#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৭
তুমি তোমার বাড়ী যাচ্ছো,
আর আমি আমার বাড়ী।
_মানে?
এসব কি বলছেন আপনি?
_চুপ একদম চুপ।
আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।
সব কিছুর এখানেই সমাপ্তি।
তারপর মায়ান আমাকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
আমি সারা রাস্তা ওর কাঁধেই মাথা রেখে যাই।
অবশেষে আমরা আমাদের বাসায় পৌঁছাই।
আম্মু আব্বু আমাদের দেখে একদম অবাক হয়ে যান।
আর খুবই খুশি হোন আমাদের দেখে।
মায়ান আব্বু আম্মুকে বুঝতেই দেয়না আমাদের মধ্যে যে স্বামী -স্ত্রীর কোন সম্পর্কই নেই।বা কোন যে ঝামেলা চলছে।
আম্মু আব্বু আমাদের ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে বলেন।
খেতে বলেন,
মায়ান বলে পরে খাবে।
তারপর আমরা রেস্ট নেই।
মায়ান ঘুমিয়ে পড়ে।।আমিও ঘুমিয়ে যাই।
ঘুম ভাঙলে আম্মু আমাদের খেতে ডাকেন।
আমরা খাওয়া দাওয়া করি।
তারপর মায়ান সবার সামনে বলে,
আমার একটা জরুরি কাজ আছে,তাই আমার চলে যেতে হচ্ছে।
মেঘা থাকুক।
আমি পরে এক সময় আবার আসবো।
আম্মু আব্বু বলেন,কাজ টা সেরে তাহলে চলে এসো।
মায়ান বলে,সময় লাগবে।
আসা যাবেনা।
অন্য সময় আসবো আবার।
আব্বু আম্মু মায়ানকে আবার আসতে বলে বিদায় জানান।
মায়ান গেইট অব্দি চলে যায়।
আমি গেইটের সামনে গিয়ে বলি,
না গেলে হয়না?
কেন করছেন এমন আমার সাথে?
আমি কি কোন অন্যায় করেছি?
_কিছুই করোনি তুমি।
আমিই থাকবোনা।
আমি সেই মেয়ের সাথে থাকবোনা,যেই মেয়ে তার পুরোনো প্রেমিক কে দুই দিনের মধ্যে ভুলে যেতে পারে।
আর অচেনা একজনকে দুই দিনের মধ্যেই বুকে জায়গা দিয়ে দিতে পারে।
_বুঝলাম না এতে তো আপনার খুশি হবার কথা,আপনি রেগে কেন যাচ্ছেন?
_কারণ জানতে চাও?
_হুম বলুন,
_কারণ হচ্ছে,আমিই হচ্ছি সেই কল্প!
যাকে তুমি একদিন খুব করে ভালবেসেছিলে।
আমিই তোমার সেই প্রেমিক পুরুষ।
যাকে ছাড়া দম দম বন্ধ হয়ে আসতো।
আর গত কাল যাকে তুমি আজীবনের জন্য তোমার জীবন থেকে ব্লক করে দিয়েছো।
সেই কল্পই হচ্ছি আমি।
আর আমি সেদিন তোমায় মাঝ পথে ছেড়ে দেইনি।
আর না পালিয়েছি।
তুমি যেদিন আমাকে দেশে আসার কথা বললে আর বললে তোমার বিয়ে ঠিক করছে বাসা থেকে,সেদিন আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি দেশে আসবো।
যাকে আমি এত ভালবাসি,তাকে কোন ভাবেই হারাতে পারবোনা আমি।
কিন্তু হঠাৎ করেই আমার সাথে একটা দূর্ঘটনা ঘটে।
আমি সহ আমাদের অফিসের অনেকেই পুলি*শি ঝামেলায় পড়ে যাই।
বসের একটা ভুলের কারণে।
পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে যায়।
আমাদের জে*লে দিয়ে দেয়া হয়।
না পারছিলাম তোমাকে কিছু জানাতে আর না পারছিলাম কিছু।
আমি কারো সাথেই কোন রকম যোগাযোগ করতে পারিনি।
আমাদের তিন মাসের জেল হয়ে যায়।
এই তিন টা মাস আমি কিভাবে কাটিয়েছি,এক মাত্র আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানেন।
আমার আম্মুকেও আমি কিছু জানাতে পারিনি।
আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে আম্মু শুনেছেন আর দিন রাত কান্নাকাটি করেছেন।
আর তুমি,তুমি এইদিকে খুশিতে খুশিতে আমাকে ভুল বুঝে বিয়ের পিড়িতে বসে গেছো।
আমি মায়ানের কথা গুলো চুপ করে শুধু শুনছি,কোন কথা বলছিনা।
আরে একটা বার তোমার মাথায় এটা আসেনি,আমার কিছু হয়ে গেলোনাতো।
নাহ। তাহ কেন ভাব্বে।
তোমার মনে তো কোন বিশ্বাসই ছিলোনা আমার প্রতি।
তুমি ভেবে বসে আছো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।
আসলে কি জানো?
তুমি আমাকে ভালবাসোনি,বেসেছি আমি।
আর তাই তো জেল থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্র তোমাকে আমি মেসেজ দিতে গিয়েছি সবার আগে।
এটা বলতে যে,চিন্তা করোনা আমার জন্য।আমি আজই দেশে আসতেছি।কিছু ক্ষণ পরই আমার ফ্লাইট।
কিন্তু তুমি আইডি ডি এক্টিভ করে রেখেছো।
আমি পারিনি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে।
এরপর আমি কি করেছি জানো?আমি ওই ছেলেকে ফোন দেই,যার সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছিলো।
কারণ আমি তোমার কোন খবর পাচ্ছিলাম না।
আমি ভয়ে ছিলাম এই ভেবে, ওর সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেলো কিনা।
এখন হয়তো ভাব্বে আমি ওকে চিনলাম কি করে।
আরে ও আমার বন্ধু।খুব ভালো বন্ধু।
বিদেশে গিয়ে ওর সাথে আমার পরিচয়।
প্রথমে আমরা এক সাথে থাকতাম।
পরে ও কাজের জন্য অন্য জায়গায় চলে যায়,আর ওখানে গিয়েই হয়তো তোমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়।
সেদিন তুমি ওর ঠিকানা আর পরিচয় দেয়ার পরই আমি চিনে গিয়েছিলাম ওকে।
কিন্তু বলি নি তোমায়।
ভেবেছি দেশে এসে তোমাকে সব বলবো,আর হঠাৎ করে এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো।
কিন্তু তা আর হলো কই।
শেষমেস আমি যেই ভয় টা পাচ্ছিলাম,আমার সেই ভয় টাই সত্যি হতে যাচ্ছিলো।
আমি যখন ওকে ফোন দিলাম ও বল্লো ওর নাকি বিয়ে।
আর তা কিছু ঘন্টা পরেই।
আর বল্লো ওর হবু বউ এর নাম মেঘা।
আর তখনই আমি বললাম,বিয়েটা না করে দিতে।ও যেন বিয়েটা না করে।।খুব রিকুয়েষ্ট করলাম।
আর তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা সব কিছু ওকে খুলে বললাম।
অবশেষে ও রাজি হলো।
আর বল্লো,
কিন্তু বিয়ের সব প্রস্তুতি চলছে এখন যদি আমি না করে দেই।
তাহলে মেয়েটার খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এলাকার লোকজন খারাপ কথা বলবে।
আমি ওকে বললাম,এ নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।
আমি নিজেই আসছি ওকে আমার করে নিতে।
আমার কয়েক ঘন্টা লাগবে আসতে।
তুই ওর বাড়ীর ঠিকানাটা আমায় বল,আমি সোজা ওদের বাসায় গিয়ে উঠবো।
আর তুই বিয়ের জন্য ওদের বাসায় না করবি দুপুর বা বিকেলের দিকে।ততক্ষণে আমি পৌঁছে যাবো।
আগে না করলে ওর মা বাবা কষ্ট পেয়ে যদি অসুস্থ হয়ে যান,আর এলাকার মানুষের কথায় যদি কোন এক্সিডেন্ট ঘটে যায়।
তাই আমি যখন বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছে যাবো তখন তোকে ফোন দিবো।
আর তুই ওদের না করে দিবি।
প্লিজ দোস্ত।
আমার জীবন টা বাঁচা।
আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা।
আর তারপর ও আমার কথা মত তাই করে।
আর পরের সব কিছু তোমার তো জানা।
আমি আম্মুকে সব বলি,আম্মুও আমার খুশিতে খুশি।
অবশেষে আমি আমার ভালবাসার মানুষকে পেলাম।
যাকে আমি ভালবেসেছি।
কিন্তু সে আমাকে ভালবাসেনি।
আমি জানতাম তুমি বুঝতে পারবেনা আমিই যে কল্প।
কারণ তুমি আমার ডাক নাম টা, মানে আমার আইডি নেইম টা জানো।
আমার সার্টিফিকেট নেইম জানোনা।
ইয়েস মিসেস মেঘা!
আমিই মিঃ মায়ান রাহমান কল্প।
ওরফে তোমার বর।
তবে আজ থেকে আমাদের কোন সম্পর্ক থাকবেনা।
তুমি মুক্ত।
যেই মেয়ে তার এত দিনের ভালবাসাকে ভুলে মানে কল্পকে ভুলে মায়ানের কাছে দুইদিনের পরিচয়ে স্ত্রীর অধিকার চায়।
তার সাথে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
আমি মানতে পারবোনা আমার মেঘা আমাকে ভালবাসেনা।
আমার মেঘা কল্পকে ভালবাসেনা।
আমি তা মানতে পারবোনা।
আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ভালো থেকো।
আসছি।
মায়ান ওরফে কল্প,মানে আমার বর এবার সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে চলে যায়।
আমি একটা কথাও বলিনি।
শুধু ওর কথা গুলো চুপ করে শুনেছি।
কল্প চলে যাচ্ছে।
আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
কল্প চলে যায়।
আমি আমার রুমে চলে আসি।
সারাদিন চলে যায়।
কল্প সারাদিন বাড়ীর বাইরে বাইরে ঘুরে।
রাত হলে ও ওদের বাসায় যায়।
যখন ও রিক্সাওলাকে টাকা দিতে ওর মানিব্যাক টা বের করতে যায় হঠাৎ মানিব্যাগ টা ওর হাত থেকে রাস্তায় পড়ে যায়।
আর মানি ব্যাগে থাকা সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
ও সব কিছু তুলতে তুলতে হঠাৎ একটা চিরকুট পায়।
চিরকুট টা খুলে দেখতেই ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
ও দ্রুত রিক্সাওয়ালাকে বলে রিক্সা ঘুরান।
আমাকে দ্রুত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিন।
আমি আমার মেঘার কাছে যাবো।
চলবে..