#পাওয়া_না_পাওয়া_সুখ
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০২
নাফিজের উত্তর শুনে জয়নুল আবেদীন বেজায় সন্তুষ্ট, কিন্তু মুখে প্রকাশ করলেননা। প্রসন্নচিত্তে বাড়ি পথে রওনা হলেন দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। যাওয়ার পূর্বে নীহা’র শাশুড়ীকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেননা। বলে দিলেন,
-“ভেবে আপনাদের জানাবো। তাছাড়া ওর মা, আমার বড় ভাই তাদের ও মতামতের প্রয়োজন আছে।”
নীহা’র শাশুড়ী আর কথা বাড়ালেন না। অপেক্ষায় রইলেন পরবর্তী উত্তর আসার।
নাফিজ এলাকার একটি সিএনজি ঠিক করে দিলো। মুহুর্তেই টান লাগালো জয়নুল আবেদীনের বাড়ি। প্রেমা চোখ তুলে একবার ও নাফিজের দিকে তাকালোনা। এতে নাফিজ এর ও বিশেষ খেয়াল নেই। নীহা মুখ লুকানোর চেষ্টায় অন্যদিকে ফিরে আছে। আড়ষ্টতা, লজ্জায় মিইয়ে আছে মেয়েটা। এ কয়েকমাসে একটিবারের জন্যেও নাফিজের সামনে পড়েনি নীহা। বিয়ের ব্যাপারটা তো মাথার আশেপাশেও আনতে পারেনি, থাকতো মনে আনবে। একজনের শোকেই দিনাতিপাত করেছে।
এতটা সহজে নাফিজ মায়ের কথায় সম্মতি জানালো? কেনো? হয়তো করুণা হচ্ছে তার জন্য।
সিএনজি আর রাস্তার পাশে বেড়া ওঠা গাছগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কে কাকে পেছনে ফেলতে পারবে। এদিকে কারো মনে তুমুল ঝড়ের তান্ডব বইছে। ব্যথাগুলো বুকে নয়,মনে হচ্ছে গলায় এসে আটকে আছে। না পারছে ভেতর থেকে হজম করতে আর না পারছে মুখ দিয়ে উগলে দিতে। মনের কোটরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা অনুভূতি গুলো চাপা পড়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে। চোখজোড়া ভীষণ জ্বালা করছে। এক্ষুনি ভিজে ওঠা উচিত। কিন্তু এই উচিত অনুচিতের দ্ব’ন্দ্বে অনুচিত জয়ী হলো। বাবা, আপু যখন কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করবে তখন কি জবাব দেবে? বেহা’য়া উত্তরে নিজের আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিতে পারবেনা। দাঁত চেপে কান্না সংবরণ করলো। আর তো কিছু সময় তখন নাহয় নোনাজলের বন্যা বইয়ে দিবে।
[৩]
বাড়িতে পা রাখতেই একদফা কান্নার সুর উঠলো। আয়েশা যুবতী মেয়ের বিধবা রূপে বিধ্বস্ত হলেন। মা মেয়ের কান্নায় শামিল হলো চাচি, জেঠিরা। বাড়ির মেয়ে ফিরে আসার খবর শুনে এ ঘর ও ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসলেন। আয়েশাকে বুঝালেন মেয়েটার মন এমনিতেই ছোট হয়ে আছে। নিজে মেয়ের সামনে কেঁদে কে’টে মেয়েটাকে আরও দুর্বল করে দিলে কিভাবে চলবে? নীহার জেঠি এসে নীহাকে বসিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিলেন। মা বোনের কান্না দেখে প্রেমা যেনো সুযোগ পেলো, স্বস্তি পেলো। ভেতরকার কষ্ট গুলো চোখের পানিতে ধুয়েমুছে ফেলার সুযোগ। শব্দ করেই কাঁদলো প্রেমা। ছোট চাচি এসে তাকেও বসিয়ে দিলেন ফ্যানের নিচে। সবার কান্নাকাটি ঘন্টাখানেকের মধ্যে থেমে গেলেও থামলোনা প্রেমার কান্না। সবার মাঝখান থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। নিরব অশ্রু তীরের মতো আ’ঘা’ত করছে।
আচ্ছা পুরুষ মানুষ যে বাঁধ ভাঙা কান্না কাঁদতে পারেনা তাহলে তাদের কষ্ট গুলো কিভাবে পিষ্ট করে? নাকি যন্ত্রণা গুলো নিংড়ে ফেলতে না পারার কষ্টে আরেকটু ধুঁকে ধুঁকে মরে?
জয়নুল আবেদীন বড়ভাই ছোটভাইকে এঘরে রাতের খাবার খেতে বলে দিলেন। কিছু আলাপ আলোচনার ব্যাপার আছে। সেই অনুযায়ী খাওয়ার পর্ব এগিয়ে আসতেই খাবার টেবিলে চেয়ার পেতে তিন ভাইকে বসে থাকতে দেখা গেলো। আয়েশা সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। নীহা, প্রেমা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। খরগোশের মতো কান কিন্তু খাড়া রেখেছে আলোচনায় কি চলে?
জয়নুল আবেদীন বড়ভাইকে নীহা’র শাশুড়ীর সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। নীহা’র জেঠা বেশ ভেবেচিন্তে উত্তর দিলেন,
-“ভালোই তো প্রস্তাব। একবার সবকিছু বিবেচনা করে দেখ। আমাদের মেয়েটাকে তাদের বাড়িতে দিলাম। এখন তাদের ছেলে কি কারণে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে দুনিয়া ছাড়লো সে ব্যাপারে আমরা কেউই অজ্ঞাত নই। হয়তো নিজেদের কোনো ভুলের অনুশোচনা থেকেই তারা বিয়ের প্রস্তাব রেখেছেন। তাছাড়া নীহাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে গেলেও তারা নাক সিটকাবে। ধরলাম বিনা বাঁধায় বিয়েটা ও দিয়ে দিলাম। কিন্তু সেখানে যে সুখী হবে, তারা যে মেয়েটাকে কথা শোনাবেনা এটার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমার মনে হয় ভেবে দেখা উচিত।”
নীহার ছোট চাচা নীহাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন,
-“যে কয়টা দিন শশুর বাড়িতে ছিলি, তোর প্রতি তাদের ব্যবহার কেমন ছিলো? চারমাস কিন্তু কম সময় নয়। তোর সাথে কোনো ধরনের খা’রা’প ব্যবহার করেছে?
নীহা দুপাশে মাথা নেড়ে জানালো,
-“আমার সাথে কোনো ধরনের খা’রা’প ব্যবহার করেনি। আর না তাদের ব্যবহারে খা’রা’প মানুষ মনে হয়েছে।”
নীহার উত্তর শুনে তিন ভাই একে অপরের চোখে তাকালো। জয়নুল আবেদীন আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তোমার কি মতামত?”
আয়েশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“মেয়েটার একটু সুখ দেখলেই আমি খুশি।”
সবার কথাবার্তায় প্রেমার মনে হলো বিয়েটা এগিয়ে যাবে। দু’পরিবার থেকেই গ্রিন সিগন্যাল। আধখাওয়া ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে উঠে পড়লো প্রেমা। জয়নুল আবেদীন জিজ্ঞেস করলেন,
-“কি হয়েছে আম্মু? পুরো খাবারটা খেলেনা যে?”
-“খাওয়া শেষ। আর ইচ্ছে করছেনা।” বলে প্রেমা স্থান ত্যাগ করলো।
গলা দিয়ে খাবার কিভাবে নামবে? এমুহূর্তে এক বি’চ্ছিরি অনুভূতি হচ্ছে। যার স্বাদ শুধুই তিক্ততায় ঘেরা। এখন থেকেই বুঝি যন্ত্রণার দিনগুলো শুরু? তীব্র হাহাকার জর্জরিত করছে। চারদিক গুমোট অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে মনে ক্ষীণ আলোর প্রয়োজন। নইলে যে বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে? মুখে ওড়না গুঁজে চিৎকার করে বেরিয়ে আসা কান্নাগুলো থামানোর বৃথা চেষ্টায় মাঠে নেমেছে মেয়েটা। রগচটা স্বভাবটা যেনো প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছে। এই মুহূর্তে নীহার প্রতি ভীষণ রাগ হলো। যতটা রাগ হলে কাউকে খু’ন করার ইচ্ছে মনে জাগে। চাপা ক্ষো’ভ ধাবিত হলো বোনের উপর।
ঘর বন্ধি থেকে সম্বিত ফিরলো প্রেমার। নিজের প্রতি ধি’ক্কার ছাড়া কিছুই আসছেনা। স্বার্থপরের মতো নিজের কথাটাই ভেবে চলেছে। নীহার তো কোনো দোষ নেই। প্রিয়জন তো সে ও হারিয়েছে। তার উচিত ছিলো একটিবার জিজ্ঞেস করার,’ আপু তুই ভালো আছিস?’
খাবার টেবিলে যখন বিয়ের বিষয়ে এগোনো নিয়ে কথা হচ্ছিলো, নীহার মতামত জানতে চাইলেন জয়নুল আবেদীন।
বিষন্ন মনটা চেপে রেখে মিইয়ে যাওয়া স্বরে অনুরোধ করলো নীহা,
-“বাবা, আমি আপাতত কিছুদিন সময় চাই। নিজের দিকে তাকানোর সময়টা আমাকে দাও। আমি তোমাদের নিরাশ করবোনা।”
কথা সব সেখানেই থেমে গেলো।
নীহা নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছে। এদিকে প্রেমার বেপরোয়া ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বভাবে উগ্রতা, ভালো কথায়ও তেঁতে ওঠা। সবকিছুই সুক্ষ্ম চোখে খেয়াল করলেন জয়নুল আবেদীন।
দাদী খেঁ’কিয়ে উঠে বললেন,
-“বলেছিলাম নাম প্রেমা রাখিসনা। নিশ্চয়ই নামের সাথে মিল রেখে প্রেম করে এখন দেবদাসী হয়ে ঘুরছে।”
কছু বললেননা জয়নুল আবেদীন। আদরের তিন মেয়ে উনার। বড় মেয়ে খুব একটা আসেনা। স্বামী সংসার নিয়েই ব্যস্ত। জয়নুল আবেদীন ও বেশি চাপ প্রয়োগ করেননা। সন্তানরা সুখী থাকলেই বাবা মা সুখী।
[৪]
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। পেটের অনাগত বাচ্চাটা ফেলে নাড়ি পরিষ্কার করে নিলো শাহনাজ। দিনের পর দিন বাবামায়ের মা’রের আর কথার আ’ঘা’ত সহ্য করেছে মেয়েটা। নাহিদের সাথে তার কঠিন প্রেম ছিলো। এমনই প্রেম যেখানে দুজনের মধ্যে কিছুই বাকি রইলোনা। দু’জনের এক তুমুল ঝ’গড়ায় নাহিদ ক্ষোভের বসে নীহাকে বিয়ে করে নেয়। সেদিনই জানতে পারে শাহনাজের গর্ভে তারই অংশ। সাগরের মাঝখানে এসে আর পথ খুঁজে পেলোনা নাহিদ। নিজের জীবন বলি দিলো। এতো এতো মা’র’ধরে ও শাহনাজ নাহিদের নাম ভাঙলোনা। এই চরম সত্যি কেউ জানেনা। ভাগ্য বশত ভাইয়ের চিরকুট পেয়ে নাফিজ আর মা জানতে পারলো। বাচ্চাটাকে নিঃশেষ করে নাহিদের মতো শাহনাজ ও পাড়ি জমালো পরপারে। একটিমাত্র পা’পের ফলে তিনটে প্রাণ নিঃশেষ হলো।
বয়সটা উনিশ ছুঁই ছুঁই। উচ্চমাধ্যমিক এর ফলাফল এর সময়টা ও ঘনিয়ে এসেছে। নীহার বিয়ের পরই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে প্রেমা। সব কিছুতে হেলাফেলা চললেও পড়াশোনায় গাফিলতি করা প্রেমার স্বভাবে পড়ে না। ফলাফল প্রকাশ পাবে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রেমার মাঝে প্রতিবারের মতো এবারে কোনো আগ্রহ, উৎকন্ঠা দেখা গেলোনা। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ পেলো, প্রেমার ফলাফল ভালো হলো। প্রত্যাশা অনুযায়ী সে ফলাফল পেয়েছে। সবাই খুশি থাকলেও প্রেমার কোনো ভাবান্তর হলোনা। কয়েকদিন যাবত মেয়ের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন আয়েশা। গতকাল ও চ্যালাকাঠ নিয়ে মা’র’তে গেলেন। শেষে জয়নুল আবেদীন এর ধমক খেয়ে থামলেন। বউ, বাচ্চার গায়ে হাত তোলা উনার একদমই পছন্দ নয়। মেয়ের আগের চেয়ে গুটিয়ে যাওয়ার স্বভাব লক্ষ্য করেই জয়নুল আবেদীন কর্মস্থলে সময় কমিয়ে মেয়েকে সময় দিচ্ছেন ইদানীং। প্রতিটা মেয়ের ক্ষেত্রেই জয়নুল আবেদীন যখন দেখতেন তার মেয়েরা একাকিত্বে, নিঃসঙ্গতায় ভুগছে তখনই কাজ ছেড়ে মেয়েদের সময় দেন। কুমিল্লা রোডে জয়নুল আবেদীন এর তিনটা বাস আছে।
আজ প্রেমাকে এক প্রকার জোর করেই বাইরে নিয়ে গেলেন। পাশের এলাকায় নাকি মেলা বসেছে? সেখানেই নিয়ে গেলেন। প্রেমার মন ভালো হলো কিনা তিনি জানেননা, তবে প্রেমার চেহারায় বিষন্ন ভাবটা তখন ছিলোনা। সন্ধ্যার আগেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
নীহাকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। ভালো সমন্ধ হাতছাড়া করা ও উচিত নয়। জয়নুল আবেদীন হুট করেই নীহার শাশুড়ীকে খবর দিয়ে বসলেন বিয়ের ব্যবস্থা করতে। তিনিও ছেলেমেয়ে আর দেবরকে নিয়ে এসে সেদিনই বিয়ে পড়িয়ে দিলেন নাফিজ, নীহার। বিয়েতে সম্মতি দেওয়ার সময় নীরব অশ্রুতে কপোল ভিজিয়েছে নীহা। আরেকটু সময় নিলেও বাবাকে তার আশানুরূপ উত্তর দিতেই হতো। সেই রাত নাফিজ এবাড়িতেই থেকে গেলো। প্রেমা ঘর ছেড়ে বের হলোনা। মুখ লুকিয়ে কাঁদলো। নির্ঘুম রাত্রি কাটিয়ে সকালেই মায়ের হাতে হাতে কাজ করার উদ্দেশ্যে বের হলো। নাস্তার টেবিলে প্রেমা নাফিজের মুখোমুখি হয়ে গেলেও চোখ নামিয়ে রাখলো। ভাগ্যিস সে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায়নি, নইলে নাফিজের সামনে মুখ দেখানোর সাহস পেতোনা। মানুষটা তাকে বে’হায়া ভাবতো। নীহা নাফিজের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছে। হুট করে এরকম একটা সম্পর্ক মেনে নেওয়া যায়না। প্রেমা সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলো নাফিজ নীহাকে পানির গ্লাস, এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। দায়িত্ব জ্ঞানে ছেলেটা বেশ পটু। এক চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রেমা। বোনটা অন্তত সুখে থাক। কাউকে না পেয়েও সুখী হওয়া যায়। এই যে তার বোনের কত খেয়াল রাখছে নাফিজ এতেই নিজেকে সুখী সুখী লাগছে।
চট্টগ্রাম থেকে বড়খালার ফোন এসেছে। মা দিব্যি হেসেখেলে কথা বলছেন। বাবা ও উপস্থিত আছেন। খালা কথা তুললেন,
-“প্রেমাটা তো কিছুদিন আমার কাছে এসেই থাকতে পারে। একা একা সারাদিন কাটাই।”
জয়নুল আবেদীন সম্মতি দিয়ে প্রেমাকে বললেন,
-“কিছুদিন থেকে আসো খালার কাছে। মন ফ্রেশ হবে।”
প্রেমা নাকোচ করে দিলো। খালার আরেকটি কথা শুনে কিছু পাওয়ার লো’ভ সামলাতে না পেরে বলে দিলো ‘আচ্ছা আমি যাবো।’
পরেরদিনই জয়নুল আবেদীন মেয়েকে ট্রেন এ উঠিয়ে দিলেন। কুমিল্লা থেকে ট্রেন ধরে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছালো প্রেমা। তাকে অপেক্ষা করতে হলোনা। ট্রেন থেকে নামতেই অভীক ভাইয়া মাথার গাট্টা মেরে বলল,
-“কিরে ভূ’তী এদিক ওদিক কি খুঁজিস? চল চল বাইকে চেপে বস।”
ট্রেন জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে প্রেমা কথা বাড়ালোনা। অভীকের বাইকে চেপে বসলো।
অভীক ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল,
-“তোর এই জামাকাপড়ের গাট্টি আমার বাইকে নিলেও বাইকের মানসম্মান যাবে। কোথায় রাখি এটা? পেছনেই রাখি। কিরে, তুই দেখি আগের চেয়ে পাটকাঠি হয়ে গিয়েছিস। তোদের গুদামের চাল কি শেষ হয়ে আসছে? এই জন্যই বুঝি খেয়েদেয়ে শরীর বানাতে আমাদের বাড়িতে আসলি?”
প্রেমা বেজায় বিরক্ত হলো অভীকের ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে। “তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট দাও তো? আমার ঘুম পাচ্ছে।”
অভীক আর রসিকতা করলোনা। বাইক থেকে পড়লে বি’পদ আছে। বাড়ি পৌঁছে গেলো। রাত হয়ে যাওয়ায় খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো প্রেমা।
সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো খালুর চিৎকার চেঁচামেচিতে।
-“কোন কু’ত্তার পয়দা এখানে পায়খানা করেছিস? একবার আমার সামনে পড়তি, তোর পায়ুপথ সেলাই করে দিতাম। ও কু’ত্তার পয়দা।”
এটা নতুন কিছুনা। চট্টগ্রামে খালার বাড়ি আসলেই কিছু বিনোদন পাওয়া যায়। খালু খুবই পরিষ্কার মানুষ। গায়েগতরে যেমন পরিষ্কার, মনের দিক থেকেও তেমনই পরিষ্কার,নরম। পায়খানা করা লোকটি যদি এসে বলে, ‘আমার বাড়িতে পায়খানার ব্যবস্থা নেই তাই আপনার বাড়ির সামনে পায়খানা করলাম।’
তখন দেখা যাবে উদারমনা খালু ছলছল চোখে চেয়ে বলে উঠবেন,’ আপনি পায়খানা করুন, একবার নয় হাজারবার পায়খানা করুন। আমি পানির ব্যবস্থাটা ও করে দেবো।’
#চলবে……..
(