#নীল_বেনারশী
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৫
আমি এক নিঃশ্বাসে চোখ বন্ধ করে বলে ফেলি,
আ আ আমি হানিমুনে যাবো।
প্লিজ দূরে কোথাও আমাকে নিয়ে চলুন।
আর আজ রাতের মধ্যে।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
এ কথা বলেই আমি দৌড়ে রুমে চলে যাই।
আর মায়ান আমাকে পিছু ডাকতে থাকে,মেঘা এই মেঘা!
হঠাৎ কি হলো তোমার?
আমি বলার পরই মায়ান সব কিছুর দ্রুত ব্যবস্থা করে।
আর রাতেই আমরা নামে মাত্র হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
শাশুড়ী আম্মু আমাদের হুটহাট ডিসিশনে খুবই খুশি হন।
আগেই তো বলেছি আমি জার্নি করতে পারিনা।
আমি সারা রাস্তা মায়ানের কাঁধে মাথা রেখে যাই।
অবশেষে আমরা গিয়ে পৌঁছাই
বান্দরবান।
মানুষ বউ নিয়ে কক্সবাজার যায়।সে আমাকে বান্দরবান নিয়ে আসেন।
কল্প আমাকে একদিন বলেছিলো,আচ্ছা আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো?
আমি বলেছিলাম,আমি তো জার্নি করতে পারিনা।
আমার খুব কষ্ট হয় জার্নিতে।
_যেমন?
_আমার মাথা ঘুরে,বমি বমি লাগে,খুব কষ্ট হয়।
_তুমি আমার কাঁধে মাথা রাখলেই দেখবে আর খারাপ লাগছেনা।
তখন তুমি মঙ্গলগ্রহেও হাসতে হাসতে যেতে পারবে।
_তাহলে আমরা মঙ্গলগ্রহেই যাবোনে।
_তা পরে নিয়ে যাবো।
আগে বলো কোথায় যাবো আমরা হানিমুনে?
_আগে দেশে তো আসো।
বিয়ে তো হোক।
তারপর ভেবে দেখবোনে দুজন।
_না এখনই বলো।
_আচ্ছা বলছি,
কক্সবাজার তো যাবোইনা।
অন্য কোথাও যাবো বুঝেছো?
_কেন?কক্সবাজারই তো সবাই যায়।
_এই জন্যই তো আমরা যাবোনা।
_কোথায় যাবে তাহলে?
_আচ্ছা এমন কোন জায়গা আছে নাকি,যেই জায়গা টার নাম নীল দিয়ে হবে?
_হুম আছে।
_কোথায় এটা?কি নাম?
_এত কিছু এখন জানতে হবেনা।
যখন সময় হবে নিয়ে যাবো।
_এখনই বলোনা।
_না তখনই নিজে চোখে দেখে নিও।
যখন নিয়ে যাবো।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
‘
‘
_মেঘা!
_হুম
_এখনো খারাপ লাগছে?
_নাহ।
শুনুন,
_হুম বলো,
_আমরা কোথায় এসেছি?
_বান্দরবান।
_বান্দরবানে কি কি আছে?
এখানে কি দেখবো আমরা?
_যা আছে পরে নিয়ে দেখাবো।
এখন একটু রেস্ট নাও।
ঘুমাও,ভালো লাগবে।
মায়ান একটা হোটেলে রুম বুক করে।আমরা সেখানেই উঠি।
তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
আমার যখন ঘুম ভাঙে আমি দেখি মায়ান নিচে শুয়ে আছে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
কেমন যেন অদ্ভুত একটা টান তার জন্য অনুভব করছি আমি।
কিন্তু এই টানটা তো আমি সব সময় কল্পের জন্য অনুভব করি।
তাহলে তার জন্য কেন সেইম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে?
যাগকে,
মানুষ টা অতটাও খারাপ না,যতটা সে বুঝায়।
নয়তো আমাকে সহ্য করতে না পারা সত্বেও আমি বলার সাথে সাথে আমাকে নিয়ে রওনা দিতোনা।
মায়ানের ঘুম ভেঙে যায়।
_কি দেখছো ওমন করে?
