নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৩

0
5

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৩]
-তামান্না

–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??
–রিহান :দুই হাতে নিরুর দুই বাহু চেপে ধরে বলে সেটা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
–নিরু:মানুষ দেখছে ছাড়ুন!
–রিহান :দেখুক!তোমার পাড়ার মানুষজন যে তুমি কতোটা অসভ্য স্বামীর কথা অব্দি শুনো না।
–নিরু:আপাতত স্বামী স্ত্রীর কথা শুনছে না।রাগ করে চলে যাচ্ছে।
রিহান ছেড়ে দিয়ে কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
–রিহান :বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে বাসায় ফিরে চলো?
–নিরু:চলেন!
–রিহান :আমাদের বাসায়।
–নিরু:নাহ্।এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছেন আম্মু।
–রিহান :খানিকটা মন খারাপ করে বলে আচ্ছা।

–খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হয়ে যায় শ্বাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে।যাওয়ার আগে একবার ও নিরুর সাথে কথা বলে নি।
.
.
–এভাবেই বাবার বাড়ি তে এক সপ্তাহ কেটে যায়। রিহান ফোন ও করে নি একবার আসে ও নি।তবে মায়ের সাথে কথা হয়েছে নিরুর।আজকে শ্বশুর শ্বাশুড়ি রিফা ওদের বাসায় বেড়াতে আসবে।এবং নিরু কে নিয়ে যাবে।নিরুর মা ও এখন সুস্থ।

–নিশা:রিহান ভাইয়ার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?
–নিরু:তার সাথে কবেই বা ভাব ছিলো?
–নিশা:এতো প্রশ্ন করলে বাচ্চাদের ব্রেণ নষ্ট হয়ে যায় জানিস না?প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় উওর চাই।
–নিরু:মন খারাপ করে বেলকনির গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে বলে,, তুই আম্মু আর আব্বুর মতো কেউ আমাকে বুঝে না।রিহান সে তো প্রশ্নই আসে না।
–নিশা:সমাধান করা যায় না?
–নিরু:চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে ভয় পাওয়ার কন্ঠে বলে তুই কি ডিভোর্সের কথা বলছিস?আমি আমার জীবন থাকতে এসবে যেতে পারবো না।
–নিশা:বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে বোকা।বাবা মায়ের বড় সন্তান যে বোকা থাকে তা তোকে দেখে শিউর হলাম।সমাধান মানেই কিন্তু বিয়োগ নয়।বিয়োগে বিচ্ছেদ আর সমাধানে শান্তি।মিলন বুঝলি।আমি বলছি প্রকাশ কর কাছে টেনে নে দেখবি সুখ কাকে বলে।

–রিফা:ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে শুনে ফেলেছি। বুঝলে ভাবি,তোমার বিচ্ছু বোনকে বরং বিয়ে দিয়ে দাও বেচারি সুখের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকতে চাচ্ছে।
–নিশা:বোনকে ছেড়ে দিয়ে বলে বাজে চিন্তা ভাবনার লোকজন কোথাকার।খারাপ লোক সর।
–নিরু:হয়েছে এবার থামো।কখন এলে?আব্বু আম্মু কোথায়?
–রিফা:বিয়াই বিয়াইনরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন।

–নিশা:ভাইয়া আসে নি?
–রিফা:চোখ টিপ দিয়ে বলে বাসায় কাজিন এসেছে একা রেখে আসতে চায় নি।আমার মামাতো বোন ভাইয়ার সাথে বন্ডিং ভালো তাই আড্ডা দিচ্ছে।
–নিশা:কি বলিস?দেখতে কেমন রে?একা একটা বাড়ি তে ছেলে মেয়ে, একা কিভাবে রেখে এলি?
ইশ আমার তো ভয় করছে একটা মাত্র বোনের জামাই বল।
–নিরু:তোরা থামবি।রাগ দেখিয়ে চলে যায়।

–এদিকে রিহান ইচ্ছে করেই দূরত্ব তৈরি করেছে। অফিসের কাজেই ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। মামাতো বোন এসেছে বাসায় বেড়াতে সাথে ওর বর।বর হলো ওদের খালাতো ভাই। দুজনেই রিহানের ক্লাসমেট এবং বন্ধু।সুতরাং ভীষণ ভালো সম্পর্ক।
নিরুদের বাসায় অনেক বার যেতে বলেছে কিন্তু মাহিন(বর)একটু অফিসের কাজে ট্যুরে যাবে তাই মিরা(বউ)কে নিয়ে বের হবে।বিকেলে মিরা বাসায় চলে আসবে আর মাহিন ট্যুরে চলে যাবে।মাহিন ফিরে এলেই মিরা কে নিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরবে এই কয়দিন মিরা ওর ফুপ্পির বাসাতেই থাকবে।

–নিরুরা বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।এসে দেখে কেউ নেই।তারপর রুমে চলে যায়।। পুরো রুম খুব সুন্দর ভাবে গুছাতে থাকে। পুরো রুম এলোমেলো হয়ে আছে।
–রিফা :কি করছো?
–নিরু:তোমার খাচ্চোর ভাই কি অবস্থা করে রেখেছে দেখো!
–রিফা:ওহ আচ্ছা!এখানে মিরা আপু ভাইয়া আড্ডা দিয়েছে এই কয়দিন।বাসায় ফিরে নি আপুর সাথে বাইরে আছে।
–নিরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার কাজ করতে থাকে।এই মিরা টা কে দেখতে হবে তো।আচ্ছা এটাই কি তার বালিকা প্রেমিকা নাকি?কিছু একটা ভেবে বলে।

–নিরু:আচ্ছা রিফা তোমার মিরা আপুর বয়স কেমন দেখতে কেমন গো?
–রিফা:কোনো রকম হাসি আটকে রেখে বলে,, ভাইয়ার বয়সীই তবে ধবধবে ফর্সা।চেহারা কাটিং ভালোই।
–নিরু:ওঁরা প্রতিদিনই বাইরে বের হয়?
–রিফা:হ্যাঁ!কলিং বেলের শব্দে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় রিফা।
.
.
–রিহান :খাবারের প্যাকেট গুলো ড্রয়িং রুমে রেখে বলে খাবার নিয়ে এসেছি সবার জন্য।নিরু রান্না ঘরে থেকে সবটা শুনে।
–রিফা:এতো রাত হলো যে?
–রিহান :হয়েছে এমনি।সর বলে রুমে চলে যায়। মিরা আগেই চলে গেছে।
–রিফা:ফিসফিস করে বলে বউ কিন্তু চটে আছে।
–রিহান :ফিসফিস করে বলে কেন?
–রিফা:মেয়ে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরছো বলে।তারপর মিটিমিটি হাসতে থাকে।রিহান ও মুচকি হেসে চলে যায়।

–এদিকে রেগে রেগেই খাবার গুলো খুলে রাখে।রিহানের চেহারা খানা দর্শন করার জন্য রুমে আসে।
–রিহান :ফর্মাল ড্রেস আপেই শুয়ে আছে।নিরুকে দেখে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে, তুমি? তুমি কখন এলে?
–নিরু:সেটা না জানলে ও চলবে।বউ তো আর চারপাশে কম অভাব পড়ছে না!
–রিহান :সেটাই তাহলে তুমি আসলে কেন?আমি তো বলিনি তোমায় প্রয়োজন।
–নিরু:তেড়ে গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে বলে এখন তো প্রয়োজন হবেই না।বিয়ে করার সময় তো তা মনে হয় নি।তারপর আবার হঠাৎ করেই নরম গলায় বলে,আসলে আমারই ব্যর্থতা।মায়ায় জড়াতে পারি নি।আমি শুধু কলঙ্ক বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছি ভালোবাসা নয়।হুট করে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।রিহান স্তব্ধ হয়ে গেছে।পাঁচ মিনিট এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

–নিরু কতক্ষণ দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে।তারপর চোখ মুছে বের হয়ে আসে রুম থেকে।

–মাথায় লম্বা করে ঘুমটা টেনে চুপচাপ সবাই কে খাবার বেড়ে দেয়।সবাই খেতে বসেছে রিহান ও।তবে মিরা রুম থেকে বের হয় নি।
–শ্বাশুড়ি :নিরু ও বসে পড়ো একসাথে খেয়ে ফেলি সবাই।
–নিরু:আমি খাবো না।ভালো লাগছে না আম্মু।
–রিহান উঠে হাত ধুয়ে চুপচাপ চলে যায়।
–শ্বশুর :এর আবার কি হলো?
–নিরু:খাবার রুমে দিয়ে আসবো আব্বু।

–সবাই খেয়ে চলে গেলে সুন্দর করে গুছিয়ে খাবার প্লেটে নিয়ে রুমে আসে নিরু।অন্য দিকে ঘুরে আছে রিহান চুপচাপ প্লেট টা রেখে বলে খাবার রেখে গেলাম। রিহান এদিকে ফেরার আগেই বেড়িয়ে যায় নিরু।
নিরু আজকে রিফার সাথে থাকবে বলে ওর রুমে চলে এসেছে।
–রিফা:ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?
–নিরু:বিছানায় শুতে শুতে বলে, নাহ্।ভালো লাগছে না নিশাকে ভীষণ মিস করছি তাই তোমার সাথে থাকতে চলে এসেছি।তারপর শুয়ে শুয়ে দুজনে অনেক গল্প করে।

–এদিকে রিহান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে কিন্তু নিরু ফিরে আসছে না দেখে উঠে খুঁজে।কোথাও না পেয়ে রিফার রুমে আসে।এসেই লাইট অন করে ফেলে।
আচমকা লাইটের আলোয় উঠে বসে রিফা আর নিরু।
–রিহান:এই রুমে কি করছো নিরু?
–নিরু:ঘুমুতে এসেছি।
–রিহান:তুই একটু বাইরে যা রিফা আমার ওর সাথে কথা আছে।
–নিরু:তুমি বাইরে যাবে না রিফা।আর আপনি আপনার রুমে যান।
–রিহান:জোরে ধমক দিয়ে রিফাকে বলে, কিছু বলেছি আমি?
–রিফা:যেতে যেতে বলে,,কার ঝাঁজ কার উপর। ভাই তোদের ব্যাপারে হুদাই আমি ধমক খাচ্ছি কিন্তু মোড ভালো হলে একটা ট্রিট দিয়ে দিও।রিহান চোখ গরম করে তাকাতেই দৌড়ে বের হয়ে যায় রিফা।

–রিহান:রুমে চলো?
–নিরু:এই রুমে থাকবো।
–রিহান:বেশ!তাহলে আমি রিফাকে বলে দিচ্ছি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ুক।
–নিরু:আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।
–রিহান:বিছানায় বসে নরম ভঙ্গিতে বলে আচ্ছা! তুমি কি চাও?
–নিরু:কিছু চাই না!
–রিহান:তাহলে আলাদা রুমে আসলে কেন?যত যাইহোক স্বামী স্ত্রী আলাদা রুমে থাকলে শয়তান সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে।রাগ অভিমান সব করার অধিকার তোমার আছে কিন্তু আলাদা থাকার নেই।সেটা আমি দিবো না কখনো।
–নিরু:প্লিজ আর কথা বাড়িয়ো না তো।যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।তোমার থেকে আমি কোনো অভিনয় নিতে পারি না রিহান।কথাটা বলেই কান্না করতে করতে বসে পড়ে।

–সব সময় রিহান কে তুমি বলে ডাকলে ও সেই ঘটনার পর থেকে আপনি বলেই সম্বোধন করে নিরু।তবে অনেক দিন পর আবার নিরুর মুখ থেকে তুমি এবং নিজের নাম শুনে ভালোই লাগে।
–রিহান :কান্না করো না উঠো!
–নিরু:খানিকটা চিৎকার করে বলে,, ভালো লাগছে না বলছি তো!
–রিহান :রুমে চলো ভালো লাগবে।নিরুর হাতটা ধরে বলে চলো!
–নিরু:এক ঝটকায় হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে, আমায় ছুবেন না।
–রিহান :আচ্ছা!তাহলে কাকে পাঠাবো তোমায় ছুয়ার জন্য।
–নিরু:নির্লজ্জ পুরুষ।খারাপ লোক।তারপর হনহন করে রুমে চলে যায়।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে বোকা বউ আমার।
.
.
–রিহান :উঠো খেয়ে ঘুমাবা।
–নিরু:খাবো না।
–রিহান :আরে খাও!বিয়ে তো আরেক টা করতেই হবে।রোগা কাউকে কি আর তখন কেউ বিয়ে করবে?
–নিরু:আমার জন্য আপনার না ভাবলে ও চলবে।
–রিহান :উঠো তো বলেই এক টানে বসায় দেয়।তারপর জোর করে মুখে খাবার তুলে দেয়।মুখে দিলে ও এভাবেই বসে থাকে।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকে।এক পর্যায়ে হেঁচকি উঠে।রিহান তাড়াতাড়ি করে পানি এনে দিলে ও দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে বমি করে দেয়।

–রিহান ও অস্থির হয়ে যায়।নিরুর পিছনে যেতে নিলেই ওর ফোন বেজে ওঠে।তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার।

–রিহান:সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত মানুষের গলার শব্দ শুনতে পায়।কিছু একটা শুনে হাত থেকে ঠাস করে ফোন টা নিচে পড়ে যায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে