#পরিপূর্ণতা
#৫ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
অহনাকে কাছে টেনে নিয়ে চুমু দিচ্ছিল আদিল। হাসপাতালে আসামাত্রই এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হয় মুক্ত। তার বুক ফে*টে যাচ্ছিল এটা দেখে। যেই অহনাকে নিয়ে সে এত স্বপ্ন দেখেছিল সে আজ অন্য কারো সাথে। অনেক কষ্টে হাত মুষ্টিবদ্ধ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে মুক্ত।
আদিল অহনাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে, তুমি আসলেই অনেক ভালো মেয়ে। কত সুন্দরী তুমি, তোমাকে ফেলে অন্য একটা মেয়েকে করেছিলাম ভেবে এখন আমার আফসোস হচ্ছে। তোমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে বউ করে নিয়ে যাব। তারপর আরো বেশি করে আদর করব। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছি।
মুক্ত এসেছিল অহনার জন্য মেডিসিন কিনে নিয়ে। তাই হালকা কেশে ভেতরে আসে। অহনা মুক্তকে দেখে রেগে গিয়ে বলে, আসার আগে যে নক করতে হয় জানো না মুক্ত ভাইয়া?
মুক্ত কিছু না বলে অবাক হয়ে অহনার দিকে তাকায়। যেই অহনার জন্য সে এতকিছু করল সে আজ তার সাথে এমন ব্যবহার করছে।
তোমার জন্য ওষুধ এনেছিলাম অহনা। খেয়ে নিও।
মুক্ত কথাটা বলে চলে যায় সেখান থেকে। আদিল অহনাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাকে বিয়ে করে নেও। আমি তোমাকে নিয়ে নতুন সংসার সাজাতে চাই।
আমিও তোমাকে বিয়ে করতে চাই আদিল।
❤️
মুক্ত অহনাদের বাড়িতে আসে। আজ আদিল তার মা-বাবাকে নিয়ে বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করতে আসবে। সকাল থেকে অহিমা বেগম বিভিন্ন রান্নাবান্না করছেন। একা হাতেই তাকে সবকিছু করতে হচ্ছে। মুক্ত নিজের টাকায় বাজার খরচ সবকিছু করে দিয়েছে। সিরাজুল ইসলাম দূর দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছেন। নিজের মেয়ের বিয়েতে তার যেন কোন ভূমিকা নেই। নিজের করা অন্যায়ের জন্যই তার আজ এই অবস্থা।
সিরাজুল ইসলাম বিয়ের আগে অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। তার বাবা অহিমা বেগমের সাথে তার বিয়ে দেন। তাই সিরাজুল ইসলাম এই বিয়ে মানতে পারেন নি। সেইসময় সিরাজুল ইসলাম বেকার ছিলেন জন্য নিজের বাবার বিরুদ্ধে যেতে পারেন নি। বাধ্য হয়ে অহিমা বেগমের সাথে সংসার করছিলেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় অহনার জন্ম হয়। ততদিনে সিরাজুল ইসলাম চাকরি পেয়ে যায়। তখন আর নিজের বাবার বিরুদ্ধে যেতে তার ভয় হয়নি। তাই নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে শহরে চলে যায়। সেখানে গিয়ে বিয়েশাদি করে নতুন সংসার সাজায়। এরপর আর বাড়ির কারো খোঁজ নেন নি তিনি। নিজের মা-বাবা, স্ত্রী, মেয়ে সবার প্রতি তিনি অবিচার করেন। এতসবকিছুর পরেও তার মা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কারণ মায়েরা এমনই হয়। সন্তানরা তাদের সাথে যতই অন্যায় করুক তারা সন্তানদের ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু অহিমা বেগম তো তেমন নন। তিনি জীবনে কত কষ্ট সহ্য করেছেন সেটা শুধু নিজেই জানেন। সমাজের লোকের নানান কথা শুনতে হয়েছে তাকে। তার মা-বাবা তো কতবার তার বিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অহিমা বেগম সব সহ্য করে গেছেন।
এদিকে সিরাজুল ইসলাম এতদিন ধরে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সংসার করেছেন। তাদের কোন সন্তান হয়নি। আসলে প্রকৃতি ঠিকই প্রতিশোধ নেয়, এটাই তার প্রমাণ। কিছুদিন আগে সিরাজুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী একজন বড়লোক ব্যবসায়ীর সাথে ভেগে গেছে। তাই এখন সিরাজুল ইসলাম তার ভুল বুঝতে পেরে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। তার আশা তার পরিবার আবার তাকে সাদরে গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন।
অহিমা বেগম সব রান্নাবান্না করে আদিলের পরিবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ততক্ষণে আদিল তার মা-বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হয়।
আদিলের মা-বাবা অহনার বাড়ি দেখে বলে, শেষে কিনা এই হাভাতে ঘরের মেয়েকে বউ হিসেবে পছন্দ করেছিস। তা যৌতুক পাবো তো। আমাদের কিন্তু তিন লাখ টাকা চাই চাই।
আহ আমমা চিন্তা করছ কেন? দেখবে অনেক বেশি টাকা পাবো। এখন তোমরা চলো আলাপ করে নেও। টাকা পয়সা অন্য একজন দেবে।
কে দেবে টাকা?
ঐ যে ঐ ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছ ও হলো অহনার খালাতো ভাই। অনেক বড়লোক। ও টাকা দেবে। তোমরা এখন চলো আমার সাথে। গোটা বাড়িতে কত সুন্দর সুবাস বয়ে যাচ্ছে। মনে হয় অনেক সুন্দর সুন্দর রান্না হয়েছে। পেট ভর্তি করে খাও।
খেতে তো হবেই। আমরা খাবো আর বিয়ের কথা পাকা করব। খাওয়ার জন্যই তো এসেছি।
সবাই মিলে এগিয়ে যায়। অহিমা বেগম সবাইকে বসতে দেন। আলাপ চারিতা শুরু হয়।
আদিলের মা জানতে চায়, এখানে মেয়ের বাবা নেই? মেয়ের বাবা ছাড়া বিয়ের কথাবার্তা কিভাবে বলব?
সিরাজুল ইসলাম এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুক্ত তার কাছে গিয়ে বলে, খালু আপনি আসুন। আপনাকে ছাড়া বিয়ের কথাবার্তা কিভাবে হবে?
আমি গেলে যদি অহিমা রাগ করে।
এখন খালামনির কথা ভাববেন না। অহনার কথা ভাবুন। ও তো আপনার মেয়ে। আজ অব্দি ওর প্রতি কোন দায়িত্বই তো পালন করেন নি। আজ অন্তত মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব তো পালন করুন।
সিরাজুল ইসলাম গিয়ে অহিমা বেগমের পাশে বসে পড়েন। অহিমা বেগম বিরক্ত হলেও সবার সামনে কিছু বলতে পারেন না।
সিরাজুল ইসলাম সবার সাথে কথাবার্তা বলেন। এরপর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আদিলের মা-বাবা যৌতুকের কথা টানেন।
তো এখন আসল কথায় আসা যাক। আমরা যে মেয়ে নিয়ে যাবো তার জন্য তো ডিমান্ড আছে একটা৷ আমরা তিন লাখ টাকার কম কিন্তু মানব না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, আচ্ছা কোন ব্যাপার না। আমার তো একমাত্র মেয়ে। আমার জমানো যা টাকা আছে সেটা দিয়েই
অহিমা বেগম সিরাজুল ইসলামকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, কোন যৌতুক দিতে হবে না। আমি নিজের মেয়েকে বিক্রি করছি না যে টাকা দেবো। আমার মেয়ে আমার কাছে এত বোঝা হয়ে যায়নি যে টাকা দিয়ে ওকে বিক্রি করব। আমি এক টাকাও দেবো না। এতে যদি বিয়ে হয় হবে আর না হয় না হবে। আমার তাতে কিছু যায় আসেনা। আর আপনাদের বলছি নিজের ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছেন নাকি তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা করাচ্ছেন? টাকা কেন লাগবে বিয়ের জন্য?
আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করছেন।
যদি আপনাদের তা মনে হয় তাহলে তাই। এখন আমার সময় নষ্ট না করে চলে যান আমার সামনে থেকে। আপনাদের যে কষ্ট করে এতকিছু রান্না করে খাওয়ালাম সেটা ভেবেই এখন আমার রাগ হচ্ছে। যাওয়ার আগে খাবার বাসন সব ধুয়ে দিয়ে যাবেন।
কথাটা বলে অহিমা বেগম উঠে দাঁড়ান। আদিলের মা-বাবা তাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। মুক্ত চেয়েও কিছু করতে পারে না। সিরাজুল ইসলাম বলেন, তুমি ওদের এভাবে বললে কেন? আমি তো বললাম আমি টাকা দেবো।
এতদিন যখন মেয়ের কথা ভাবেন নি তখন এখন আর ভাবতে হবে না। চলে যান আমার সামনে থেকে। আমি আপনাকে আর সহ্য করতে পারছি না।
আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?
কখনোই না।
অহিমা বেগম নিজের ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দেন।
#চলবে