নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১২

0
3

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১২]
-তামান্না

–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।
কোনো কথা না বলে মন খারাপ করে চলে আসে।চুপচাপ বেলকনিতে চলে যায়।
–কিছুক্ষণ পর রিহান চুপচাপ এসে নিরুর পিছনে দাঁড়ায়।
–রিহান:তুমি কি চাচ্ছো এখনই ফোন করে নিয়ে আসবো নিরবকে?নাহ মানে আমাকে মে’রে ফেলার জন্য।আচমকা এসে রিহানের গলার শব্দ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।বুকে থুতু দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,আপনাকে কেন মারবে?এরচেয়ে ভালো এসে আমাকেই বরং মেরে দিয়ে যাক।

–রিহান:এমা তোমাকে কেন মারবে? আর আমি দিবো কেন?আমি তো তোমায় ভালোবাসি।তুমি তো আর আমায় ভালোবাসো না।এতে তো তোমারই লাভ।
–নিরু:কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাইরে তাকিয়ে বলে ভালো তো আমি নিজেকে ও বাসি না।বরং ক্ষতিটা আমারই হোক।
–রিহান:তোমার কেন নিজেকে ভালোবাসতে হবে? তোমাকে ভালোবাসার জন্য তো আমি আছি তাই না!
–নিরু একবার পিছনে ফিরে রিহানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।তারপর আবার ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, আপনার মতো সুদর্শন যুবকের মুখে কুৎসিত মানুষ কে ভালোবাসা মানায় না।আপনি বরং সাদা ধবধবে নতুন একজন বালিকার প্রেমে পড়ুন এতে মনের খায়েশ মিটবে।

–রিহান :স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,, আর?
–নিরু:পছন্দ হওয়ার মতো কথাটাই বললাম!
–রিহান :হুম!আর আসলেই তো তুমি অসুন্দর তোমায় কেন ভালো বাসতে যাবো?সেদিন সত্যিই বলেছি।রিহানের এমন কথা শুনে পিছনে ছলছল চোখে ঘুরে তাকায় নিরু।
রিহান কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।ইচ্ছে করেই নিরুকে হার্ট করার জন্য কথা টা বলে রিহান।আর দূরত্ব নয় কাছে আসার জন্য খানিকটা আঘাত কিংবা কষ্ট দেওয়া দরকার।মানুষ ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সুতরাং ব্যথা দেওয়া টা ও জরুরি।

–আজকে রাতে আর রিহান নিরুর রুমে ফিরে আসে নি।গেস্ট রুমে থেকে গেলেও নিরু জানে না রিহান বাসায় আছে কি না!

–খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে এসে অপেক্ষা করে নিরু।চিন্তায় কিছু খেতে ও পারে নি।কেউ জানে ও না রিহান কোথায়।নিরু প্রায় অর্ধেক রাত অব্দি অপেক্ষা করে, ইচ্ছে করছিল ফোন করে জানতে তবে করে নি।
মনে পড়ে তারপর অপমান করা পরিস্থিতি চারপাশ মানুষের তাচ্ছিল্য,, যা আজকে নিজের মুখে স্বীকার করেছে রিহান,, সবটা মন থেকেই করেছে তাহলে!
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে শুয়ে পড়ে।মনে মনে বলে নতুন করে মায়ায় জড়াবে না।এমনি যা জন্মেছে তা মৃত্যু ব্যতীত মুছে ফেলা সম্ভব নয় সুতরাং এর পরিধি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না
.
.
–সকাল সকাল মায়ের ফোন পেয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ি মায়ের বাসায় পাঠায় নিরুকে।নিরুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে একা নিশা সামলাতে পারছে না।সারা রাত রুমে না ফেরায় নিরু ভেবেছে রিহান বাসায় ফিরে আসে নি।
তাই আর বলা হয় নি রিহান কে না বলেই চলে আসে।শ্বাশুড়ি বলে দিয়েছেন এক সপ্তাহ থেকে আসতে।

–নয়টায় ঘুম থেকে ওঠে জানতে পারে নিরু বাসায় নেই।রিহানের প্রচুর রাগ হয়।ওর বউ ওর থেকে অনুমতি না নিয়ে বাসায় চলে গেলো? ঠিক ঠাক ভাবে শায়েস্তা করেই ছাড়বে।
রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।যাওয়ার সময় মা বলে দিয়েছে যেন নিরুদের বাসায় চলে যায়।

–নিরু বাসায় এসে নিজের হাতে রান্না করে মা আর বোনকে খাওয়ায়।মায়ের জ্বর হয়েছে।তাছাড়া শরীর ও ভীষণ দূর্বল।এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিয়েছে।আসার পর থেকে হাজার টা প্রশ্ন রিহান কে বলে এসেছে কি না। আসে নি কেন? নিরু কোনো রকম কথা কাটিয়ে নিয়েছে।বড় সন্তান ভীষণ আদুরে সুতরাং বাবা মায়ের এক্সপেকটেশন ও থাকে বেশি।
এতো দিন এই বাসায় অভ্যস্ত হলেও আজকে কেন জানি ভালো লাগছে না নিরুর।ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে শূন্যতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।

–শ্বাশুড়ির খোঁজ ফোনে নিয়ে নিয়েছে রিহান।তারপর অফিসের কাজ শেষ করে কিছু কেনাকাটা করে হাত ভরে নিয়ে চলে যায় শ্বশুর বাড়ি।
এতো রাতে কলিং বেলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে আসে নিরুর।নিশাকে মায়ের পাশে বসিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।রিহান কে দেখে হঠাৎ ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি পিছন দিকে ঘুরে ওড়না টেনে মাথায় কাপড় দিয়ে নেয়।বাসায় থাকায় মাথায় কাপড় ছিলো না।পিছনে ফিরেই বুকে থুতু দিয়ে সামনে ঘুরে তাকায়।নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি এতো রাতে?
–রিহান:সোফায় ব্যাগপত্র গুলো রেখে আবার গাড়ির কাছে চলে যায় পিছন পিছন নিরু ও আসে।নিরু হাতে কিছু দিয়ে বাকি গুলো নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
–নিরু:এতো কিছু আনতে গেলেন কেন?
–রিহান :টাকা বেশি হয়েছে তাই!সরো বলে মিতার রুমে চলে যায়।

–নিরু:ফাজিল লোক।এই বাজে লোকের মোড মনে হয় না আমার জীবনে বুঝা হবে।

–মিতা:রিহান কে রুমে নিয়ে যা নিরু।ওকে কাপড় দে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।তারপর রিহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রিহান এসেই ওয়াশরুম থেকে পা ধুয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ে।

–নিরু:রাতে থেকে যাবেন?
–রিহান :হেসে তুমি চাচ্ছো?
–নিরু:আমি চাওয়ার কে?রাতে বাসায় না ফিরলেই বা আমার কি?
–রিহান :তাই তো!
–নিরু:তারপর কি করবেন?
–রিহান :বিয়ে তো করে নিয়েছি আপাতত রোমাঞ্চ করবো।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
–রিহান :ভয় পাই না।তারপর উঠে নিরুর হাত থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

************** ************* **************
–রাত এগারোটা নিরু মাত্রই নুডলস রান্না করে রুমে এলো।রিহান রাতে খানা খায় নি।মা ও খানিকটা সুস্থ নিশা পাশে আছে।তবে রুমে এসে দেখে ফোনে কথা বলছে রিহান।ভীষণ হাসিখুশি ভাবে কথা বললেও ভীষণ আস্তেই কথা বলছে।
–রিহান:সরি!আজকে আসতে পারবো না রাতে। অফিসের কাজে বাইরে আছি।এবার কথা টা জোরেই বলে।যেন নিরু শুনতে পারে।

–নিরু:মনে মনে কালকে রাতে তাহলে অন্য কোথাও ছিলো?
–রিহান :ফোন টা রেখে পিছনে ঘুরে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে তুমি কখন এলে?
–নিরু:আজকে রাতে যেতে পারছেন না সেই দুঃখ প্রকাশের এক মিনিট আগে।আর আপনার পায়ে কেউ বেঁধে রাখে নি সুতরাং যেতে পারেন।
–রিহান :হাসার চেষ্টা করে এগিয়ে এসে নুডলস এর বাটি হাতে নিয়ে বলে,,থাক!আজকে রেস্ট করুক।খুব সুন্দরী একটা অল্প বয়সী বালিকা গায়ের রং ধবধবে সাদা পেয়েছি।তুমি মনে হয় সেদিন মন থেকেই দোয়া করে ছিলে তাই এতো তাড়াতাড়ি পেয়েছি।ধন্যবাদ।তারপর খেতে বসে।

–নিরু:গম্ভীর কন্ঠে বলে,, বিয়ে করে নিন।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে অনুমতি দিচ্ছো?
–নিরু:সে অধিকার নেওয়ার প্রয়োজন নেই। হারামে না থেকে খানিকটা আরামের জন্য হলেও বিয়ে করে নিন।
–রিহান :বিয়ে করে কি করবো?
–নিরু:ড্রয়িং রুমের কর্ণার র্্যাগে সাজিয়ে রাখবেন।
–রিহান :তাহলে তো আগে তোমাকে রাখতে হয়।
–নিরু:খানিকটা মন খারাপ করে বলে আমি কি আর আপনার বউ নাকি?আমি ধবধবে সাদা বালিকা নই যে সাজিয়ে রাখলে ঘরটা সুন্দর লাগবে।
–রিহান :তাহলে তুমি কে?
–নিরু:আমি নিরুপমা।
–রিহান :বাটিটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলে মিসেস রিহান।এরপর সোজা লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।
.
.
–সারারাত ঘুম হয়নি নিরুর।ওর রুমের সোফাটা ও অনেক ছোট তাই শুতে পারে নি।রিহান বুঝতে পেরে ওকে নিয়ে ছাঁদে বসে আড্ডা দেয়। অবশ্য নিরু বলেছিল রুমে এসে শুয়ে থাকতে তবে রিহান শুনে নি।
ভোরের আজানের শব্দে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে রিহান।নিরু নামাজ শেষ করে গেস্ট রুমে খানিকটা জিরিয়ে চলে আসে রান্না ঘরে।নতুন জামাই একটু ভালো মন্দ তো করতেই হয়।আম্মু ও যখন অসুস্থ দায়িত্ব টা আপাতত নিরুই নিয়ে নিয়েছে।

–রান্না শেষ করতে করতে বেলা বারোটা বেজে গেছে।এরমধ্যে নাস্তা করে আম্মু আর নিশাকে দেওয়া হয়েছে তবে রিহান কে ডাকলে ও ওঠে নি।বেচারা শুয়েছেই মাত্র কতক্ষণ।
সব কিছু গুছিয়ে সালাত কাটতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিরুর।খানিকটা বেশিই কেটে গেছে।এমন বেখেয়ালি তো কখনোই হয় নি।তারপর রক্ত থামছে না দেখে ভয় পেয়ে যায়।চিৎকার করতেই আম্মু আর নিশা বের হয়ে আসে।রিহান ও মাত্র ই উঠলো শব্দ শুনে রুমের বাইরে এসে দেখে নিরু কান্না করছে।তাড়াতাড়ি করে ওকে ধরে রুমে নিয়ে যায়।

–নিরু চুপচাপ বসে আছে।আপাতত সবাই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–রিহান:দাঁড়িয়ে অন্য দিকে ঘুরে চোখের উপর হাত রেখে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
–নিরু:এএএএমন কককককরছেন কককেন?
–রিহান :দাঁতে দাঁত চেপে কি করছিলে রান্না ঘরে?এতো সুন্দর ভাবে হাতটা কাটলে কেন?
–নিরু:ভয়ে উঠে দাঁড়ায়।মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে রান্না করছিলাম।আম্মু তো অসুস্থ।
–রিহান এগিয়ে আসতে আসতে বলে কার জন্য?
নিরু পিছিয়ে যেতে যেতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।আমতা আমতা করে বলে, আপনার জন্য।আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেন?
–রিহান :দেয়ালের দুই পাশে হাত রেখে বলে,, আমি কি রাক্ষস?নাকি তোমার মনে হয় জীবনে কিছু খাই নি?
নিরু ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।রিহান পাশে রাখা মগটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ওয়াশরুমে চলে যায়।তারপর কোনো রকম কাপড় পাল্টে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

–নিরু দৌড়ে পিছন পিছন এসে বলে কোথায় যাচ্ছেন?এই দুপুরে কেউ বের হয়?তাছাড়া খাওয়া দাওয়া ও করেন নি।খেয়ে যান।
–রিহান :তাই তো!আমি তো কয়েক হাজার বছরের অভুক্ত আমাকে খাওয়ানোর জন্য হাত পা পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে