নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_2

0
1905

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_2
#adrin_anisha
.
মুখে কলম গুজে আকাশের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে নীলা। কি যে হচ্ছে কিছুই যেন তার মাথায় ঢুকছে না। হঠাৎ করেই আকাশ ওর প্রাইভেট টিচার হয়ে গেল কিভাবে? তখনই আকাশ আস্তে করে নীলার মাথায় একটা থাপ্পড় দিল,
– কি রে? এতো বড় দামড়া মেয়ে হয়ে কলম কামড়াচ্ছিস? লজ্জা করে না?
নীলা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মনে মনে বলল,
– তুই দামড়া তুই। আমি কেন দামড়া হবো। শয়তান একটা।
– কিছু বললি?
– না মানে ভাবছিলাম, হঠাৎ আব্বু আম্মু তোকে ধরে আনতে গেল কেন আমাকে পড়ানোর জন্য। তুই কি এতো ভালো স্টুডেন্ট নাকি? তার চেয়েও বড় কথা, এখন যদি তুই আমার শিক্ষক হোস তবে আমি তোকে কি ডাকব? তুই নাকি তুমি?
– অবশ্যই তুমি ডাকবি। এখন থেকে অভ্যেস না করলে পড়ে তো সারাজীবন স্বামি কে তুই বলেই ডাকবি।
– ওমা স্বামি কে তুই ডাকতে যাব কেন? আমি তো তোর মানে তোমার কথা বলছি।
– এত কিছু তোর বুঝতে হবে না। পড়ায় মন দে।
নীলা পড়ায় মন দিল, আর আকাশ মন ভরে তার প্রেয়সি কে দেখতে লাগল।
.
.
আজ নীলা নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। স্কুলটার কাঠামো খুব ভালো না হলেও পড়াশোনায় নাম্বার ওয়ান। আর নীলাদের বাড়ির অনেক কাছে। তাই নীলাকে এখানেই ভর্তি করে দিলেন। নীলা নতুন ক্লাসে সবার সাথে।পরিচিত হয়ে নিচ্ছে। নীলাদের নবম শ্রেনীর ক্লাসরুমের ঠিক সামনেই দশম শ্রেনীর ক্লাসরুম। নীলা যেখানে বসেছে সেখান থেকে দশম শ্রেনীর ছেলেদের দেখা যায়। নীলার হঠাৎই একটা ছেলের দিকে নজর পড়ে। ছেলেটাকে দেখতে একদম আকাশের মতই। শুধু ছেলেটার মুখে একটা বড় তিল আছে যা আকাশের মুখে নেই। ছেলেটাকে দেখেই হেসে দিল নীলা। মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চলে এল।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে “আকাশ ভাইয়া” বলে জোড়ে ডাক দিল নীলা। প্রথম বার না তাকালেও দ্বিতীয় বার তাকালো। ছেলেটা তাকানোর সাথে সাথে নীলা অন্যদিকে ঘুরে গেল। ছেলেটা নিজের ভুল ভেবে আবার তার কাজে মন দিল। নীলার আবার ডাক দিল। এভাবে প্রায়ই নীলা ছেলেটাকে খেপাতে লাগল। এখন নীলার বান্ধবীরাও নীলার সাথে মজা নেয়। ক্লাসে নতুন বন্ধু হয়েছে নীলার। সাদিয়া আর মুন্নি। দুজনই ওর মতই দুষ্টু। তাই নীলা না থাকলেও ওরাই আকাশ ভাইয়া বলে চেচাতে থাকে। এভাবে কিছুদিন চলার পর, একদিন ছেলেটার ২ জন মেয়ে বন্ধু নীলাদের ক্লাসে এসে নীলাকে জিজ্ঞেস করল,
– আচ্ছাহ তোমরা মেঘকে আকাশ ভাইয়া বলে ডাকো কেন?
নীলা মনে মনে বলল,
-” তাহলে ছেলেটার নাম মেঘ? ”
আসলে ওকে দেখতে আমার এক ভাইয়ার মতো। তাই মজা করে ডেকেছিলাম৷ আর ডাকবোনা।
– আরে না না। আমরা জাস্ট এমনিই জানতে চেয়েছিলাম।
.
সেদিনের পর থেকে নীলা আর মেঘের সাথে দুষ্টুমি করেনি। আর বাকিদের ও বারণ করে দিয়েছিল যেন আর না বলে কিছু। কিন্তু এখন মেঘ সবসময় এমন জায়গায় বসে যেখান থেকে নীলাকে দেখা যায়। সারা ক্লাস নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীলার প্রচুর অসস্তি হয়। নিজের কপাল নিজেই চাপড়াচ্ছে নীলা। নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারল। না ও ছেলেটাকে এভাবে বিরক্ত করত আর না ছেলেটা ওর পেছনে পড়ত।
– এই সাদি দেখ না, এতোদিন আমি ছেলেটাকে ডিস্টার্ব করেছি আর এখন ছেলেটা আমায় ডিস্টার্ব করছে। কিছু কর না প্লিজ।
– আমি কি করব? তুই ই তো বারণ করলি কিছু বলতে। আর শোন এসব নিয়ে ভাবিস না। কিছুদিন এমন করবে পরে দেখবি হাল ছেড়ে দেবে।
– তুই শিউর তো? নাহলে আমি আব্বুকে বলে দেব।
– আরে না পাগল নাকি। ছেলেটা তো জাস্ট তোর দিক্স তাকিয়ে থাকে। তোকে তো সরাসরি কিছু বলেনি তাহলে তুই কি বলবি তোর বাবাকে?
– হুম, তাও তো ঠিক। আচ্ছাহ তাহলে বাদ দেই৷ দেখা যাক কতদিন ও এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে।
.
.
.
নীলা খাটের উপর শুয়ে মোবাইল টিপছে। এমন সময় নীলার মা ডাক দিল।
– নীলা কই তুই? দেখ আকাশ এসেছে, ওর আবার ক্লাস আছে তাড়াতাড়ি আয়।
নীলা তাড়াতাড়ি করে উঠে, চুল গুলো আয়নায় ঠিক করে নিল। তারপর ওড়না ঠিক করতে করতে বাইরে বের হতে যাবে তখনই ধাক্কা খেল। সামনে তাকিয়ে দেখল আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। নীলার মাথায় আস্তে করে একটা টোকা দিয়ে বলল,
– কি রে চোখ কই থাকে?
-আমি তো যাচ্ছিলাম ই তুই ই তো রাস্তায় চলে এলি।
– তো আর কি করব? এতোক্ষন কি করছিলি শুনি? তাড়াতাড়ি আয়। চল আজকে তোকে তোর রুমেই পড়াবো।
– আচ্ছাহ, আরো ভালো।
– আচ্ছাহ, তোর নতুন স্কুল পছন্দ হয়েছে তো তোর?
– হুম, স্কুল টা অনেক ভালো। স্যার- ম্যাম গুলো খুব ভালো পড়ায়।
– বাহ, ভালই তো। তো তোকে কেও আবার ডিস্টার্ব করছে না তো। রাস্তায় অথবা স্কুলে?
নীলা মনে মনে মেঘের কথা ভাবল,
– আকাশ ভাইয়া কে কি বলব মেঘের কথা? না থাক পরে আবার ব্যাপার টা বড় হয়ে যাবে শুধু শুধু।
– কি রে কি ভাবছিস? বল?
– আরে না, কে ডিস্টার্ব করবে আমায়, পাগল নাকি?
– তাও ঠিক তোর মত পেত্নিকে কে কোনো পাগলই পছন্দ করবে।
– এই এই কি বললি?
– কিছু না তো। শোন, আজকে আমার পরীক্ষা আছে আমার জন্য দোয়া করিস৷
– তাই নাকি, কখন?
– এই তো ১১,০০ টা থেকে।
– কি বলিস, এখনি তো ১০ টা বাজে৷ যাবি কখন? পরীক্ষার হলে কমপক্ষে ১৫ মিঃ আগেই উপস্থিত থাকতে হয় জানিস না?
– হ্যাঁ রে বাবা, জানি জানি। তাই তো আজকে শুধু তোর পড়াগুলো দিয়েই চলে যাব।
– আমার পড়া তো ফোনেও দেয়া যেত। এতো কষ্ট করে আসার প্রয়োজন ছিল না, গাধা।
– হুম,, দেয়া যেত ফোনে। কিন্তু ফোনে তো আর তোর মুখ দেখা যেত না। আর তোর মুখ না দেখে পরীক্ষা দেয়ার চেয়ে না দেয়াই ভালো।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই আকাশ নীলার গালে একটা কিস করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নীলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর নীলার হুশ হলো। অজান্তেই নিজেই হাত গালে চলে গেল। প্রথমে রাগে চেচিয়ে উঠলো এবং নিজের গাল মুছতে লাগল। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখল কেও দেখেছে কি না।
– নাহ, কেও দেখে নি। নাহলে আজকে আমার প্রেস্টিজ এর ১২ টা বেজে যেত।
আয়নার সামনে নিজেকে দেখতেই টের পেল ওর পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে। না চাইতেই হেসে দিল নীলা। লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে নিল।।
ওদিকে আকাশ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। যদিও গান বাজছে না, রাস্তায় কানে হেডফোন লাগিয়ে চলা যে মোটেও উচিত সেটা আকাশ জানে, কিন্তু নীলার কথা ভাবতেই মুখে বার বার হাসি ফুটে উঠছে আকাশের। আশেপাশের মানুষ যদি ওকে এভাবে দেখে নিশ্চিত পাগল ভাববে তাই, এই ব্যাবস্থা, যেন সবাই ভাবে গান শুনে হাসছে।
– সরি, মাই প্রিন্সেস। ভেবে এটা তোর বেস্ট অফ লাক উইশ ছিল আমার জন্য। এবার আমি খুব ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারব।
.
.
.
.
চলবে।।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে