নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৯

0
2

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৯]
-তামান্না

–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
–রিহানের আব্বু :আচ্ছা!তোমরা কথা বলে আসো তবে উওর টা কিন্তু হ্যাঁ – ই চাই!নিরু কিছু বলে নি চুপচাপ উঠে আগে আগে ছাঁদে চলে যায়।

–রিহান:বলো?
–নিরু:বিয়ে হবে?
–রিহান:সত্যি?খুশি হয়ে বলে,, সত্যি বলছো?
–নিরু:আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, বিয়ে হবে কি না?
–রিহান:এটা কেমন কথা?তুমি বিয়ে টা হোক চাও না?
–নিরু:যেহেতু ইচ্ছে সিদ্ধান্ত সবটাই বড়রা নিয়েছে বিয়ে করে সংসার টা আমি তাদের সাথেই করতে চাই।আপনার সাথে নরমাল স্বামী স্ত্রীর মতো নয়।
–রিহান:হোয়াট?
–নিরু:এরপর যদি না করতে চান আমার কিছু করার নেই।তবে আপনার সাথে সংসার এক রুম এক বিছানা আমি ভাবতে ও পারছি না।কারণ ঠকে যাওয়া মানুষের মনে আশঙ্কা থাকে বেশি,, ঠকে যাওয়ার।বিশ্বাস টা সহজে আগের মতো স্থাপন হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে এবং ভেবে বলে,, যাইহোক আমি এতো কিছু চাই না।তুমি আমাকে বিয়ে করছো এটাই না হয় আমার হয়ে থাকুক বাকি সব তোমার ইচ্ছে।আর উপর ওয়ালা চাইলে সবকিছু অবশ্যই সহজ হবে।তুমি অন্য কারো হবে না এটা তো নিশ্চিত থাকবো।
–নিরু:এভাবে বিরক্তি আসলে ছেড়ে দিতে পারবেন আমার কোনো বাঁধা কিংবা আপত্তি থাকবে না।আমি আমার মতামত জানালাম বাকি দায়িত্ব আপনার,,কিভাবে সবাই কে ম্যানেজ করবেন।
–রিহান:বিয়ে টা তো করছো?
–নিরু:শুধু মাত্র বড়দের ওয়াদা পালনের লক্ষ্যে।আমার কাছে আমার দৃষ্টিতে আপনি বলতে সেদিন কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনোর মতো চরিত্রের।ভালো এবং বিশ্বস্ত ভাবার মতো কোনো কারণ কিংবা ঘটনা এখন অব্ধি আমার চোখে পড়ে নি। নিরুপমা সব সময় একরকম আছে তবে খানিকটা চালাক হয়েছে।বুঝতে শেখেছে মানুষ,, এখন মানুষ পড়তে পারে তবে অতো সময় কই?তাই পড়া বা দেখার ঝামেলায় না গিয়ে সোজা এড়িয়ে চলে।

–রিহান:আমার বর্ণনা আমি মুখে নয় কাজে দেখাতে চাই যেন ছেড়ে যাওয়ার বদলে ঝাপটায় ধরতে বাধ্য হও।
–নিরুপমা এবার তাচ্ছিল্যের মতো হেসে বলে,, আপাতত আপনি আপনার দিকটা সহজ করুন।না করতে পারলে দায়ভার আপনি নিয়ে সমাপ্ত করবেন বলে আশা করি।
–রিহান:সে গুড়ে বালি।সিদ্ধান্ত নড়চড় হচ্ছে না শিউর থাকো।বাকিটা আমার ব্যাপার ওকে?এরপর আর রিহানই দাঁড়ায় নি।আগে আগে নিচে নেমে আসে।কোনো রকম একটা অজুহাত দেখিয়ে বের হয়ে যায়।রাতে নিরু আর ওর সম্পর্কে কথা বলবে বলে যায়।আপাতত বাদ দিয়ে নিশ্চিত থাকতে বলে।

–নীলা :আমি নিরুর বাসায় দরকারে এসেছি আম্মু।চলে আসবো সন্ধ্যার আগে।
–আম্মু :এই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।তোর বাবা রাগারাগি করছে তোর উপর।
–নীলা:ফোন টা ঘুরিয়ে অন্য কানে নিয়ে বলে,, আমি বলেছি তো গ্রাজুয়েশন শেষ না করে এসবে আমি নেই।তারপর ও কেন এভাবে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছো আম্মু?
–আম্মু :তোর আব্বু বাসায় এসে না পেলে অশান্তি করবে,, তাড়াতাড়ি চলে আয়।ছেলে তোকে এমনিতেই পছন্দ করেছে এবার বাড়ির লোক দেখে ডেট ঠিক করবে।তারপর তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা বলে কল কেটে দেয়।নীলার ভীষণ ভয় হচ্ছে।হাত পা কাঁপছে।হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিবে তার ও তো রাস্তা নেই।রিফাত তো হ্যা না কিছুই কখনো বলে নি।বাইরে এসেছিল কথা বলার জন্য।এখানে দাঁড়িয়েই নিরু কে টেক্সট করে বের হয়ে যায়।একটা রিকশা নিয়ে নেয়।যদিও রিকশায় করে বাসায় যেতে সময় লাগবে অনেক বেশি,, সি এন জি করে গেলে তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু ইচ্ছে করছে না অনেক গুলো মানুষের সাথে বসে যেতে।অস্বস্তি হবে যে।

–খানিকটা ভেবে রিফাতের নাম্বারে কল করে।কিন্তু বারবার রিফাত ও কল কেটে দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হচ্ছে।
তারপর পাঁচ মিনিট পর রিফাত কল ব্যাক করে।
–নীলা :রিসিভ করেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।রিফাত ফোন রিসিভ করেই কান্না করে দেওয়ার মানে বুঝতে পারছে না।
–রিফাত:এই নীলু?কি হয়েছে?এভাবে বোকার মতো কান্না করছো কেন?
–নীলা :হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে বিয়ে দিতে চাচ্ছে সবাই।ছেলে পক্ষ আসছে।
–রিফাত:বাসায় ফিরলে কখন?তুমি না রিহানদের বাসায় গেছো?
–তারপর নীলা পুরো ঘটনা বলে।রিফাত তাদের কলেজ মাঠে নেমে পড়ার জন্য নীলাকে বলে কল কেটে দেয়।রিহান রিফাত আমান সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো বসে।

******
–রিফাত:দুই টা তাজা গোলাপ সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,, এতো কিছু জানি না শুধু জানি আজকে তোমার বিয়ে হবে না।তেজি রগচটা মেয়ে টা আমার সামনে ভীতু হয়ে যাওয়া,, আমার কথা মেনে চলা আর দেখতে অসম্ভব সুন্দরী না হওয়ার পরে ও আমি তোমায় ভালোবাসি।তুমি যদি রাজি হও তোমার বাবা মা কে রাজী করার দায়িত্ব আমি নিবো।
অতিরিক্ত বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো কি না জানি না তবে ভালোবাসার কোনো কমতি থাকবে না।এবার আর চুপচাপ থাকতে পারে নি নীলা।রিফাত কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।রিফাত ও সুন্দর করে আগলে রাখে নীলাকে আর মুখে প্রাপ্তির হাসি।

–এদিকে রিহান আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরে আসে।বাসায় আসতেই ওর আব্বু আম্মু ডেকে জিজ্ঞেস করে।
–রিহান:মাথা নুয়ে মন খারাপ করে বলে,, একটু সুযোগ চাই আব্বু আম্মু।আমাদের উপর যদি ছেড়ে দাও আমি অবশ্যই জয়ী হবো।সম্পর্ক টা একটু স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দিও।তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে।তবে নিরুকে জানাতে বারণ করে।খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে পারবে বললে ও রিহানের মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে রিহান নার্ভাস।তবে ওদের ভিতরে কথা বলাটা ও যুক্তিসঙ্গত নয়।চাপিয়ে জোর করে তো আর সব হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,, বিয়ে টা কম আয়োজন কম মানুষের শেষ করো আব্বু।এরপর না হয় করা হবে।তারপর নিজের রুমে চলে আসে।

*******
–রিহান :নিরুর ফোনে মেসেজ পাঠায়,,বিয়ে নিয়ে আর কোনো প্ল্যান থাকলে জানাতে পারো।
–নিরু:খানিকটা ভেবে বলে,,,কম মানুষ অল্প আয়োজন আর রাতের বিয়ে।
–রিহান:লুকিয়ে করতে চাচ্ছো?
–নিরু:হুম!আমি চাই এই শহর আকাশ বাতাস মানুষ সবাই না জানুক আমাদের পরিণেয় কথা।কেননা এটা কোনো সুস্থ এবং ভালো সঙ্গীর পরিণয় নয়।
–রিহান:তারপর?
–নিরু:বিরক্ত হলে কিংবা মোড পরিবর্তন হলে মুক্তি দিয়ে চলে যেতে পারেন।
–রিহান:তোমাকে স্পর্শ করতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে অনিশ্চয়তা,,আমি মেনে নিয়েই এগুচ্ছি।তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই তবে জড়িয়ে ধরার গাল, হাত স্পর্শ করার লোভ অবশ্যই আছে।তবে তুমি না চাইলে এই এটা ও হবে না,,এতে যতই কষ্ট আমার হোক।

–নিরু:কোনো দরকারী কথা থাকলে বলতে পারেন।আর আপনার স্পর্শ করা চিন্তা ভাবনা সব কিছু প্ল্যান মাফিক হয় সেটা সেদিন ই বুঝতে পেরেছি।কমপক্ষে জোর করে আমার সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে আসবেন না প্লিজ।এতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।এরপর আর কোনো রিপ্লাই আসে নি।
হয়তো দুই প্রান্ত থেকেই দুজনে কষ্ট পাচ্ছে।

–আজকে রাতেই বিয়ে।ঘরোয়া ভাবে কম আয়োজন আর কম মানুষের সাথেই শেষ করবে। নীলা সকাল সকাল এসে পড়েছে।নিরুকে বাসন্তী আর খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।যেহেতু ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে তাই বাসার সামনে বাগানেই করা হচ্ছে।
–নিশা:এই রঙে তোমায় দারুণ লাগছে আপু।
–নিরু:আপনার কাছে ঠিক কোন রঙে আমায় দারুণ লাগে না বলবেন আপা?
–নীলা:আমাদের প্রিয় মানুষ সব রঙেই আমাদের কাছে সুন্দর,, তাই না নিশা?
–নিশা:হুম।

–রিফা:নিরুকে ভিডিও কল করে।নিশা রিসিভ করে সুন্দর করে দেখাচ্ছে নিরুকে।শাড়ী পড়ে বসে আছে আর একেক করে সবাই হলুদ দিচ্ছে। রিফা নিজের দিকের ক্যামেরা টা অফ করে সাউন্ড মিউট করে ভাইকে দেখায়।
–রিহান:কি?
–রিফা:দেখো তোমার হবু বউকে কতো কিউট লাগছে।ইশশ কেন যে ছেলে হলাম না,,নয়তো আমিই বিয়ে টা করে ফেলতাম।করুন গলায় বলে,, ভাগ্য আমার সহায় হয় নি!
–রিহান:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, তবে ভালোই হয়েছে।সামনে আরও ভালো হলেই হয়ে যাবে।তারপর খপ করে ফোন টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়।বিশ মিনিট পর্যন্ত নিজের কাছে রাখে।আর সব কিছু বসে বসে দেখে।নিরুর ব্রু কুঁচকে থেকে হলুদ মুখে নেওয়া আর পানি দেওয়া মাথায় নিয়ম কানুন সবটাই বসে দেখে।এক পর্যায়ে একজন নিরুর লম্বা চুল গুলো খুলে দিতেই মাটি পর্যন্ত পড়ে।মোড়াতে বসে থাকার পরে ও মাটি তে পড়ে খানিকটা জমে আছে।নিরুর এতো লম্বা চুল এর আগে দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

–অথচ যখন রিহান বলতো আমার লম্বা চুল পছন্দ তখন নিরু এমন করতো যেন ওর চুল অনেক ছোট।এতো ঘণ লম্বা চুল কখনো বলে নি।

–এক পর্যায়ে কোনো সাড়া শব্দ ভিডিও কলে সামনে আসা না পেয়ে কল কেটে দেয় নিশা।

–তারপর একদম নরমাল ভাবে একটা কাতান শাড়ী আর দোপাট্টা সাথে কিছু গহনা আর হালকা সাজে সাজানো হয়।বিয়ের দিন এটুকু না হলে তো আর হয় না।
–নীলা :কানে কানে বলে,,বিয়ের পরে পিটিয়ে সোজা করে ফেলবি রিহান ভাই কে।যেন বাকি জীবনে কারো পাতা ফাঁদে পা না ফেলে।নিরু আর কিছু বলে নি।শরীর হাত পা কাঁপছে।না জানি কি অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে।

–রিহান সাদা শেরওয়ানি দামী ব্রান্ডের ঘড়ি আর কড়া ঘ্রাণের পারফিউম দিয়ে এসেছে।চুপচাপ ড্রয়িং রুমে মাথা নুয়ে বসে আছে।মেহমান বলতে বন্ধু বান্ধব আর বাইরের তিন চারজন লোক আর কেউ না।মন খারাপ করেই বসে আছে।সবাই হাসাহাসি এটা ওটা বলছে রিহানের কান পর্যন্ত যেন পৌঁছাচ্ছেই না।তারপর আবার একটু পরপর ঘাম মুছছে।

–নিরুকে এনে পাশে বসালে ও মাথা তুলে নি রিহান।
–রিফাত:একটু মুখ টা তুলে বস না ছবি তুলি।
–আমান:রিহান তুই কি নার্ভাস? এতো ঘামছিস কেন?আমানের কথায় বন্ধুরা সবাই একসাথে হেসে ওঠে।
এরপর রিহান মাথা তুলে বসে।এবং একবার আড় চোখে নিরুকে ও দেখে নেয়।যা দেখে আপনা আপনি মুখ টা ঠিক হয়ে যায়।খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফটাফট সবাই মিলে এক সাথে ছবি তুলে অনেকক্ষণ।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে