করেছি।কিন্তু তুই তো অসুখি নেই তাই না।এই যে এতো ভালো স্বামী পেয়েছিস।এতো ভালো সংসার। তাহলে কেন পুরনো কথা টানসিছ।ছাড় না মা এসব।আয় দুপুরের খাবার টা খেয়ে নিবি।এসেই যখন গেছিস তাহলে খেয়েই যা।জামাই তুমিও এসো।

এই বলে দামী বেগম ইকরাকে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু ইকরা তার যায়গা থেকে এক পা ও নড়ে না।

“কি হলো চল না।

“তুমি জানো মামি সেদিনের পর আমি ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি?ঠিক করে খেতে পারিনি।তোমার কথা বাদই দিলাম।এই যে আমার মা।জন্ম দেয় নি ঠিকি কিন্তু সম্পর্ক টা তো মা মেয়েরই।আমি ওনাকে মা ছাড়া কখনো অন্য চোখে দেখিনি।অথচ উনি আমাকে জীবিত থাকা অবস্থায় মরন যন্ত্রণা দিয়ে দিয়েছে।এই সব কিছু ভুলে তুমি আমাকে খাবার খেতে বলছো মামি। কি করে ভুলবো আমি এসব?এতো সহজ ভুলে যাওয়া?
একটা কথা তো ঠিকই বলেছো আমি সত্যিই অনেক সুখে আছি।আর একটা ভালো খবর কি জানো মামি আমি মা হতে চলেছি।

” কিহ!

“হ্যাঁ। এই সত্যি টা মিথ্যে বানানোর জন্যই এতো কিছু করলে কিন্তু দেখো সেই মিথ্যে আর টিকলো না।তোমরা আমার উপকারই করেছো তুমি যদি এই কাজটা না করতে মামি তাহলে তোমার ছেলে যে মুখোশ টা পরে থাকতো সেই মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষ টাকে আমি চিনতেই পারতাম না

” এসব তুমি কি বলছো ইকরা।সবটাই তো জেনেছো।এখানে আমি ইচ্ছাকৃত কিছুই করিনি।আমি পরিস্থিতির।

আর কিছু বলতে দিলো না ইকরা।তার আগেই থামিয়ে দিল দিদারকে।

” তুমি এসব বলে ভালোবাসার মানুষগুলোর প্রতি সম্মান টা উঠিয়ে দিও না দিদার ভাই।তোমার মুখে এসব মানায় না।যারা ভালোবাসে তারা সব পরিস্থিতিতেই তার ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকে।থাকার চেষ্টা করে।তুমি চেষ্টা তো দূরের কথা আমার সাথে যোগাযোগই ছিন্ন করেছিলে।আমি কিছুই ভুলিনি।
বিশ্বাস করো তোমাদের মা ছেলের মধ্যে কোনো রকম মনোমালিন্য আমি চাই নি।এখানে আসার ও কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না।এখানে আসার একটাই কারণ তোমার মেয়ে।আল্লাহ না করুক আমার মতো পরিস্থিতির শিকার যেন তোমার মেয়ে না হয় সেই জন্যই এখানে আসা।আমি তো নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি কিন্তু তোমার মেয়ে সেটা নাও করতে পারে।আর একটা কথা কি জানো তো প্রকৃতি কিন্তু প্রতিশোধ নেয়।ভালো থেকো। চলুন আরহান।বাবা তুমিও কি যাবে?

“যাব।রেহানা ভালো চাও তো বাড়ি চলে যাবে নয়তো ফল ভালো হবে না।

তারপর ইকরা আরহান আবারও ঢাকার উদ্দেশ্যে বাবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো।সেদিনের পর ইকরা আর দিদারের মুখোমুখি হয়নি।রেহানা বানুকেও আর মা বলে ডাকে নি।স্বামীর সাথেও সম্পর্ক ভালোনেই রেহানার।ইমন নিজের মায়ের এমন রুপ দেখে কষ্টে সেই যে বাড়ি ছেড়েছে আর ফেরেনি।ইরাও এখন মায়ের সাথে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।আর দিদার নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাড়িতে উঠেছে।ও চায় না তার জীবনের মতো তার সন্তানের জীবনেও এমন কষ্ট হোক।

★বর্তমান★

” ভাই শোন আজ কিন্তু কোনো রকম ঝামেলা করবি না কোথাও।

“ঠিক আছে করবো না।কিন্তু তোমাকে কেউ কিছু বললে করবো।

” আবার! আচ্ছা তুই এতো গুন্ডা হলি কবে থেকে বলতো।

“আমি মোটেও গুন্ডা নই আপা।কিন্তু তোমার জন্য গুন্ডা হতে ভালোই লাগে।

” ঠিক আছে চল এবার আমার ক্লাস আছে।

কলেজে এসেও যেন শান্তি পেল না মানহা।তার কারন জুয়েল।জুয়েল মানহার সিনিয়র। মানহাকে অসম্ভব ভালোবাসে।তবুও মানহা তাকে বার বার রিজেক্ট করে কারণ বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবে না সে।যদিও এই কথা কখনো বলেনি জুয়েলকে।

“আর কতো অপেক্ষা করলে তুমি আমাকে ভালোবাসবে মানহা?

” আপনি প্রতিবার যে উত্তর টা পান এখনও তাই দিবো।কখনোই বাসবো না।প্লিজ এভাবে বিরক্ত করবেন না।এতে বাকিরা খারাপ কিছু ভাববে।

“কিন্তু আমাকে না ভালোবাসার একটা কারণ তো বলো।প্রমিজ যদি সেটা যুক্তির হয় তাহলে আর কখনো তোমার সামনে আসবো না।

” কোনো কারণ নেই জুয়েল ভাই।

“অবশ্যই আছে।এমনি এমনি তো এটা হতে পারে না তাই না।হতে পারে আমাকে তোমার পছন্দ নয়।এই পছন্দ না হওয়ারও তো একটা কারণ আছে। সেটাই বলো।

” দেখুন আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়।আমি বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো।অন্য কোনো কারণ নেই।চলি।

মানহার আজ বিকালে টিউশন ছিলো।সামনে পরিক্ষা তাই পড়ায় ফাকি দেয়া চলবে না।বাড়িতে ফিরেই একটু অবাক হলো মানহা।সোফা রুমে বিশাল আয়োজন মানে মানুষের ভিড়।ইকরা মানহাকে দেখেই এগিয়ে এলো।

“এসে গেছিস!এতো দেরি হলো যে?

” টিউশন ছিলো মা।এতো মানুষ কেন বলো তো।

“সেটা পরে হবে।আগে চল ফ্রেশ হয়ে নিবি।সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

” আমার জন্য!কিন্ত কেন মা?

“সব পরে বলবো মা।অনেক দেরি হয়ে গেছে চল না।

মানহাকে ইকরা একটা নীল রঙের শাড়ি পরিয়েছে।হালকা সাজ সাথে সিম্পল কিছু জুয়েলারি। এতোক্ষনে মানহা বুঝে গেছে নিচে এতো মানুষ থাকার কারণ।

” বাহ: আমার মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।

“এবার আমায় বলবে কি হয়েছে।নিচে ওনারা কারা মা?

” আসলে তোর বাবা একটা বিয়ের সম্মন্ধ এনেছে তোর জন্য।অফিসের কলিগের ছেলে।অনেকদিন ধরেই আসতে চাইছিলো।ছেলে রাজি হচ্ছিলো না।আজ নাকি হুট করেই রাজি হয়েছে তাই তোকে দেখাতে নিয়ে এসেছে।যদিও তোর ছবি দেখেছে সবাই।
তোর কি কোনো আপত্তি আছে তাহলে আমি এখনই তোর বাবাকে বলছি।তাছাড়া দেখলেই তো বিয়ে হচ্ছে না।ছেলে কেও দেখেছি।মাহিনকে নিয়ে বাইরে গেছে আসলে তুইও দেখবি।ছেলে খুবই ভালো। তবুও যদি তোর কাউকে পছন্দ থাকে আমাকে বল। আমি তোর বাবাকে ম্যানেজ করবো।

মানহার এই মুহূর্তে শুধু জুয়েলের মুখটাই মনে পড়লো কিন্তু কিছুই বললো না।আসলে মানহা ইকরার অতীত সম্পর্কে শুনেছে।শুনেছে দিদারের কথা।সেদিনই মানহা ঠিক করেছিলো বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে। অতীতে মা যেভাবে কষ্ট পেয়েছে তা সে পাবে না।বাবা মাকে কষ্ট দিবে না।

“মানহা!

” হ্যাঁ মা।

“কি হলো কাউকে পছন্দ করিস?

” না তো।তোমাদের যাকে পছন্দ হয় তাকেই বিয়ে করবো।কিন্তু সামনে আমার পরিক্ষা মা।

“সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।ওনাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলাই আছে।চল এবার নিচে।

ছেলের বাড়ি থেকে অনেকেই এসেছে।ওরা একেবারে মেয়েকে আংটি পরিয়ে তবেই যাবে।আংটি পড়ানোর সময় মানহা একবারো ছেলের দিকে তাকায়নি।যাওয়ার আগে অন্তরা বেগম বললেন ছেলে মেয়েকে একটু কথা বলার সুযোগ দিতে।তাই এখন মানহারা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।মহিন আপাকে ছাদে রেখে চলে গেছে।কারণ ইকরা বলে দিয়েছে আপাকে যেন এখন বিরক্ত না করে।মানহা ছাদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।অন্যদিকে মুখ করে তার পাশে যে একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে তাতে তার কোনো আগ্রহই নেই।

” আমাদের এখানে কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছে এভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নয়।

কন্ঠটা শুনে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো মানহার।মুহুর্তেই মনে হলো এটা জুয়েলের কন্ঠ।পরমুহূর্তে মনে হলো জুয়েল আসবে কোথা থেকে।এ তো অন্য একটা মানুষ যার সাথে একটু আগেই আংটিবদল হলো তার।

“তুমি যাকে ভাবছো আমি সেই।আগে বললেই হতো যে বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে।তাহলে তো আমাকে এতো কষ্ট করে তোমার পিছু ঘুরতে হতো না।কারণ তোমার বাবা মা আমাকে অনেক আগেই পছন্দ করে রেখেছে।

এবার মানহার বিশ্বাস হলো এটা সত্যি সত্যিই জুয়েল।পিছে ঘুরে জুয়েলকে দেখে যেন চাঁদ হাতে পেলো।দ্রুত এগিয়ে গেলো জুয়েলের সামনে।এক মুহুর্ত দেড়ি না করে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।

” কি হলো এভাবেই জরিয়ে ধরে থাকবে।সময় অনেক পাবে মিসেস জুয়েল।

বলেই মুচকি হাসলো জুয়েল।এবার মানহা একটু লজ্জা পেলো ছেড়ে দিলো জুয়েলকে।

“আগে কেন বলেননি। বাবা মা আপনার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে?

” আমিই তো জানতাম না।বাবা মা বলছিলো অনেক দিন ধরেই তোমাকে দেখতে আসার জন্য।কিন্তু অন্য মেয়ে ভেবে আমি রাজিই হইনি।আজ যখন তুমি আমাকে আবারও প্রত্যাখ্যান করলে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তাই রাগের মাথায় বলেছি তারা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো।তখন মা তোমার ছবি দেখালো।পরে সবটাই মা-কে খুলে বললাম।আর এখন তুমি শেষ পর্যন্ত আমারই হলে।যদিও এখনো পুরোপুরি হওনি।বাই দ্যা ওয়ে আমাকে মিস করেছো যখন শুনলে তোমার আজ পাকা দেখা?আমাকে ধরে কাঁদলে কেন।ভালোবেসে ফেলেছো?

“নাহ।আমি কেন আপনাকে ভালোবাসবো।

” ঠিক আছে তাহলে আমি নিচে গিয়ে বলি বিয়ে হবে না।যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে বিয়ে কেন করবো।

“আমি কি সেটা বলেছি।

” বলোনি?

“সরি।

” ঠিক আছে। চলো নিচে যাই।

আজ মানহার বিয়ে।সকাল থেকে বিয়ের সব কিছুই ইকরা নিজের হাতে করছে।মানহা ওর কাছে খুব আদরের।প্রত্যেকটা বাবা মায়ের কাছেই সন্তান খুব আদরের হয়।কিন্তু মানহা একটু বেশিই আদরের।এই সেই ছোট্ট মানহা যার হাত ধরে ইকরা একদিন এই বাড়িতে এসেছিলো।যার জন্য ইকরা এতো ভালোবাসা এতো সম্মান পেয়েছে।ইকরা এখনো মনে হয় এই তো সেদিনই যেন মানহা তাকে আধো আধো বুলিতে মা মা করে ডেকেছিলো।আর আজ সেই ছোট্ট মানহার বিয়ে।সময় কত দ্রুত চলে যায়।

“মন খারাপ মিসেস আরহান?

” তোমার ও তো মন খারাপ। কি ভেবেছো আমি বুঝি না।

“তা খারাপ।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার একটু বেশিই খারাপ।কারণ মানহা আমার চেয়ে বেশি তোমার কাছেই থেকেছে।

” আচ্ছা কেমন হতো যদি মানহাকে সারাজীবন আমাদের কাছেই রেখে দেয়া যেত।

“খুব খারাপ হতো।

” খারাপ হতো মানে!

“হ্যাঁ। তুমি আনার মেয়ে জামাইকে বউ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছো তা খারাপ হতো না।

” তুমি না সত্যি। বুড়ো হয়ে গেলে তবুও রসিকতা গেলো না।আচ্ছা মাহি কোথায় ওকে তো দেখছি না।

“স্টেজে আছে।ওই তো সবটা সামলাচ্ছে।

” হয়েছে তোমার ছেলে যে কি পারে সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে।

মানহার বিয়ে শেষে এখন বিদায়ের পালা।বিদায় সব সময় বেদনার হয়।মেয়েদের এই যাত্রা সবচেয়ে কষ্টদায়ক। মানহা বাবাকে জরিয়ে ধরে খুব কান্না করছে।ইকরা সামনে আসছে না।কারন ও এটা সহ্য করতে পারবে না।শেষে মানহার অনুরোধে সামনে এলো।মাহিন সবার আড়ালে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আপার কান্না দেখছে।অন্য সময় হলে হয়তো যার জন্য তার আপা কান্না করছে তার হাত পা ভেঙ্গে দিত।কিন্তু এখন তা পারবে না।কারণ যাকে মারবে সে আপার স্বামী। আর জুয়েল মাহিনকে অনেক আদর করে।

“আমার প্রিন্সেসকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি বাবা ওকে কখনো কষ্ট দিও না।

” ভরসা রাখুন আব্বু আমি বেঁচে থাকতে মানহাকে কোনো দু:খ ছুতে পারবে না।আপনার মতো না হলেও আপনার মতো ভালো রাখার চেষ্টা করবো কথা দিলাম।

“আমার ছোট গুন্ডা টা কোথায় বাবা।একবার ও আমার সামনে আসেনি।ওকে না দেখলে আমি গিয়ে থাকতে পারবো না।

” এইতো তোর গুন্ডা পেছনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো।

“কিরে আমার সাথে কথা বলবি না।এদিকে আয়।

” তুমি যেওনা আপা।আমাকে মায়ের বকুনি থেকে কে বাঁচাবে বলোতো?আবার ব্যাথা পেলে আমাকে ব্যান্ডেজ করে দিবে কে আপা?তুমি আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছো কেন?

“মাহিন এটা নিয়ম বাবা।তুমিও একদিন এমন করে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আসবে।তখন কি তুমি তোমার বউকে রেখে আসবে?

” মোটেই না।মা আমার বিয়ে হবে কবে?

এটা শুনে উপস্থিত সকলেই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।মাহিন এবার খুব লজ্জা পেলো।আসলেই সে ভুলভাল বকে আপা ঠিকই বলে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে