#পরিপূর্ণতা
#৯ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
মুক্ত বাড়িতে ফিরে নিজের ডায়েরি বের করল। এই ডায়েরিতে নিজের সব অনুভূতির কথা লিখে রেখেছে মুক্ত। অহনা নামটার উপর কয়েকবার হাত বুলালো সে। ভালোবাসা কখন যে ঘৃণায় পরিণত হলো সেটা মুক্ত বুঝতে পারে নি। তবুও যেন আজ অহনাকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে মুক্ত নিজের রাগ বা ক্ষোভ কোনটাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না।
মুক্ত বারবার অহনার কথাই ভাবছে। যতই বলুক না কেন কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে এত সহজে ভোলা যায়না। মুক্তর মনের সুপ্ত কোণেও এখনো রয়ে গেছে অহনা।
মুক্ত ডাইরিটা বন্ধ করে নিজের বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, মাহিদের প্ররোচনায় তার সাথে একটি পার্টিতে এসেছে অহনা। অনেক মজার সাথে পার্টিটা এনজয় করছে। মাহিদ নিজের কিছু বন্ধুর সাথে অহনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অহনা সবার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্পগুজব করে। এরমাঝে মাহিদের এক বন্ধু মাহিদকে বলে, এই মেয়েটাকে তো অনেক ভালোই মনে হচ্ছে। তার উপর মেয়েটা তোর কাজিন। এই মেয়েটাকে টার্গেট করার কি খুব দরকার ছিল।
মাহিদ রাগের সাথে বলে, আমি একবার যার উপর নজর দেই তাকে নিজের করে তবে শান্তি নেই। এর আগে যেসব মেয়েদের টার্গেট করেছিলাম তাদের সবাই ছিল এক একটা শয়তান। যারা অনেক ছেলের মন নিয়ে খেলেছিল, ছেলেদের ভালোবাসার রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে ধোকা দিয়েছিল। তাই আমিও তাদের ধোকা দিয়ে সেই ছেলেদের নিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছি।
তাহলে এই মেয়েটাকে কেন লক্ষ্য করলি? এই মেয়েটাকে দেখে তো মনে হয়না ও কারো মন নিয়ে খেলেছে।
ওকে দেখে যত সহজ সরল মনে হয় ও আসলে ততোটা নয়। তুই হয়তো জানিস না ও আদিল নামের একটি ছেলের মন নিয়ে খেলেছে। এক সময় সেই ছেলেটাকে ভালোবাসার নাটক করে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়েছে আর তারপর
বুঝলাম। তোর কথা আমি বুঝলাম।
মাহিদ আর কিছু না বলে চলে আসে অহনার কাছে।
অহনাকে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়ে অন্য মেয়েদের মতো একা করে যাওয়াই তার লক্ষ্য। আদিলের সাথে অনেক আগে থেকেই মাহিদের যোগাযোগ। মূলত ফেসবুকেই তাদের পরিচয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। আদিল ও মাহিদের বন্ধুত্ব একসময় এত গাঢ় হয়ে যায় যে, মাহিদ নিজের জীবনের সব কথা আদিলকে বলতে থাকে।
মাহিদ এটাও জানায়, যেসব মেয়েরা ছেলেদের মন নিয়ে খেলে, ছেলেদের সাথে প্রেমের নাটক করে তাদের ছেড়ে দেয় সেরকম মেয়েদের সাথেও একই কাজ করে মাহিদ। তাদের সাথে ইন্টিমেট হয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।
মাহিদ মূলত এরকম হয়েছে একটা মেয়ের জন্য। মাহিদ একটি মেয়ের সাথে পাঁচ বছর রিলেশন করার পর সেই মেয়েটি মাহিদকে ছেড়ে যায়। সে নাকি আরো ভালো কাউকে পেয়েছে যে অনেক ধনী। সেই থেকে মাহিদের রাগ হয় এরকম মেয়েদের উপর। মাহিদ দেখতে অনেক বেশি সুন্দর ছিল। তাই যে কোন মেয়ে একবারের দেখাতেই মাহিদের প্রেমে পড়ে যায়।
মাহিদ এটাকে ব্যবহার করেই এমন কিছু মেয়েকে টার্গেট করে যারা নিজের বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীকে ধোকা দেয়। তারপর তাদের প্রেমের জালে ফাসিয়ে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এভাবেই প্রতিশোধ নেয়।
আদিল কিছুদিন আগে মাহিদকে জানিয়েছিল অহনা নামে একটি মেয়ে তাকে ধোকা দিয়েছে। তাই মাহিদ যেন তার হয়ে প্রতিশোধ নেয়। এই উদ্দ্যেশ্যেই বাংলাদেশে এসেছে মাহিদ। অহনার সম্পর্কে সব তথ্য বের করে নেয়। এভাবেই জানতে পারে অহনা তারই মামাতো বোন। তবে মাহিদের কাছে সেটা মূখ্য বিষয় নয়। মাহিদের এখন এক এবং অদ্বিতীয় কাজ অহনারও সেই এক হাল করা যা সে অন্য মেয়েদের সাথে করেছিল।
❤️
পার্টিতে মাহিদের এক বান্ধবীর জামায় ভুলবশত অহনা জুস ফেলে দেওয়ায় মেয়েটি অহনার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করে। মাহিদ দূরে ছিল জন্য অহনা রাগ করে বেড়িয়ে আসে।
রাতে একা একা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে অহনা। রাগের বশে অহনা এটা ভুলে গিয়েছিল যে, রাতের শহর মেয়েদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।
সামনের দিকে একটু আগাতেই একটি ফাঁকা গলির সম্মুখীন হয় অহনা। সাত-পাঁচ না ভেবে গলির ভিতরে ঢুকে যায় অহনা। অন্ধকারে একটু দূর এগিয়ে যেতেই অন্ধকার গাঢ় হয়। নিজের ফোনের ফ্লাশলাইট ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে থাকে অহনা।
পুরো গলি স্বাভাবিক ভাবে পেরিয়ে যায় অহনা। কিন্তু গলির শেষ মাথায় গিয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। কারণ সেখানে কয়েকটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছিল। বিপদ আন্দাজ করে নিজের ব্যাগ থেকে মরিচ পাউডার বের করে নেয় অহনা। যার কারণে অহনার একটু সাহস বেড়ে যায়।
নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যায় অহনা। ছেলেগুলো একবার তার দিকে তাকালেও কিছু করে না। তাই অহনা ভাবে ছেলেগুলোর থেকে হয়তো বিপদের আশংকা নেয়। এমনটা ভেবে অসচেতন ভাবে সামনে আগায় অহনা।
ছেলেগুলো এই সুযোগই খুঁজছিল। অহনাকে পিছন থেকে গিয়ে সবাই মিলে ঘিরে ধরে। অহনা ভয় জড়োসড়ো হয়ে যায়। তার হাত পা সব কাপছিল। ভয়ে এতটাই তটস্থ হয়ে গেছে যে মরিচ পাউডার বের করার সুযোগও পাচ্ছে না। এর মাঝে একটি ছেলে অহনার হাত ধরে ফেলল।
অহনা শেষচেষ্টা করে পালিয়ে যাওয়ার। যেই ছেলেটি তাকে ধরেছিল তার অন্ডকোষ বরাবর লা*থি দেয়। এতে কাজ হয় সামান্য। ছেলেটার হাত হালকা হতেই অহনা দৌড় লাগায়৷ বাকি ছেলেগুলো অহনার পিছনে দৌড় লাগায়।
একটু সামনে গিয়েই ছেলেগুলো অহনাকে ধরে ফেলে। এতগুলো ছেলের সাথে একা লড়ার শক্তি অহনার ছিল না। ছেলেগুলো অহনাকে জোর করে টেনে পাশের একটি নির্মানাধীন ভবনে নিয়ে যায়। অহনা প্রাণপনে চিৎকার করছিল কিন্তু তার আওয়াজ কারো কান অব্দি পৌঁছানোর আগেই ছেলেগুলো অহনার ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে দেয়।
অহনা আর চিৎকার করতে পারে না। একটি ছেলে অহনার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। অহনাকে রে***প করতে থাকে। একে একে সবগুলো ছেলে মিলে অহনাকে গ***ণ**ধ***র্ষ**ণ করে।
সারারাত ধরে মর্মান্তিক অত্যাচার চালায় মেয়েটার উপর। ব্যাথায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় অহনা। ন**র*পি*শ*চগুলোর যেন একটুও মায়া হয়না অহনার উপর। অহনাকে ক্ষতবিক্ষত করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে যায়।
এদিকে মাহিদ কতক্ষণ ধরে খুঁজছে অহনাকে। গতকাল রাত থেকে অহনাকে খুঁজে চলেছে মাহিদ।
কিন্তু খুঁজে পায়নি। অবশেষে সকালে গোঙানির আওয়াজ শুনে বিল্ডিং থেকে উদ্ধার করে দেয় বিধ্বস্ত অহনাকে। অহনাকে এইরকম অবস্থায় দেখে মাহিদ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
এটা ঠিক সে অহনার ক্ষতি করতে চেয়েছিল কিন্তু তবুও অহনাকে এরকম অবস্থায় দেখে কেন জানি তার খুব খারাপ লাগে। নিজের শার্ট খুলে আবৃত করে দেয় অহনার ন**গ্ন শরীর।
অহনাকে কোলে তুলে দৌড় লাগায় হাসপাতালের দিকে। অহনা ভগ্নকণ্ঠ নিয়ে বলে, আমি বোধহয় আর বাঁচব না। তোমার কাছে অনুরোধ তুমি প্লিজ ঐ শয়তানদের শাস্তি দিও যারা আমার সাথে এমন করেছে।
কথাটা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অহনা। মাহিদ অনুভূতিশুন্য হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারছিল না। কয়েকবার অহনার নাম নিয়ে ডাকে। অহনা সাড়া দেয়না।
কোন উপায় না পেয়ে অহনাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। ডাক্তারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়।
#চলবে