_কিছুনা।
_যাও যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
বের হবো খেয়ে।
আর শোনো,নীল শাড়ী পরো একটা।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেই।
তারপর খাওয়াদাওয়া করে বের হই ঘুরার উদ্দেশ্যে।
অবশেষে আমরা এসে পৌঁছাই
“নীলগিরি”
নীলগিরি বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত একটি পাহাড় এবং পর্যটন কেন্দ্র।দীগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি যে কাউকে এর রূপ দিয়ে বিমোহিত করে রাখবে। যদি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে নীলগিরি আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ করবে। নীলগিরি পাহাড় চূড়াতেই রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র গুলোর একটি নীলগিরি পর্যটক কেন্দ্র। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের নাম নীলগিরি।
নীলগিরি এসে আমি অবাক হয়ে যাই।
এত সুন্দর জায়গা আমি এর আগে কখনো দেখিনি।
_মেঘা!
খুশি এবার?
_অনেক অনেক অনেক।
_পছন্দ হয়েছে জায়গা?
_খুউউউব।
থ্যাংক ইউ সো মাচ।
জানেন,এক সময় না আমি নীল দিয়ে কোন একটা জায়গার খোঁজ করতাম।
আর আসতেও চেয়েছিলাম।
অবশেষে আসলামও ঠিকই, কিন্তু…
_কিন্তু কি?
_না কিছুনা।
জানেন আমার না পাহাড়,সমুদ্র,আকাশ অনেক পছন্দ।
এরপর মায়ান আর আমি ঘুরে ঘুরে সব দেখতে থাকি।
মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি, মেঘের রাজ্য নীলগিরি।
দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড় আর বিস্তীর্ণ প্যানারোমা, এর মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘেদের দল। স্বপ্নের মতো এই দৃশ্য।
_মায়ান,
_আমার না মেঘ ছুঁতে ইচ্ছে করছে।
আকাশ ছু্ঁতে ইচ্ছে করছে।
উফফ এত্ত সুন্দর কেন এই পৃথিবী?
_তুমি সুন্দর তাই।
_কিহ?
_না কিছুনা।
নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য মেঘের রাজ্য নীলগিরি।
নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে তাকালে সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য বিমোহিত করে।
_মায়ান!
_হুম বলো।
_আমি এখানেই থাকবো।
রাতেও এখানেই থাকবো,আপনি একটু ব্যবস্থা করুন না।
_রুম না বুক করেছি আমরা?
_আপনি এইখানেই থাকার ব্যবস্থা করুন না প্লিজ।
আমার এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছেনা।
_কাল আরেকটা জায়গায় নিয়ে যাবো,ওখান থেকেও যেতে ইচ্ছে করবেনা।
আছি তো কয়েক দিন আবার আসবোনে এখানে।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
আমরা সারাদিন ঘুরাঘুরি করে,খাওয়া দাওয়া করে আবার আমাদের হোটেলে ফিরে আসি।
রাতে মায়ান আমাকে বলছে,
_মেঘা!
_জ্বী বলুন।
_আমি তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করি তাইনা?
_হুম করেনই তো।
_আচ্ছা।
_আচ্ছা?
_হুম।
আচ্ছা ঘুমাও।
_আমার ঘুম আসছেনা একটুও।
নীলগিরি মিস করছি খুব।
_আবার নিয়ে যাবোনে,এখন একটু ঘুমাও।
সারাদিন অনেক হাঁটাহাটি করেছো।
ক্লান্ত তুমি।
_আচ্ছা,সকালেই তাহলে আমরা কোথাও যাবো হুম?
_আচ্ছা।
আমি শুয়ে পড়ি।
এরমধ্যে আর ফোন ই অন করিনি আমি।
ফোনের ডাটাও না।
সেই জন্য কল্প আমার সাথে যোগাযোগও করতে পারেনি।
এত ঘুরাঘুরি এত কিছুর মধ্যেও আমি কল্পকে ভুলতে পারছিনা।
কল্পর জন্য মন টা ঠিকই ছটফট করছে।
কিন্তু ওর উপর যেই রাগ টা আছে,সেটার জন্য মায়াটা পুরোপুরি এফেক্ট করছেনা।
কিন্তু যতক্ষণ আমি নীলগিরি ঘুরেছি মায়ানের জায়গায় কেন যেন মনে হয়েছে আমি কল্পের সাথেই আছি।
আর তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে করছিলো খুব তাকে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু ধরিনি।
আমি কল্পকে প্রায়ই বলতাম,
তোমাকে জড়িয়ে ধরার আগে আমার মৃত্যুও যেন না হয়।
কল্প বলতো,এই তো কিছু দিন।
এরপর বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে রেখো আজীবন।
আমি কল্পর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
পরের দিন খুব সকালেই আমি মায়ানকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।
_এই যে শুনুন,
তাড়াতাড়ি উঠুন।
আমার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।
উঠুন না।
_উফ একটু ঘুমোতে তো দাও মেঘা।
_এত ঘুমাতে হবেনা।
আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছি,আপনিও রেডি হন।
এরপর আমরা রেডি হই।
তারপর মায়ান আমাকে নীলাচল নিয়ে যায়।
নীলাচল বান্দরবানের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে কাছে সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র সম্ভবত নীলাচল। এটি বান্দবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নীলাচলের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট যা কিনা টাইগার পাড়ায় একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। বান্দরবান শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে তাই পৌঁছোতে হয়। মাঝে পথের দুই পাশে ছোট একটি পাড়ায় দেখা যায় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস।
চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢালে কোথাও আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাহাড়ী পাড়া আর রূপালী নদী গুলো যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। এই পাহাড় থেকে এক নজরে দেখা যায় পুরো বান্দরবান শহর।
_মেঘা!
সুন্দর না?
_অনেক অনেক অনেক বেশি সুন্দর।
থ্যাংক ইউ সো মাচ কল্প!
লাভ ইউ!
_কল্প?
কল্প কে?
_সরিইই!কিছুনা কিছুনা।
ভুল করে বলে ফেলেছি।
_মেঘা!কিছু কি লুকোচ্ছো তুমি আমার থেকে?
আমি কথা ঘুরিয়ে বলি,
_দেখুন দেখুন কি সুন্দর আকাশ।
আমি না এত সুন্দর আকাশ কোন দিনও দেখিনি।
_হুম আমিও না।
_আমিতো আজ এখানে থাকবোই।
আপনি ব্যবস্থা করুন থাকার।
_আবার নিয়ে আসবো।
_না না না।
আমি আজ যাবোইনা এখান থেকে।
আমি হাঁটতে হাঁটতে কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করলাম,
এখানে কি থাকার ব্যবস্থা আছে?
তারা বললেন,
নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট আছে।
সাধারণ পর্যটকদের সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকার অনুমতি আছে।
এই রিসোর্ট টা নীলাচলের বাড়তি আকর্ষণ।
নীল রঙের এই রিসোর্ট।
_মায়ান!
আমি এখানে রাতেও থাকবো।
_মেঘা,আমি বলেছিনা আবার নিয়ে আসবো?
_সত্যি তো?হুম সত্যি।
মায়ান আর আমি সব কিছু ঘুরেঘুরে দেখলাম সারাদিন।
_একটু পরেই সূর্যঅস্ত যাবে।
সূর্যাস্ত দেখবে মেঘা?
_হুম দেখবো।
শুনুন আমার হাত ধরুন তো।
_মানে?
_হুম ধরুন ছবি তুলবো।
আমি সূর্যের দিকে ঘুরে দাঁড়াবো আর আপনি পেছন থেকে আমার হাত ধরে রাখবেন।
তারপর আপনার হাত সহ আমার আর সূর্যের ছবি তুলবেন।
_আমি কোন দিন তুলিনিতো এই ভাবে ছবি।
_তুলেন নি,আজ তুলবেন।
তুলুন।
মায়ান আমাকে ছবি তুলে দেয়।
আর বলে,
আমরা দুজন এক সাথে কয়টা ছবি তুলতে পারি?
_তুলুন,বাট শর্ত আছে।
_কি শর্ত?
_সেটা পরে বলবো এক সময়,
আপনি শর্তে রাজি কিনা বলুন।
_না শুনে রাজি কিভাবে হবো?
_তাহলে তুলতে হবেনা ছবি।
_আচ্ছা আমি রাজি,এবার এসো।
তারপর মায়ান আর আমি কয়েক টা ছবি তুলি।
তারপর আবার হোটেলে ব্যাক করি।
রাতে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে মায়ান যেই লাল শাড়ীটা আমাকে পছন্দ করে কিনে দেয় সেই লাল শাড়ীটা পরি আমি।
মায়ান নিচে গিয়ে শুয়ে পরে।
কিছু ক্ষণ পরে আমিও খাট থেকে নেমে গিয়ে মায়ানের বাম হাতে মাথা রেখে শুয়ে পরি।
_এই মেয়ে এই!
কি করছো তুমি?
এখানে কি?এখানে কেন তুমি?
_ও মা! আমি আপনার বিয়ে করা বউ।
কই থাকবো তাহলে?
_যাও যাও খাটে গিয়ে ঘুমাও।
_উঁহু! আমিতো আজ আপনার সাথেই ঘুমাবো।
_মেঘায়ায়ায়ায়া
_জ্বীইইইই
চলবে…