#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৮]
-তামান্না
–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।
–এরপর আর কারো সাথে কারো যোগাযোগ হয় নি।নীলার বাসা থেকে বিয়ের জন্য বলছে।কিন্তু নীলা রাজি হচ্ছে না এখন বিয়ে করতে তাই বিয়ে দিতে পারছে না।তারপর আবার আজকাল মেসেঞ্জারে প্রচুর কথা হয় রিফাতের সাথে। যদিও কেউ কাউকে প্রপোজ কিংবা মনের কথা বলে নি।তবে ফ্রী ভাবেই চলছে বন্ধুত্বের থেকে ও খানিকটা বেশি কথাবার্তা।
নীলা শিউর ও হতে পারছে না রিফাত সম্পর্কে,, রিফাত ওকে চায়?নাকি এমনি কথা বলে? এসব চিন্তায় এখন মাথায় ঘুরে।
********
–অবসরে দুই বোন মিলে পিকনিক করছে।নিজেরা রান্না করে খাবে আজকে।অবশ্য নিরুর রান্নার হাত ভীষণ ভালো।আর নিশা সাহায্য করে। নীলা কে বলে দিয়েছে নিরু দুপুরে যেন চলে আসে।এক সাথে খাবে ওঁরা।
প্রচুর গরম তারপর আবার আলগা মাটির চুলা।তবে এই বসন্ত কালে রোদ হলেও হালকা একটু বাতাস ভীষণ পছন্দ নিরুর।কোমরে ওড়না বেঁধে রান্না করছে,, গরমে শরীর মুখ ঘেমে একাকার। পড়নে প্লাজু আর ঢোলা কামিজ,,আর চুল গুলো খোঁপা করে আটকে রাখা।একদম অন্য রকম নিরু।তবে নরমালে বেশি ভালো লাগে নিরুকে,,মাঝে মধ্যে নীলা বলে,,তোর গঠন চেহারার সাথে নরমালই মানায়।নিরু ও এটাই বিশ্বাস করে তাই তো কোনো সাজগোছ ওর পছন্দ না তবে ভীষণ পরিপাটি।
–রিহান কে নিয়ে নিরুদের বাসায় ওর আব্বু আর রিফা এসেছে।যদিও মিতা জানে যে ওঁরা আসবে। রিহানের আম্মু ও আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে একলা অতোটাও হাটাহাটি করতে পারে না।
রিহান আর রিফা এসে শুনতে পায় দুই বোন ছাঁদে আছে।তাই চলে আসে।আর রিহানের আব্বু ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলে।
–রিফা তাড়াতাড়ি করে ডাক দিয়ে ছাঁদে প্রবেশ করতে নিলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রিহান।
–রিহান:ফিসফিস করে বলে,, চুপ।দেখি এই দুই পাগল কি করে।
রিফা আর কিছু বলে নি।নিরু আর নিশা হাসাহাসি করছে আর রান্না করছে।
–নিশা:তুমি কি জানো আপু?তোমায় এখন পুরো ভূতনির মতো লাগছে।
–নিরু:হয়েছে আমার দাদিমা আর হিংসে করে মিথ্যা বলতে হবে না।তারপর একটু ঢং করে বলে আমি জানি আমি কতো কিউট।
–তারপর খানিকটা থেমে মন খারাপ করে বলে,, আমি কি সত্যিই অসুন্দর নিশা?গায়ের রং কি বেশি চাপা?আমাকে কি পছন্দ করা যায় না?
–নিশা:এবার উঠে এসে নিরুকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি তো আমার চোখে সব চেয়ে সুন্দরী আপু।তোমাকে পছন্দ করা যায় ভালোবাসা যায়।তারপর দুষ্টুমী করে বলে খেয়ে ফেলা ও যায়।এবার নিরু হেসে হাতে থাকা চামচ টা পিছনে ঘুরিয়ে বলে এবার কিন্তু মাইর খাবি।নিশা আর নিরু দুজনেই হেসে ওঠে।
–রিফা:ফিসফিসিয়ে,,এবার হয়েছে তোমার লুকিয়ে দেখা?আমি কি এবার যেতে পারি সামনে?
–রিহান :মাথায় গাট্টি মেরে বলে যাহ্ ফাজিল।রিহানের সাথে সম্পর্ক থাকলে ও কখনো এভাবে নিরুকে দেখা হয় নি।সব সময় মাথায় হিজাব থাকতো।আজকে যেন একদম অন্য রকম নিরুকে দেখছে।গলা মাথা চুল পিছনে খানিকটা পিঠ এসব কখনো খুলে রাখে না বাইরে।বাসায় আসায় দেখা মিললো।তারপর চুপচাপ নিচে চলে যায়।সামনে আর যায় নি,, সুযোগে যাবে বলে।
–রিফা:পিছনে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে হাউউউউউ। হঠাৎ এমন শব্দে নিশা আর নিরু ভয় পেয়ে যায়।
–নিরু:খুশি হয়ে বলে,, খুব ভালো হয়েছে আমরা একসাথে খেতে পারবো।ঝুলাভাতি খেলতেছি একা খেতে মজা নেই দারুণ হবে।
–রিফা:ভালো সময় এসে পড়েছি বলো?
–নিশা:অবশ্যই ছোট সাহেবা।নিশার কথায় তিন জনেই একসাথে হেসে ওঠে।
–নিশা আর রিফা এসেছে রুমে।নিশা একেবারে গোসল করে প্লেট নিয়ে ছাঁদে যাবে রিফা কে নিয়ে। ওঁরা গেলে নিরু নিচে আসবে।এই ফাঁকে নিরু আলু ভাজা করে নিচ্ছে।
আজকের আইটেম গুলো হলো,, ভাত,আলু ভাজা,মুরগির গোস্তো আর ডাল সাথে ডিম ভোনা।
–রিহান এবার সুযোগ পেয়েছে চুপচাপ ছাঁদে চলে যায়।নিরুর পিছনে গিয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরুর তো মাথায় ও আসে নি যে কার সাথে রিফা এলো?এবার কোনো পুরুষ মানুষের গলা খাঁকারির শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিহান।হঠাৎ রিহান কে দেখে ভয় পেয়ে যায়।ভালো করে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়,, নাহ্ সত্যি ই তো দেখছি।
–নিরু:তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে মাথায় দিয়ে বলে আপনি?
–রিহান:হুম!বাড়ি বয়ে দেখা করতে চলে এলাম।এসে দেখছি প্রেমিকা আমার সত্যি সত্যি বউ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।আগের থেকে বেশ গুলুমুলু হয়ে গেছো কিন্তু।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে চুলা থেকে কড়াই টা নামাতে নামাতে বলে,, ছিহ্ মুখের কি ভাষা।
–রিহান:তাই!একটু ভালো ভাষা শেখানোর দায়িত্ব তো নিতেই পারো।
–নিরু:শুনুন আমি কোনো শিক্ষক নই।আর রইলো দায়িত্ব,,নিজের থেকে ও ভারী কারো দায়িত্ব নেওয়া যায় না।
–রিহান:তুমি আমায় মোটা বলছো?তবে কি জিম কিংবা ডায়েট করতে হবে?
–নিরু:সে সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?অসুন্দর মানুষের থেকে উপদেশ নিতে নেই,, ওদের উপদেশ গুলো ও না অসুন্দর হয়।কথা টা বলে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে নিরুর।এক টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,, এক কথার জন্য ঠিক কতোবার আঘাত করবে?কি চাও তুমি?
–নিরু:ছলছল চোখে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, মৃত্যুর মতো দূরত্ব।
–রিহান:এবার ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,, এটা কখনো সম্ভব না।তুমি থেকে যেয়ে শাস্তি দাও মাথা পেতে নিবো।
–নিরু:থেকে গেলে পৃথিবীর কোনো শাস্তিই অসয্যকর মনে হবে না।আর কিছু সম্পর্কে শেষ করে পূর্ণতার স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্ন।
–রিহান:নিরুর হাত টা ধরে বলে ভুল করেছি নিরু।সেদিন সবটা মিথ্যে ছিলো আমার ভিতর টা এমন নয়।আমি জানি আমার মনে শুরু থেকে তুমি গেঁথে ছিলে।
–নিরু:মনের মানুষ কে জোর করে ভুল বুঝে অসম্মান করা ব্যক্তির ভালোবাসার যোগ্যতাই নেই। কথাটা বলেই হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে যায়।
***************
–এরপর আর কেউ কারো মুখোমুখি হয় নি। রেজাল্ট বের হয়েছে।নিরু ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নামকরা ভার্সিটিতে চান্স পায় এবং ভর্তি হয়ে যায়।
বাসা থেকে যাতায়াত করা যায়,, নীলা ও চান্স পেয়েছে তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা।একসাথেই যাওয়া আসা করা যায়।
–এদিকে রিহানের ইচ্ছে করছে না দেশ ছেড়ে যাওয়ার।তাই ভার্সিটিতে চেষ্টা না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ এখানে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না।ফলে ব্যবসা টা সুন্দর ভাবে সামলানো সহজ হবে। বাবা আর মিতা আন্টি বলে দিয়েছে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে নয়তো নিরুর আশা ছেড়ে দিতে।আর বাবার ও ব্যবসায় সব সময় নিয়মিত না থাকায় খুব বাজে হাল।নতুন করে সবটা করতে হচ্ছে। সেই সুবাদে ভীষণ ব্যস্ত রিহান।মাঝে মধ্যে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করে এবং আড়াল থেকেই নিরুকে দেখে চলে যায়।এতো সময় ও তো হাতে নেই।
–মিতা:তোমার আন্টির জন্মদিন আজকে পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাবো।ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে এসো।নিশা আমার সাথেই যাবে রাত হবে ফিরতে।
–নিরু:আমি ও যাবো।ভার্সিটি শেষ করে না হয় চলে যাবো,,শুধু মাত্র তোমার বান্ধবীর ছেলে বাসায় না থাকলেই হয়ে যাবে।
–মিতা:খুশি হয়ে,, তোমার আন্টি আঙ্কেল ভীষণ খুশি হবেন গেলে।তারপর একেবারে তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।কালো একটা গাউন মাথায় সাদা হিজাব,, চাদরের মতো গায়ে মুড়ানো সাদা ওড়না আর একপাশে কলেজ ব্যাগ।চোখে নতুন ফ্রেমের চশমা।এটাই বেশি ভালো লাগে দেখতে নিরুকে।আগের থেকে ও খানিকটা ফর্সা আর মোটা ও হয়েছে।এখন মুখ টাও ভরে গেছে শুকনো লাগে না।গোল মুখে বড় বড় চোখ আর চোখে চশমা দারুণ লাগে দেখতে।
***********
–নিরু হাতে করে অনেক গুলো তাজা গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে বিকেলে চলে আসে আন্টির বাসায়।আন্টির আবার ভীষণ পছন্দ বেলি ফুলের মালা আর তাজা গোলাপ।অবশ্য এটা নিরুর ও ভীষণ পছন্দের।তবে আজকে সাথে নীলাকে ও নিয়ে এসেছে।
–কলিং বেলে চাপ দিতেই রিফা এসে দরজা খুলে দেয়।ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে সাথে কিছু মেহমান ও।আন্টি কে দেখেই মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।রিহানের আম্মু ও নিরুর মাথায় চুমু খেয়ে বলে এবার কিন্তু আমার মেয়ে সত্যি সত্যি বড় হয়ে গেছে।
নিরু আন্টির সামনে বসে বলে,, সারাজীবন ছোট থাকলে মায়েদের সেবা করবো কি করে?তারপর সবাই হেসে ওঠে।
–আঙ্কেল :তবে নিরু কিন্তু দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে,, এবার নিরু লজ্জা পেয়ে যায়।এরমধ্যে মাথা মুছতে মুছতে শিড়ি বেয়ে নিচে নামে রিহান।নিরুকে দেখতে পায় নি।বাবার পাশে বসে বলে,, তোমার মেয়ে কে এবার আমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিত হও তো আন্টি।আর ভালো লাগে না এতো লুকো…..।আর কিছু বলতে পারে নি নিরুকে দেখে চুপসে যায়।রিহানের থেমে যাওয়া দেখে বড়রা সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। রিহান জোর করে হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।
–রিহানের আব্বু :আমি চাই এবার সত্যি সত্যি আমাদের ইচ্ছে টা পূরণ হোক নিরুপমা।আমরা তোমার আব্বু কথা দিয়েছিলাম প্লিজ আর না করো না!
–মিতা:আমার উর্ধ্বে তুমি যেতে পারো না নিরু। আমরা সবাই আছি আর রিহান ঠিক তোমায় সুখে রাখবে।আর তোমরা আমাদের কষ্ট বাড়িয়ো না।তারপর কিছু ইমোশনাল কথা বলে সবাই মিলে।নিরু জানে এঁরা যে করেই হোক বিয়ে দিবেই।তাছাড়া সবার মন ভাঙ্গার সাহস ওর নেই। ঠিক তেমনি সহজে রিহান কে মেনে নেওয়া ও সম্ভব নয়।ভাঙ্গা মন জোড়া সহজে লাগে না হয়তো একটা সময় নতুন করে মেনে নেওয়া যায় তবে কষ্ট ঠিকই মনে গেঁথে থাকে।অতিরিক্ত ভালোবাসা পেলে ও কোনো সময় ভালোবাসা দিয়ে কষ্ট গুলো মাটি দেওয়া যায়।তবে অবশ্যই দরকার ভালোবাসা সেটা হতে হবে মজবুত এবং নিঃস্বার্থ।নিরুর ভালোবাসা খাঁটি হয়তো ক্ষমা করাও সহজ তবে সহজ মানেই প্রথমেই অন্যায় কে ভুলে যাওয়া নয়।নিজেকে অসম্মান করা নয়।
–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
#চলবে