নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_6
#adrin_anisha
.
আকাশ আবার চেচিয়ে উঠলো,
– আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি নীলা। কোন ধ্যানে আছিস তুই?
নীলা ভয় পেয়ে বলে দিল,
– স্কুলে কিছু হয়নি, আসলে বাবাকে ওই ছেলেটা ফোন দিয়েছিলো। বলল ওর শোরুমের উদ্ভোদন এ যেতে। ওর নাম নাকি আয়ান। আর ওর শো রুম টাও আমার স্কুলের সাথে। তাই ভাবছি ও শুধু বাবাকেই কেন বলল, আংকেলকে কেন বলল না। কোথাও ও বাবার কোনো ক্ষতি না করে দেয়।
নীলার কথা শুনে হাসতে লাগলো আকাশ। নীলার মাথায় আস্তে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,
– নীলা তুই বড় হবি কবে? শোন একে তো এটা কোনো সিনেমা নয় যে যখন তখন মানুষ খুন করে দেবে। তাছাড়া যদি ওর কোনো খারাপ মতলব থাকেও তাহলেও সেটা পুরোন হবে না। কারন আংকেল যাবে না ওর শোরুমে। বাবাকে ছাড়া কোথাও যেতে দেখেছিস আংকেলকে?
– হুম, তাও ঠিক।
নীলা মনে মনে নিশ্চিত হলো,
– যাক আলহামদুলিল্লাহ। ও কিছু শোনেনি মেঘের ব্যাপারে। নাহলে কপালে দুঃখ ছিল।
– কিছু বললি?
– না তো।
– হুম, পড়া শুরু কর।
নীলা পড়তে লাগলো। আর আকাশ ফোনে গেম খেলার অভিনয় করে নীলার ছবি তুলতে লাগলো। নীলা টের ও পায়নি। পরে এগুলো দেখিয়েই নীলাকে ক্ষেপাবে আকাশ। নীলাকে বিরক্ত করতে অনেক ভালো লাগে আকাশের। নীলা যখন বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে তখন ওকে আরো বেশি কিউট লাগে দেখতে।
নীলাকে দেখতে এতোটা সুন্দর না হলেও অনেক কিউট। মুখটা গোল, চোখের ভ্রু গুলো মোটা। কিন্তু চোখ দুটো অনেক সুন্দর। বলা যায় আকাশ নীলার ওই চোখ দুটো দেখেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছে।
ওরা তখন অনেক ছোট যখন ওদের বাবা মা নীলা আর আকাশের বিয়ের কথা বলে। নীলা, আকাশ আর তাদের আরো কিছু বন্ধুরা মিলে সেদিন পুতুল খেলছিলো। নীলার পুতুল বৌ সেজেছিল আর আকাশের পুতুল সেজেছিল জামাই। ওদের কে খেলতে দেখেই আকাশের বাবার মাথায় এই বুদ্ধিটা আসে। এবং নীলার বাবা-মার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায়। বলে বড় হলে নীলাকে যেন আকাশের সাথেই বিয়ে দেয়। নীলার বাবা-মা তখন বলে ওরা যদি বড় হয়ে একে অপরকে পছন্দ করে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু কখনোই ওদের জোর করব না।
সেদিন আকাশ পাশের ঘর থেকে সব শুনেছিল, মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিল। তখন থেকেই নীলার প্রতি এক ভালোলাগা কাজ করে আকাশের। আকাশের বয়স তখন প্রায় ১২ বছর। তাই ভালোবাসা কি সেটা না বুঝলেও ভালোলাগাটা অবশ্যই বুঝতো। ধীরে ধীরে একসময় এই ভালোলাগাটাই কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে সেটা নিজেও জানে না আকাশ।
নীলার ধাক্কায় আকাশের ভাবনার ইতি ঘটলো।
– কি রে। হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? এটা বুঝতে।পারছি না বুঝিয়ে দে৷।
আকাশ মুচকি হেসে নীলার চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিল। আর পড়াতে শুরু করল।
.
স্কুলে যাওয়ার পথে সাদিয়া দের বাসা পরে। তাই নীলা প্রতিদিন ওকে বাসা থেকে নিয়ে একসাথেই যায়। কিন্তু ওদের বাসার সামনে একটা কসমেটিকস এর দোকান আছে৷ সেখানে যে ছেলেটা কাজ করে সে প্রায়ই নীলাকে ডাক দেয়। নীলার বিষয় টা প্রচুর বিরক্তিকর লাগে তাই আজও যখন নীলাকে ডাক দিল নীলা আর ইগনোর করতে পারলো না।
– এই যে
– কি হয়েছে কি? আপনি প্রতিদিন এভাবে বিরক্ত করেন কেন?
– তোমার নাম কি?
– নাম দিয়ে কাম কি আপনার?
– কিছু না। এমনিই জানতে চাই আরেকি।
– নাম জানলে আর বিরক্ত করবেন না তাহলে?
– আগে বলো।
– নীলা। হয়েছে?
নীলার নাম টা শুনে মুচকি হাসলো ছেলেটা। আর নীলা চলে গেল। সাদিয়া কে বলল আজ যা যা হয়েছে।
– আচ্ছা ওই ছেলেটার নাম কি সাদি?
– ও তো আমার ভাইয়ার বন্ধু, ওর নাম রাব্বি। কিন্তু তুই ওকে তোর নাম বলতে গেলি কেন?
– ধুর আর কি করব বলতো? রাগ উঠে গিয়েছিলো। এতো অত্যাচার আর ভালো লাগছে না।
– হুম, বুঝেছি। দেখ আবার স্কুলে গিয়ে ওই মেঘ কি কান্ড করে কি জানি?
– ধুর মেঘ তো পরে আসবে তার আগে যে সামনে একজন দাঁড়িয়ে থাকবে তাকে নিয়ে ভাব।
– ওকে নিয়ে ভাবার কি আছে। আমি থাকলে তো ও আর তোর কাছে আসে না। তোকে একা পেলেই তো কথা বলতে যায়৷
-শোন না। আমি ওর নাম জেনেছি। ওর নাম আয়ান।
– আয়ান? তুই কিভাবে জানলি?
– ও বাবাকে ফোন করেছিল।
– কি বলিস? কি বললো ফোন দিয়ে?
নীলা সাদিয়া কে সব বলল। সাদিয়া জিজ্ঞেস করলো
– তাহলে আংকেল কি যাবে?
– না রে। এজন্যই তো আর চিন্তা হচ্ছে না।
কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যায় নীলা। আজ আর ওখানে আয়ানকে দেখা যাচ্ছে না। নীলা একটা বড় নিশ্বাস নিলো। ভাবলো এবার হয়তো একটু চিন্তা গেল।
কিন্তু স্কুলে যেতেই আবারও রুমা আর সীমা এলো নীলার কাছে। নীলাকে আবারো একপাশে নিয়ে গিয়ে রুমা বলল,
– নীলা, কালকে তো সবার সামনেই মেঘের সাহস টা দেখলে। এমনকি পুরো স্কুলই দেখেছে। তাহলে এখন কি তুমি হ্যাঁ বলবে?
– না আপু। প্লিজ, এই বিষয় টা নিয়ে আমার সাথে কথা বলবে না। আমি ওকে পছন্দ করি না। আর তার চেয়ে বড় কথা আমি মাত্র ক্লাস নাইন এ পড়ি। এটা আমার প্রেম করার বয়স নয়। এখনো এসবের জন্য আমি অনেক ছোট। তাছাড়া এসবের জন্য আমার পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তুমি মেঘ ভাইয়াকে একটু বুঝিয়ে বলে দিও ও যেন আমাকে আর ডিস্টার্ব না করে। তাহলে আমি পড়াশোনায় অনেক খারাপ করব।
– আচ্ছা ঠিক আছে। যা তোমার ভালো মনে হয়।
রুমা আর সীমা চলে গেলো।
মেঘ ক্লাসে এসেই রুমা আর সুমার থেকে সব কথা শুনলো। আজ আর নীলার মুখোমুখি বসেনি মেঘ। এমন জায়গায় বসেছে যেখান থেকে ও নীলাকে দেখবে কিন্তু নীলা ওকে দেখবে না।
নীলা খুব খুশি হয়। ভাবে আজ তার জীবনের একটা মহা আনন্দের দিন। আজ ওর দুটো টেনশনই বিদায় নিল।
কিন্তু নীলার ভাবনা ভুল। ও নিজেও জানে না। কি ঝড় আসতে চলেছে ওর জীবনে…..
.
.
.
.
চলবে……