নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_15
#adrin_anisha
.
সাদিয়াকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলল নীলা। সাদিয়াও সব শুনে অনেক অবাক হয়ে গেল।
নীলা সাদিয়া কে জিজ্ঞেস করল,
– আচ্ছা শোন না, আমি কি ওকে হ্যাঁ বলে দেব?
-কেন? তুই কি ওকে ভালোবাসিস?
-আরে না, তুই কি পাগল নাকি?
-তাহলে হ্যাঁ বলবি কেন?
– আরে ও যদি আমি হ্যাঁ বললে মুসলমান হয়ে যায় তাহলে আমার কত সওয়াব হবে বল,
– কিন্তু তাই বলে কি তুই ওকে বিয়ে করবি?
নীলা এবার ভাবলো, আয়ানের সাথে বিয়ের করার কথা ভেবেই কেমন অসস্তি হচ্ছে নীলার।
নীলা চুপ করে থাকায় সাদিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে বল, তুই কি ওকে বিয়ে করতে পারবি।
– না, কিছুতেই না। আমি ওর সাথে আমাকে কল্পনাও করতে পারি না।
– তাহলে? হ্যাঁ বলবি কেন?
নীলা কিছুটা ভেবে বলল,
– আচ্ছা শোন, আমি যদি ওকে হ্যাঁ বলি পরে ও যখন মুসলমান হয়ে যাবে তখন ধর বললাম যে আমার ফ্যামিলি মানবে না বা এরকম কিছু বলে ব্রেকআপ করে নেব।
– ছিঃ, এসব কি বলছিস নীলা? তুই বোকা আমি জানি কিন্তু তুই যে এতো বোকা সেটা জানতাম না। এটা করলে যতটুকু সওয়াব পাবি তার চেয়ে বেশি পাপ হবে৷ কারো মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান, জানিস না সেটা?
নীলা এবার মাথা চুলকে বলল,
– আসলেই তো, এভাবে তো ভেবে দেখিনি? থেংক ইউ ইয়ার, ভাগ্যিস তোকে ফোন দিয়েছিলাম। নাহলে আজকে কত বড় একটা ভূল করে ফেলেতাম৷।
– হুম, সেটাই তো, আমি না থাকলে যে তোর কি হতো।
দুজনই হাসতে লাগলো।
হঠাৎ নীলা বলল,
– এই সাদি, ২দিন পর তো ঈদ। আসছিস তো বাসায়?
– হুম, অবশ্যই।
.
নীলা খুব নিশ্চিত হয়েই দিন কাটালো, এখন আয়ান ও নেই ওকে ডিস্টার্ব করার জন্য নেই। আর মেঘ ও নেই। খুব শান্তি লাগছে ওর।
নীলাদের বাসায় আজ অনেক মেহমান এসেছে। ওর মামাতো- খালাতো ভাই-বোনেরা, ওর ছোট ফুফু। মামার ২ মেয়ে, বড় মেয়ের নাম সাবিহা আর ছোট মেয়ের নাম সুবাহ। খালাতো ভাইয়ের নাম রাফি। সাথে আকাশ, আর ওর বাবা মা তো আছেই। ওরা বড়রা সবাই গেস্টরুমে কথা বলছে আর ছোটরা সবাই নীলার রুমে মেহেদী লাগাতে বসেছে। সাবিহা নীলার বড় কিন্তু আকাশের ছোট। আর সুবাহ এবং রাফি দুজনই নীলার ছোট। নীলা রাফিকে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে আর সাবিহা সুবাহকে। আর আকাশ বসে বসে দুজনের মেহেদী লাগানো দেখছে।
সাবিহা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
– কি ব্যাপার আকাশ ভাইয়া, তুমিও মেহেদী লাগাবে নাকি?
নীলা সাবিহার কথায় হতাশ মুখ নিয়ে বলল,
– আপু প্লিজ, তুমি আমার বড় হয়েও ওকে তুমি বল কেন? আর আমি তোমার ছোট হয়েও তুই বলি, মার সামনে তুমিও তুই বলবে নাহলে আমার লজ্জা লাগে।
নীলার কথায় আকাশ হেসে দেয়।
– তোর আবার লজ্জাও আছে? তাহলে এক কাজ কর, এখন থেকে তুই ও আমাকে তুমি বলে ডাকা শুরু কর। নিজে তো বেয়াদব এখন অন্যদেরও বেয়াদব করতে চাইছিস কেন?
আকাশ হেসে হেসে কথাটা বললেও নীলার অনেক খারাপ লাগলো,
– তুই সবার সামনে আমাকে এভাবে বলতে পারলি? আজ থেকে আমিও তোকে তুমি বলেই ডাকবো, দেখিস, মানে দেখে নিও। তুমি তুমি তুমি,
কথাগুলো বলেই একটা মুখ ভেঙচি দিয়ে মেহেদী লাগানোতে মনোযোগ দিল নীলা।
রাফিকে মেহেদী দেয়া শেষ হলে আকাশ এসে নীলার সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।
নীলা ব্রু কুচকে তাকালে আকাশ হেসে বলে,
– আমিও মেহেদি লাগাবো, তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দে।
– সাবিহা আপু তো আরো ভালো করে লাগাতে পারে। ওকে বলো।
নীলার মুখে তুমি শুনে হাসি পাচ্ছে আকাশের। হাসি থামিয়ে বলল,
– না, লাগালে তোর হাতেই লাগাবো।
সাবিহাও বলল,
– আরে নীলা লাগিয়ে দে না। আমি তো এখনো সুবাহকেই লাগিয়ে শেষ করতে পারিনি, ওর আরো একহাত আছে।
নীলা আর উপায় না দেখে আকাশের হাত নিয়ে মেহেদী লাগাতে শুরু করে। কিছুটা লাগাতেই ওদের সবাইকে নীলার মা সবাইকে নিচে ডাকলো খাবার খেয়ে নিতে। সবাই সেখানে চলে গেল। নীলা যেতে চাইলেও আকাশ হাত ধরে থামিয়ে দিল,
– ওই আমাকে এভাবে মাঝপথে একা ছেড়ে চলে যাবি নাকি।
নীলা ব্রু কুচকে তাকালো। আকাশ আবার বলল,
– আরে মানে, এভাবে অর্ধেক মেহেদী লাগিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
– আমি কি খাবো না তাহলে?
– খাবি তো আমি আর তুই পড়ে খেয়ে নেব।
-উফফ, এতো জ্বালাস কেন আমায়?
নীলা আবার চোখ বন্ধ করে বলল,
– না মানে, এতো জ্বালাও কেন আমায়?
বলেই আবার মেহেদী লাগাতে শুরূ করলো। সাবিহা, সুবাহ আর রাফি অনেক আগেই চলে গেছে। ঘরে নীলা আর আকাশ একা। এই মুহুর্ত টা অনেক ভালো লাগছে আকাশের। জানালা দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘরে নীরবতা, গালে হাত দিয়ে আকাশ নীলাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে৷ নীলার দিকে ঝুকে চুলের খোপার ক্লিপ্টা খুলে দিল আকাশ। সাথে সাথে নীলার কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল ছড়িয়ে পরলো। নীলা বিরক্তি নিয়ে তাকালো আকাশের দিকে। আকাশ মুচকি হেসে নীলাকে চোখ টিপ দিল। নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– আমার দিকে কি দেখছিস? তাড়াতাড়ি লাগা।
নীলার মেহেদী লাগাতে শুরু করলো আবার কিন্তু বারবার বাতাসে ওর চুল মুখের উপর, চোখের উপর, ঠোঁটের উপর এসে পড়তে লাগলো। আকাশের এগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো।
মনে মনে ভাবলো,
-ইসস, আমিও যদি তোর ওই চুল হতাম তাহলে আমিও যখন ইচ্ছে তোর চোখ, গাল, ঠোঁট ছুয়ে দিতে পারতাম।
আকাশের ভাবনার ইতি ঘটলো নীলার কথায়। নীলা আকাশের সামনে হাত নাড়তেই আকাশের ধ্যান ভাঙে।
– কি ব্যাপার কি দেখছো? নিচে দেখ৷ মেহেদী লাগানো শেষ হয়ে গেছে।।
এবার আকাশ নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিল। নীলা অবাক হয়ে বলল,
– একি, এই হাতে লাগালে খাবে কিভাবে।
আকাশ হেসে বলল,
– সেসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই লাগিয়ে দে।
নীলা আবার মেহেদী দিয়ে দিতে লাগলো আর আকাশ আবার নীলাকে দেখতে লাগলো।
.
মেহেদী লাগানো শেষ হলে আকাশ আর নীলা নিচে নামে। ততক্ষনে সবার খাওয়া শেষ। তাই নীলা আর আকাশ খাবার নিয়ে নীলার রুমে এসে পড়লো। নীলা টেবিলে বসে খেতে শুরু করল। আকাশ ও ওর পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।
নীলা কৌতুহল নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো,
– কি?
আকাশ হেসে বলল,
– খাইয়ে দে না, দেখ হাতে মেহেদী।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
.
.
.
.
.
.
চলবে……