#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
_এই মেয়ে এই!
কি করছো তুমি?
এখানে কি?এখানে কেন তুমি?
_ও মা! আমি আপনার বিয়ে করা বউ।
কই থাকবো তাহলে?
_যাও যাও খাটে গিয়ে ঘুমাও।
_উঁহু! আমিতো আজ আপনার সাথেই ঘুমাবো।
_মেঘায়ায়ায়ায়া
_জ্বীইইইই
_এমন কেন করছো বলোতো?
_কেমন করছি আমি আবার?
_চুপচাপ খাটে গিয়ে ঘুমাবে?
_উঁহু যাবোনা।
_মেঘায়ায়া
_আরে আরে ভয় কেন পাচ্ছেন আপনি?আমি তো একটু দুষ্টুমি করছিলাম আপনার সাথে।
তাতেই ভয় পেয়ে গেলেন?
হি হি হি।
_তুমি না আসলেই একটা পাগল।
_পাগল না,পাগলী। হি হি।
_যাও ঘুমাও এখন।
আমি খাটে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙতেই মায়ানকে বললাম,আমি বাসায় চলে যাবো।
উঠুন উঠে রেডি হন।
_কেন?
আর কিছু দিন থাকি?
_না ভালো লাগছেনা।
_কি হয়েছে মেঘা?
_জানিনা,ভালো লাগছেনা কিছুই।
_আজকের দিন টাই থাকি,তারপর আগামীকাল আমরা চলে যাবোনে।প্লিজ মেঘা!
একটা দিন।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
_যাও তাহলে রেডি হয়ে নাও,ঘুরতে বের হবো একটু পর।
আমি রেডি হলাম।
_তুমি কি জানো সাদা শাড়ীতে তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে?
_না, জানিনা।
_সাদা পরী লাগছে।
_আচ্ছা থ্যাংক ইউ।
আমরা হোটেলের আশেপাশে একটু ঘুরাঘুরি করলাম।
তারপর আমি মায়ানকে বললাম,আমি রুমে চলে যাবো।
আমার ভালো লাগছেনা।
মায়ান আমাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে বলে,
তুমি বিশ্রাম নাও।
আমি একটু বাহির থেকে আসছি।
আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরি,
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে মায়ান আসেনা। সময় ও কাটছিলোনা তাই ফোনটা অন করে ডাটা অন করে ফেসবুকে যাই।
দেখি কল্প আমাকে মেসেজ দিয়ে রেখেছে।
_কেন আমাকে এভয়েড করছো মেঘা?
আমাকে তোমার সামনে আসার একটা সুযোগ দাও।
আমাকে আমার কথা গুলো বলতে দাও।
আমি এবার ওর মেসেজের রিপ্লাই দিলাম।
_কি বলতে চাও বলো।
আমার মেসেজ করতে দেরি,কল্পর মেসেজের রিপ্লাই আসতে আর দেরি হয়নি।
সাথে সাথেই ও রিপ্লাই দেয়,
_কথা গুলো সামনাসামনি বলি?
_না মেসেজেই বলো,
_আমাকে কি একটা বার দেখবেও না তুমি?
_কোন ইচ্ছে নেই আমার সেই মানুষ টাকে দেখার।
যেই মানুষটা আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে পালিয়েছিলো।
_আমি সেদিন পালাইনি মেঘা।
_তাহলে কি করেছিলে?লুকিয়েছিলে বুঝি?
_মেঘা!প্লিজ।
_কল্প!মনে আছে তোমার সেদিনের কথা?
আমি তোমায় কি বলেছিলাম।
সেদিন আমি কল্পকে মেসেজে বলেছিলাম,
_কল্প!আব্বু আম্মু নাকি আমার জন্য একটা ভালো ছেলের সন্ধান পেয়েছেন।
এখন তারা চাচ্ছেন আমি যেন ওই ছেলেকে বিয়ে করে নেই।
কিন্তু তুমি তো জানো আমি তোমাকে ভালবাসি।
এখন আমি কি করবো বলো তো?
আমি কি বাসায় তোমার কথা বলবো?
_বললে যদি তারা জোর করে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেন?
_না দিবেন না।
আমি বুঝিয়ে বলবো।
_এখন বলার কোন দরকার নেই।
_তাহলে কি আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো?
_আমি কি তাই বলেছি?
একটু অপেক্ষা করো জাস্ট।
_কল্প!একটা কথা বলি?
_হুম বলো।
_বলছি যে,অনেক দিন তো হলো।
তুমি এবার প্লিজ দেশে চলে আসোনা।
ছুটিতেই না হয় আসো।
তারপর আমরা বিয়ে করে নেই।
পরে না হয় আবার চলে যেও।
_মেঘা হুটহাট কি কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়?
_তুমি বুঝতে পারছোনা কল্প!গ্রামে বেশির ভাগ মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।
এখন আশেপাশের কিছু লোকও আব্বুর কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন।
আমি এর আগেও না করেছি আম্মুকে।
কিন্তু এবার আব্বু নাকি খুব পছন্দ করেছেন ছেলেটাকে।
_কি করে ছেলে?
নাম কি বাসা কোথায়?
_ছেলে আমার ফুফাতো ভাই এর বন্ধু তারা দুজন বাহিরে এক সাথেই থাকে।
ছেলে নাকি আমার ফুফাতো ভাইয়ের এলাকায় আর ভাইয়ার আত্মীয়র মধ্যে বিয়ে করতে চায়।
যাতে ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক টা আরো পোক্ত হয়। আর প্রায় দেখাও হয়।যাওয়া আসাও থাকে।
ভাইয়া তাই আমার কথা বলেছে।
ছেলে আর ভাইয়া ছুটিতে দেশে এসেছে।
তাই ছেলে যখন ভাইয়াদের বাসায় এসেছে তখন আব্বুকে ভাইয়া ছেলেটাকে দেখিয়েছে।
আব্বু পছন্দ করেছে তাকে।
তারপর আমি ছেলের নাম ঠিকানা কল্পকে বলি।
কল্প হঠাৎ করেই অফলাইনে চলে যায়।
এরপর আর ও আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনা।
না কোন মেসেজ না কিছু।
এক দিন দুই দিন তিন দিন, এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ এক মাস।
এভাবে কেটে যায় তিন তিন টা মাস।
কল্প আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে দেয়।
এই দিন গুলা আমার কিভাবে কাটে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেননা।
যেই মানুষ আমাকে ছেড়ে একটা দিন থাকতে পারতোনা,সে তিন টা মাস আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।
ভাইয়ার আর ভাইয়ার বন্ধুর ছুটি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো তাই আব্বু আম্মু আমাকে আবার প্রেশার দেন।যেহেতু ছেলে ভালো।সেই জন্য।ভাইয়াও আমাকে অনেক বুঝায়।
এরপর একদিন হঠাৎ আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আর বলেন,সে মরার আগে আমায় বিয়ে দিয়ে যেতে চান।
আমার বিয়ে দেখে যেতে চান।
পরে আমি রাজি হই বিয়ের জন্য।
আর এই ভাবি যে,যেই ছেলে আমাকে ছেড়ে ৩ মাস যাবত নিখোঁজ।
শুধু মাত্র দেশে আসতে বলায়।
বিয়ের কথা বলায়।
তার আশায় থাকা মানে,রাতের বেলা রৌদ্র খোঁজা।
আর আব্বুর এই অবস্থায় তার ইচ্ছে পূরণ করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলোনা।
তাই অবশেষে রাজি হই আমি।
_মেঘা!সব মনে আছে আমার।
তুমি আমাকে কি কি বলেছিলে।
কিন্তু তুমি আমার সব কথা জানোনা।
তাই ভুল বুঝে বসে আছো।
তাহলে আমাকে ভুল নিয়েই থাকতে দাও।
আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি আজ থেকে তাকেই মেনে নিলাম।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও।
ভালো থাকো।
সুখী হও।
দোয়া রইলো।
আমি কল্পকে ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দেই।
ফোন টা অফ করে রেখে দেই।
তারপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।
কিছু ক্ষণ পর মায়ান রুমে আসে।
এসে বলে,
_তোমার কি শরীর খারাপ?
আজ কেমন যেন দেখাচ্ছে তোমায়।
কি হয়েছে বলবে আমাকে?
_আচ্ছা আপনি কোন দিন কাউকে ভালবেসেছেন?
_হুম বেসেছিতো।
_কতটুকু?
_অনেক।
_আমিও না একজনকে খুব ভালবেসেছি।
তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি।
আমি তাকে সব সময় কি বলতাম জানেন?
আমাদের ছোট্ট একটা ঘর হবে,ছোট্ট একটা সংসার হবে।
কিন্তু কিছুই হলোনা।
আপনি যাকে ভালবাসেন তাকে নিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখেছেন?
_হুম দেখেছিতো।
_বলবেন আমাকে আপনার স্বপ্নের কথা?
_হুম বলবো,
_তাহলে বলুন,
_আমি না খুব অন্য রকম একটা ছেলে।
আমি ভালবাসা টালবাসায় কখনোই বিশ্বাসী ছিলাম না।
মানুষের মুখে ভালবাসার কথা শুনলে হাসতাম।
মনে মনে বলতাম,আদৌ কি ভালবাসা বলতে দুনিয়ায় কিছু আছে?
আমার কাছে বাবা মা পরিবারের ভালবাসা ছাড়া বাইরের কোন মেয়ের ভালবাসায় বিশ্বাস ছিলোনা।
কিন্তু হঠাৎ একদিন কেউ একজন আমার জীবনে আসে,যার জন্য আমার বুকের সুপ্ত ভালবাসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
আমি কখনো স্বপ্ন দেখিনি কাউকে নিয়ে জানো।
ও আমাকে স্বপ্ন দেখা শেখায়।
ওকে নিয়ে আমিও ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি।
এক সাথে বসে রাতের আকাশের চাঁদ দেখার স্বপ্ন দেখি।
একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের স্বপ্ন দেখি।
আচ্ছা তুমি যাকে ভালবাসো তাকে কেন বিয়ে করলেনা?
_কারণ সে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
_আপনি কেন তাকে বিয়ে করেন নি?
_কারণ ও আমায় ভুল বুঝে চলে গিয়েছিলো।
_তারপর?
_এখন আবার চলে এসেছে।
_আপনার ভালবাসার মানুষ টা দিশা তাইনা?আমি জানি।
যেদিন দিশা আপনাকে জড়িয়ে ধরেছে।
ওইদিনই শিউর হয়েছিলাম।
_তোমার কথা বলো,যদি সেই ছেলে আবার তোমার কাছে ফিরে আসে তুমি কি তাকে এক্সেপ্ট করবে?
_নাহ!
_কেন?
_কারণ সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
_ছেড়ে যাবার কারণ কি ছিলো?
_জানিনা আমি।
_তাহলে একটা মানুষের উপর আন্দাজে মিথ্যে আরোপ কেন লাগাচ্ছো?
_বাদ দিন এসব।
আমি আজ ওকে আমার সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছি।
আমি আপনার সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই।
ভালবাসবেন আমায়?
দিবেন আমায় স্ত্রীর অধিকার?
_নাহ!আই এম ভেরি সরি।
আমার পক্ষে তোমাকে গ্রহণ করা সম্ভব না।
তুমি সব কিছু গুছিয়ে নাও,একটু পরেই আমরা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
আর হ্যাঁ!
তুমি তোমার বাড়ী যাচ্ছো,
আর আমি আমার বাড়ী।
_মানে?
এসব কি বলছেন আপনি?
_চুপ একদম চুপ।
আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।
সব কিছুর এখানেই সমাপ্তি।
চলবে..