নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_14

0
1249

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_14
#adrin_anisha
.
মেঘ হাতে কিছু ছবি নিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছে। ইচ্ছে করছে এক্ষনি গিয়ে নীলাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতে এবং জিজ্ঞেস করতে কি সম্পর্ক ওর আর আকাশের মাঝে। মেঘের হাতে নীলা আর আকাশের সেদিনের বৃষ্টিতে ভেজার ছবি। ছবি গুলো দেখলে যে কেউ বলে দেবে ওদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। তাই সেগুলো দেখেই মেঘের মাথায় রক্ত উঠে আছে।
– নাহ, আর এভাবে বসে থাকা যায় না। আমি এখনি যাব নীলার বাসায়।
কথাটা বলেই মেঘ রাগে কটমট করতে করতে রওনা হলো নীলার বাসার দিকে।
.
ইফতারি শেষে নীলা আর আকাশ বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে।
– এই আকাশ ভাইয়া, তুই তো ওই দিন বললি ওই ড্রেস টা তুই তোর গার্লফ্রেন্ড এর জন্য কিনে এনেছিস তাহলে আমায় দিলি কেনো?
– ভাবলাম ওটা তোকেই ভালো মানাবে।
– কিন্তু এখন ওকে কি দিবি?
– ওকে তো দিয়েই দিয়েছি। আর দেয়ার দরকার হবে না।
– বাব্বাহ, তারমানে তাকেও দিয়ে দিয়েছিস? কি চালু রে তুই। আচ্ছা প্লিজ বল না নাম কি ওর?
– কার?
– তোর গার্লফ্রেন্ড এর।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– নীলা।
নীলা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,
-ধুর, মজা করিস না তো, বল না নাম টা কি?
আকাশ হতাশ ভাব নিয়ে বলল,
– তুই নিজেই বের করে নে।
নীলা হেসে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে, শোন, আমি তোকে ১০ টা নাম বলব N দিয়ে তুই বলবি এগুলোর মাঝে আছে কি না৷ ওকে?
আকাশ হেসে বলল,
– তোর বাচ্চামো আর গেলো না রে।
– না যাবেও না। বল না,
আকাশ মাথা ঝাকিয়ে বলল,
– ঠিক আছে। বল
নীলা খুশি হয়ে ভাবতে শুরু করলো, আর হাতে হিসেব করতে লাগলো,
– নয়নতারা, নাফিসা, নাদিয়া, নাজমা, নাসরিন, নাদিরা, নাহিদা, নিশাত
নাম গুলো বলেই গালে একটা হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো নীলা,
– এই ভাইয়া, আর মনে পড়ছে না তো।
আকাশ হেসে বললো,
– নীলা আর নুসরাত বলে দে।
নীলা এবার শয়তানি হাসি দিয়ে আকাশের দিকে ঝুঁকি এলো৷ আকাশের চেয়ারের দুই হাতের উপর নীলার দু হাত রেখে একদম আকাশের মুখের উপর ঝুকে গেল নীলা। আকাশ অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে হঠাৎ কি হলো এই মেয়ের।
নীলা ঠোঁট বাকা করে হেসে বলল,
– কি ব্যাপার? হুম? নুসরাত কে? তার মানে তুই নুসরাত নামের কোনো মেয়েকে ভালোবাসিস তাই তো?
আকাশ বোকা বোকা হাসি হেসে বলল,
– উফফ, আমি তো সাথে নীলা নামটাও নিয়েছি। ওটাকে সন্দেহ করছিস না কেন?
নীলা আকাশের নাকে আঙুল দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে হেসে বলল,
-আমাকে কি বোকা পেয়েছিস? আমি তো তোর সামনেই ছিলাম এজন্য আমার নাম টা বললি, কিন্তু নুসরাত নামটা তোর মাথায় এলো কি করে শুনি? তারমানে এটাই তোর গার্লফ্রেন্ড। তাই তো?
আকাশের ইচ্ছে করছে নিজের মাথার নিজেই চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে। নিজেকে সংযত করে আকাশ মুচকি হেসে নীলার কাছে যেতে লাগলেই নীলাও পিছাতে লাগলো, নীলা নিজের চেয়ারে বসে পড়লো আর আকাশ চেয়ারের দুই হাতায় নিজের হাত রেখে নীলার দিকে ঝুকে বলল,
– দেখ তোর যা বোঝার তুই বুঝে নে, কিন্তু নুসরাত নামে আমি কাউকে চিনি না। ওকে?
কথাটা বলে নীলার নাকে নাক ঘষে দিল আকাশ। তারপর চলে গেল। নীলা বড় করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো, আকাশ এভাবে সামনে আসায় নীলার যেন নিশ্বাসই থেমে গিয়েছিল। নীলা লজ্জায় মুখ ঢেকে নিল।
.
মেঘ এতোক্ষন সব দেখছিল নীলার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। দুজনকে এভাবে দেখে তার বিশ্বাস হয়ে গেল যে নীলা আর আকাশ একে অপরকে ভালোবাসে। রাগে সেখান থেকে চলে গেল মেঘ। আর মনে মনে ঠিক করলো যেভাবেই হোক নীলাকে ভুলে যাবে মেঘ৷
.
আকাশ নীলার বাবার রুমে গিয়ে কড়া নাড়লো,
– আঙকেল আসবো?
-আরে আকাশ বাবা, আসো। কিছু বলবে?
আকাশ নীলার বাবার পাশে বসে বলল,
– হুম, আসলে আয়ান এর ব্যাপার টা জানতে চেয়েছিলাম।
নীলা বাবার রুমে আসতে যাবে তখনই আয়ান এর নাম শুনে লুকিয়ে গেল। আর শোনার চেষ্টা করতে লাগলো কি বলছে তারা।
নীলার বাবা উঠে বসে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
– আসলে তোমাকে বলতে আমার অসুবিধা নেই, তবে নীলাকে কিছু বলার দরকার নেই। ওর পড়াশুনার ক্ষতি হতে পারে।
– আপনি নিশ্চিত থাকুন আঙ্কেল।
– হুম, শোনো, আয়ান ছেলেটা হিন্দু আর ওর আসল নাম আয়ান না পরম।
আকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি?
– হুম, ও নীলাকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথেই দেখেছে। তারপর তোমার বাবার থেকে আমার নাম্বার যোগার করেছে। ভেবেছিল বিয়ের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু সে হিন্দু, এবং ছোট একটা শোরুমের কর্মচারী, তাছাড়া নীলাও এখনো অনেক ছোট, এসব ভেবেই আর প্রস্তাব পাঠায়নি। কিন্তু সে চেয়েছিল আগে নীলাকে নিজের মনের কথা বলবে তাই নীলার পিছু নিতে থাকে এবং নীলাকে ওর কথা বলার চেষ্টাও করে। কিন্তু নীলা কখনো ওর কথা শোনার চেষ্টাও করেনি তাই আর সে ও বলতে পারেনি। ও হিন্দু থেকে মুসলমান হতে চায় নীলার জন্য, আর নীলার সাথে মিলিয়েই তার নাম রাখতে চায় নীল। এমনকি সে তার বাবা মা, দাদী, এবং সবাইকে নীলার ছবি দেখিয়েছে, এমনকি ওর বাবা মা রাজিও হয়েছে। কিন্তু ছেলের ধর্ম বদলানো কে মেনে নেননি, তবুও ও নিজের বাবা মায়ের বিরূদ্ধে গিয়েও নীলাকে বিয়ে করতে চায়।
-কিন্তু আঙ্কেল, আপনাকে এসব বিশ্বাস করলেন কেন? ও তো আপনাকে মিথ্যাও বলতে পারে।।
– ও বললে তো বিশ্বাস করতাম না বাবা। কিন্তু কথাগুলো বলেছে ওর বাবা।
– ওর বাবা?
– হুম, ওর বাবাই ওই শোরুমের মালিক। কিন্তু দোকানে ওদের মাঝে শুধুই মালিক আর কর্মচারীর সম্পর্ক। প্রথমে উনি অনেক বকলেন আয়ানকে। পরে আমায় নিয়ে এসে চা দোকানে বসলেন। তারপর সব কথা বললেন। আমায় অনেক বোঝালেন যেন আমি নীলাকে ওনার ঘরে পাঠাই।
কথাটা বলেই একটা নিশ্বাস নিলেন নীলার বাবা। নিশ্বাসটা যেন আকাশের বুকে এসে লাগলো। অধীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– তুমি কি বললে আঙ্কেল?
– আরে ধুর, তুই কি পাগল হলি? আমি কিভাবে হ্যাঁ বলব বল তো। ওরা শত হলেও হিন্দু।
আকাশ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ওদিকে নীলা সব শুনে হা হয়ে আছে। নিজের ঘরে গিয়ে ভাবতে লাগলো নীলা,
– আয়ান আমাকে ভালোবাসে? কই কখনো তো বলেনি। আর এতো ভালোবাসে যে নিজের ধর্ম ও বদলাতে রাজি। শুনেছি কেউ যদি কাউকে অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে আনতে পারে তাহলে তার জান্নাতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তাহলে আমি যদি ওকে হ্যাঁ বলে দেই তাহলে তো ও আমার জন্য মুসলমান হয়ে যাবে আর আমারো অনেক সওয়াব হবে। তাহলে কি আমি ওকে হ্যাঁ বলে দেব?
.
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে