পরী পর্ব ৩

0
1199

পরী পর্ব ৩

সারাদিন কেটে গেল। ভাইয়ার জ্বর কমেনি। তাই আজ আজাদ সাহেবের বাসায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সাবিলা রান্না করে দিয়ে চলে গেল। রাতে আমরা দু’জন একসাথে শোলাম। অনেক গরম এখানে। আজকে বাইরে সারাদিন কড়া রোদ ছিল। এখনও অসহনীয় গরম লাগছে। বাড়িটিতে সবেমাত্র এলাম। ফ্যানের ব্যবস্থা করার সময় পাইনি। ভাইয়ার জ্বরও কমেছে। কমে গিয়ে এখন ঘাম ঝরছে।
ভাইয়া বলল, ‘খুব গরম লাগছে। চল, বাইরে দোয়ারে গিয়ে বসি। আজকের দিনটা কেবল শুয়েই কাটালাম। বোর হয়ে গেছি।’
বারান্দায় অনেকক্ষণ বসলাম। ওখানেও গরম। সবকিছু থমকে আছে। পরে বসার ঘরে চলে এলাম এই গরমে ঘুম আসবে না ভেবে। দু’জনেই গরমে ছটফট করছি। এমন সময় হঠাৎ প্রবলভাবে বাতাস বইতে শুরু করল। মন জুড়ানো বাতাস। নিমিষেই ছটফটানো কমে গেল।
‘ভাইয়া,’ ভীত কণ্ঠে বললাম, ‘এমন বাতাস কোত্থেকে আসছে?’
‘উপরে দেখ আবির,’ কাঁপাস্বরে সে বলল, ‘হাতপাখাগুলো আপনিই বাতাস করছে।’
‘ভাইয়া,’ আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না। বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘এটা কী করে সম্ভব? হাতপাখাগুলো আপনিই কেমনে বাতাস করছে?’
‘উঁহু, তা তো আমিও বুঝছি না। তবে যা হচ্ছে দেখে থাক। একটু বাতাস চেয়েছিলাম, তা তো পেয়েছিই। এতেই শোকর।’
‘না মানে পাখাগুলো তো আগে বাতাস করেনি। আমাদের গরম লাগার পরই কেন বাতাস করছে?’
‘কে জানে! কিন্তু এই বাতাসে আমার অনেক ভালো লাগছে। তুইও এতো প্রশ্ন না করে উপভোগ কর তো!’
‘তুই কেমনে পারিস সবকিছু এতো স্বাভাবিক ভাবে নিতে? পুলিশ হয়েও ভৌতিক জিনিসের উপর তোর এতো আগ্রহ। আর আমাকে দেখ, ভীতুর ডিম একটা।’
‘আমার তো মনে হচ্ছে এখানে আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।’
‘হুঁ.. আচ্ছা, কাল তুইসহ সব পুলিশ আকবর সাহেবকে দাফন করে গাড়ি করে কোথায় গিয়েছিলি?’
‘আমরা ঐ রাস্তায় গিয়েছিলাম যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।’
‘তা কী কী ইনফরমেশন পেলি?’
‘দেখতে তো সুইসাইড কেস লাগছে। কিছুই পাওয়া যায়নি তাঁর মোবাইল, বিষের বোতল আর গাড়ি ব্যতীত। কিন্তু এটি একটি মার্ডার কেস। জাকির স্যার বলেছেন, “আকবর আমার অনেক ভালো বন্ধু। ও সুইসাইডের ন্যায় জঘন্য কাজ করতে পারে না। আমি আকবরের যখন কল পাই তখন রাত দুইটা বাজছিল। যেতে যেতে চারটা বেজে যায়। আমি ওকে পাওয়ার পর কীভাবে এসব হয়, তার হদিস পেতে চারিদিকে তাকাতে লাগলাম। বিষের বোতল দেখে আমি অবাক হই। বুঝে নিলাম ওর নিশ্চয় খুন করা হয়েছে। কারণ ও আত্মহত্যাকারীদের মোটেও সহ্য করতে পারত না। ওর গাড়ির সামনে আমার বাইকের বাতি জ্বলানো থাকায় তখন রাস্তার ধারের সবকিছুই দেখা যাচ্ছিল। আমি গাড়ির বাইরে হঠাৎ জুতোর ছাপ দেখতে পেলাম। একজোড়া নয়, দুই জোড়া। গাড়ির পেছনের দরজার কাছ থেকে সামনের দরজায় এসে শেষ হয়ে গিয়েছে ছাপগুলো। আমি তড়িঘড়ি করে ছাপের ছবি তুলে নিলাম। আকবরের একটা জুতো খুলে মিলিয়ে দেখলাম, ওখানের একজোড়া জুতোর ছাপ মিলে গেছে। অর্থাৎ এখানে আকবরের সাথে আরেকজন ছিল। তার মানে এটা প্লেনড মার্ডার।” স্যারের কথানুযায়ী যদি এমন হয়, তবে খুনি হয়তো চায় যে, সবাই এটা সুইসাইড ভাবুক। এমন প্ল্যানিং করে আকবর সাহেবকে খুন করেছে যাতে সে ধরা না পড়ুক।’
‘আর পোস্ট মর্টেমে কী জানা গেছে?’
‘তাতে কিছু জানা যায়নি। কেবল জানা গেছে তাঁর মৃত্যু বিষ খাওয়ার কারণেই হয়েছে। মানে তার শরীরে বিষ পাওয়া গেছে।’
‘হুঁ, তাঁর মৃত্যুটা যতটা সোজা দেখাচ্ছে ততটা সোজা নয়।’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা জুতোর ছাপের ছবিগুলো দেখা তো।’
ভাইয়া মোবাইলের স্ক্রিনে ছবি এনে আমাকে দেখাল। ছবিগুলো জুম করে দেখতে লাগলাম। ভাইয়া আমাকে আকবর সাহেবের জুতোর ছাপ চিনিয়ে দেয়। ছবির বামপাশের জুতোর ছাপগুলোই তাঁর। বললাম, ‘দেখ ভাইয়া, দুইজোড়া জুতোর ছাপ একদম পাশাপাশি।’
‘হুঁম, তাই তো।’
‘আর কেবল গাড়ির পেছনের দরজা থেকে সামনের দরজা পর্যন্ত হেঁটে আসতে অনেকগুলো কদম ফেলেছে তারা।’
‘একজন স্বাভাবিক লোক চললে একসাথে এতগুলো কদম ফেলতো না। বেশি থেকে বেশি তিনটা বা চারটা কদম ফেলতো। কিন্তু…’
‘কিন্তু ওরা থেমে থেমে হেঁটেছে।’ ওর মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে বললাম।
‘মানে আকবর সাহেব আগে পেছনের সিটে ছিলেন। তারপর কেউ একজন তাঁকে ধরে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে সামনের সিটে এনেছে। হয়তো সে-ই খুনি।’
‘হয়তো তিনি তখনও জীবিট ছিলেন। তা না হলে হাঁটিয়ে আনা সম্ভব না। হাঁটিয়ে আনার জন্য তখন আরেকজনের সাহায্যের দরকার হতো। কিন্তু এখানে তাঁর সঙ্গে কেবল একজন ছিল।’
‘খুনি হয়তো তাঁকে বিষ খাইয়ে দিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে তাঁকে বসিয়ে রাস্তার ওই জায়গায় গাড়ি থামায়। থামিয়ে তাঁকে পেছনের সিট থেকে হাঁটিয়ে সামনের ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দেয়। সিটের সামনে বিষের বোতল রেখে দেয় যাতে করে কেউ দেখলে প্রথম নজর যেন বিষের বোতলের ওপরই পড়ে। কাজ শেষে সে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।’
‘এসব হতেও পারে। আচ্ছা, বিষের বোতলে কি কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে?’
‘হ্যাঁ, সেটা কিন্তু আকবর সাহেবের ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে মেচ করেছে।’
‘বুঝলাম, খুনি যেই হোক না কেন, সে অনেক চালাক। এটা তো হতে পারে না যে, জাকির স্যারের কথার ভিত্তিতে, কোনো কারণ ছাড়াই আকবর সাহেব বিষ খেয়েছিলেন। যদি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ না খান, তবে খুনিই নিশ্চয় তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে আকবর সাহেবের দিয়েছে।’
‘মানতে হবে।’ পুলিশদের মতো ভাব নিয়ে বলল ভাইয়া, ‘কিন্তু চোর যতই চালাকি করুক না কেন, সে একটা হলেও ভুল অবশ্যই করে যায়।’
‘সে সকল প্রমাণ মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জুতোর ছাপের কথা সে খেয়াল করেনি। সেইরাতে প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। খুনি আর আকবর সাহেব এমন জায়গায় গিয়েছিলেন, যেখানের মাটি বৃষ্টির পানিতে ভিজে থকথকে হয়ে গেছে। আর সেখানে হাঁটার দরুন তাঁদের জুতোয় মাটি লাগে। তারপর গাড়িতে ওঠে এসে এখানে নামায় রাস্তায় জুতোর ছাপ লেগে যায়। আচ্ছা, গাড়ির ভেতর কী মাটি পাওয়া যায়নি?’
‘চারদিকে ছড়ানো ছিটানো মাটি দেখেছি। আমরা ভেবেছিলাম, গাড়ি আগে থেকেই নোংরা ছিল।’
‘আর কী পেয়েছিস?’
‘আমরা তাঁর মোবাইলের কল লগ চেক করেছি। লাস্ট ডায়েল্ড নাম্বার জাকির স্যারেরই ছিল। খুনি আকবর সাহেবকে রেখে যাওয়ার পর তিনি সর্বপ্রথম জাকির স্যারকে কল দিয়েছেন। “জাকির” বলে অন্য কিছু বলার আগেই হয়তো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


‘সবই বুঝলাম। কিন্তু কেউ তাঁকে খুন করতে চাইবে কেন? বরং তাঁর সম্পদ আজাদ সাহেবের কাছ থেকে কম। কার সাথে তাঁর শত্রুতামী থাকতে পারে?’
‘আবির,’ ছবি দেখতে দেখতে ভাইয়া বলে উঠল, ‘একটা জিনিস খেয়াল করেছিস? অন্য জুতোর ছাপগুলোতে অস্পষ্টভাবে কী যেন লেখা আছে।’
‘B… T..A মনে হয় বাটা লেখা আছে ইংলিশে।’
‘স্যান্ডেল তো খুব মোটা সাইজের। সম্ভবত সস্তা। এগুলো ফুটপাথের মানুষদেরও পরতে দেখা যায়।’
‘তার মানে খুনি কোনো এক সাধারণ লোক। গরিব ঘরের হয়তো। তবে সে আকবর সাহেবের খুন করেছে কেন? তাঁর সাথে খুনির কী সম্পর্ক হতে পারে?’
‘উফফ, দুটো দিন চলে গেল। এখনও খুনির কোনো হদিস পেলাম না। আমাদের কাল সকালেই আজাদ সাহেবের বাসায় যেতে হবে।’
‘নাহ্, তুই এখনও পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে উঠিসনি।’
‘দেখ্, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছি। আর এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকলে কেস সলভ্ হবে না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে যাব। আর ওই নীল শার্ট পরা ছেলেটিকেও যে ধরতে হবে! ছেলেটির মাধ্যমে কোনো একটা কিছুর সন্ধান অবশ্যই পাব।’
‘কোন ছেলের কথা বলছিস?’
‘জানি না। তবে কালকেই জানা হয়ে যাবে। যে রাতে আকবর সাহেবের খুন হয়েছিল সে রাতে সাবিলা ছেলেটিকে ১:২০ এর দিকে আকবর সাহেবের বাসায় ঢুকতে দেখেছিল। ছেলেটির ওপর আমার সন্দেহ হচ্ছে।’
‘দেখি কালকে কী কী জানা যায়।’
‘এখন ঘুমিয়ে পড়।’
কথা শেষে দু’জন সোফায় হেলিয়ে পড়লাম। হাতপাখাগুলো এখনও বাতাস করছে। দু’জন কখন যে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলাম বুঝতেই পারিনি।
(চলবে…!)
লেখা: ফারিয়া কাউছার