নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_18

0
1238

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_18
#adrin_anisha
.
সাদিয়া হঠাৎ আয়ান এর মতো কাউকে দৌড়ে যেতে দেখলো, ভালো করে দেখার আগেই, মুন্নিকে চেচাতে শুনে সবাই সেদিকে দৌড়ে গেল।
– কি রে কি হয়েছে? দেখেছিস নীলাকে?
সাদিয়ার কথা যেন মুন্নির কানেই গেলো না। সে ভয়ে চুপসে গেছে, এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া মুন্নিকে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও সামনে তাকায়, নীলা রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। সাথে সাথে নীলা বলে চেচিয়ে উঠলো সবাই। দৌড়ে নীলার কাছে সবাই।
সাবিহা কাঁদতে কাঁদতে নীলার মুখ ধরে বলল,
– নীলা, এই নীলা, কি হয়েছে তোর? ওঠ না প্লিজ। এই নীলা, এই…
সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ছবি আর ভিডিও করতে ব্যাস্ত।
সাদিয়া রেগে উঠে বলল,
– আপনারা কি মানুষ, কোনো কমনসেন্স নেই আপনাদের? একজন এভাবে এখানে পড়ে আছে আর আপনারা ছবি তুলতে ব্যাস্ত? এটলিস্ট একটা এম্বুলেন্স তো ডাকতে পারেন। ছিঃ
সাদিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ দৌড়ে আসে। নীলাকে এভাবে দেখে তার যেন প্রাণ হারানোর মতো অবস্থা। তাড়াতাড়ি করে নীলাকে তুলে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসালো আকাশ।
.
.
নীলাকে আইসিইউ তে নিয়ে গেছে প্রায় ১ ঘন্টা হয়েছে, এখনো কোনো খবর পায়নি কেউ। বাইরে নীলার বাবা, আকাশের মা, সাবিহা,সুবাহ, রাফি, সাদিয়া, মুন্নি, সবাই কান্না করছে আর একটু পরপর হাত তুলে মুনাজাত করছে যেন নীলা ঠিক হয়ে যায়। নীলার মা সব শোনার পর থেকে এই নিয়ে ৩ বার সেন্সলেস হয়েছেন তাই ওনাকে এখন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আকাশের বাবা থানায় গেছেন বিষয় টা নিয়ে তদন্ত করতে। আর আকাশ এখনো পাথরের মত বসে আছে হাসপাতালের এক কোনায়৷ নীলার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কি হবে এটা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছে আকাশ।

কিছুক্ষনের মাঝেই পুলিশ এসে পৌছালো। সবাই ছুটে গেল সেদিকে জানার জন্য কি হয়েছে ঠিক নীলার সাথে।পুলিশের ওসি নীলার বাবার বন্ধু।
তিনি এস নীলার বাবাকে বললেন,
-আমরা কথা বলে দেখেছি সেখানকার লোকজনের সাথে। এক একজন একেক রকম কথা বলছে, কেউ জানে না লোকটা কে ছিলো, কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট, ছেলেটার বয়স বেশি নয়। বড়জোর ১৯-২০ হবে। ওখানে থাকা লোকেদের মতে ছেলেটা এলোপাতাড়ি ভাবে নীলাকে লাথি মারে, তারপর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে, পরে ওর বন্ধুদের আসতে দেখে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ বলছে সেখানে আরো একটা ছেলে ছিলো, তবে সে মারামারি করেনি, সে শুধু দেখেছে। এখন এসবের মাঝে কতটা সত্যতা আছে সেটা তো শুধু নীলাই বলতে পারবে, কারণ মানুষের স্বভাব তিল থেকে তাল বানানো।

নীলার বাবা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লেন,
– না জানি আমার ফুলের মত মেয়েটা কিভাবে সহ্য করেছে এসব?
ওসি এসে ওনাকে উঠিয়ে বললেন,
– প্লিজ শান্ত হোন মি.কবির। আপনাকে শক্ত থাকতে হবে। আমাদের বলুন তো আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়? যেহেতু আপনি একজন বিজনেসম্যান, সেহেতু আপনার শত্রু থাকা স্বাভাবিক। প্লিজ মনে করে বলুন তো।
নীলার বাবা চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে বললেন,
– দেখুন আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করি সবার সাথে ভালো ভাবে বিজনেস করতে, কারোর সাথে আমার শত্রুতা নেই। তবে অন্যের মনে যদি আমার জন্য কোনো শত্রুতা থাকে তাহলে সেটা তো আর আমি বলতে পারবো না।
কিছুক্ষন ভেবে নীলার বাবা আবার বলল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ, এক মিনিট অফিসার। আমার মাত্র মনে পড়ল, আমার মেয়েকে একটা ছেলে ডিস্টার্ব করত, আয়ান নামের, তবে আসল নাম পরম। কিছুদিন আগেই আমি ওকে গিয়ে সাবধান করে এসেছি যেন আমার মেয়েকে আর ডিস্টার্ব না করে। ওই হয়তো কিছু করেছে। আপনি প্লিজ ওকে এরেস্ট করুন।
নীলার বাবার কথা শেষ হতেই সাদিয়া উঠে এলো,
– স্যার, আঙ্কেল ঠিক বলছেন। ওই ছেলেটা নীলাকে অনেক ডিস্টার্ব করেছে, আর সবচেয়ে বড় কথা৷ আজ যখন আমরা নীলার কাছে পৌছালাম তখন দেখেছিলাম আয়ানের মত কেউ পালিয়ে যাচ্ছে। তখন পাত্তা না দিলেও এখন আমি শিওর, ওটা আয়ানই ছিল। প্লিজ আপনি ওকে ধরে আনুন। ওই নিশ্চই কিছু।করেছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা দেখছি।
এই বলে ওসি বাকিদের নিয়ে চলে গেলো।
.
কিছুক্ষন পর আইসিইউ থেকে ডাক্তার বের হলেন। সবাই সেদিকে চলে গেল।
ডাক্তার একটা মুচকি হেসে বললেন,
– আপনার মেয়ে ঠিক আছে। শুধু এখনো সেন্স এ আসতে কিছুটা সময় লাগবে। তারপরই আমরা বাকিটা বলতে পারবো। কারন৷ বাইরের ক্ষতগুলো এলোপাতাড়ি হওয়ায় তেমন মারাত্মক হয়নি। মেবি পরে যাওয়ার কারনে মাথার সামনে একটু কেটে গেছে, সেটা নিয়ে যদিও এখনো টেনশান এর কিছু দেখছি না বাকিটা তো ওর সেন্স আসার পরেই বুঝতে পারবো।
নীলার বাবা অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– তাহলে ওর জ্ঞান কখন আসবে?
– সেটাই তো বলতে পারছি না, আশা করছি ২৪ ঘন্টার মাঝেই আসবে, আর তা না হলে ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। আর এই নিন প্রেসক্রিপশন, এগুলো সবই নিচে কাউন্টারের পাশে পেয়ে যাবেন।
ডাক্তারের সাথে নীলার বাবাও চলে গেলেন ওষুধ আনতে। আর আকাশের বাবা গিয়ে আকাশকে খুঁজতে লাগলেন। কিছুক্ষন পরে হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে দেখলেন আকাশ দুই হাটু ভাজ করে তারউপর হাত রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশের বাবা গিয়ে ওর পাশে বসলেন।
মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
– বাবা, নীলা ঠিক আছে।
বাবার কথা শুনেই আকাশ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। জড়িয়ে ধরলো ওর বাবাকে।
– আমি জানতাম বাবা, ওর কিছু হতেই পারে না। ওর মত একটা নিস্পাপ মেয়ের সাথে আল্লাহ কখনোই এমন করবেন না আমি জানতাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ, কোটি কোটি শুকরিয়া, তিনি আমার নীলাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ও এখন কি করছে বাবা? ও কেমন আছে?

– এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তবে ডাক্তার বলেছে ২৪ ঘন্টার মাঝেই ফিরে আসতে পারে। টেনশন না করে এখন শুধু দোয়া কর যেন সব ঠিক হয়ে যায়।
আকাশের বাবার কথা শেষ হতেই হাপাতে হাপাতে এলো সাবিহা,
– আকাশ ভাইয়া, আঙ্কেল তাড়াতাড়ি চলুন। পুলিশ আয়ানকে ধরে ফেলেছে।
.
.
.
.
.
.
.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে