নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৬

0
6

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৬]
-তামান্না

–নিরু:ভালো লাগে না ঐখান টাতে।মানুষ গুলো ও খুব বিরক্তিকর।দম বন্ধ হয়ে আসে,, ঐ শহর টাতে তোমার মেয়ে কলঙ্কিত আম্মু!
–মিতা:তুমি তো জানো তুমি কেমন?নিজের কাছে নিজে শুদ্ধ থাকাটাই আসল।পৃথিবীতে সব মানুষ কে খুশি করতে এবং কথা গায়ে মাখতে আসো নাই।আর সবাই তো একজনকেই ভালোবাসে না মা।নিজের জন্য বেঁচে থাকা ভালো থাকা মানিয়ে মেনে নেওয়া ও একটা সুস্থ এবং সুন্দর যুদ্ধ।
তারপর অনেক কিছু বুঝিয়ে কল কেটে দেয় নিরুর আম্মু।দুই মাস পরেই পরীক্ষা।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই নিতে হবে।

–এদিকে রিহান নিরুর আম্মুর থেকে নিরুর নতুন সিমের নাম্বার টা নিয়ে নেয়।তবে সাহস নিয়ে আর সেদিন ফোন কিংবা মেসেজ করে নি।

–দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো।নিরুর মা নিরুকে রিকোয়েস্ট করে রাজি করায় পরীক্ষা দিতে। অনেক বুঝানোর পর রিহানদের কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়।শুধু পরীক্ষা দিবে ক্লাস বা কলেজে যাবে না।যেহেতু পরীক্ষা অন্য কলেজে গিয়ে দিতে হয় এতে অতোটাও সমস্যা হবে না।

–মিতা:একটা কথা বলার ছিলো নিরু,,তবে তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবা তাই হবে।
–নিরু:হাতের কাজ করতে করতে বলে,, বলো?
–মিতা:রিহানের আব্বু রিকোয়েস্ট করছে তোকে রিহানের সাথে বিয়ে দিতে।
–নিরু:বিয়ের বয়স কি তোমার বান্ধবীর ছেলের আর আমার অনেক বেশি পেড়িয়ে গেছে?দুই পরিবারের মানুষ শিক্ষিত আর শিক্ষক হয়ে কিভাবে বাল্যবিবাহ দিতে চাচ্ছো?তাছাড়া আমি যাকে তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নই।বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলে,,জোর করে কিছু হয় আম্মু?
–মিতা:রিহান ও চাচ্ছে।কথা বলার সময় রিহান উপস্থিত ছিলো।আমার কাছে মাফ চেয়েছে।
–নিরু:তারপর!তুমি খুশি হয়ে মাফ করে দিয়ে আমায় তুলে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেছো?
–মিতা:তোর আন্টি ভীষণ অসুস্থ নিরু।উনাকে দেখার জন্য বাসায় মানুষের দরকার,, এক হাত পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

–নিরু:তাই বলে মানুষ বলতে ছোট দুইজন মানুষ কে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।আমি আন্টিকে ভীষণ ভালোবাসি তবে খানিকটা থেমে অনেক কষ্টে বলে রিহান কে না।এরপর আর পায় নি সোজা দৌড়ে রুমে চলে আসে।

************
–রিহান এখন বাসা থেকে বের হয় না।কলেজে নিরুর নামে যে মিথ্যা ভিডিও বানানো হয়েছে তা স্বীকার করে এসেছে।নিরবের সাথে শত্রুতা বেড়েছে।রিফাত আমান মাঝে মধ্যে বলে আর রিহান শুনে।নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে।বাসায় এমনিতেই আম্মু অসুস্থ মন মেজাজ ভালো না।একটা নার্স ঠিক করে রেখেছে চব্বিশ ঘণ্টা দেখাশোনা করেন।

–রিহান:নিরুপমার নাম্বারে নতুন সিম দিয়ে অনেক গুলো মেসেজ করে কিন্তু রিপ্লাই আসে নি।দুই দিন চেষ্টা করে তিন দিনের দিন রিহান মেসেজ পাঠায়,”রিহান তোমাকে ব্যবহার করেছে নাকি তুমি ব্যবহার করেছো?
–নিরু:রং নাম্বার থেকে মেসেজ আসলে নজরে আসে।কিন্তু রিপ্লাই করে নি।আজকে এমন মেসেজ দেখে রিপ্লাই করে।
–নিরু:কে আপনি? আমার আর রিহানের সম্পর্কে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে?
–রিহান:সত্যি টা স্বীকার করুন মিস নিরু!
–নিরু:আমরা কেউ কাউকে ব্যবহার করি নি,, নিয়তি আমাদের কে ছিটকে আলাদা করে দিয়েছে।তবে অভিযোগ নেই আমার তরফ থেকে,,অভিমান বেড়েছে নিজের প্রতি অনুভূতির প্রতি।কারণ আমার অনুভূতি গুলো স্বস্তি দিতে পারে নি।
–রিহান:ভালোবাসা বুঝি অনেক কঠিন?একসাথে অনেক জনকে যায় না?
–নিরু:আমি শিউর আপনি কোনো ফাজিল আর খারাপ লোক।এজন্য এতো বাজে চিন্তা থেকে বাজে প্রশ্ন করছেন।আর শুনুন আমি আর রিহান এক নেই সুতরাং আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না।ভালো থাকুন আর বেশি বেশি প্রেমে পড়ে অনেক জনকে একসাথে ভালোবাসুন টাটা বলেই ব্লক লিস্টে ফেলে রাখে নাম্বার টা।তারপর বসে বসে একা একাই ইচ্ছে মতো গালাগালি করে।

–নিশা:আমরা কবে যাচ্ছি আম্মু?
–মিতা:সামনে সপ্তাহে।তোমার খালু একটা বাসা দেখেছে।ফ্ল্যাট টা আমার ও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দেখি কনফার্ম করতে পারি কি না।তবে কিছু লোন ও বোধহয় নেওয়া হতে পারে।
–নিরু:হোক তাও একটা নিজেদের বাড়ি হোক আম্মু।সেখানে আমরা তিন জনের সংসার সাজাবো রাজ্য ভর্তি সুখ নিয়ে বেঁচে থাকবো।সুখের থেকে ও স্বস্তি জরুরি আম্মু।টাকা পয়সা চেহারা স্বাস্থ্যের থেকে ও যেমন জরুরি সুস্থ থাকা বেঁচে থাকা।

★★★★★
–তারপর দেখতে দেখতে দুই মাস পেড়িয়ে যায়।নিরুদের একটা বাড়ি হয়।সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা নিরুর আম্মু গিয়ে আঙ্কেলের থেকে দরকারী কাগজ পত্র সব এনে দেয়।এই দুই মাস মোবাইল ফোন থেকে পুরোপুরি দূরে ছিলো নিরু।রিফা আর আন্টি আঙ্কেলের সাথে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়।রিহানের আম্মু আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে হাঁটতে বসতে পারে না একা একা।
–নিশা:আপু চল না আজকে ফুসকা খেতে যাই।
–নিরু:সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা এসব চলবে না নিশা।অবসরে অনেক খাওয়াবো কেমন?
–নিশা:প্লিজ!আজকে তোকে নিয়ে খাবো বলে স্কুলে ও খাই নি।
–নিরু:ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,, কোথায় গিয়ে খাবি?
–নিশা:পার্কে!অনেক সুন্দর এখন একটু ঘুরতে ও পারবো।
–নিরু:আচ্ছা!জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নিবি।এতো সাজগোজের সময় কিন্তু দিবো না।

–মিতা:আমি তোদের নানুর বাসায় যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে দুজনে ফিরে এসে পড়তে বসো।কিছু কাগজ পত্রে ঝামেলা ঠিক করতে হবে জমি সংক্রান্ত।
–নিরু:তাড়াতাড়ি চলে এসো।তারপর রেডি হয়ে দুই বোন মিলে বেড়িয়ে পড়ে।দুই মাস পর নিজের শহরে ঘুরতে বেড়িয়েছে।নিজেদের শহর হলেও ওদের নতুন বাড়িটা নিজের এলাকায় না।এখান থেকে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগবে বাবা চাচাদের বাড়ি যেতে।কলেজ ও অনেক দূর তবে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হবে যেই কলেজে গিয়ে ওটা ওদের বাসা থেকে কাছে।দুই বোন মিলে রিকশায় করে খোলা বাতাস খেতে খেতে ঘুরে চারপাশ টা।ভালো করে দেখা হয় নি জায়গা টা।ভীষণ সুন্দর। নিজের বাড়ির পর এ জায়গা টা ও সুন্দর ভাবে মনে ধরেছে।

–নিশা:তোমার পরীক্ষার পরে চলো না লম্বা ছুটির একটা ঘুরতে বের হই।কক্সবাজার,, রাঙামাটি,, সিলেট।সব কিছু একসাথে।
–নিরু:একদম না।ঘুরবি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পর।বরের সাথে পুরো দেশ আর সামর্থ্য থাকলে পুরো পৃথিবী ঘুরবি।
–নিশা:তাহলে এখনই বিয়ে দিয়ে দাও বলে হাহাহা করে হেসে দেয়।
–নিরু:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,,ফাজিল আজকে আম্মু কে বাসায় গিয়ে বলছি দাঁড়া।

–এদিকে রিফাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছিল রিহান।অনেক দিন পর বোনের আর আব্বুর রিকোয়েস্টে দুই ভাই বোন বের হয়।সচরাচর সব সময় কেনাকাটা গুলো এখান থেকেই করে রিহান।কেনাকাটা শেষ হলে গাড়িতে রেখে দুজনে পার্কে আসে।
ছোট বেলায় আব্বু আম্মু আর নিরুর পরিবার শিশু পার্কে ঘুরতে যেতো।নিরু বেশি মিশতো না কারণ রিহান মারামারি করতো বেশি।

–হাটাহাটির সময় এক পর্যায়ে নিরু আর নিশা কে চোখে পড়ে রিহানের।একটা বাইরে থাকা টেবিলের সামনে বসে আছে দুই বোন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনে খোশগল্প করছে।
–রিহান রিফা কে নিয়ে সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ওদের।
–রিহান:নিশা?
–আচমকা রিহানের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় নিরু।তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।মুখে মাস্ক টা ঠিক করে খানিকটা পিছিয়ে যায়।রিফা এগিয়ে গেলে হাসি মুখে ওর সাথে কথা বলে।তারপর নিশা কে উদ্দেশ্য করে বলে আমি সামনে যাচ্ছি,, তুই চলে আসিস।রিফা কিছু বলতে গেলে সুযোগ দেয় নি।
–রিহান:এক্সকিউজ মি!তোমরা একটু বসো আমি আসছি বলেই দৌড় দিয়ে গিয়ে নিরুর সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকায়।

–নিরু:চোখ নিচে নামিয়ে এড়িয়ে যেতে নিলে রিহান দুহাত ছড়িয়ে আটকায়।
–রিহান:আমার দিকে চোখ তুলে তাকাও নিরু প্লিজ!কেমন আছো?
–নিরু:জ্বি!ভালো আছি,, পথ টা ছাড়ুন যেতে হবে।
–রিহান:আপনি বলছো?
–নিরু:এবার চোখ তুলে তাকায়।হাত পা কাপছে নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, কোনো সুদর্শন আর বড়লোক মানুষ কে তুমি বলার অধিকার অসুন্দর আর কুৎসিত মানুষের থাকে না।আর সব মানুষ বারবার ভুল করে না।কথা গুলো বলতে বলতে চোখ গুলো টলমল করে উঠে।যা রিহানের চোখ এড়ায় নি।
–রিহান:ভালোবাসো না আমায়?
–নিরু:অন্য দিকে মুখ করে খানিকটা সময় নিয়ে বলে,, নাহ!
–রিহান:হাসতে হাসতে নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে বলে,,সেটা তোমার চোখ ই বলে দিচ্ছে।জীবনে এটা ও একটা প্রাপ্তি কোনো নারী আমার কথা মনে করলে চোখ ভিজে আসে।সমুদ্র বয়ে চলে চোখের পাতায়।
–নিরু:নিশ্চুপ!
–রিহান:আমি ভুল করেছি ভুল শুনেছি তবে মিথ্যে ভালোবাসি নি।তোমার প্রতি আমার করা অন্যায় টা যেমন সত্যি তেমনি ভালোবাসা টা ও সত্যি।অনুভূতি গুলো কে এখন বড্ড মিস করি নিরু।প্লিজ ফিরে আসো।
রিহানের কথা শুনে চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।কোনো রকম মুছে।রিহানের দিকে তাকায়।এক মিনিট রিহানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে হঠাৎ দৌড়ে চলে যায় নিশার কাছে। বোনের হাত ধরে টেনে তাড়াতাড়ি করে রিকশায় উঠে বসে।

–নিশা:কিছু বলেছে ভাইয়া?
–নিরু:নিশার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।ভয়ে আর কিছু বলে নি নিশা।বোনের অভিমান সম্পর্কে ধারণা আছে ওর।

–এদিকে মিতা ভাইয়ের সাথে দরকারী কাজ শেষ করে।তবে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো স্কুল থেকে তাদের বাড়ির পাশের এক কলিগের থেকে শুনতে পায় নিরব নিরুর বড়সড় একটা ক্ষতির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

*************
–রিহান:আব্বু!তোমরা প্লিজ পরীক্ষার পরে আমার আর নিরুর বিয়ের ব্যবস্থা করো।সেটা যেভাবেই হোক।তবে বিয়ের পরের দিন ই আমি বিদেশে চলে যাবো।আমি নিরুকে সময় দিতে চাই। আমার বিশ্বাস নিরু আবার আগের রুপে ফিরে আসবে।
মনে মনে বলে আমার নামে লিখে তারপর দূরত্ব রাখলেই আমার অভাবে আমার কাছে ছুটে আসবে।আমি বিশ্বাস করি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে আর অভিমান জমিয়ে রাখবে না।আমি আবার ওকে ওর যোগ্য সম্মান ভালোবেসে ফিরিয়ে দিবো।এর আগে আমার বানিয়ে নেওয়া ভীষণ জরুরি।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বলে তোমার চোখ দেখে আমি সবই বুঝতে পারি বোকা নিরু।তোমার সব থেকে শক্তি শালী অভ্যস হলো নিশ্চুপ থাকা।তুমি নিজেকে খুব সহজে আড়ালে রাখতে পারো,,#নৈশব্দে_চলে যেতে পারো সবার জীবন থেকে।তর্ক এবং ঝামেলা এবং অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ মেজাজ যে তোমার অভিধানে নেই।তোমাকে, তোমার হৃদয় চেনা আমার হয়ে গেছে প্রিয়তমা।

–রিফা:নিরু আপুই কিন্তু তোমার যোগ্য এবং আমাদের বাড়ির যোগ্য।তাড়াতাড়ি করে আমার কাছে এনে দাও তো ভাইয়া।
–রিহান:বোনের মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, বিয়ে করিয়ে ভাইকে বউ ছাড়া রাখার ধান্দা না?
–রিফা:দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,, রাতে তো তোমার বউ তোমার কাছেই থাকবে।তারপর হাসতে হাসতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–রিহান : মিস নিরুপমা!আপনাকে আমি মিসেস রিহান খুব শীগ্রই বানাবোই।কথাটা বলেই বাঁকা হাসে।

–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে