#পরিপূর্ণতা
#৭ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
নিজের মায়ের মৃতদেহের সামনে বসে কাঁদছিল অহনা। নিজেকে সে কোনভাবে ক্ষমা করতে পারছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল তার দেওয়া কষ্টের জন্যই তার মা মারা গেছে। অহনা ঠোঁট কামড়ে কাঁদছিল। হঠাৎ করে তার খালা মহিমা বেগম এসে তাকে এসে ধা**ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অহনা বুঝতে পারছিল না তার খালা তার সাথে এমন কেন করল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিমা বেগম বলেন, তুই আমার বোনকে স্পর্শ করবি না। শুধুমাত্র তোর জন্য আমি আমার বোনকে হারিয়েছি। তুই নিজের মাকে এত বেশি কষ্ট দিয়েছিস যে সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার বোনটা মরে গেল।
খালা আমার কথা শোন
চুপ তোর আর একটা কথাও আমি শুনব না। আমাকে আর কখনো খালা বলবি না। চলে যা এখান থেকে।
অহনা শুধু কাঁদতে থাকে। এছাড়া তার কাছে কোন উপায় নেই। একে একে অনেক আত্মীয় স্বজন আসে। অহিমা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কবরস্থানে। অহনা বাড়িতে তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল।
মুক্ত দূর থেকে দাঁড়িয়ে অহনাকে দেখছিল। অহনার প্রতি তার ভালো লাগা এখন আর বিন্দুমাত্র নেই। বরং রয়েছে একরাশ ঘৃণা। মুক্ত ভাবছিল অহনার সাথে নিজের পরিপূর্ণতা লাভের আশা তার ভুল ছিল। কারণ অহনার মতো মেয়েকে জীবনে এনে কেউ পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। বরং নিজের জীবনকে আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত করে।
অহনা কাঁদতে কাঁদতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সবাই ছুটে গেলেও মহিমা বেগম ও মুক্ত দূরেই দাঁড়িয়ে থাকে।
❤️
কয়েক মাস পর
অহনা ঢাকা শহরের একটি ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো মহিমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে থাকত সে। মহিমা বেগম তো অহনাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসত। কিন্তু এখন সেই ভালোবাসা বদলে গিয়ে ঘৃণায় রূপ নিয়েছে৷ তাই অহনাও সেখানে যাওয়ার সাহস পায়নি। সিরাজুল ইসলামের সাথে এখন অহনার সম্পর্ক বেশ স্বাভাবিক। যদিও এখনো অহনা সেভাবে কথা বলে না তার সাথে তবে আগের মতো খারাপ ব্যবহারও আর করে না।।
মায়ের মৃত্যুর পর অনেক বদলে গেছে অহনা। এখন অনেক শান্তশিষ্ট ও গম্ভীর হয়ে গেছে। প্রয়োজনের থেকে বেশি কথা বলে না কারো সাথে। সারাক্ষণ বই নিয়েই বসে থাকে। আগে সেভাবে নামাজ পড়ত না। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের মায়ের জন্য প্রার্থনা করে। যেন তিনি তার মাকে জান্নাতবাসী করে। আদিলের সাথে যোগাযোগ অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে অহনা। এখন শুধু ধর্মচর্চা আর পড়াশোনাতেই ব্যস্ত সে।
আজ ঢাকা শহরে চলে যাচ্ছে অহনা। একটি হোস্টেলে সিট পেয়ে যাওয়ায় আর কোন চিন্তা নেই তার। এখন সেখান থেকেই পড়াশোনা করতে পারবে।
ভার্সিটিতে এসে প্রথম দিনই অহনা দেখতে পায় কয়েকজন ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের উদ্দ্যেশ্য খুব সম্ভবত র্যাগিং করা। অহনা আগে থেকেই এসব বিষয়ে জানত। তাই বেশি ভয় না পেয়ে এগিয়ে যায়।
একটি মেয়ে অহনাকে দাড় করিয়ে তার সামনে এসে বলে, এই মেয়ে তুমি ভার্সিটিতে এসে আমাদের সালাম করো নি কেন? জানো না আমাদের সালাম করা এখানে বাধ্যতামূলক।
অহনা বেশি কিছু না বলে চুপচাপ সালাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ভুলবশত অহনার একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।
মেয়েটি রেগে গিয়ে ময়লা পানি এনে অহনার মাথায় ঢেলে দেয়। অহনা তবুও কাউকে কিছু বলে না। চুপচাপ নিজের ক্লাসের দিকে চলে যায়।
অহনার এরকম ব্যবহার দেখে একটি মেয়ে বলে, মেয়েটা কি পাগল নাকি? এতকিছু হয়ে গেল তবুও কিছু বলছে না।
অহনা ক্লাসরুমে এসে বসে পড়ে। একটু পরেই তার পাশে অন্য একটি মেয়ে এসে বসে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অহনা অবাক হয়ে যায় কারণ সে ছিল নিলা। নিলাও অহনাকে দেখে অবাক হয়। তার সাথে হ্যান্ডসেক করে বলে, আমাকে চিনতে পারছ? আমি নিলা। কয়েকমাস আগে আমার বোনের বিয়েতে আমাদের দেখা হয়েছিল।
অহনা মাথা বাকিয়ে হ্যাঁ-বোধক ইশারা করে। নিলা আরো অনেক বকবক করে তবে অহনা চুপ থাকে। একসময় তাদের ক্লাস শুরু হয়ে যায়।
অহনা ইংরেজি বিভাগে চান্স পেয়েছে। নিলাও সেখানেই পেয়েছে। প্রথমে তাদের ইংরেজি ক্লাস নিতে আসে এক সুদর্শন লেকচারার। যার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। শুধুমাত্র অহনাই তাকে দেখে কোন রেসপন্স করে না।
লেকচারার নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, আমার নাম মেজবাউল ইসলাম মাহিদ। আমি এখানকার নতুন লেকচারার। লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে এখানে এসেছি।
সবাই হা করে মাহিদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তবে মাহিদের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল অহনার মাঝে। নিলা মাহিদকে দেখে অহনার কানে কানে বলছিল, দেখ অহনা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছ? মাহিদ স্যার তখন থেকে তোমাকেই দেখছে।
নিলার কথা শুনে অহনাও মাহিদের দিকে তাকায়। মাহিদের দিকে একবার তাকিয়েই অবাক হয়ে যায় অহনা। ভালো ভাবে খেয়াল করে নিলা বুঝতে পারে মাহিদকে সে আগেও কোথায় দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটাই মনে করতে পারছে না।
ক্লাস শেষ করে বাইরে আসতেই মাহিদ অহনার একটি হাত টেনে ধরে। অহনা মাহিদের দিকে তাকায়। মাহিদ অসহায় কন্ঠে বলে, অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। আমাকে ভুলে যাওনি তো তুমি?
কে আপনি? আমার আপনাকে দেখে আমার চেনা চেনা লাগে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না যে কিভাবে আপনাকে চিনি আমি।
তুমি নিজে থেকে যতদিন না আমায় চিনছ ততদিন আমি নিজের পরিচয় তোমাকে দেব না। শুধু জেনে রাখো আমরা চিনি একে অপরকে।
অহনা ভালো করে ভাবে এই ব্যাপারে। অনেক ভাবার পর তার মনে পড়ে যায় তার ফুফাতো ভাইয়ের কথা। তার ফুফাতো ভাইয়ের নামও মাহিদ ছিল। অনেক বছর আগে অহনার ফুফু একটি এক্সিডেন্টে মারা গেলে মাহিদ তার বাবার সাথে বিদেশে চলে যায়।
অহনা বুঝতে পারে এই সেই মাহিদ। যে হয়তো আবার ফিরে এসেছে। অহনা ছুটে যায় মাহিদের পেছন পেছন। তাকে মাহিদ ভাইয়া বলে ডাকে। মাহিদও ছুটে আসে অহনার কাছে।
তুমি তাহলে আমায় চিনে গেছ।
হ্যাঁ ভাইয়া। কেমন আছ তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?
আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।
মাহিদের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর অহনা হোস্টেলে নিজের রুমের দিকে যায়।
মাহিদ কাউকে ফোন করে বলছিল, নতুন শিকার পেয়ে গেছি। মেয়েটা অনেক সুন্দরী আছে।
তাহলে তো আর কথাই নেই।
হ্যাঁ। এখন তাহলে আমি রাখছি।
মাহিদ কল কে*টে দিয়ে বলে, তুমি আমার চতুর্থ শিকার অহনা। এর আগেও চারটি মেয়ের চরম ক্ষতি করেছিলাম আমি। এবার তোমার পালা।
অহনা হোস্টেলে নিজের রুমে এসে ঘুমাচ্ছিল। একটি খা****রা****প স্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে জল দিয়ে অহনা ভাবতে থাকে আজ হঠাৎ এত খারাপ স্বপ্ন সে কেন দেখল।
এরমাঝে নিলা অহনার রুমে প্রবেশ করে। অহনাকে দেখে নিলা হেসে বলে, তোমাকে একটি খুশির খবর দিতে এলাম। সামনের মাসে মুক্তর সাথে আমার বিয়ে। তোমার খালাত ভাই মুক্তর সাথে।
খবরটা শুনে অহনা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। হঠাৎ করে তার কেমন অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছিল।
#চলবে