পরী পর্ব ৯

0
1183

পরী পর্ব ৯

পাশ থেকে ভাইয়া ওঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?’
আমার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। আশেপাশে ভ্যাঁপসা এক গরম বাতাস। আর সেই পরিচিত সুগন্ধ। কেমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে বুকের ভেতরটা প্রবল বেগে ধকধক করছে। কিছু না বলে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আমি শুয়ে পড়লাম। ভয়ে এখনও কাঁপছি। স্বপ্ন হলেও পরীর জন্য খুব খারাপ লেগেছে। স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকাল। সোফায় বসে কালরাতের স্বপ্নের কথাই ভাবছি। অনেক ভয়ঙ্কর ছিল স্বপ্নটি। আর ভাইয়া কেনই বা আমাকে মারতে চাইবে? আর যখন ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, তখন কেন আমার এমন মনে হয়েছিল যে, আত্মাটি ওখানে উপস্থিত ছিল?
নাদিয়া এসেছে। হয়তো ভাইয়া তাকে নিয়ে এসেছে। তাকে মেজ ভাবী হিসেবে আমি সবার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিই। ভাইয়া মনে করিয়ে দিলো, ‘বের হবি না? আজ যে আকবর সাহেবের খুনিকে অ্যারেস্ট করতে যেতে হবে!’
আমরা বেরুনোর সময় ভাইয়া পুলিশ ফোর্সকে ইনফরম করল। শুরুতে আমরা আজাদ আঙ্কেলের বাসায় গেলাম। সাবিলা যেতে চেয়েছিল বিধায় তাকেও সাথে নিই। তাঁকে সবকিছু খুলে বলেছি। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, লতিফই আকবর আঙ্কেলের খুনি। তিনি বলছেন, ‘আকবরকে একবার চোখ ট্যারা এক ছেলে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ও আসার পর জানতে পেলাম, জঙ্গলের বাড়িটি আবু লতিফ নামের কোন এক ব্যক্তি চওড়া দামে কিনতে চাইছে। আমি আকবরকে বিক্রয় করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু সে করেনি। দ্বিতীয়বার আমরা আপাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে লতিফের সাথে দেখা হয়ে যায়। সে আমাদেরকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেদিন অনেক আপ্যায়ন করেছিল। আর বাড়িটি বিক্রয় করে দেওয়ার জন্যও অনেক জোর করেছিল। বাসায় এসে আমি আকবরকে জিজ্ঞেস করি, কেন সে বাড়িটি বেচতে চায়নি। ও বলেছিল, “ওই জায়গায় খারাপ কিছু আছে। যে থাকবে তাকে মেরে ফেলবে। আর লতিফ একটি ডায়েরির কথা বলেছে। তা সে পেলে অনর্থ হয়ে যাবে। যদি ওখানে সত্যিই কোনো পরীর কথা লেখা থাকে, তবে লতিফ আর তার সঙ্গী এর অপব্যবহার করবে। তাই বাড়িটি আমি ওই বদমাইশকে দিতে চাই না।” আকবর আমাকে আর কোনোকিছুই বিস্তারিত বলেনি। তখন থেকে আমরা লতিফের সাথে আর যোগাযোগ রাখিনি। কিন্তু একদিন এই ডায়েরির জন্য সে আমার ভাইকে ছল করে খুন করবে, বুঝতে পারিনি। আমার ভাই অনেক ভালো ছিল।’ আজাদ আঙ্কেল হু হু করে কেঁদে দিলেন। আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি এতকিছু জানতেন, আমাদের আগে বলেননি কেন?’
‘বাবা, আমি কথাগুলো অনেক আগেই ভুলে গিয়েছিলাম। আমার ধারণাই হয়নি, ডায়েরির সম্বন্ধে জেনে ফেলার কারণে লতিফ আকবরকে খুন করে ফেলবে।’

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


‘আপনি তো লতিফের বাড়ি চেনেন।’, ভাইয়া বলল, ‘আমাদের ওখানে নিয়ে চলুন। আজই ওকে আমরা গ্রেফতার করব।’
‘ঠিক আছে, চল।’
আমরা উঠার সময় লক্ষ করলাম, কে যেন দরজার পর্দার পাশ কেটে গেল। একটু পর আজাদ আঙ্কেলের সাথে বেরুলাম। বেশি দূর নয় বলে পৌঁছতে দেরি লাগেনি। বাড়ির চারপাশে উঁচু-নিচু টিলা। সেইরাতে এখানের মাটিগুলোই হয়তো ওদের জুতোয় লেগেছিল।
আমাদের এনে দিয়ে আজাদ আঙ্কেল চলে যান। ভাইয়ার লাইসেন্সড করা আরেকটি রিভলভার আমি নিই। পুলিশ আসতে অনেক দেরি। তবু ঢুকে পড়লাম রিভলভার শার্টের ভেতরে প্যান্টের সাথে আটকিয়ে। ভেতরে ঢোকার পর সোফায় বসে থাকা লোকটিকে দেখে আমি যেন কারেন্টের শক্ খেলাম।
সোফায় বসে থাকা লতিফের চেহারা আমার স্বপ্নে দেখা মুখোশধারী ব্যক্তির দুই সঙ্গির হুবহু একজনের মতোই। ভাইয়া আমার ভ্রম ভাঙিয়ে ভেতরে যেতে বলল।
‘আসুন, আসুন,’ লতিফের মুখ চকচক করছে। সহাস্যে সে বলল, ‘আমি আপনাদেরই অপেক্ষা করছিলাম। শুনেছি তোমরা দুই ভাই নাকি আকবরের খুন হওয়ার প্রমাণ পেয়ে গেছ? হা হা হা।’
‘আপনি কীভাবে জানলেন?’ ভাইয়ার চোখে বিস্ময়।
আমি আগে থেকেই এরকম কিছু একটা হওয়ার আশঙ্কা কিছুটা বোধ করছিলাম। তাই লুকিয়ে ফোনের রেকর্ডিং চালু করে রেখেছি।
‘আমি তোমাদের মতো বোকা নই।’, লতিফ বলল, ‘তোমরা সবচেয়ে বড় বোকামি করেছ এখানে এসে। আমাকে এতো সহজে নিয়ে যেতে পারবে না। তোমরা আজই মারা পড়বে।’
লতিফ দুইবার তালি দিলো। সাথে সাথেই কালো ইউনিফর্ম পরিহিত কিছু গার্ড এসে আমাদের ঘেরাও করে। তারা আমাদের চেপে ধরে মারতে শুরু করল। কিছু গার্ড সাবিলাকেও ধরেছে। এতো লোকের বিপরীতে আমরা দুই ভাই পেরে উঠছি না। ওইদিকে সাবিলার দিকে লতিফ লোভাতুর দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকাচ্ছে। ইচ্ছে হলো, ওর চোখগুলোই খুঁচিয়ে নিয়ে ফেলি। আমাদের তুলনায় গার্ড বেশি হওয়ায় কিছুই করতে পারছি না। ঘুষি খেয়ে আমার ঠোঁটের কোণ ছিঁড়ে গেল। সম্ভবত রক্ত পড়ছে। লতিফ সাবিলার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। মুখে কেমন এক পৈশাচিক হাসি। ওকে থামানোর কেবল একটিই উপায়। পরিকল্পিত কথাগুলো চিৎকার করে বললাম, ‘লতিফ সাহেব, আপনি যে ডায়েরিটি খুঁজছেন, সেটি আমাদের কাছেই আছে।’
লতিফ এবং ভাইয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। গার্ডগুলো লতিফের আদেশে আমাদের ছেড়ে দেয়। আমার মিথ্যা ভাইয়া শুরুতেই বুঝে গিয়েছে।
‘হ্যাঁ,’ ভাইয়াও মত দিয়ে বলল, ‘লতিফ সাহেব, ওটা আমাদের কাছেই আছে।’
‘আপনি কী ভেবেছেন?’, আমি বললাম, ‘আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য আমরা পুলিশ আনব না? আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই আনিনি। আপনি যদি নিজেকে বাঁচাতে চান আর ডায়রিটি পেতে চান, তাহলে আমাদেরও আপনার সঙ্গি করে নিতে হবে।’
পুলিশ না আসা অবধি কোনোভাবে তাকে আটকে রাখতে হবে ভেবে সত্য উগলানোর জন্য পরিকল্পিত কথাগুলো বলে গেলাম। লতিফ কিছুক্ষণ ভেবে আমাদেরকে বসতে বলল। আমি শার্টের কলার সোজা করে সোফায় পায়ের উপর পা রেখে বসলাম, ফিল্মের ভিলেনের ন্যায়। বললাম; ‘আমরা আজাদ সাহেবের কাছে আপনার সব কথা শুনেছি। এসব কাজ আপনি ওই ডায়েরির জন্যই করেছেন। তাই না?
আমরা যখন আজাদ সাহেবের সাথে কথা বলছিলাম, তখন লুকিয়ে তাঁর আপাও আমাদের কথাবার্তা শুনছিলেন। আর সাথে সাথেই আমাদের আসার কথা আপনাকে জানিয়ে দিলেন। আপনি আমাদের জন্য এমন আয়োজন করবেন তা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু আজাদ সাহেবরা জানেন না, আমরা এখানে আমাদের নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য এসেছি। অনেক কিছুই জানলাম যে, আপনার আরেকজন সঙ্গির কাছে ওই পরীটি আছে আর ডায়েরিটির ভেতর তার শক্তির রহস্য। আমরা ভেবে দেখলাম, আপনাকে গ্রেফতার না করে কেননা আমরাও আপনার সাথে হাত মিলাই! এইজন্যই এখানে খালি হাতে এসেছি। আমাদের সামনে আপনার অন্য পার্টনারকে শেয়ারিংয়ের কথা বলতে হবে। তবেই আমরা ডায়েরিটি আপনাদের সঁপে দেব। ভেবে দেখুন, আমাদের ভাগ দিলে আপনি নিজেও লক আপ থেকে বেঁচে যাবেন। আমরাও ধনবান হয়ে যাব।’
‘তোমাদের যতটা বোকা ভেবেছি, আসলে তোমরা ততটা বোকা নও। ঠিক আছে, তোমরা আমার সাথে হাত মিলাতে পার। আকবর যদি আগেই আমার সাথে হাত মিলাতো, তবে ওকে অন্তত মরতে হতো না। ওর আপার কাছে তোমাদের বাহাদুরির কথাও শুনেছি। তোমরা বাড়িটিতে যে থাকো, ওটাও আমার জানা আছে। সুতরাং ভেবে দেখো, আমার পরবর্তী টার্গেট কিন্তু তোমরাই ছিলে। ভালোই হয়েছে, সময় থাকতে তোমরা নিজ পায়ে হেঁটে এসে আমার মকসুদ পূর্ণ করছ।’
লতিফ অনেক চালাক। আমাদের মিথ্যা বলে সে ডায়েরিটি আত্মসাৎ করে নেবে। তারপর আমাদের মেরে ফেলবে। তবে সে জানে না, সে উল্টো আমার মিথ্যায় ফেঁসে গেছে। মুখে বললাম, ‘ঠিক আছে, আপনার পার্টনারকে এখানে আসতে বলুন।’
‘ওর নাম সেলিম। সেলিম এখন কোথায় তা আমি জানি না। ওর সাথে যোগাযোগ হলো দেরি হচ্ছে। আসলে এতদিন জেলে ছিলাম বিধায় ও কোথায় থাকে জানি না। তবে ডায়েরি পেয়ে গেলে ওকে খুঁজে ফেলতে পারব।’
‘আপনি এতদিন জেলে ছিলেন?’, ভাইয়া বলে উঠল।
‘হ্যাঁ, তোমরা তো খালেককে পেয়েছিলে। ও হয়তো তোমাদের বলেছে আমি এতদিন বিদেশে ছিলাম। ওকে মিথ্যে বলেছিলাম। আসলে আমি একবার একটি মেয়েকে রেপ করতে যাওয়ায়.. ইউ নো, এতদিন জেলে থাকতে হয়।’
লতিফ আমাদের নিজের মতো নোংরা লোক ভেবে সবই বলে দিলো। ঘৃণায় আমার ফেটে পড়ার অবস্থা।
‘না লতিফ সাহেব,’ বললাম, ‘হবে না। আমরা লিডারের সাথে দেখা না করে এই ডিল করব না। আপনি আবার আমাদের ঠকিয়ে দিলে?’
‘এমনটা করব না। তোমরা বরং এক কাজ কর। পারভেজের সাথে দেখা কর। সেলিম পারভেজের অন্তরঙ্গ বন্ধু। ও সেলিমের ঠিকানা অবশ্যই জানবে।’
‘পারভেজটা কে?’, ভাইয়ার মুখে বিরক্তি ছেয়ে গেল।
‘বুঝছি, তোমাদের সব বলতে হবে।’ গলার স্বর খাদে ফেলে লতিফ বলছে, ‘আমরা তিনজন একদলে আছি। পারভেজ যখন ওই পরীর সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল, তখন সে আমাকে আর সেলিমকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। সে বলল, পরীকে তোলে নিয়ে আসতে পারলে আমরা অনেক কোটিপতি হয়ে যাব। পরীর ডানায় অনেক শক্তি। তাকে পেতে হলে ওই ডানাগুলো কেটে ফেলতে হবে।
পরিকল্পনা করে আমরা পরীর ডানাগুলো কেটে ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথে আবার আরেক দূর্ঘটনা ঘটে। জঙ্গল দিয়ে পরীকে নিয়ে যাওয়ার সময় এক লোক আমাদের দেখে ফেলে। পরীর পিঠের রক্ত দেখে সে চিৎকার করে মানুষ ডাকতে শুরু করল। সেলিমের কাছে একটি খঞ্জর ছিল। সেটি দিয়ে লোকটিকে সে খনন করল। তারপর আমাকে লাশটিকে ঠিকানা করে দিতে বলে সে পরী নিয়ে অপেক্ষা করবে বলে পালিয়ে যায়। আমি লাশটিকে জঙ্গলে একটি গর্ত করে তাতে ফেলে দিয়ে চলে আসি। সে পরীকে কোথায় বেঁধে রেখেছে তা আদৌ জানি না। তবে সে পরদিন ছুটে এসেছিল পারভেজের কাছে। আর বলল, ওই পরীটি ডানা কাটার আধাঘণ্টা পর থেকে অদৃশ্য হয়ে আছে। তাকে কিছুই করা যাচ্ছে না। এই শুনে পারভেজ আমাদের একটি ডায়েরির কথা বলল। সে মূলত ডায়েরিটির মাধ্যমেই পরীটির সম্বন্ধে জেনেছিল। আর আমাদের পরীকে ধরার যে কৌশল বলেছিল, সেসবই ডায়েরি থেকে ধারণা লাভ করে। ‘ওটা পেলেই কিছু একটা করা যাবে।’ এটাই ছিল পারভেজের লাস্ট কথা। সেদিন পারভেজ পঙ্গু আর বোবা হয়ে যায়। সেলিম পরীকে সম্পূর্ণ নিজ দখলে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। সেলিমের কাছে পরীর অভিশাপ লেগেছিল এমন ধারণা করি। কারণ সেলিম জঙ্গলের বাড়িটির আশেপাশেও যেতে পারত না, ডায়েরি তো দূরেই থাক। এরপর আমি জেলে চলে যাই। সুযোগ আর কারও হয়ে উঠল না। বেরুনোর পর একদিন সেলিমের সাথে দেখা হলো। পরীর অভিশাপে তার চেহারা দানবীয় কুৎসিত হয়ে গেছে। ডায়েরিটি আমি তাকে এনে দেব বলায় সে পরীর শক্তি ব্যবহারে আমাকে পার্টনার বানাল। এরপর এখানে এসে দেখলাম, জায়গাটি আকবরের দখলে। এখন তোমরা যদি আমাদের ডায়েরিটি দিয়ে দাও, তবে আমরা সকলে ধনবান হয়ে যাব। বেশি ভেবো না।’
এসব মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। একটু করে ডায়েরির কথা বলায় সে পুরো ইতিহাস উগলে দিয়েছে। ভাবনায় পানি ফেলে সাবিলা আমাকে জানালার দিকে ইশারা করল। পুলিশদের দেখা যাচ্ছে। ওরা এসে পড়েছে।
‘কিছু বলো?’, আমাদের নীরবতা দেখে লতিফ বলল।
‘লতিফ সাহেব,’ আমি বললাম, ‘আপাতত আপনি এই ডায়েরির কথা বাদ দিয়ে আবারও জেলে বসে কী কী করবেন সেটাই ভাবুন।’
‘মানে?’
দরজার দিকে আমার ইশারা করার পর লতিফ দেখল, পুলিশ চারিদিক থেকে গার্ডসহ তাকে ঘিরে ফেলেছে। ইতোমধ্যে আমরা দুই ভাইও আপন আপন রিভলভার বের করে ওর দিকে তাক করলাম।
রাগান্বিত হয়ে সে বলে উঠল, ‘তোরা আমাকে বোকা বানিয়েছিস? আমি তোদের ছাড়ব না।’ এই বলে লতিফ পাশে থাকা একটি গার্ডের ব্যাল্ট থেকে পিস্তল বের করে সাবিলাকে টেনে নিয়ে ওর কপালে তাক করল। লতিফ এসব এতো দ্রুতই করে ফেলেছে যে, আমরা কিছুই করতে পারিনি।
‘বন্দুক নিচে কর্।’ লতিফ গর্জে বলল, ‘আমাকে যেতে দে। নইলে এই সুন্দরীকে তোদের সামনেই গুলি করে রক্তাক্ত করব।’
পুলিশসহ আমরা উপায় না দেখে নিজ নিজ গান নামিয়ে ফেললাম। সাবিলাকে এভাবে ওর আয়ত্তে দেখে কাঁপতে লাগলাম। সাবিলা আমার দিকে চেয়ে আছে। ওর মাঝে কোনো ধরনের ভয়ই দেখছি না। লতিফ বন্দুক ঠেকিয়ে ওকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমি সাবিলাকে কিছু একটা ইশারা করে শিখিয়ে দিই। ও যথেষ্ট সাহসী। আমি জানি, ও কিছু একটা করতে পারবে। একটু পর সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় সাবিলা সুযোগ বুঝে লতিফের পিস্তল ধরা হাতে কামড় বসালো। পরপর উন্মুক্ত ডানহাতের কণুই দিয়ে লতিফের মুখে ঘুষি বসালো। অবশ্য দ্বিতীয়টি আমি শিখিয়ে দিইনি। লতিফ আর পিস্তল দুইদিকে গিয়ে পড়েছে। সাথে সাথে পুলিশ ধরে ফেলল লতিফকে। সাবিলা আমার কাছে চলে এলো।
লতিফকে পুলিশরা ধরে বাইরে নিয়ে যায়। হাতকড়ি পরানোর আগেই লতিফ আচমকা পুলিশের হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিলো। সেই দৌড়ে সে রাস্তার মোড়ে ওঠে গেছে। সাথে সাথে পুলিশরা সবাই ওর পেছনে দৌড় দিলো। ঠিক সেই সময়, রাস্তায় হঠাৎ কোত্থেকে যেন একটা ট্রাক এসে গেছে। লতিফ রাস্তায় উঠে যাওয়ায় মুহূর্তেই তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি পুলিশরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা যাইনি। একটু পরই ভাইয়ার কাছে এক পুলিশের ফোন এলো। লতিফ মারা গেছে।
লতিফের মতো মানুষের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। নিজের কর্মের দোষেই সে মরেছে। তবে এই নির্জন রাস্তায় ট্রাক কোত্থেকে এলো? আর আমার স্বপ্নের সাথে লতিফের বলা ঘটনার এতো মিল কেন? কী নির্দেশ করেছে স্বপ্নটি? কেনই বা লতিফের চেহারা আমি স্বপ্নে দেখেছি?

(চলবে…!)
লেখা: ফারিয়া কাউছার