নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_16
#adrin_anisha
.
– খাইয়ে দে না, দেখ হাতে মেহেদী।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো আকাশের দিকে।
– মানে? আমি কেন খাওয়াবো? আমি তো আগেই বলেছিলাম এই হাতে মেহেদী দিও না। তুমিই দিলে এখন তুমিই বোঝো কিভাবে খাবে।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– প্লিজ, তুই না আমার কিউট পরী।
নীলা চোখ ছোট করে আকাশের দিকে মুখ নিয়ে বলল,
– ও হ্যালো, আমার উপর এইসব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কাজ করবে না বুঝেছিস?
আকাশের টেবিলের উপর দু হাত শব্দ করে রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
– ওই শোন, তোর কোনো ধারণা আছে আমি তোকে ছোটবেলা কতবার খাইয়ে দিয়েছি। আর এখন এটাই উপযুক্ত সময় তুইও আমায় তার প্রতিদান দিবি।
– আমি কি বলেছিলান খাইয়ে দিতে?
আকাশ রেগে গিয়ে বলল,
– চুপ, সামান্য একটা ব্যাপারকে এতো বড় করে তুলছিস কেন? খাওয়াবি নাকি তোর এই ছবিটা সবাইকে পাঠিয়ে দেব?
পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ছবি বের করে নীলার মুখের সামনে ধরলো আকাশ। ফোনে নীলার ছোটবেলার ঘুমন্ত এক ছবি। কিন্তু মুখে মেহেদী লেগে আছে।
ছোটবেলা প্রতিবার মেহেদী লাগাতে বসে ঘুমিয়ে পড়তো নীলা, আর প্রায় সময়ই গালে, ঘাড়ে, গলায় মেহেদীর ছাপ লেগে যেত। এমনই এক ঈদে আকাশ ওর ফোনে নীলার ছবি তুলে নেয়। এতোদিন জানতেই পারেনি নীলা যে ওর এমন কোনো ছবিও আকাশের কাছে। নীলা আকাশের থেকে ফোন কেড়ে নিতে চাইলে আকাশ তাড়াতাড়ি সেটা সড়িয়ে ফেলে।
নীলা মুখ গোমড়া করে আকাশ কে খাইয়ে দিতে শুরু করে। প্রথম রুটির টুকরো টা কোনোভাবে মুখের সামনে এনে ছুড়ে মারলো নীলা। পরের টা মুখের সামনে আনতেই আকাশ মুখ সামনে নিয়ে টুকরোটা গালে পুরে নিল, সাথে নীলার আঙুলেও কামড় লাগল।
নীলা চেচানোর আগেই আকাশ ওর হাত দিয়ে ইশারায় বলল,
– চুপ চুপ চুপ। চেচাচ্ছিস কেন? এভাবে খাওয়ালে আবার কামড় দেব। ভালো করে খাইয়ে দে।
নীলা দাতে দাত চেপে খাইয়ে দিতে লাগলো আকাশ কে। কিন্তু আকাশের ঠোঁটের সাথে নীলার আঙুল লাগতেই কেপে উঠলো নীলা। নীলার হাত কাপতে লাগলো, মুখে রাগের ছাপ সরে গিয়ে লজ্জার ছাপ এসে ভর করল। নীলা লজ্জায় মাথা পুরো নিচের দিকে নামিয়ে রেখেছে। আর আকাশ তো যেন হারিয়েই গেছে নীলার মাঝে। যতবার নীলার আঙুল ওর ঠোঁটে লাগছে বুকের মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে।
আকাশ মনে মনে ভাবছে,
– ইসস, এই সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত। আমি তোর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছি না। প্লিজ তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা।
.
.
আজ ঈদ, তাই সবাই অনেক সকালই উঠে পরেছে। নীলা ঘুম থেকে উঠেই খুশিতে নাচতে লাগলো। আজ অনেক মজা করবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে নীলা। ওর ফুফু, ওর মা আর আকাশের মা রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করছে। সাবিহা, সুবাহ আর রাফি ফোনে গেমস খেলছে। নীলা ওদের সাথে বসে ওদের ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি করছো তোমরা?
নীলাকে দেখে রাফি বলল,
– আরে নীলাপু, ভালোই হলো তুমিও এসে গেছো, চলো চারজন মিলে লুডু খেলি।
সবাই সায় দিল রাফির কথায়।
খেলা শেষে নাস্তা করে সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেল। আসার পর কেউ কাউকে ওদের ঈদের জামা দেখায়নি, যতটা সম্ভব লুকিয়ে রেখেছে সবাই। তাই এখন নিজের জামা দেখানোটাই সবার প্রধান কাজ।
নীলা ঘরে গিয়ে সাদিয়া আর মুন্নিকে কল দিল। ওরা জানালো ওরা রাস্তায় আছে। তাই নীলাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে একটা টপ আর প্লাজো পরে বের হয় নীলা।
তখনই সাদিয়া আর মুন্নি ওর ঘরে ঢুকলো। দুজনকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানালো নীলা। তারপর দুজনকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
সাদিয়া একটা লাল আর ক্রিম কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। কানে দূল, হাতে চুড়ি আর চুল খোলা। আর মুন্নি পরেছে কালোর মাঝে সাদা পাথরের কাজের একটা ফুলহাতার লম্বা গাউন। সাথে কালো পাথরের কানের দুল হাতেও কালো রঙের চুড়ি, খোলা চুল। দুজনের দিকে অবাক হয়ে।তাকিয়ে নীলা বলল,
– ওয়াও দারুন লাগছে তো তোদের। তোরা এতো সুন্দর কেন?
মুন্নি হেসে বলল,
– কেনো রে হিংসে হচ্ছে তোর?
নীলা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
– হুহ, বয়েই গেল আনার হিংসে করতে, আমি কি কম নাকি?
সাদিয়া নীলার কাধে হাত রেখে নিজের চুল নেড়ে বলল,
– দেখতে হবে না তুই কার বান্ধবী?
সাদিয়ার কথায় সবাই হাসতে শুরু করলো। হঠাৎ সাদিয়া লক্ষ্য করলো নীলা এখনো রেডি হয়নি। তাই নীলার দুই কাধে ধরে সাদিয়া বলল,
– কিরে নীলা এখনো রেডি হসনি তুই? আচ্ছা চল, আমরা আজকে তোকে রেডি করে দিচ্ছি, তুই তো শুধু জামা ছাড়া আর বাড়তি মেকঅাপ ও করবি না সেটা জানি। চল, যা আগে জামাটা পড়ে আয়।
নীলা জামা পড়তে গেলে মুন্নি আর সাদিয়া নিজেদের মেকঅাপ ঠিক করে নেয়।
কিছুক্ষন পর নীল রঙের একটা লং বারবি গাউন পরে বেরিয়ে আসে নীলা। সাদিয়া আর মুন্নি হা করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। বিনা মেকআপেই নীলাকে নীল পরী লাগছে। সাদিয়া আর মুন্নিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে নীলা। হাত দিয়ে চুল গুলো কানের পেছনে নিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কেমন লাগছে তাকে। সাদিয়া আর মুন্নি দুজনেই হাত দিয়ে সুন্দর দেখালো। তারপর নীলাকে টেনে এনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিল। নীলা বার বার না করলেও জোর করে লিপস্টিক লাগিয়ে দিল ওকে।
মুন্নি বলল,
– আরে পাগল, এমন গর্জিয়াস জামার সাথে একটু কাজল, আইলাইনার আর লিপস্টিক না দিলে মোটেও ভালো লাগবে না।
নীলাকে সাজিয়ে সবাই মিলে ছবি তুলতে শুরু করলো৷
তারপর নিচে নেমে বড়দের সালাম করলো সবাই। তারপর সালামি হাতে নিয়ে খুশিতে লাফাতে শুরু করল।
নীলার মা এসে বলল,
– নীলা মা, দেখ তো একটু আকাশ হয়তো এখনো উঠেনি ঘুম থেকে। যা তো একটু দেখে আয়।
নীলা সাদিয়া আর মুন্নিকে সাবিহা, সুবাহ আর রাফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ওদের গল্প করতে বলে চলে যায় আকাশের ঘরের দিকে।
আকাশ একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। নীলা মুখ চেপে হাসতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে আকাশের কাছে গিয়ে ওর কয়েকটা ছবি তুলে নিল নীলা। তারপর ডাক দিতে চেয়েও দিলো না। আকাশের বাসায় যতবার নীলা ঘুমিয়েছে প্রতিবার আকাশ ওর মুখে পানি ঢেলে ওকে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। আজ নীলার পালা ভেবেই একটা শয়তানি হাসি দিল নীলা।
.
.
.
.
.
.
চলবে………