নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_13
#adrin_anisha
.
নীলা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ মুচকি হেসে বলল,
– ঠিক আছে আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি,
কথাটা বলেই বোতলের মুখ খুলে ভেতরের তরল ছুঁড়ে মারলো মেঘার মুখে। সাথে সাথে নীলার মুখ জ্বলতে শুরু করলো। নীলা চেচাতে শুরু করলো কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে না।
.
ঠিক তখনই চেচিয়ে উঠলো নীলা। ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ল। এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিল মনে হতেই হাফ ছেড়ে বাচলো। ঘামতে শুরু করেছে। গলাটাও শুকিয়ে গেছে কিন্তু রোজা রেখে পানি খেতে পারছে না। তাই ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখে পানি দিয়ে নীলা।
– বাপ রে বাপ, কি ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা। এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম আমি? কেন জানি মনে হচ্ছে আমার সাথে সত্যিই এমন কিছু হতে চলেছে। বাবাকে শুধু আয়ান এর কথাটা বলেছি। মেঘের কথাও কি বলা উচিত ছিলো?
.
আজ স্কুলে গিয়ে সাদিয়া, মুন্নি কে নীলার সপ্নের কথাটা বলল,
– জানিস আমার না অনেক ভয় হচ্ছে রে। ভাবছি এখন থেকে মুখোশ পড়ে থাকবো।
নীলার কথায় মুন্নি আর সাদিয়া হাসতে লাগলো। সাদিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– তুই কি পাগল নীলা? এসব করা কি এতই সোজা? তাছাড়া এমন কিছু ওকদ ছাড়বো নাকি আমরা৷
– না রে, বুঝতে পারছিস না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমার সাথে বাস্তবেই কিছু একটা ভয়াবহ হতে চলেছে।
– ধুর ফিল্মের ডায়লগ ছাড়তে হবে না এতো। তাছাড়া ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়, দুপুরের নয়।
-হুম তাও ঠিক, আচ্ছা বাদ দিলাম।
মুন্নি খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-তাহলে এবার বল তো৷ এই ঈদ এ কি করবি?
সাদিয়াও এবার উৎসাহী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো কথা মনে করেছিস। এই নীলা তোর কোনো প্লেন আছে?
নীলা মাথা চুলকে বলল,
– না রে, আমার তো মাথায়ই ছিলো না এই কথা।
সাদিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
-তোর মাথায় থাকে টা কি?
নীলা কিছু বলবে তার আগেই, মুন্নি দুজনকে থামিয়ে বলল,
– আরে শোন, আমাদের কারো মাথাতেই তো কোনো প্ল্যান নেই। তো ঝগড়া না করে প্ল্যান কর চল,
নীলা সম্মতি দিয়ে বলল,
– আমাদের বাসার কাছে একটা অনেক সুন্দর জায়গা আছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি নিরিবিলি।
সাদিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– সত্যিই?
– হুম, আর পাশে একটা পুকুর আছে, আবার আরেকপাশে ধান ক্ষেত, আর অন্য পাশে আম বাগান, খুব সুন্দর জায়গা। আমাদের বাসায় দুপুরে খেয়ে, তারপর ওখানে গিয়ে অনেকগুলো ছবি তুলবো, ঘুরবো। আম চুরি করব, তারপর আমাদের বাসার পাশের ওই রেস্টুরেন্টে যাবো, সবাই মিলে ফালুদা, আইসক্রিম খাবো। তারপর আবার ঘুরবো।
সাদিয়া লাফিয়ে উঠে বলল,
– ইয়েস। এটাই করবো। তুই কি বলিস মুন্নি?
মুন্নি সাদিয়াকে হাত দিয়ে লাইক দেখিয়ে বলল,
-ডান। এটাই করব।
.
.
বাসায় আসতেই নীলার দিকে রেগে তাকালো ওর মা। নীলা বুঝতে পেরে ওর মায়ের কাছে গেল।
– কি হয়েছে আম্মু?
– কে তোর আম্মু? আমি তো তোমার কেও না। নাহলে কি আর আমার কাছে কথা লুকোতি?
– কি লুকালাম?
– তোকে একটা ছেলে এতোদিন ধরে ডিস্টার্ব করছে আর তুই আমাকে জানালিও না?
– ওহ, এই ব্যাপার। আসলে আমি ভয়ে বলি নি আম্মু? তাছাড়া তোমাকে বললেই বা তুমি কি করতে বলো?
– নাহ, আমি মাফ করবো না তোকে। আগে কথা দে এরপর থেকে এমন কিছু হয়ে সবার আগে আমাকেই বলবি।
নীলা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– ঠিক আছে আমার আম্মু? রাগ করো না। কেমন? আর শোনো ঈদের দিন কিন্তু আমার ফ্রেন্ডস রা আসবে, ভালো প্রিপারেসন করবে কিন্তু।
– ঈদের দিন এমনিতেও তো ভালো প্রিপারেসনই হয়। কিন্তু তার আগে ঈদের শপিং এর কথা ভেবেছিস?
নীলা চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকালো,
– ওহ তাই তো.. আমি তো ভুলেই গেছিলাম। কবে যাবো শপিং এ মা?
– আমি যাব না, তোর বাবা ঢাকা থেকে আসার সময় আমার জন্য শাড়ি আর ওনার জন্য পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে এসেছেন। আর তোর জন্য আনেননি কারণ তোর তো আবার মর্ডান যুগের পছন্দ, এসব তোর বাবা বোঝে না। একটু পর আকাশ আসবে ওর সাথে শপিং এ চলে যাস, আমি টাকা দিয়ে দেব।
– নাহ, ওর সাথে কেন যাব?
– গেলে কি হবে? আমি রোজা রেখে যেতে পারবো না। তাছাড়া ইফতারি ও বানাতে হবে। তুই ওর সাথে যা।
– কেন বাবা কোথায়?
– ওই বদমাসটা কে শিক্ষা দিতে গেছে। আমার মেয়ের পিছনে লাগার মজা এবার বুঝবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
.
নীলা নিজের ঘরে পড়তে বসেছে, কিন্তু মনে মনে ভাবছে, বাবা না জানি ওই আয়ান কে কি করছে? এমন সময় আকাশ এলো।
– কি রে বই নিয়ে কি ভাবছিস?
– কই কিছু না তো। তুই কখন এলি?
– এই তো একটু আগেই।
– আজকে কিন্তু পড়বো না। শপিং এ যেতে হবে আমাফ সাথে।
– ইসস, মামার বাড়ির আবদার। তোর সাথে আমি শপিং এ যাবো? আমি কি তোর স্বামী হই নাকি?
নীলা আকাশের হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
– ধুর, স্বামী হবি কেন? তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আর বড় ভাই ও। তুই যাবি না তো কে যাবে?
আকাশ নীলার দিকে ঝুঁকে বলল,
– ওই শোন, বেস্ট ফ্রেন্ড পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোর কোনো ভাই টাই নই। তাছাড়া রোজা রেখে তোর সাথে পুরো মার্কেট ঘুরতে পারব না।
– পুরো মার্কেট ঘুরতে হবে না। এই দেখ আমি এরকম একটা গাউন কিনব।
নীলা নিজের ফোন থেকে একটা বারবি গাউন ড্রেসের ছবি দেখালো আকাশ কে। নীলা রঙের একটা গাউন। আকাশ মনে মনে কল্পনা করলো এটা পড়লে নীলাকে কেমন লাগবে। আকাশ চোখ বন্ধ করতেই ওর সামনে যেন একটা নীল পরী চলে আসলো। আকাশকে চোখ বন্ধ করে হাসতে দেখে নীলা একটা চিমটি কাটলো ওর হাতে, আকাশ চেচিয়ে উঠলো,
– আউচ, কি হচ্ছে টা কি? দিলি তো আমার স্বপ্ন টা ভেঙে?
– তো জেগে জেগে কি এতো স্বপ্ন দেখছিস তুই?
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– আমি দেখছিলাম এই ড্রেস টা তে আমার গার্লফ্রেন্ডকে কেমন লাগবে। জানিস, একদম পরী লাগছিলো ওকে।
নীলা দু হাত ভাজ করে মুখ ফুলিয়দ বলল,
– এখানে আমি আমার শপিং এর কথা বলছি আর তুই তোর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পড়ে আছিস? যাহ যেতে হবে না তোর আমার সাথে। তোর গার্লফ্রেন্ড এর কাছেই থাক, ওর সাথেই যা শপিং এ।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– গার্লফ্রেন্ড এর সাথে তো যাবই, আগে তো তোর সাথে যাই। তোর সাথে গেলেই বুঝবি গার্লফ্রেন্ড এর সাথে যাওয়া হয়ে যাবে।
নীলা কিছু না বলে রেডি হতে চলে গেল। আর আকাশ খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো।
.
.
.
শপিং থেকে এসেই নীলা আর আকাশ সোজা চলে ওর বাবা মায়ের রুমে।
নীলা শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে ওর বাবার পাশে বসে পড়লো,
– এই দেখো বাবা, আমার শপিং।
নীলা ওর বাবাকে শপিং ব্যাগ খুলে জামা দেখাবে তার আগেই আকাশ গিয়ে ক্লান্ত মুখ নিয়ে নীলার মায়ের পাশে বসে পড়ে।
– উফফ, আন্টি, জানো তো কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ।
নীলার দিকে তাকিয়ে বলল আকাশ৷ নীলা আকাশের পায়ে একটা ঘুষি দিল, তখনি নীলার বাবা নীলাকে মাথা নেড়ে বলল,
– উহুম, মা, বড়দের গায়ে হাত তুলতে নেই। ও তোনার বড় না?
নীলা মুখ গোমড়া করে বলে,
– সরি বাবা।
আবার হেসে নিজের জামা-জুতা, কসমেটিকস সব দেখাতে লাগলো। পাশেই আরেকটা শপিং ব্যাগ ছিলো, যেখানে আকাশ ওর গার্লফ্রেন্ড এর জন্য একটা জামা কিনেছে৷ নীলার বাবা ওই ব্যাগের দিকে আঙুল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আর ওটাতে কি আছে?
নীলা কিছু বলবে তার আগেই আকাশ বলল,
– ওটাতেও ওর জন্য জামা আছে।
নীলা অবাক হয়ে বলল,
– কিন্তু তুই তো ওটা তোর….
নীলাকে না বলতে দিয়েই আবার আকাশ বলল
– হুম, ওটা আমার টাকা দিয়েই কিনেছি তবে তোর জন্য। আমার তরফ থেকে গিফট৷ তাছাড়া এটা বাবা দিতে বলেছিল।
নীলা এবার আর কিছু বলল না। আকাশ হলে নিতো না কিন্তু ওর বাবার কথা বলায় আর কিছু বলল না নীলা।
হাসি তামাশা শেষে নীলার বাবা এবার কিছুটা গম্ভীর মুখ করে বলল,
– নীলা, আয়ান যদি আজকের পড় থেকে তোকে ডিস্টার্ব করে তাহলে আমায় বলবি। তবে আশা করি ও আর করবে না।
– কেন বাবা, কি করেছ তুমি?
– তেমন কিছুই না, ওর শোরুমে গিয়েছিলাম। ও এই শোরুমের মালিক নয়, সামান্য কর্মচারী। আমি ওর মালিকের সাথে কথা বলেছি৷ আমার সামনে ওর মালিন ওকে ধমক দিয়েছে। আর বলেছে ভবিষ্যতে যদি এমন আর কিরে তাহলে ওকে চাকরি থেকে বের করে দেবে৷
-তুমি একাই গিয়েছিলে?
-নাহ, তোর রাকিব আংকেল ও ছিল।
– জিজ্ঞেস করো নি ও এমন কেন করছিলো?
– তোমার এতো সব না জানলেও চলবে। যাও ঘরে যাও এগুলো নিয়ে।
নীলা মন খারাপ করে ঘরে চলে গেল। আর ভাবতে লাগলো কি এমন কথা যা বাবাও ওর থেকে লুকোচ্ছে?
.
.
.
.
.
.
চলবে….