নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_17
#adrin_anisha
.
পাশে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালে নীলা। প্রথমে পানির হালকা ছিটা দিতে চাইলেও পরে পুরো গ্লাসের পানিটাই ঢেলে দেয় আকাশের মুখের উপর। সাথে সাথে চেচিয়ে উঠলো আকাশ, ধরফরিয়ে উঠে বসলো। ২ সেকেন্ড লাগলো বুঝতে যে ঠিক কি হলো ওর সাথে।
চেচিয়ে উঠলো আকাশ,
– কে রে আ….মা…….
কথাটা শেষ করতে পারলো না আকাশ। সামানে তাকিয়ে যেন ওর মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। এ যেনো এক অন্য নীলাকে দেখছে সে। মনে হচ্ছে আজ যেন সত্যিই আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে ওর ঘরে।
আকাশের চেচানোর শব্দে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় নীলা। কিছুক্ষন যাওয়ার পরেও যখন আর কোনো শব্দ শুনতে পায়নি তখন ধীরে ধীরে চোখ খুললো নীলা। আকাশ ততক্ষনে প্রায় নীলার মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আকাশ কে এভাবে সামনে দেখে চমকে উঠে দুকদম পেছিয়ে যায় নীলা। আকাশ আরো দুকদম এগিয়ে যায় নীলা আবার পিছিয়ে যায় আর ভাবে আজকে ওর খবর আছে।
নীলা ভয়ে ভয়ে বলল,
– আকাশ ভাইয়া সরি, আর জীবনেও করবো না এমন, প্লিজ এইবার মাফ করে দেও।
আকাশ যেন নীলার কথা শুনতেই পায়নি। সে তার মতই এগিয়ে যাচ্ছে। আর নীলাও পিছোতে পিছোতে দেয়ালের সাথে লেগে গেল। ভয়ে নীলা হাতে থাকা গ্লাস দিয়ে মুখ ঢেকে নিল।
চোখ বন্ধ করে বলল,
– আকাশ ভাইয়া সত্যিই সরি, আমি আসলে বুঝতে পারিনি। আর তাছাড়া তুমিও অনেক বার আমায় এভাবে জ্বালিয়েছো। এখন আমি একবার মজা করেছি বলে তুমি এমন করছো? আচ্ছা সরি আর কখনো করবো না বললাম তো।
একদমে কথাগুলো বলল নীলা। কিন্তু এখনো আকাশের কোনো কথা শুনতে পেল না। তবে ওর ঠিক অনেকটা কাছেই আছে আকাশ এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। আকাশের নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে নীলা। নীলার হার্টবিট বেড়ে গেছে, আর শরীর ও কাপতে শুরু করেছে। তখনই কপালে ভেজা দুটো ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব হলো নীলার, সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে নীলা আর হাতে থাকা গ্লাসটাও পড়ে যায় হাত থেকে। গ্লাস ভাঙার শব্দে যেন জ্ঞান হয় আকাশের। সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে যায় সে। এই সুযোগে নীলাও দৌড়ে পালিয়ে আসে। আকাশ নিজের ঘাড়ে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।
.
নীলাকে এভাবে হাপাতে দেখে সাদিয়া আর মুন্নি গেল নীলার কাছে। সাদিয়া নীলার নিজের কাধ দিয়ে নীলার কাধে ধাক্কা দিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
– কি রে? আকাশ ভাইয়ার রুম থেকে এসে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন? কি করেছিস এতক্ষন শুনি?
মুন্নি আর সাদিয়া শয়তানি হাসি দিয়ে তাকালো নীলার দিকে।
নীলা একগাল হেসে বলল,
– আরে পাগল শোন, আমি গিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে ঘুমিয়ে আছে, কি যে ফানি লাগছিলো। আমি কি করলাম জানিস? সোজা গিয়ে ওর মুখের উপর পানি ঢেলে দৌড়ে চলে এলাম। বিশ্বাস না হলে এই দেখ,
নীলা নিজের ফোন থেকে আকাশের তোলা ছবি গুলো দেখালো। সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। তখনই আকাশ বের হলো ঘর থেকে তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে। আকাশ কে দেখে নীলা হাসি বন্ধ করে দিল কিন্তু সাদিয়া আর মুন্নির হাসি আরো বেড়ে গেলো। ওরা কোনো মতো হাসতে হাসতে আকাশের কাছে গেল,
মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে সাদিয়া বলল,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, আমি সাদিয়া, নীলার বান্ধবী।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মুন্নিও লাফিয়ে উঠলো,
– আর আমি মুন্নি। নাইচ টু মিট ইউ।
– মি টু। আমি একটু আসছি।
আকাশ চলে গেল।
সাথে সাথে নীলা এসে বলল,
– এই সুযোগে চলে যাই চল, নাহলে আজকে খবর আছে আমাদের।
সাদিয়া ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
– কিন্তু কোথায় যাবো?
সাদিয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে নীলা বলল,
– আরে গাধী যেই জায়গাটার কথা বলেছিলাম।
– ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ চল। তাড়াতাড়ি চল। ওটার জন্যই তো এসেছি।
নীলা, সাদিয়া আর মুন্নি চলে গেল ঘুরতে।
অনেক্ষন ছবি তুলে, নৌকায় চড়ে, আম চুরি করে খেয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পথ ধরলো সবাই।
টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মুন্নি বলল,
– উফফ, এতোক্ষন এতো দৌড়ালাম কিন্তু গরম লাগলো না কিন্তু এখন ঘামে শেষ।
সাদিয়াও মুন্নির সাথে তালমিলিয়ে বলল,
– সত্যিই রে। অনেক গরম লাগছে তবে অনেক মজাও লাগছে। কতদিন এভাবে প্রাণখুলে হাসিনি।
ওরা কথা বলতে বলতে কিছুদূর আসতেই সাবিহা,সুবাহ আর রাফির সাথে দেখা হলো ওদের। ওরাও এদিকেই আসছিলো। ওরা জোর করায় নীলারা আবার ওই জায়গায় ফিরতে লাগলো। কিন্তু নীলার ফোন আসায় ও সবাইকে যেতে বলে ফোন রিসিভ করল,
– আসসালামু আলাইকুম, কে?
– নীলা?
– হুম, কিন্তু আপনি কে?
– তোমার পেছনে দেখো জেনে যাবে।
নীলা পিছনে তাকালো কিন্তু চেনা কাউকেই দেখতে পেল না।
– কোথায়? আমি তো কাউকে দেখছি না।
– এতো দূর থেকে দেখবে না। আরো এগিয়ে আসো।
নীলা এগিয়ে গেল কিন্তু কাউকে দেখলো না।
– উফফ, কোথায় আপনি? সামনে আসবেন নাকি চলে যাবো।
নীলার কথা শেষ হতেই ফোন কেটে গেল। নীলা চিন্তা করতে করতে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য পেছনে ফিরলেই ভয় পেয়ে যায়। একটা ছেলে ছুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা রুমাল বাধা। নীলা কিছু না ভেবেই উল্টো দৌড় দিল। ছেলেটাও নীলার পিছনে দৌড়াতে লাগলো। নীলার জামা অনেক লম্বা হওয়ায় ভালো করে দৌড়াতে পারছে না। তবুও নিজের প্রাণ বাঁচাতে যতটা সম্ভব জোরে দৌড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারল না রাস্তার একপাশে এসে জামায় পা আটকে পরে গেল নীলা। ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু উঠতে পারলো না। ততক্ষনে ছেলেটা নীলার কাছে চলে এসেছে। নীলার গালে সজোরে ঠাস করে একটা চড় মারলো সে। সাথে সাথে নীলার গাল কেটে ঠোঁট থেকে রক্ত পড়তে লাগলো।
.
এদিকে নীলার আসতে অনেক দেরী হচ্ছিলো বলে সাদিয়া, মুন্নি, সাবিহা সবাই চিন্তা করতে লাগলো। সাদিয়া অনেকবার নীলার ফোনে ফোন করলেও কেউ রিসিভ করলো না। তাই তাদের চিন্তা আরো বেড়ে গেল। সাবিহা রাফিকে পাঠালো আকাশ কে ডেকে আনতে। আর ওরা সবাই নীলাকে খুঁজতে লাগলো।
অনেক্ষন খুজেও নীলাকে কোথাও দেখতে পেল না তারা৷ হঠাৎ মুন্নি নীলা বলে চেচিয়ে উঠলো। সবাই সেদিকে দৌড়ে গেল। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
.
.
.
.
.
.
চলবে……..