#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১
কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে। দরজা খুলতেই চাঁদনির হৃদ স্পন্দন মনে হচ্ছে থেমে যেতে চাইছে। নিজের চোখকেও এই মুহূর্তে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। চাঁদনি কাঁপা কাঁপা হাতে সামনে থাকা মানুষটিকে ছুতে চাইলো। কিন্তুু তার আগেই লোকটি চাঁদনিকে পাশ কাটিয়ে। চিৎকার করে কাউকে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকে গেলো। আর চাঁদনি নির্বাক হয়ে দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে। এদিকে লোকটির চিৎকার শুনে নেমে এলো সালেহা চৌধুরী। সালেহা চৌধুরীও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাঁপা কাঁপা গলায় অস্পষ্ট আওয়াজে বললো।”
—-” তুতুতুই?”
লোকটি দৌড়ে গিয়ে সালেহা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো। সালেহা চৌধুরীও লোকটিকে জড়িয়ে কান্না করতে করতে বললো,
—-” কোথায় ছিলি এতদিন তুই?”
লোকটি কিছু বলতে যাবে তারআগে। শিরি দিয়ে চাঁদনিকে ডাকতে ডাকতে নেমে এলো। চাঁদনির স্বামী নিভীর চৌধুরী নীল। নীল ও সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো হালকা ভাবে বললো।”
—-” আআআকাশ,
আকাশ দৌড়ে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরলো। নীল স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে মুখে কোনো ভাষা নেই। আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে বললো।”
—-” নীল কিছু বলছিস না কেন?”
নীল ও কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—-” তুতুতুতুই বেঁচে আআছিস?”
আকাশ জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে বললো।”
—-” ওহ এই কাহিনী? সে একটা সময় বলবো। এখন বল মম এখানে ড্যাড কোথায়?”
নীল মাথা নিচু করে বললো,
—-” ড্যাডি অফিসে গিয়েছে।”
আকাশ মুচকি হেসে দরজায় দাড়িয়ে থাকা। চাঁদনির দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে নীল নিজের হাত মুঠ করে নিলো। আকাশ গিয়ে চাঁদনির সামনে দাড়িয়ে বললো,
—-” চাঁদনি।”
চাঁদনি এতক্ষণ যেন মূর্তি হয়ে ছিলো। আকাশের ডাকে বাস্তবে ফিরে এলো। আর নিজের সামনে আকাশকে দেখে থমকে গেলো। চাঁদনি দৌড়ে শিরি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আকাশ অবাক হয়ে গেলো এরকম কিছু আকাশ আশা করেনি। আকাশ ও শিরির দিকে পা বাড়ালেই নীল আটকে দিলো। আকাশ এবার আরো অবাক হলো ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কি হলো নীল? তুই আমাকে আটকে দিলি কেন?”
__________________
নীল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।”
—-” তুই চাঁদনির কাছে যাবিনা আকাশ,
আকাশ কিছুটা রেগে বললো।”
—-” হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি? আমি ২বছর পর ফিরে এসেছি নীল। এই ২বছর চাঁদনি অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমাকে দেখে ও আরো বেশী কষ্ট পাচ্ছে। কারন ওর মনে অভিমান জমে আছে। এটা ভেবে যে এই ২বছর আমি কোথায় ছিলাম। আর ওর সামনে এখানে কেন ফিরে আসিনি। আমাকেতো সবটা এক্সপ্লেইন করতে হবে তাইনা?”
নীল গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,
—-” তার আর কোনো দরকার নেই।”
আকাশ চমকে বললো,
—-” দরকার নেই মানে? নীল তোর কি হয়েছে বলতো?”
নীল এবার একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” আব আকাশ তুইতো জার্নি করে এসেছিস তাইনা? তো বলছিলাম কি তুই এখন রেস্ট নে। আমরা সবাই পরে সবটা শুনবো কেমন?”
আকাশ অবাক চোখে বললো,
—-” তুই কি করে জানলি জার্নি করে এসেছি?”
নীল ঘাবড়ে বললো।”
—-” আ আমি মানে সেটাই হবে,
বলে নীল উপরে চলে গেলো। আকাশ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সালেহা চৌধুরী আকাশকে চুমু দিয়ে বললো।”
—-” যা বাবা তুই গিয়ে রেস্ট কর। তুই এককাজ কর তুই আমার রুমে যা। তোর সাথে অনেক কথা আছে আকাশ,
আকাশ ওকে বলে চলে গেলো। এদিকে সালেহা চৌধুরী যতটা খুশি হয়েছে আকাশ ফিরে আসাতে। ঠিক ততটাই ভয় পাচ্ছে। আকাশকে সত্যিটা কি করে বলবে সেটা ভেবে। সালেহা চৌধুরী বললো।”
—-” এবার কি করবো আমি? আকাশকে সত্যিটা কি করে বলবো আমি? সত্যিটা শুনলে যে আকাশ ভেঙে পড়বে। ও কি মানতে চাইবে এটা?”
—-” কোন সত্যি মম?”
আকাশের ভয়েস শুনে সালেহা চৌধুরী হচকচিয়ে গেলো। পিছনে ফিরে আমতা আমতা করে বললো,
—-” সে সব ছাড় তোকে কিছু।”
—-” আআআকাশ তুই?”
রবিন চৌধুরীর কথা শুনে তাকালো আকাশ। ড্যাড বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে,
রবিন চৌধুরী খুশি হয়ে বললো।”
—-” আকাশ তুই কি করে? এতদিন কোথায় ছিলি বাবা?”
আকাশ হেসে বলবো,
—-” ড্যাড তোমাদের আমি সবটা বলবো।”
রবিন চৌধুরী ছেলেকে বুকে টেনে নিলো। পাক্কা ২বছর পর ফিরে পেলো ছেলেকে। যাকে কি না গত ২টা বছর মৃত জেনে এসেছে হঠাৎ আকাশ বললো,
—-” মম চাঁদনি চলে গেলো কেন? ও কি আমার উপর রেগে আছে? আর ওকি এখানেই ছিলো?”
এমন প্রশ্নে সালেহা চৌধুরী আর রবিন চৌধুরী দুজনেই চুপসে গেলো। আকাশ যেন গুলিয়ে ফেলছে সবটা কেমন একটা লাগছে।”
___________________
আকাশ ভাবুক দৃষ্টিতে বললো,
—-” মম এনিথিং রং?”
সালেহা চৌধুরী আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” আআকাশ পরে বলছি বাবা।”
আকাশ উঠে হাটা দিলো উদ্দেশ্য চাঁদনির কাছে যাবে। এদিকে নীল দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে,
—-” চাঁদনি প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর। চাঁদনি প্লিজ টক টু মি প্লিজ।”
এতক্ষণ চাঁদনিকে ডাকছে নীল। কিন্তুু চাঁদনি কিছু বলছে না নীল ভয় পেয়ে গেলো। জোড়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো। চাঁদনি চোখের পানি মুছে দরজা খুলে বললো,
—-” একটু একা থাকতে দেবে প্লিজ?”
নীল আর কিছু বললো না হ্যা বললো। চাঁদনি আবার দরজাটা লাগিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বললো।”
—-” জীবনের এ কোন গোলক ধাধায় পড়লাম আমি? ২বছর পর আকাশ ফিরে এলো, আগে কেন এলোনা? আমি এখন কি করবো আল্লাহ? কি করে আকাশের সামনে গিয়ে দাড়াবো? আমি যে এখন নীলের ওয়াইফ কি করবো আমি? আকাশ কি ভাববে আমাকে? ওর ভালবাসা ভুলে ওরই ভাইকে বিয়ে করেছি এটা ভাববে? না না এটা ভাবতে পারেনা আকাশ। আমি যে ওকে ভুলিনি কোনদিনও ভুলিনি আমি ওকে। কি করে প্রথম ভালবাসা ভুলে যাবো আমি?”
চাঁদনি ডুব দিলো অতীতে_______
—-” আহহহহহহহহহহ, ইউ স্টুপিড এটা কি করলে?”
এই চিৎকারটা স্বয়ং চাঁদনি দিয়েছে। চাঁদনির এমন চিৎকারে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। চাঁদনি নিজেও বেকুব হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আছে। মনে মনে নিজেকে হাজার দফা গালি দিয়ে দাত কেলিয়ে বললো,
—-” সরি গাইস হেহেহে।”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। কারন বেচারা চাঁদনির চেচাঁনোর রিজন পাচ্ছেনা। অতঃপর রিজন না পেয়ে বলেই ফেললো,
—-” এইযে মিস চেচাঁলেন কেন আপনি?”
চাঁদনি ভেংচি কেটে বললো।”
—-” ওই হনুমান চোখ কি কানা নাকি?”
আকাশ রেগে বললো,
—-” হোয়াট রাবিশ?”
চাঁদনিওও রেগে বললো।”
—-” কি আমি রাবিশ? তুই রাবিশ, খবিশ হুহু,
বলে চাঁদনি ভেংচি কেটে চলে গেলো। আর এদিকে আকাশ রাগে ফোস ফোস করছে। আবার শান্ত হয়ে চাঁদনির চেচাঁনোর রিজন খুজছে। কোনো রিজন খুজে না পেয়ে ভেতরে চলে গেলো। চাঁদনি আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আকাশ ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে। এখনো ক্লাস শুরু হয়নি তাই বসে আছে। এরমাঝে ওদের মধ্যে থেকে রিয়াজ বললো।”
—-” এই আকাশ, নীল কোথায়?”
ঠিক তখনি বাইক নিয়ে এন্ট্রি নিলো নীল। মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে সিল্কি চুলগুলো ঠিক করে নিলো। গায়ে সাদা শার্ট, উপরে ব্লাক জ্যাকেট। ব্লাক জিন্স এক পা ওঠানো, আরেক পা নামানো। জ্যাকেট টানতে টানতে এগিয়ে এসে বললো,
—-” হেই গাইস, হোয়াটস আপ?”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” এটা আবার কেমন স্টাইল?তাও আবার ভার্সিটিতে,
নীল দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” কামঅন ব্রো এতে কি এসে যায়?”
আকাশ মুখটা বাঁকিয়ে বললো,
—-” আমি আর তুই জমজ। আমাদের ফেস ভিন্ন হলেও এটা ভুলবি না। আমি কিন্তুু তোর বড় না সো ব্রো বলবি না ওকে?”
নীল ভেংচি কেটে চলে গেলো। হাটতে হাটতে গিয়ে ধাক্কা খেলো চাঁদনির সাথে।”
🌸
🌸