#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৮
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
“সত্যিই আমার থেকে মুক্তি চাইছেন?
” এভাবে জরিয়ে ধরলে কে মুক্তি চাইবে!এতো শক্ত করে কেউ জরিয়ে ধরে?মরে যাব তো।
“ছেড়ে দিলে তো নিচের ওই উজবুক কে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চলে যাবেন ।কত বড় সাহস আপনি ওই লোকটার জন্য সেজেছেন বিয়ে করবেন বলে!
” আপনি কি বোকা হ্যাঁ। আমি যে বিয়ে করবো আপনি ডিভোর্স পেপারে সই করেছেন?
“তাহলে ওই ছেলে কে। মা যে বললো!
” ও তো সোলেমান চাচার ছেলে।ওনার একটাই ছেলে। আমার এক বছরের ছোট। দেশের বাইরে ছিলো এইতো একটু আগেই এলো।চাচার যেহেতু ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই আর উনিও বাদল ছোট থাকতেই ওকে নিয়ে এইবাড়িতে এসেছিলো সেই থেকে তো ওরা এখানেই থাকে।তাই তো বিদেশ থেকে সরাসরি এখানেই এসেছে।
“তার মানে মা আপনার বাবা আমাকে বোকা বানালো।আর আপনিও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন?
” একটূ তো বানালাম।তবে ভালোই লেগেছে।
“ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম।আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।ডিভোর্স পেপারে আপনার সাইন দেখে।
” আপনি তো পেপার টা পড়েননি।ওটা তো ডিভোর্স পেপার নয়।
“ডিভোর্স পেপার না।তাহলে কি?
” ওটাতো ইমনের একটা নমিনির কাগজ ওর নতুন অফিসের।যেখানে নমিনি হিসেবে আমার সাইন লেগেছে।
“এতো বড় ধোকা দিলেন সবাই মিলে।
” আপনিও তো বোকা হলেন।
কিন্তু আমার একটা আফসোস রয়ে গেলো।
“কি?
” এই যে কত ভেবেছিলাম এবার হয়তো একটা শ্যাম পুরুষ স্বামী সিহেবে পাবো সেটা তো হলো না।
“প্রয়োজনে আমি রোদে পুরে কালো হবো তবুও অন্য কারো কথা মাথায়ও আনবেন না।আপনি আমার বউ।আমার বউ পরিচয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে বুঝেছেন।
” হ্যাঁ বুঝেছি।
“আপনি জানেন না।ওই ছেলের সাথে আপনার কথা বলা দেখে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো।
★ফ্ল্যাশব্যাক ★
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু ঘুমিয়েছিলো আরহান।নিচে স্বল্প চেচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়।রুমে ইকরাকে না পেয়ে আরহান ফ্রেশ না হয়েই নিচের দিকে নামে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই দেখতে পায় নিজের মা কে।ইকরা পাশে বসে।হালকা সাজ মুখে।পাশের সোফাতেই বাদল নামের ছেলেটি বসে কথা বলছিল অন্তরা বেগম আর ইকরার বাবার সাথে।
” কি হচ্ছে এখানে?
“আরহান এসে গেছিস।ভালোই হয়েছে।আয় তো এদিকে।দেখতো ওদের দুজনকে কেমন লাগছে?
” এসবের মানে কি মা?
“আমি তো বলেইছিলাম।বেয়াই আপনি কিছু বলেন নি ওকে?
” বলেছি কিন্তু।
“যাই হোক। আরহান শোন এই নে পেপার সাইন টা কর।ইকরা সাইন করে দিয়েছে।
” এটা কিসের পেপার?
“ডিভোর্স পেপার আবার কিসের।
” মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?মানে সত্যি সত্যিই ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে হবে। আর ইকরা আপনি কোন সাহসে এটাতে সাইন করলেন।কাল সব টা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও।
“আরহান এখানে ইকরার সাথে কোনো কথা হবে না।কথা সব আমার সাথে বল।ও কিছুই নলবে না।এটা আমি ঠিক করেছি।একটা মেয়ে সারাজীবন কেন নষ্ট করবে এটাও তো তোকে ভাবতে হবে তাই না।তাই বলছি ও যখন সাইন করেই দিয়েছে তখন তুইও করে দে।একটু পরেই কাজি আর ছেলের বাড়ির সবাই চলে আসবে। আমরা শুভ কাজটাও সেরে ফেলবো।
“ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো তাই তো। কই দেখি।
এই বলেই পেপারটা ছিড়ে ফেললো আরহান।
” এটা কি করলি তুই।তুই কি ভেবেছিস এটা ছিড়েই সব সমাধান হয়ে যাবে।আমি জানতাম তুই এমন কাজ করবি তাই জন্য আরো একটা কপি আছে আমার কাছে।
“তুমি বললেই তো ডিভোর্স হবে না মা।উনি আমার বিয়ে করা বউ।আমি না চাইলে এই ডিভোর্স কখনোই হবে না।ইকরা চলুন এখান থেকে।
” কিন্তু কোথায় যাব।তাছাড়া মা।
“এই মা মা করা বন্ধ করুন তো।কি মা হ্যাঁ। মা বললেই ডিভোর্স হবে নাকি। আপনি কেন সাইন করলেন এর হিসাব আমি আপনার থেকে বুঝে নিব।চলুন এখান থেকে।
” আরহান এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে বা।ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই।পালিয়ে কোথায় যাবি?
কে শোনে কার কথা।পেছনের কোনো কথাই যেন আরহানের কানে গেলো না।ইকরাকে প্রায় জোর করেই বসার ঘর থেকে নিয়ে এসেছে ইকরার ঘরে।
“এমন পাগলামির কোনো মানে নেই। তাছাড়া ডিভোর্স হলেই তো আপনি ভালো থাকবেন তাই না।আমাকে আর আপনার সহ্য করতে হবে না।নিচে সব বড়োরা আছেন ওনারা কি ভাবছে বলুন তো।
আরহান আর একমুহূর্তও দেরি করলো না।ইকরাকে নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো।এতো শক্ত করে যেন পালিয়ে যেতে না পারে।
” আপনি সত্যি ডিভোর্স চাইছেন। সত্যিই আমার থেকে মুক্তি চাইছেন?
তারপর আপনারা সবটাই জানেন
“এটা কি হলো বেয়াইন ওরা আবার ঝগড়া করছে না তো।
” আরে না।আপনি ঠিক করে লুডুর গুটি টা চালুন না।ওরা একটু পর এমনিতেই নেমে আসবে।
“বাবা আন্টি প্লিজ দানে মনোযোগ দিন।আপনি কিন্তু আমার টিমের।এই ইরা তুই না বাবার টিমের কিছু বলছিস না কেন?
” বাবা ঠিক করে দান চালো।তোমার জন্য যদি ভাইয়ার কাছে হেরে যাই ও আমাকে পড়াতে পড়াতে মেরেই ফেলবে।
ইরার কথা শুনে সোফা রুমে আরো একচোট হাসির রোল পরলো যা দেখে ইরা মুখটা গম্ভীর করে ফেললো।
,
,
নিচে সত্যি সত্যিই বিয়ের আয়োজন চলছে।হ্যাঁ ইকরা আরহানের বিয়ে।আগের বার তেমন আয়োজন না হলেও এবার সব হচ্ছে।মানে আরহানদের বাড়িতে সব আয়োজনের কাজ প্রায় শেষ। এই দুইদিন অন্তরা বেগম এগুলোই করছিলেন বাড়িতে থেকে।অন্তরা বেগম মানহাকে নিয়ে আগেই চলে গেছেন।ওদিকের সব কিছুও দেখতে হবে।এই ফাকে আরহান ইকরা একটু নিজেদের মত করে সময় ও পাবে।বিয়ে পড়ানো শেষ। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইকরাকে নিয়ে চলেও এসেছে আরহান।
সন্ধ্যার শেষ ভাগ।গাড়িতে ঠিক মতো বসে থাকতে পারছে না ইকরা।তার কারণ পরনের শাড়ি।একেতো গড়ম তার মধ্যে এই বেনারসি। খুব বিরক্তিকর লাগছে গাড়িতে এসির হাওয়ায় আরো বেশি খারাপ লাগছে কিন্তু আরহান কে কিছুই বলতে পারছে না।আরহান বিষয় টা লক্ষ্য করে।গাড়ির এসি বন্ধ করে গ্লাস নামিয়ে দেয়।এক ঝলকা স্নিগ্ধ বাতাস এসে ইকরার চোখে মুখে বারি খায়।শরীর মন শীতল করার জন্য এই প্রাকৃতিক বাতাসই যথেষ্ট
“এবার ভালো লাগছে?
” হ্যাঁ। শান্তি লাগছে।
“এক কাজ করলে কেমন হয়?
” কি কাজ!
“আজ আমরা পুরো পৃথিবী ঘুরবো। না মানে যতটা পারা যায়।আপনিও তো এমনটাই চাইতেন তাই না?
” আমি তো আপনাকে এটা কখনো বলিনি তাহলে জানলেন কি করে?
“আমার একটা গোয়েন্দা আছে। সে সব সময় সব খবর আমাকে দেয় বুঝলেন।এবার বলুন আপনি রাজি কি না।
” অবশ্যই রাজি।
কিন্তু ম্যাডাম রাত কতো হলো খেয়াল আছে।খেতে হবে তো কিছু।সামনে গাড়ি পার্ক করার একটা যায়গা আছে।সেখান থেকে খেয়ে তারপর আবার যাত্রা শুরু করবো।
“কিন্তু এই অবস্থায় গিয়ে খাবো কি করে?
” চিন্তা নেই।আপনি গাড়িতেই থাকবেন আমি খাবার নিয়ে আসবো।
ইকরা গাড়ির বাইরে বোতল থেকে পানি নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিচ্ছে।আজ আকাশটা তারার মেলায় অন্য রকম সেজেছে।চাঁদটাও বেশ বড়।সেই চাঁদের আলোয় পাশের রমনীকে এতোটা মায়াবী লাগছে। আরহান দেখলো।বার বার দেখলো।এবার আফসোস হলো আগে কেন এতো সুন্দর সময় কাটায়নি ইকরার সাথে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারও গাড়ি চলতে শুরু করলো।ইকরা অন্তরা বেগমের সাথে কথা বলে ফোনট আরহানের কাছে দিয়ে দেয়।ইকরা আবারও বাইরের প্রকৃতি দেখতে মনোযোগ দিলে কানে একটা গান বাজলো।
‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো।’
“শেষ না হলেই বোধয় ভালো হতো।
” আমার না বিষয় টা কেমন ফিল্মি ফিল্মি লাগছে।
“কোন বিষয় টা?
” এই যে এক বউকে দুইবার বিয়ে করা।
“কেন আপনার কি আরেক জনকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো?
” করলে মন্দ হতো না।৪ টা বিয়ে করাই যায় কি বলেন।
“হ্যাঁ সেই।করেই দেখুন না।তারপর আমিও বোঝাবো কত ধানে কত চাল বুঝলেন।
চলবে