নীল নীলিমায় পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
106

#নীল_নীলিমায়
(শেষ অংশ)

বিয়েবাড়ির সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো কিছু মাঝবয়সী মহিলা। এরা আসে কনেকে নিয়ে সমালোচনা করতে, খাবার ভালো হলেও খুঁত ধরতে আর অবিবাহিত মেয়ের ঘটকালি করতে। নীরুকে দেখে এক মহিলার খুব পছন্দ হয়ে গেল তার ভাগ্নের জন্য। সোজা গিয়ে নীরুর মাকে প্রস্তাবই দিয়ে দিল। বিয়ের আসরে হাজারটা ব্যস্ততার মাঝেও মা যখন নীরুকে কোণায় ডেকে নিয়ে বললেন, “একটু রয়েসয়ে চল। তোর বিয়েরও সম্বন্ধ আসছে। ভালো ঘর। মাথায় কাপড়টা দে৷ এরকম চুলগুলো সব ছড়িয়ে দিয়ে রেখেছিস কেন?”, নীরুর সে কি রাগ! সেও বলে দিল, “আপা যেমন চাকরি পেয়ে বিয়ে করেছে, আমিও তাই করব।”

নীরুর মা বিরক্ত হয়ে বললেন, “যে না পড়ার ছিরি! তোর বোন পাবলিক ভার্সিটিতে ফিজিক্সে পড়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। তুই তো বাংলায় পড়েও ফেল করিস। তোকে চাকরি কে দেবে?”

নীরু সমান তেজে জবাব দেয়, “যা বলেছি বলেছি। এরপর ছেলে দেখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। বাবা মা হয়ে দুই মেয়ের সাথে দুই রকম আচরণ চলবে না।”.

নীরুর মা আহত হলেন। ওর বাবাকে বললে তিনি খুব সহজ গলায় স্ত্রীকে বললেন, “নীরু প্রথমবার বলেছে কিছু করে দেখাবে। ওকে সুযোগ দেয়া উচিত। কিছু করতে পারলে তো খুবই ভালো। আর না হলে বিয়ে দিয়ে দেব। ছেলের কি অভাব নাকি দেশে?”

নীরুর মা আর উচ্চবাচ্য করেননি এ নিয়ে।

মেজাজ গরম নিয়ে নীরু যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন ওর চোখ গেল খাবার টেবিলের দিকে। পাত্রপক্ষ এখনো এসে পৌঁছায়নি। তাদের আত্মীয়রা খাচ্ছে। একটা টেবিলে নিয়নের দুই বোন, মা আর নিয়ন বসেছে। নীরু দুটো জিনিস লক্ষ্য করল। প্রথমত, নিয়ন ভাইকে পাঞ্জাবিতে ভয়ানক সুন্দর লাগে, দ্বিতীয়ত, সে খুব যত্নশীল। বোনদের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে পরম যত্নে।

নীরু বাথরুমে গিয়ে নিজের সাজটা আরেকবার ঠিকঠাক করে নিয়ে নিয়নের সামনে ঘোরাফেরা করতে থাকল। নিয়ন ওর দিকে ঠিকমতো তাকাল পর্যন্ত না। আচ্ছা সেই বাক্সে প্রেম নিবেদন পেয়েও লোকটা এরকম নিস্পৃহ ভাব কেমন করে দেখাতে পারে?

শেষ পর্যন্ত সইতে না পেরে নীরু সরাসরি নিয়নের সাথে কথা বলতে চলে গেল। যা হয় হোক, আজ বলতেই হবে কিছু। নিয়ন ওকে দেখে ভুরু তুলে বলল, “কিরে, কিছু বলবি?”

“আপনি বিয়ে করবেন কবে?”

নিয়ন হেসে বলল, “কেন তুই জানিস না? আমি বিয়ে করব না।”

“কেন?”

নিয়ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমাদের পোড়া কপাল রে নীরু। মা বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, আপাদেরও তাই, আমি বিয়ে করে ঠকতে চাই না রে।”

“আরে করেই দেখেন, টিকে যেতেও পারে।”

“না রে নীরু। আমার অত সাহস নেই। আপাদের তো দেখছি। ভালো….” কী মনে করে থেমে গেল নিয়ন। চোখ মটকে বলল, “তোকে আমি এসব বলছি কেন? আর তুই আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছিস কেন?”

নীরু মনে মনে বলল, “কচি খোকা! জানে না যেন! সেদিন যে এত লম্বা চিঠিটা লিখলাম সেটা পড়েও বুঝলে না আমি কী চাই?”

নীরুকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিয়ন গম্ভীর গলায় বলল, “কিরে, বোবায় ধরল নাকি?”

নীরু বলল, “আমি যে সেদিন মাঠে বাক্সটা ফেলে এসেছিলাম সেটা কী করেছিলেন?”

“কেন তোর বাড়িতে দিয়ে গেছি।”

“কিহ?” নীরু আকাশ থেকে পড়ল। “কবে? কখন? কার কাছে?”

“বাড়ি এসে কাউকে পাইনি বলে বসার ঘরে রেখে চলে গিয়েছিলাম। এরপর কী হয়েছে জানি না।”

নীরুর বুক ধড়ফড় শুরু করল। জিজ্ঞেস করল, “বাক্সটা আপনি খুলে দেখেননি?”

“তোর বাক্স আমি খুলব কোন দুঃখে?”

নীরু আর কিছু না বলে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। নীরুর মা তখন কন্যা বিদায় দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নীরুর কবেকার কোন বাক্সের কথা শুনে বেজায় বিরক্ত হলেন তিনি। কয়েকবার মুখ ঝামটা দিয়েও যখন নীরুকে দমানো গেল না, তখন খানিকক্ষণ চেষ্টা করে মনে করে বললেন, “একটা বাক্স তিনি পেয়েছিলেন, তবে সেটা নোংরা ভেবে ফেলে দিয়েছেন।”

নীরু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সাথে মনটাও বিষন্নতায় ছেয়ে গেল।

তরু চলে যাওয়ার সময় নীরুর এত কষ্ট হবে সে আগে ভাবেনি। প্রথমবার মনে হলো বোনটা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে চিরতরে। নীরুর কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেল। বড় প্রিয় ছিল তার বোনটা। এখন তার সাথে কে ঘুমাবে? কার সাথে ঝগড়া করবে? মন খারাপ থাকলে কার কোলে মুখ গুঁজে পড়ে থাকবে?

তরু চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরেও দেখা গেল নীরু আঁধার ঘরের কোণে বসে ফোঁপাচ্ছে। তাকে দেখে নাজিফা আপা এগিয়ে গেলেন। নীরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “এক আপা গেছে তো কী হয়েছে? আমরা আছি তো। একা লাগলেই আমাদের কাছে চলে যাবি।”

নীরু মনে মনে বলে, “একেবারে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাও না গো আমায়৷ আমি দু’পায়ে রাজি।”

দিন মাস গড়াতে থাকে। নীরুর আর নিয়নকে কিছু বলা হয় না। এদিকে সে বাড়িতে বলে রেখেছে চাকরি পেয়ে বিয়ে করবে। তাই পড়াশোনায় মন দিতে হচ্ছে অনেক বেশি। ধীরে ধীরে চঞ্চল নীরু কেমন যেন থিতু হতে শুরু করে। অনেক কিছুই বুঝতে থাকে সে। জগত সংসারের হাজারটা ব্যাপার একটু একটু করে মাথায় গেঁথে যায় তার। আগের পাগলামির কথা মনে পড়লে অনুতাপও হয়। তবে একটা জিনিস বদলায় না। নিয়নের প্রতি নীরুর ভালোবাসা। যত দিন যেতে থাকে, নীরুর ভালোবাসা তত গাঢ় হতে থাকে। নিঃসঙ্গ আর ভীষণ ভালোমানুষটাকে সে মনপ্রাণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। নীরুর বোধোদয় দেখে বোধহয় নিয়ন ভাইও তার সাথে আগের মতো ব্যবহার করে না। অনেক কথা হয় তাদের। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ চলে আসায় আড্ডার বেশিরভাগ হয় মেসেঞ্জারের পাতায়। বন্ধুত্ব বাড়ে, কিন্তু নিয়ন কখনোই সম্পর্কটা অন্যদিকে নিতে দেয় না। খুব সতর্কভাবে বিয়ে, প্রেম ইত্যাদি ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চলে।

দেখতে দেখতে নীরুর মাস্টার্সের ফলাফল বের হয়। রেজাল্ট আশাতীত। বাবা মা খুব খুশি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, কিছুদিনের মধ্যে নীরু চাকরিও পেয়ে যায়৷ খুব আহামরি কিছু নয়, একটা স্কুলে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয় নীরু। স্কুলের ছেলেমেয়েদের সাথে তার দিন কাটতে থাকে স্বপ্নের মতো। কিন্তু ওইযে কথা ছিল চাকরির পর বিয়ে! সেই বিয়ের ঘন্টা বাজতে শুরু করে নীরুদের বাড়িতে। ছেলে দেখা চলতে থাকে। নীরু এবার নিষেধ করতে পারে না। বাহানাও দেখাতে পারে না। এ পর্যন্ত বহুবার সে আকার ইঙ্গিতে নিয়নকে তার ভালোলাগার ব্যাপারটা বোঝাতে চেয়েছে। নিয়ন বুঝেও বোঝেনি। নীরুর আর কী বা করার আছে!

অবশেষে একটা ছেলের সাথে নীরুর বিয়ে প্রায় পাকাপাকি হয়ে গেল। ছেলে তরু আপার দূর সম্পর্কের দেবর। সদ্য হওয়া বিসিএস ক্যাডার। নীরুকে নাকি তরুর বিয়েতে দেখেছিল, তখন থেকেই মনে ধরে আছে। নীরুরও ভালোই মনে হয় জাহেদ নামের মানুষটাকে। কিন্তু ভালোবাসা বা ভালোলাগা কোনোটাই তার মনে নতুন করে জন্ম নেয় না। ভয় হয়, যদি বিয়ের পরেও লোকটাকে ভালোবাসতে না পারে তবে ঠকানো হবে না? নীরুর দিনকাল কাটে চিন্তায়৷

বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে নিয়ন ভাই যেন খুব খুশি হয়। নীরুকে বারবার অভিনন্দন জানায়। নীরুও ভাব দেখায় যেন সে আনন্দে আটখানা!

এক শীতের সকালে ঘুম ভেঙে যায় নীরুর। গায়ে ধূসর রঙের চাদর জড়িয়ে সে উত্তরের জানালাটার কাছে বসে। নিয়ন ভাইকে দেখা যায় জেমিকে নিয়ে বের হয়ে এসেছে। জেমিটার বয়স হয়েছে। আগের মতো লাফাতে পারে না। নিয়ন ভাইয়ের মুখটাও বিষন্নতায় মাখামাখি। দেখে মনে হয় বয়স যেন অনেক বেড়ে গেছে হঠাৎ। অথচ তাতে তাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। নীরুর বুকটা হু হু করে আসে। সে জানালা বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়। এতদিনের চেপে রাখা কান্না কোনোভাবে বাঁধ দিতে পারে না সে। আজকের দিনটা অন্য দিনগুলোর মতো নয়। আজ তাকে আংটি পরাতে আসবে ছেলেপক্ষ। নীরুর দিশেহারা মনে হয় নিজেকে।

সকাল থেকেই আজ রোদের দেখা নেই। দুপুরের দিকে আকাশ কালো হয়ে কুয়াশায় ছাওয়া প্রকৃতিতে ফোটা ফোটা বৃষ্টি ঝরতে থাকে। নীরুর বাবা টিভিতে খবর দেখে চিন্তিত সুরে বলে, “নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। কয়েকদিন এমন বৃষ্টি থাকবে। এই দুর্যোগের দিনে ওনারা আসবেন কেমন করে?”

নীরুর মনটা দোটানায় দুলতে থাকল। সে প্রার্থনা করল যেন বরপক্ষ এসে না পৌঁছাতে পারে আজ। সে যেন আরেকটু সময় পেল নিজেকে সামলে নেবার। ভাগ্যবিধাতারও বুঝি তাই ইচ্ছে ছিল। বিকেলের দিকে বৃষ্টি বাড়ল। সেই সাথে লোডশেডিং। এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান পিছিয়ে গেল। নীরুর খুশি কে দেখে!

সন্ধ্যার পরপর মাকে বলে সে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। পাশের বাড়িতেই যাবে। বলে এসেছে নাঈমা আপার কাছ থেকে বই আনতে যাবে। আসলে এসেছে নিয়নকে এক নজর দেখতে। সেখানে গিয়ে কাজের ছেলের কাছে শোনে দুই আপা আর চাচী গেছেন বেড়াতে। বাড়িতে শুধু একা নিয়ন ভাই আছে। নীরু পা টিপে টিপে নিয়নের ঘরে ঢোকে। ঢুকেই চমকে ওঠে সে। নিয়ন ঘরে নেই। তবে ঘরে এমন কিছু আছে যেটা নীরুর হৃৎপিণ্ডটা খামচে ধরে।

টেবিলের ওপর একটা কাচের জার। জারের গায়ে নানা রঙের নকশা করা। জারের ভেতর একটা মোমবাতি রাখা। মোমের আলো কাচের গা দিয়ে ঠিকরে বের হচ্ছে। আর কাঠের টেবিলের গায়ে নকশা কেটে দিয়েছে। এই জারের নকশাটা বহুদিন আগে নীরু নিজ হাতে বানিয়েছিল। বানিয়ে রঙিন কাগজের বাক্সে ভরে নিয়ে গিয়েছিল নিয়ন ভাইয়ের জন্য। সেই বাক্স সে ফেলে এসেছিল মাঠে। জারটা যেহেতু নিয়ন পেয়েছে, তার মানে এর ভেতরের চিঠি, কার্ড আর ফুলের মালিকও হয়েছে সেই ভদ্রলোক! কত যত্ন করে রেখেছে জারটা! অথচ কী সুন্দর মিথ্যে করে বলেছিল বাক্সটা ফেরত দিয়ে এসেছে! লোকটা তার মানে জানে নীরু তাকে কতটা…..!

টেবিলের এক কোণে একটা ডায়েরি দেখতে পায় নীরু। ভেতরে একটা কলম গোঁজা। কলমটা বের করে ডায়েরির পাতা খোলে সে। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ক’টা লাইন, “ভালোবাসার মায়ার খেলায় হেরে গেলাম নীরু। তোমায় দূর থেকেই ভালোবাসা যায়, কাছে গিয়ে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যার কাছে যাবে, মনপ্রাণ ঢেলে দোয়া করব যেন সুখে থাকো।”

নীরুর চোখভরে জল আসে। সে ডায়েরিটা রেখে মেঝেতে বসে কেঁদে ফেলে। নিয়ন বাথরুমে ছিল। বের হয়ে নিজের ঘরে বসে নীরুকে কাঁদতে দেখে যা বোঝার বুঝে নেয় সে। নীরু মুখ তুলে তাকায়। চোখে চোখ পড়ে। সেই নীরুর প্রেমে পড়ার দিনের মতো আজও বাইরে ডিসেম্বরের বৃষ্টি হচ্ছে। শীতে জমে আসছে গা হাত পা। ভেজা বাতাসের ঝাপটা জানালা দিয়ে এসে হিমের কণা বিঁধিয়ে দিচ্ছে নীরুর গায়ে। মোমের আলোয় সে দেখতে পায় তার সামনে দাঁড়িয়ে রূপকথার রাজকুমার, যাকে পাবার জন্য সে অপেক্ষা করেছে হাজার বছর। নীরু স্থান কাল পাত্র ভুলে এক ছুটে এসে আছড়ে পড়ে নিয়নের বুকে। নিয়ন ধাক্কা সামলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ে। তার হৃদয়েও আজ শ্রাবণের ঢল নেমেছে। নীরু তো তার প্রেমে পড়েছে অনেক পরে! এই শ্যামবর্ণা দীর্ঘকেশী মায়াবতীর প্রেমে তো সে বুঝতে শেখার পর থেকেই হাবুডুবু খাচ্ছে। তবু কাছে যেতে সাহস হয়নি। পেয়েও হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে না পাওয়ার যন্ত্রণা ভালো!

কিন্তু আজ নীরুর কান্না দেখে মনে হলো, তাতে কষ্ট সে একা পেত না, এই মেয়েটাকেও যে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলত! তারচেয়ে একটা সুযোগ দেয়াই যাক জীবনটাকে। অসুখ হলেও তা তো হবে সুখের অসুখ। হোক না! এই মেয়ের হাত সে কোনেদিন ছাড়বে না।

কাজের ছেলেটার স্যান্ডেলের শব্দ শুনে নিয়ন ফু দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেয়। নিজেও দু’হাতে জড়িয়ে ধরে নীরুকে।

(সমাপ্ত)

সুমাইয়া আমান নিতু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে