নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
2

#নৈশব্দে_নিরুপমা
#শেষ_পর্ব
-তামান্না

–রাফি:হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেলে রিফাকে।হঠাৎ টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলায় ভয় পেয়ে যায় রিফা।
নেশা জড়া কন্ঠে বলে কেন আমায় বুঝো না?একটু বুঝলে আরও আগেই সুন্দর হতো।
–রিফা:মুখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে,, তাহলে আপনি কেন আমার সামনে পাগলামি করলেন না?আগে কেন আসলেন না?তাহলেই তো মনে জুলুম করে আরেক জন আসতে চেষ্টা ও করতে পারতো না।
–রাফি:জোর পূর্বক হেসে বলে,, এসেছি আরও আগেই আবেগে পাগলামি তে না,, ভালোবাসায়।কিন্তু তুমি সেটা দেখতে পাও নি।
রিফা তড়িঘড়ি করে দূরে সরে দাঁড়ায়। রাফি আবার কাছে টেনে নেয়।
–রিফা:আপনার কি হয়েছে?এমন করছেন কেন?তাছাড়া আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার দুশ্চরিত্র সম্পর্কে জানলে কষ্ট পাবে।
–রাফি :শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে আপাতত কষ্ট পাক।হুট করে কপালে চুমু খেয়ে বলে ভালোবাসি রিফু।প্রথম থেকে শেষ অব্ধি তোমাতেই আমি।
মজা করে বলে অবশ্য মাঝখানের এই ভুলের জন্য বেশি করে ভালোবাসা দিলেই ভুলে যাবো।রিফা হাসতে হাসতে কয়েক টা কিল মারে।

–নিরু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে আসবো?তাড়াতাড়ি করে দুজনে সরে দাঁড়ায়।ভিতরে এসে মুচকি হেসে বলে,,হালালে আবদ্ধ করে তাড়াতাড়ি পেতে চাইলে নিচে আসেন হবু বর কনে।
–রিফা:এগিয়ে এসে বলে মানে?
–নিরু:মানে হলো রাফির আর ছুটি নেই তোমার ভাইয়ার ও শহরের বাইরে কাজ পড়ছে সুতরাং বিয়ে টা কালকেই হয়ে যাবে।কাবিন বিয়ে তারপর..
–রিহান :এগিয়ে আসতে আসতে বলে তারপর দুই মাস পর দুই ভাই বোন মিলে আবার বিয়ে করবো।
–রিফা:কিহ?আমি আবার বিয়ে করবো কেন? একটা বর হলেই হয়ে যাবে আমার।এতো বিয়ে করতে পারবো না বাবা!
রিফার কথায় সবাই হেসে ওঠে।
.
.
–রাত এগারোটায় বউ নিয়ে চলে যায় রাফি।তেমন বেশি আয়োজনে বিয়ে হয় নি।ঘরোয়া ভাবেই কাবিনের কাজটা শেষ করা হয়েছে।রিফার বিদায়ের পর,,সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসে নিরু।
–কিন্তু রুমের ভিতর থেকে দরজা আটকানো।এমনিতেই পড়নে শাড়ী এবার ভীষণ গরম লাগছে।কয়েক বার দরজায় টোকা দেওয়ার পর দরজা খুলে দেয় রিহান।ভিতরে প্রবেশ করে দেখে রুমটা অন্ধকার।এগিয়ে গিয়ে লাইটটা অন করতে গেলে এক টানে কাছে টেনে নেয় রিহান।নিরু ভয় পেয়ে যায়।শাড়ীর কুচি খুলে গেছে।
–নিরু:ছুটাছুটির চেষ্টা করে বলে,,আর একটু হলে দুজনেই পড়ে যেতাম।কি হতো তখন?
–শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় রিহান।রিহানের এমন স্পর্শে স্তব্ধ হয়ে যায় নিরু।চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে।
–নিরু:ছছছাড়ুন শশশুতে যযযাই।
–রিহান :কোলে তুলে নেয় নিরুকে।তারপর এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।উঠে লাইট অন করতে এলে নিরু হাত ধরে আটকে নেয়।এমনিতেই লজ্জা লাগছে তারপর লাইট অন করলে তো লজ্জায় মরেই যাবে।

–রিহান শুতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরু।বুকে মাথা গুজিয়ে বলে,,শুরুতেই এমন হলে কি এমন ক্ষতি হতো?
–রিহান :নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,, মাফ করে দিও।হয়তো এতটুকু হয়েছে বলে আজকের দিনটা এতো সুন্দর।সহজে সব কিছু হয়ে গেলে তৃপ্তির মজা পাওয়া যায় না।
আজকের দিনে লজ্জা দিও না বউ।পবিত্রতার আরও একটু ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিবে কি?আমি যে বউয়ের তৃষ্ণায় কাতর হয়ে আছি আর কতো?
–নিরু:নিরু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে আমি মানেই তো পুরোটাই আমার বরের।এতে এতো অনুমতির কিছু নেই।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে ব্যাপারটা বেশি লেট হয়ে গেলো না?ছোট বোনের বিয়ের দিন বড় ভাইয়ের বাসর হলো।
–নিরু লজ্জায় হাসে।

–তারপর সুন্দর একটা একটা সম্পর্কের আরও একটা নতুন তৃপ্তির স্বাদ নেওয়া হলো।নিরুর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,আমি চাই আমার বউ সব সময় আমার উপর অধিকার খাটাক ভালো মন্দ চোখে চোখ রেখে মোকাবিলা করুক।আমি চাই না সব সময় #নৈশব্দে_নিরুপমা আমায় ত্যাগ করুক দূরত্ব বাড়াক।
–নিরু:হুম!আমি ও চাই আমার বর ভালোবেসে সব সময় আমায় নিরুপমা বলেই সম্বোধন করুক।তোমার মুখে নিরুপমা নাম শুনলে অদ্ভুত ভালো লাগে।
–রিহান :বুকের সাথে মিশিয়ে বলে আমার নিরুপমা।ভালোবাসা শব্দ টার সার্থক হলো আমাদের জীবনে।এতো দিন ভালো ছিলাম না,, শুনছো আমি আমার ভালোবাসা পেয়ে ভালো আছি।আমার সঙ্গী আজ আমার সাথে আষ্টেপৃষ্টে ভালোবাসাময় হয়ে আছে।
–নিরু রিহানের কথায় শুধু হাসে।প্রিয় ভালোবাসার পুরুষের বুকে মাথা রাখায় ভীষণ শান্তি।

——————————————— –এদিকে রাফিরা বাসায় পৌঁছে রাত সাড়ে এগারোটায়।রিফাকে নিয়ে বাইকে করেই ফিরে। পুরো চারপাশ ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
–রাফি:শ্বশুর বাড়িতে প্রথম পা দিচ্ছো অনুভূতি কেমন?
–রিফা:মোটে ও না,,আমি শ্বশুরবাড়ি বহু এসেছি সুতরাং অনুভূতি নেই।
–রাফি:বিয়ে কয়টা হয়েছে তোমার?কতো বিয়ে করেছো যে শ্বশুর বাড়ি বহু এসেছো?
–রিফা:আরে ভাই!কয়টা না আমি বলতে চাচ্ছি এই বাসায় তো বহু এসেছি।
–রাফি:কে ভাই?কিসের ভাই? কেমন ভাই?
–রিফা:তুমি বরং এক কাজ করো আমাকে তাড়াতাড়ি করে শ্বশুর বাড়িতে রেখে চলে যাও।তোমার সাথে থাকলে আমার শুধু ঝগড়ায় হবে এর থেকে ভালো আমাকে রেখে তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে।
–রাফি :তাহলে বিয়ে কেন করলাম?বিয়েই তো করলাম বউকে জ্বালানোর জন্য।আর আমার এতো দিনের অপেক্ষার জন্য প্রতিশোধ তো নিতেই হবে।
–এবার রিফা বাইকের পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথাটা রাফির পিঠে রেখে বলে,, শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো নিতে পারবে প্রতিশোধ?
–মাথাটা তুলে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখে রাফি মুচকি হাসছে।

–বাসায় পৌছানোর পর সব নিয়ম শেষ করা হলে রুমে দিয়ে আসে শ্বাশুড়ি।বাসায় মেয়ে মানুষ বলতে এই শ্বাশুড়িই আছে।রাফির কোনো ভাই বোন নেই।

–রুমে গিয়ে আগে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নেয়।রাফি আগে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর রিফা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে বলে,,তুমি চাকরিতে চলে গেলে কিভাবে থাকবো?এই বাড়িতে একটা মানুষ ও নেই তাছাড়া আন্টি ও তো আঙ্কেলের সাথে থাকে।আমি একা কিভাবে থাকবো?
–রাফি :তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নিলেই তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে,,মজা করেই কথা টা বলে ।কথাটা শুনে নিরুর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।চুপচাপ অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

–রাফি:ঘুম পেয়েছে
–রিফা:নাহ মানে হ্যা।
–রাফি:উঠে রিফার দিকে ঝুঁকে বলে আজকের দিনে ও তুমি নিরবের শোকে আমাকে দূরে রাখবে?
–রিফা:ফট করে উঠে বসে।তারপর কান্না করে দেয়। রাফি হাত ধরতে গেলে ঝটকা মারে।কান্না করতে করতে বলে এটা কিন্তু কথা ছিলো না।

–রাফি:কানে ধরে বলে প্লিজ থামো আর হবে সরি।প্লিজ সরি।
–রিফার কান্নার গতি আরও বাড়ে।
–রাফি:এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে সরি বউ।তুমি তো জন্মের সময় থেকেই আমার বউ আর এমনটা হবে না।আমাদের ভাগ্য নাম সবটাই তো একসাথে জোড়ে পাঠিয়েছে উপর ওয়ালা।আমি তো তোমাকে রাগানোর জন্য এই কথাটা বললাম।প্লিজ আর হবে না। তারপর রিফা ঠাস করে বুকে এসে পড়ে ঝাপটায় ধরে।সম্পর্কে পূর্ণতা নেমে আসে নতুন জুটির।
.
.
–সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে গোসল শেষ করে রিহান কে নিয়ে বের হয় নিরু।প্রথমে বাবার কবর তারপর নীলা আর ওর বরের কবর জিয়ারত করে।তারপর গিয়ে উঠে রাফিদের বাসায়।ভোরে বের হওয়ায় এখানে আসতে তেমন বেলা হয় নি।
রিফার পছন্দের কিছু খাবার নিয়ে এসেছে।সাথে মেহমান বাড়ির জন্য কিছু উপহার।
–রাফির আম্মু :তোমাদের সকাল সকাল পেয়ে ভীষণ খুশি হলাম।তোমরা বসো আমি নাস্তা করে আনছি।
–নিরু:মোটেও না।রিফা কই আন্টি আজকে আমরা দুজনে রান্না করবো আপনারা খাবেন।
–আন্টি:আসলে অনেক রাত করে এসেছে তো তাই ওঠে নি এখনো।রাফি উঠে ছিলো আমিই রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি ঘুমানোর জন্য।
–নিরু:আমি ডেকে আনছি আপনি ড্রয়িং রুমে বসুন আজকে মেয়েদের হাতের রান্না খাবেন।রাফির মা হেসে বলে এখন আমার মিষ্টি দু দুটো মেয়ে হয়ে গেলো।নিরু ও প্রতি উওরে হাসে।

–নিরু কয়েকবার দরজায় টোকা দেওয়ার পর উঠে দরজা খুলে দেয় রাফি।নিরুকে দেখেই চমকে যায়।
–নিরু:কই আমার ননদিনী হুম?এতক্ষণ কেউ ঘুমায়?উঠতে হবে তো তারপর আবার রেস্ট নিবে না হয়।
–রাফি কিছু বলতে যাবে তারপর আগেই চোখ যায় রিফার দিকে।কালকে রাতে গরম থাকায় রাফির টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়েই শুয়ে ছিলো।লজ্জায় জোর পূর্বক হেসে কোনো রকমে কাপড় নিয়ে বের হয়ে যায়।গেস্ট রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিবে।

–নিরু:কি গো রিফা উঠো।অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর উঠে বসে।লজ্জায় নিজেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে গরম করছিল বেশি তা..।
–নিরু:হয়েছে।এবার ফ্রেশ হয়ে আসুন জলদি। সবার জন্য দুজনে মিলে নাস্তা টা করবো।

–নতুন দুটি সংসার নতুন প্রাণ নিয়ে সতেজ হলো।ওদের এই পৃথিবীর যাত্রা দীর্ঘতম হোক।সকল ভুল বুঝাবুঝি আর অভিমান শেষ হয়ে নতুন সম্পর্ক স্থাপন হোক।ভালোবাসা ভালো থাকুক।ভালোবেসে ভালো থাকার জন্যই তো জীবন সঙ্গী।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

লগ ইন করুন গল্প পোকা. প্রস্থান?

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!