নীল চিরকুট
আশা
প্রিয়বরেষু,
আমার এলোমেলো পত্রের শুরুতে তোমাকে জানাই আমার প্রিয় কাঠগোলাপ এর স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা।শরতের শুভ্র মেঘ পরিমাণ ভালোবাসা তোমার জন্য।আর সাথে শরতের অজস্র কাশফুল।যাতে তুমি কাশফুলের স্পর্শে আমায় অনুভব করতে পারো।
প্রিয়,জানো?অনেক কথার ঝুড়ি জমিয়ে রেখেছি তোমায় বলবো বলে।আজ সেগুলোই বলবো।না হয় কথাগুলোও যে শুকিয়ে যাবে,ঠিক আমার ডায়েরির পৃষ্ঠায় জমানো শুকনো গোলাপের পাপড়ি গুলোর মতোই।
গাছের ফুল ছেঁড়া আমার একদম পছন্দ নয়।কিন্তুু জানো,যেদিন আমার নতুন গোলাপ গাছের প্রথম ফুল ফুঁটেছিল,সেইদিন আমি ফুলটা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।কারণ আমি চেয়েছি,আমার গাছের প্রথম ফুলটা আমার প্রিয় মানুষটি কে দিতে।কিন্তুু দেখো!সেই তোমারই দেখা নেই!তাই আমি গোলাপের পাপড়ি গুলো সযত্নে ডায়েরিতে রেখে দিয়েছি।যখন তোমার দেখা পাবো তখন ঐ শুকনো গোলাপের পাপড়ি গুলো দিয়ে বলবো-“ভালোবাসি হে প্রিয়।”
তুমি হয়তো ভাববে,”শুকনো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আদৌ কি কেউ কাউকে “ভালোবাসি” বলেছে?”
কিন্তুু আমি সবার মতো তাজা গোলাপ দিয়ে “ভালোবাসি” কথাটি বলবো না।সে তুমি যা মনে করো!আমি দু’হাত ভরে শুকনো গোলাপের পাপড়ি নিয়েই তোমার ভালোবাসা চাইবো।তুমি শুধু আমাকে সাদরে গ্রহণ করো।
জানো,আকাশে যখন পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে।তখন আমি তোমায় ভাবি।কোনো এক ভরা পূর্ণিমায় তুমি আর আমি,ছোট্ট বারান্দাটায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানবো দু’জন দু’জনকে।গল্পের ভান্ডার খুলে বসবো সেদিন।গল্প করতে করতে ভোর হয়ে যাবে।তখন দু’জন মিলে সূর্যোদয় দেখবো।মিষ্টি একটি সকাল উপভোগ করবো।
আমি না বড্ড অভিমনী! ছোট খাটো বিষয়ে যখন অভিমান করবো তখন কিন্তুু তুমি আমার অভিমান ভাঙাবে।অভিমান না ভাঙানো অবধি,আমি কিন্তুু অভিমানী মেয়েটিই থাকবো বলে দিলাম।
হ্যাঁ। মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে লেখা আমার এলোমেলো কবিতাগুলো শুনাবো।তোমাকে কিন্তুু শুনতে হবে।যদিও আমি আবৃত্তি করতে পারি না।তোমায় নিয়ে হুটহাট ছন্দ রচনা করে ফেলবো।
‘তুমি আছো কল্পনায়
এঁকেছি যে বহুরূপে তোমায়!
আজ তুমি দৃষ্টির অগোচরে!
তুমি এলে-
দুটি হৃদয় যুক্ত হবে একই হৃদস্পন্দনে।’
আজ আর নয়।অনেক লিখে ফেলেছি।শেষ করে ফেলেছি বলে,ভেবো না!কথার ফুল ঝুড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে।হৃদ কুটিরে জমানো কথাগুলো যে শেষ হওয়ার নয়।আজ না হয় এ পর্যন্তই শেষ করলাম।
রোদেলা দুপুরের তপ্ত রোদের মধ্যে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির মতো তোমার আগমনের অপেক্ষায়।
ইতি,
অপেক্ষারত চারুলতা।
বইয়ের ভাঁজে লুকানো নীল চিরকুটটি পড়ে,হিমেল খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল।সে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে এত সুন্দর একটি চিঠি পড়ে।একরাশ মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ চিঠিটা।এত সুন্দর চিঠি সে কখনো পড়েনি।পড়বেই বা কি করে?চিঠি লেখার সেই দিনগুলি তো হারিয়ে গিয়েছে।
আপন মনে হিমেল হেসে ওঠে এই ভেবে যে,চিঠিটা তার বউয়ের লেখা।সে যে এত সুন্দর চিঠি লিখতে পারে,এটা তার অজানা ছিল।সে ভাবলো,
“চারুলতা কি চিঠিটা তার জন্য লিখেছে?নাকি সে অন্য কাউকে ভালোবাসতো?”
পরক্ষনেই আবার ভাবে,”নাহ! যদি সে অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাহলে তো চিঠিটা তাকে দিয়ে দিতো।চিঠিটা নিজের কাছে রাখতো না।”
মনের মাঝে হাজারো সংশয় নিয়ে যখন সে এসব ভাবছিল।তখনই চারুলতার ডাকে তার ঘোর কাটে।
“কই আসুন।সবাই খাবার টেবিলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
চারুর কথা শোনা মাত্রই সে চিঠিটা বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রেখে বললো,
“হ্যাঁ আসছি।তুমি যাও।”
“তাড়াতাড়ি আসুন”,বলে চারুলতা চলে গেলো।
চারুলতা চলে যাওয়ার পর হিমেল ভাবলো “সে চিঠিটার কথা চারুলতাকে জিজ্ঞাস করবে।তাহলেই তার সংশয় দূর হয়ে যাবে।”
রাতে খাবার শেষে চারুলতা যখন রুমে আসে,তখন হিমেল বললো,”আচ্ছা চারু।তুমি কি কখনো কাউকে চিঠি লিখেছো?”
চারুলতা বললো,”লিখেছি।তবে যেই মানুষটি কে নিয়ে লিখেছি সেই মানুষটি কে পাওয়া হয়নি,আর চিঠিটাও দেয়া হয়নি।”
“তাকে কি এখনো খুঁজে পাওনি?”
হিমেলের কথায় এবার একটু চমকালো চারুলতা।সে ভাবলো,”মানুষটি আজ হঠাৎ চিঠির পিছনে পরলো কেন?”
চারুলতার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে হিমেল বললো,”চারু তুমি এত সুন্দর চিঠি লিখতে পারো!কই আমায় তো বললে না?”
চারুলতা বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো।আর মনে মনে বললো,”সর্বনাশ! এই লোক আমার লুকানো চিঠিটা পড়ে ফেলেছে!কিভাবেই বা চিঠিটা পেয়েছে?” কিন্তুু মুখে বলল,
কো….কোন চিঠি?”
“সেই চিঠি যেটা তুমি তোমার মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছো”,বললো হিমেল।
চারুলতা নিশ্চুপ!
একটু থেমে হিমেল আবার বললো,
“তুমি তো জানো না চারু,আমাদের বিয়ের এই কয় মাস সময়ে তোমাকে যে আমি কতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি।তোমার পুরোটা না বুঝতে পারলেও অল্প সময়ে তোমাকে অনেকটাই চিনে ফেলেছি।প্রতিনিয়ত আমি তোমাতে মুগ্ধ হয়েছি।তুমি ঠিক তেমনটাই যেমনটা আমি চেয়েছিলাম।আজ তোমার লুকানো চিঠিটা পড়ে আমি সত্যিই আবার তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।একটা মানুষ কল্পনাতেও একজন কে এত সুন্দর করে ভাবতে পারে!এত ভালোবাসা জমিয়ে রাখতে পারে!আমার জানা ছিল না।আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি!
চারু আমি কি তোমার সেই কল্পনার মানুষটি হতে পারি?”
চারুলতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”তো!নয় তো আর কে?আপনিই তো আমার সেই মানুষটি।আপনি বুঝেন না?”
চারুর কথা শুনে হিমেলের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।কিন্তুু সে অভিমান জড়ানো কন্ঠে বললো,
“যদি হতামই তাহলে আর চিঠিটা আজ লুকিয়ে পড়তে হতো না।তোমার হাত থেকে নিয়ে তারপর পড়তাম।তাহলে এতদিন দাও নি কেন?”
একটু ইতস্ত ভঙ্গিতে চারুলতা বললো,”আসলে আমি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তুু সাহস হয়নি।যদি আপনি কিছু মনে করেন।”
হিমেল চারুলতাকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,”তোমার ঐ চিঠি পড়েই তো পাগল হয়ে গিয়েছি।এতো মনোমুগ্ধকর চিঠি পড়ে কি কেউ কিছু মনে করতে পারে?আমি এমন অসংখ্য চিঠি পড়তে রাজি।খুব ভালোবাসি রে পাগলী।”
চারুলতা হিমেলের বুক থেকে সরে গিয়ে তার ডায়েরির ভাঁজে রাখা শুকনো গোলাপের পাপড়ি গুলো মুঠো ভরে নিয়ে আসে।হিমেলের সামনে মুঠো ভর্তি গোলাপের পাপড়ি গুলো মেলে দিয়ে বললো,
“ভালোবাসি হে প্রিয়।”
হিমেল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।তারপর চারুলতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।”
চারুলতার চোখে আজ আনন্দের অশ্রু।কারণ সে তার বহু দিনের অপেক্ষার মানুষটি কে পেয়েছে এবং ভালোবাসি কথাটি বলতে পেরেছে।
সমাপ্ত~
বিঃদ্রঃ- ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/