নীল বেনারশী পর্ব-২+৩

0
5924

#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
২+৩
#২য়_পর্ব
মায়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
_এই মেয়ে এই!
ছোঁবেনা আমায়,একদম ছোঁবেনা।
আমার বুকটা ধক করে উঠে,
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
এ আমি কোথায় এসে পড়লাম আল্লাহ!

আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালাম।
দাঁড়াতেই মায়ানের চোখে চোখ পড়লো আমার।
মাশাআল্লাহ!ছেলেটার চোখ দুটো কত্ত সুন্দর।
আমি তো কল্পনায় এমন একটা মানুষের ছবিই এঁকে রেখেছি।মনে হচ্ছে চোখ দুটো আমার কতই না চেনা।
মায়ান আমার থেকে অনেক টা লম্বা।
উজ্জ্বল শ্যামলা ওর গায়ের রঙ।
চোখ দুটো মাশাআল্লাহ!

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মায়ানকে দেখছিলাম।
খেয়াল করলাম মায়ানও আমার দিকে তাকিয়ে পলক ফেলছে না।

হঠাৎ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙে মায়ান বলে উঠলো,
_কি করছিলে তুমি হ্যাঁ?
আমি আঁতকে উঠে উত্তর দিলাম,
_না মানে,সবাই বলে বাসর ঘরে নাকি বরকে সালাম করতে হয়।
তাই আরকি,
_কোন দরকার নেই এসবের।।আর শোন,আমি তোমাকে বিয়ে করেছি ঠিকই,কিন্তু কখনো তুমি স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আসবেনা আমার কাছে।কোন দিন না।
_আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?
_কেন?তুমি কি আমার বেয়াইন লাগো?যে আমি তোমার সাথে মজা করবো?
_তাহলে যদি সত্যি সত্যিই বলে থাকেন কথা গুলো,তাহলে বলবো আমাকে বিয়ে করলেন কেন তাহলে?
_বিয়ে করেছি শোকেসে সাজিয়ে রাখতে।
_শোকেসে তো জায়গা হবেনা আমার।
_চুপ!আবার মুখে মুখে কথা বলে।
_আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন?
_চুপ আবার ন্যাকা কান্না কাঁদে।
আমার সামনে একদম নেকামি চলবেনা।

মায়ানের ধমকে আমি চুপ হয়ে যাই।
মায়ান রুমে ঢুকে খাটে গিয়ে একটা বালিশ নেয় আর একটা কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।

_আপনি নিচে কেন শুলেন?আপনি উপরেই তো শুতে পারতেন।
আমি না হয় নিচে শুতাম।
_আহারে আমার ঢং।
এত ঢং করতে হবেনা।
আর শোনো,আমাদের সম্পর্ক টা যে শুধু মাত্র নামেই স্বামী স্ত্রী,এটা যেন বাইরের কেউ না জানে।
_কিন্তু আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন বলবেন একটু?

মায়ান আমাকে ধমক দিয়ে বলে,
বলেছিনা বেশি কথা না বলতে?
আমি কৈফিয়ত দিতে একদম পছন্দ করিনা।
অনেক রাত হয়েছে চুপচাপ ঘুমাও।

মায়ান শুয়ে পড়ে।
আমিও আমার চোখ মুছতে মুছতে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে যাই,টেরই পাইনা।

আমার যখন ঘুম ভাঙে তখন বাজে সকাল ১০ টা।
এত বেলা হয়ে গেছে,আর আমি একটুও টের পাইনি।

এখন আমি ভাবীকে কিভাবে ডাকবো শাড়ী পরিয়ে দিতে।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে শাশুড়ী আম্মু ডেকে বলেন,
বউমা!
উঠেছো তোমরা?
নাস্তা খেতে আসো।
কিছু ক্ষণ পর বাসায় মেহমান আসবে।
আমি দরজা না খুলেই বললাম,
_আম্মু,ভাবীকে একটু ডেকে দিবেন?
দরকার ছিলো একটু।
_ও তো মাত্রই বাইরে গেলো।
ওকে একটু বাইরে পাঠিয়েছি।আসতে দেরি আছে।কিছু লাগবে তোমার?
_না মানে আম্মু।
_ওই দেখো তোমার দেবর ডাকছে আমায়।
তোমরা এসো হুম।
আমি যাই তাহলে ও আবার খেয়ে একটু বাইরে যাবে তো।
আমি ওকে খেতে দেই।
_আচ্ছা আম্মু।

আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ফ্রেশ হয়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা শাড়ী বের করলাম।ভাবী রাতে বলে গিয়েছিলো তিন টা শাড়ী রাখা আছে আমার জন্য।
শাড়ী তিন টাই অনেক সুন্দর।
কে কিনেছে এত সুন্দর শাড়ী,মায়ান?
সে আবার এত সুন্দর শাড়ী কিনবে?তাও আবার আমার জন্য।এটা চিন্তা করাও ভুল।

কি করবো এখন,
শাড়ী কিভাবে পরবো।
ভাবতে ভাবতে মায়ান উঠে যায় ঘুম থেকে।

_এভাবে হাঁটাহাটি করছো কেন সারা ঘরে?
এখনো রেডি হয়ে আম্মুর কাছে যাওনি?
এত দেরি করে বাড়ীর বউ ঘুম থেকে উঠে?

_সরি!অনেক ক্লান্ত ছিলাম তো।
যাও এবার, রেডি হয়ে গিয়ে আমায় উদ্ধার করো।
_আসলে হয়েছে কি,আমি না শাড়ী পরতে পারিনা।
কি করবো এখন?
_আচ্ছা তুমি কি সত্যিই মেয়ে?
_কিহ?
আপনার কি আমাকে ছেলে মনে হয়?
_কোন মেয়ে শাড়ী পরতে পারেনা হ্যাঁ?
সব মেয়েরা শাড়ী পরতে পারে।
আজ প্রথম শুনলাম কোন মেয়ে শাড়ী পরতে পারেনা।
ও না,এর আগে একবার শুনেছিলাম।
_কার কাছে?
_আবার প্রশ্ন করে,আমি না মুখে মুখে কথা বলতে না করেছি?

আমি চুপ হয়ে গেলাম।

_এদিকে এসো।
_কেন?
_দেখি শাড়ী টা হাতে দাও আমার।

আমি শাড়ীটা মায়ানের হাতে দিলাম।

_এবার চুপচাপ শাড়ী খুলো,
_কিহ?
_শাড়ী না খুললে এটা পরবে কি করে?
_আপনি শাড়ী পরাতে জানেন?
_আবার প্রশ্ন করে।
_আচ্ছা আপনি চোখ বন্ধ করুন।
_হুম করলাম।

মায়ান আমাকে খুব সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে যাই।
ও ছেলে হয়ে এত সুন্দর শাড়ী পরাতে পারে।
আর আমি মেয়ে হয়ে শাড়ী পরতে পারিনা।

_শুনুন
_হুম বলো
_আচ্ছা আপনি আসলেই কি ছেলে?
_হুয়াট?কি বলতে চাও তুমি?
_না আপনি না বললেন সব মেয়েরা শাড়ী পরতে পারে।আপনিও তো পারেন।তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।
হি হি হি
_অনেক সাহস বেড়ে গেছে না?
চুপ, আবার হাসে।
_যাও এবার আম্মুর কাছে যাও,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
একটা প্রশ্ন করি?
_নাহ কোন প্রশ্ন না।
_না করিনা প্লিজ
_হুম বলো,
_আপনি শাড়ী পরা শিখেছেন কিভাবে?
_কারো জন্য শিখেছিলাম।
_কার জন্য?
_তা তোমার জানতে হবেনা।
যাও এখান থেকে।

আমি আর কোন কথা না বলে চলে আসলাম।
আমার কেন যেন মনে হয় মায়ান কাউকে ভালবাসে বা বাসতো।
আর তাই আমাকে ও মেনে নিতে পারছেনা।
কিন্তু মানতেই যদি না পারবে,তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করলো।

মায়ানও ফ্রেশ হয়ে এসে পরেছে।
আম্মু, আমি, মায়ান এক সাথে নাস্তা করলাম।
_মা শোনো,আজ দুপুরে কিছু মেহমান আসবে বাসায়।
তোমাকেই দেখতে আসবে।
আমাদের আত্মীয় স্বজনই।বাইরের কেউ না।
একটু সুন্দর ভাবে রেডি হইও।আর সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলো কেমন?
কেউ যেন মন্দ না বলতে পারে।

_আচ্ছা আম্মু।

দুপুরে ভাবী আমার জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে আসে।আম্মু আনতে বলেন।
তারপর ভাবী আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেন।

মেহমান রা এসে সবাই আমার প্রশংসা করে।
তারপর খাওয়া দাওয়া করে আবার সবাই চলে যান।
শুধু থেকে যায় মায়ানের এক কাজিন।
ও নাকি বেড়াবে কিছু দিন এ বাসায়।

মেয়েটাকে প্রথম দেখায়ই কেন যেন আমার ভালো লাগেনি।
ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিলো,মনে হচ্ছিলো না জানি ওর সাথে আমার কত দিনের শত্রুতা।
আমি তবুও হাসি মুখে কথা বলেছিলাম ওর সাথে।
কিন্তু ও যেন আমায় পাত্তাই দিলোনা।

যাইহোক সবাই চলে গেছে রাতও হয়ে গেছে।
আমি আর মায়ানও আমাদের রুমে চলে এসেছি।

দরজা আটকে বসতেই দেখি দরজায় নকের আওয়াজ।

_কে?
_আমি দিশা।দরজা খোলো।
দিশাই হচ্ছে মায়ানের কাজিন।
আমি দরজা খুলে দিলাম।
দিশা এসে খাটে গিয়ে বসলো।

_তোমাদের সাথে গল্প করতে আসলাম।
তারপর কি অবস্থা মায়ান?
_এইতো আছি,তোমার কি অবস্থা?
_আছি,যেমন রেখেছো,যেমন দেখছো।
তো এইভাবে হুট করে বিয়েটা করে ফেলবে তুমি কোন দিনও ভাবিনি।
_করে ফেললাম আরকি।

আমার কাছে মেয়েটার কথার ধরণ একদম ভালো লাগছিলোনা।
মায়ানের সাথেই মেয়েটা কথা বলে যাচ্ছে শুধু।
প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে যাবার আর নাম নেই।

এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আমি বললাম,
দিশা!
আমি ঘুমাবো,কাল সকালে আবার কথা বলি আমরা?
অনেক রাত হয়েছেতো সকালে উঠতে হবে আবার।
_দেখেছো মায়ান!মেঘা আমায় চলে যেতে বলছে।
_আচ্ছা মায়ান কি তোমার ছোট?
_না।
_তাহলে তুমি আমাকে নাম ধরে কেন বলছো?
আমি মায়ানের ওয়াইফ।
যেহেতু মায়ান তোমার বড় ভাই,তুমি আমাকে ভাবী বলবে।
মনে থাকবে?

_ভাবী মাই ফুট।
এ কথা বলে রাগে গড়গড় করতে করতে দিশা চলে যায়।

_তুমি ওর সাথে এইভাবে কেন কথা বললে মেঘা?
_কারণ আমার ওর কথা বার্তা ভালো লাগছিলোনা।
কেন কোন সমস্যা?
_হ্যাঁ সমস্যাই তো,তুমি তো আমার কাজিনের সাথে এমন করতে পারোনা।
_আজব কি এমন করলাম আমি?
আর আপনি সব সময় আমার দোষ কেন ধরেন?

আমি কি আপনার পছন্দ না?
যদি পছন্দই না হই তাহলে কেন বিয়ে করেছিলেন আমায়?
করুণা করেছেন আমায়?করুণা?
কেন আপনি আমায় বউ এর স্বীকৃতি দিচ্ছেন না?আমার সাথে যা তা ব্যবহার করছেন?
কেন কেন কেন?
_কারণ আমি অন্য কাউকে ভালবাসি,পাগলের মত ভালবাসি।
আমার সব ভালবাসা শুধু মাত্র তার জন্য।
তার জন্য তার জন্য তার জন্য।

এই কথা বলেই মায়ান বাইরে চলে যায়।

আর আমি ধুপ করে খাটের উপর বসে পড়ে কাঁদতে থাকি।

আর ভাবতে থাকি,
আমি আজীবন ঠকেই গেলাম,
কল্প!যাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালবাসলাম।সে কিনা শেষমেস আমাকে ছুড়ে ফেলে দিলো।পালিয়ে গেলো আমাকে একা ফেলে।ওর স্মৃতিও আমি এখনো ভুলতে পারিনি।আর না পারবো কোন দিন ভুলতে।কারণ ও আমার প্রথম ভালবাসা।আমার সত্যিকারের ভালবাসা,আর সত্যিকারের ভালবাসা কোন দিনও ভোলা যায়না।কিন্তু ও আমায় ছেড়ে পালালো।
আব্বু আম্মু বিয়ে ঠিক করলো একজনের সাথে,সে বিয়ের দিন না করে দিলো।
যেই না এত কষ্ট,এত দুঃখ বুকের মধ্যে চেপে রেখে, নিয়তি মেনে নিয়ে মায়ানকে মেনে নিতে চাইলাম,সেও অন্য কাউকে ভালবাসে।
আমাকে স্ত্রী হিসেবে কোন দিন স্বীকৃতি দিবেনা সে।

আল্লাহ আমার সাথেই কেন এমন করছেন?
কেন আমার সাথেই এমন হয়?
কি দোষ করেছি আমি?
কি অপরাধ আমার?
আমিই কেন বার বার ঠকে যাই?

এসব ভাবতে ভাবতে কাঁদতে কাঁদতে যখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো,ঠিক সেই মুহূর্তে
আমার ফোনের মেসেঞ্জারে তিন চার টা মেসেজের আওয়াজ।
ফোন টা হাতে নিতেই দেখি,
কল্প’র মেসেজ।

_মেঘা!
আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
প্লিজ আমার মেসেজ সীন করো।
প্লিজ তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
প্লিজ সীন করো আমার মেসেজ,প্লিজ সীন করো মেঘা।

চলবে?
#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৩
কাঁদতে কাঁদতে যখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো,ঠিক সেই মুহূর্তে
আমার ফোনের মেসেঞ্জারে তিন চার টা মেসেজের আওয়াজ।
ফোন টা হাতে নিতেই দেখি,
কল্প’র মেসেজ।
_মেঘা!আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।প্লিজ আমার মেসেজ সীন করো।প্লিজ তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।

আমি মেসেজ গুলো দেখে অবাক হবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
কল্প!
মানুষটাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি।
আর ও কিনা আমাকে মাঝ পথে একা ফেলে চলে গেছে।
আর আজ যখন সব কিছু শেষ তখন আসছে আমার সাথে কথা বলতে।
অথচ আমি সেদিন কতই না আকুতি মিনতি করেছিলাম।

কল্প!
যার সাথে আমার এক ছাদের নিচে থাকার কথা ছিলো।
যাকে আমি আমার বুকের সব টুকু ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে ভালবেসেছি,সেই মানুষ টাই হচ্ছে কল্প। কল্পের সাথে পরিচয় টা আমার ফেসবুকে।
আমি যখন নতুন ফেসবুক জগতে আসি,তখন ওর আইডি থেকে আমার আইডিতে ও রিকুয়েষ্ট পাঠায়।
আমি ওর টাইমলাইন চেক করি,দেখি ছেলেটা খুব ভালো লিখালিখি করে।
আর তাই আমি ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করি।

অল্প কিছু সংখ্যক ফ্রেন্ডই আমি লিস্টে নেই।
তার মধ্যে কল্প একজন।
ফ্রেন্ডলিস্টের সবার সাথে কথা হতো আমার কমেন্ট বক্সে।
আমি যা কথা বলতাম ওই কমেন্ট বক্স অব্দিই।

ইনবক্সে আমি কারো সাথে কথা বলতাম না তেমন।
কল্পের সাথেও আমার কমেন্ট বক্সেই কথা হয় টুকটাক।
এরপর কয়েক দিন আমি অনলাইনে না যাওয়ায় আমি যখন অনলাইনে আসি ও আমার ইনবক্সে নক দেয়।
আর জিজ্ঞেস করে কেমন আছি, অনলাইনে আসিনি কেন।
আমি বলি এমনিই একটু অসুস্থ ছিলাম।
আসলে তখন আমার তিন চার দিন খুব বেশি জ্বর ছিলো।তাই অনলাইনে যাইনি।
সেদিন থেকেই আমাদের টুকটাক কথা শুরু।

ও প্রায়ই অনেক রাত জাগতো।
আমিও ফেসবুক ঘাটাঘাটি করতে করতে ঘুমাতাম না।

তখন ও আমাকে নক দিতো,কেন আমি এত রাত জেগে আছি।
আমিও বলতাম আপনিও তো জেগে আছেন।
ও বলতো ঘুম আসেনা ওর।

ও প্রবাসী।
ডিউটি করে এসে শুতো কিন্তু ঘুম নাকি আসতোনা।
তাই প্রায়ই জেগে থাকতো।
আর তখনই আমাদের অল্প স্বল্প কথা হতো।
কথা বলতে শুধু মেসেজিং হতো।

ও আমার প্রায়ই খোঁজ খবর নিতো।পরে একটা সময় এমন হয় যে,
আমিও ওর মেসেজের অপেক্ষায় থাকতাম।

যদি কোন দিন মেসেজ দিতে দেরি করতো,আমি অভিমান পুষে রাখতাম।
এরপর একদিন ও আমায় বলে,নিজেও তো একটা মেসেজ দিতে পারেন।
আচ্ছা সারাদিনে একবারও কি আমার কথা মনে পড়ে?

আমি উত্তর দিতাম জানিনা।
ধীরেধীরে আমাদের মেসেজিং বাড়তে থাকে।
এখন ওকে অনলাইনে না দেখলে আমার অস্বস্তি লাগে।
কেমন যেন কষ্ট হয়।
আমিও ওকে নক দেই খবর নেই।

আমরা অনেক বেশি চ্যাটিং করি।
ও ওর জীবনের গল্প শোনায়।
ওর বন্ধুদের কথা বলে,আর একদিন রাতে কথা বলতে বলতে বলে,তুমি কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবা?
আমিও এক্সেপ্ট করি,আর বলি হতে পারি।
কিন্তু কোন দিন আমায় ছেড়ে যেতে পারবেন না।
আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারবেন না।
কোন দিন আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে পারবেন না।
ও আমাকে উত্তর দেয়,আমি বেঁচে থাকতে কোন দিন যোগাযোগ বন্ধ করবোনা।
তোমায় ছেড়ে যাবোনা।
মরে গেলে জানিনা।
তবে তুমি আমায় আজ থেকে তুমি করে বলবে।
বন্ধুদের আপনি করে বলতে হয়না।
আমিও রাজি হই।
তুমি করেই বলি দুজন দুজনকে।

খুব ভালো ভাবেই চলছিলো আমাদের বন্ধুত্ব।
কিন্তু একটা সময় আমি অনুভব করি,ওর জন্য আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করে।
যা কখনো কারো জন্য অনুভব করিনি আমি।
ওকে আমি আমার ফ্যামেলি মেম্বারে জায়গা দিয়ে দেই।
ওকে আমি আমার পরিবারের ই একজন মানতে শুরু করি।

আর এর মধ্যেই কল্প একদিন হুট করে আমাকে প্রপোজ করে বসে।
ও কোন ভণিতা না করে ডিরেক্ট আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে,
_এই মেয়ে আমি তোমাকে ভালবাসি।

আমিও ডিরেক্ট বলে দেই আমিও তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।

আর সব থেকে মজার কথা হলো,আমরা কেউ কাউকে না দেখেই ভালবেসে ফেলি।
এভাবেই আমাদের সম্পর্কের শুরু।

আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমরা সামনাসামনিই একবারে মিট করবো।দুজন দুজনকে দেখবো।আর তা কল্প দেশে আসলেই।
এর আগে কেউ কাউকে আমরা দেখবোনা।

আমাদের দুজনের কারো আইডিতেই আমাদের ছবি ছিলোনা।
আর আমরা কখনো ফোনেও কথা বলিনি।
শুধু মেসেজিং এই কথা হয় আমাদের।
না দেখে,না শুনে ফেসবুকে রিলেশন হলেও আমাদের ভালবাসাটা ছিলো সত্যি।

আমি কল্পকে প্রায়ই আমার ইচ্ছে গুলোর কথা বলতাম।
কল্প বলতো,আমি দেশে এসে তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করবো।
কিন্তু ও আমার কোন ইচ্ছেই পূরণ করেনি।
বরং মাঝ পথে আমার হাত টা ছেড়ে দিয়েছে।
অথচ এই মানুষটাকে নিয়েই আমার কত স্বপ্ন ছিলো।

কল্পের কথা ভাবতে না ভাবতেই মায়ান আবার রুমে চলে আসে।
এসেই কাঁথা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে।

আর আমি মনে মনে ভাবি,
যেই মানুষ টা আমার স্বপ্ন গুলো এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে।
আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
তার সাথে আর কি কথা বলবো।
তার আর আমার সাথে কি ই বা কথা থাকতে পারে।
অভিমান কষ্টে আমি ডাটা অফ করে শুয়ে পড়ি।

সারাটা রাত কাঁদতে কাঁদতেই কেটে যায় আমার।
এর মধ্যে মায়ানের ধমকে দুই একবার থামতে হয়েছিলো।
আমার কান্নায় তার নাকি ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।

মানুষ এমন নিষ্ঠুর হয় কি করে।
মনে মনে ভাবি,সব ছেলেরাই কি তাহলে এমন?

সকাল হয়ে যায়।
আমি সকালের নাস্তা তৈরিতে আম্মুকে সাহায্য করতে চলে যাই।

আম্মু আমাকে মায়ানের ছোট বেলার গল্প শোনান।
মায়ান ছোট থেকেই নাকি এক রোখা জেদি।
যা বলে তাই নাকি করে।
ওর কোন ইচ্ছেই নাকি আম্মু আব্বু অপূর্ণ রাখেন নি।

মনে মনে ভাবছি,
যদি তাই হয় তাহলে সে যাকে ভালবাসে তাকে কেন বিয়ে করলোনা?
আম্মু আব্বু তার ইচ্ছে তো ঠিকই পূরণ করতেন।

_বউমা!
_জ্বী আম্মু।
_কি ভাবছো?
_না আম্মু কিছুনা।

তখনই মায়ান রান্না ঘরে চলে আসে।

_মেঘা!
আম্মু আব্বু ফোন দিয়েছেন এই নাও কথা বলো।
আম্মু আব্বুর সাথে কিছু ক্ষণ কথা বললাম।
তারা জিজ্ঞেস করছেন আমি কেমন আছি,
তাদের কে কিভাবে বলি আমি যে ভালো নেই।
তবুও হাসি মুখে বললাম,ভালো আছি।
আম্মু আব্বুকে কোন ভাবেই টেনশনে রাখা যাবেনা।

শাশুড়ি আম্মু আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে আম্মু আব্বুকে দাওয়াত দিলেন।
আসতে বললেন বাসায়।
আম্মু আব্বু বললেন,পরে আসবে।
আর বললেন মায়ান যেন আমাকে নিয়ে কয়দিন আমাদের বাসায় গিয়ে বেড়িয়ে আসে।
আর সাথে যেন বাড়ীর সকলেই যান।

শাশুড়ি আম্মু বললেন মায়ান আর আমাকেই পাঠাবেন দুই এক দিন পর।
তাদের কথা শেষ হলে আমি ফোন নিয়ে আমাদের রুমের দিকে যাই।

আর গিয়ে দেখি দিশা মায়ানকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি হতভম্ব হয়ে যাই।
তাহলে কি দিশাই মায়ানের ভালবাসার মানুষ?
এই জন্যই তাহলে মায়ান রাতে আমার সাথে এমন করেছে?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে