নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_12

0
1135

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_12
#adrin_anisha
.
আজ নীলার স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা। সবাই খুব সেজে-গুজে এসেছে আজ। কিন্তু নীলার মুখে কোনো সাজ নেই। নীলার এসব সাজ একদম পছন্দ না। কিন্তু তবুও সাদিয়া এসে বলল,
– কি রে তুই সাজিস নি কেন?
– জানিসই তো আমার ভালো লাগে না এসব
– ভালো না লাগলেও সাজতে হবে।
– প্লিজ
– কোনো প্লিজ না। আচ্ছা ঠিক আছে বেশি কিছু না, শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিবি।
– ঠিক আছে, তবে আমি গোলাপি কালার এর লিপস্টিক দেব, তোর মতো এতো লাল দিতে পারবো না।
– ঠিক আছে। আয়,
সাদিয়া নীলাকে কাজল আর লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়ে বলল,
– বাহ, তোর চোখ গুলো এমনিই অনেক সুন্দর, কাজল দেয়াত্র আরো বেশি সুন্দর লাগছে। সবসময় কাজল দিয়ে রাখতে পারিস না।
– এতো সুন্দর করে কি হবে, এখনো তো বিয়ের বয়স ও হয়নি।
বলেই হাসতে লাগলো নীলা, আর সাথে সাদিয়াও হাসতে লাগলো।
.
আজ মেঘের নজর নীলার দিকে পড়তেই অবাক হয়ে গেল মেঘ। এই প্রথম নীলার মুখে কোনো মেক আপ দেখছে, আর এই হালকা মেকাপেই অনেক সুন্দর লাগছে নীলাকে। মেঘেরপাশে থাকা ওর বন্ধু মেঘের কাধে হাত রেখে নীলার দিকে তাকিয়ে বলল,
– বাহ, তোর পছন্দ আছে বলতে হবে, সেই দেখতে কিন্তু।
মেঘ নীলার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়ই মুচকি হাসলো। তারপর নীলার ঠিক পেছনের সিটেই বসে পড়লো। নীলা আজ এতোদিন পরে মেঘকে দেখে অবাক হলো। সাথে পুরোনো ভয় টাও আবার জেগে উঠলো। মেঘ নীলার পেছনে বসে ওর দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। নীলার প্রচুর অসস্তি হচ্ছে। মনখুলে কথা বলতে পারছে না, হাসতে পারছে না। কেউ এভাবে সারাক্ষন নজর লাগলে যেকোনো মানুষেরই অসস্তি হতে পারে।
কিছুক্ষন পর একটু দূরে দুটো সিট খালি হলে মেঘা আর সাদিয়া সেখানে গিয়ে বসে পড়ে। নীলা যতটা সম্ভব মেঘ থেকে আড়াল হয়ে বসার চেষ্টা করে। মেঘ বুঝতে পারে নীলার অসস্তি হচ্ছে, তাই আর ওকে বিরক্ত করে না। মেঘের বন্ধু সাগর মেঘকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ঠাট্টা করার ভংগিতে বলল,
– কি রে তুই না বলেছিলি ওর পেছনে আর দৌড়াবি না, তাহলে এখন আবার ওকে ডিস্টার্ব করছিস যে?
– আরে সত্যিই ভেবেছিলাম আর ওর মুখ ও দেখবো না। কিন্তু কি করি বল, দিল হেয় কি মানতা নেহি।
– আরে বাহ, প্রেমে পড়ে কবি কবি ভাব হয়ে গেছে দেখছি।
– না রে আমি ওই দেবদাস মার্কা কবি হতে পারবো না। আমি আমার প্রেয়সী কে অন্য কারো হতে দিতে পারবো না। ওকে যেভাবেই হোক আমার চাই। হিন্দি তে একটা প্রবাদ শুনেছি, “সাম, দাম, দান্ড, ভেদ” ওকে পেতে আমার আমি এগুলো সব করতে রাজি। আর তাছাড়া আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আকাশ আর নীলার মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। ওদের বাবারা ভালো বন্ধু আর বিজনেস পার্টনার ও। সেই সুবাদেই আকাশ নীলার বন্ধুত্ব, এর বেশি কিছুই না।
– সে যাই হোক, নিজের জিনিসকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের করে নে। নাহলে কখন কি হয় বলা যায় না।
.
.
-আচ্ছা নীলা, তুই কি মেঘ কে একটু ও পছন্দ করিস না? ও মনে হয় সত্যিই তোকে ভালোবাসে।
– এমন কেন মনে হলো তোর?
– আরে সেদিন যেভাবে হাত কাটলো দেখলি না, আবার বুকেও তোর নাম লেখা ছিলো। ইসস, কি রোমেন্টিক। এগুলো কি সবার জন্য করা যায় নাকি?
– একদম ঠিক বলেছিস, এগুলো সবার জন্য করা যায় না, ইন ফেক্ট, কারোর জন্যই করা যায় না। আর এটা কোনো রোমেন্টিক বিষয় ও নয়। ডেঞ্জারাস বিষয়। শোন, এই পৃথিবীতে মানুষ সবচেয়ে বেশি নিজেকে ভালোবাসে। যতই বলুক না কেন আমি নিজের থেকেও বেশি তোমাকে ভালোবাসি, এগুলো সবই মিথ্যা। কারণ যারা নিজেকে ভালোবাসতে পারে না তারা অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তুই নিজেই ভেবে দেখ, যে মানুষ টা নিজেকে আঘাত করার আগে একবারো ভাবলো না, সে মানুষটা আমাকে আঘাত করার আগে কি একটুও ভাববে? ওর এমন কাজ দিয়ে ওর ভালোবাসা নয় ওর হিংস্রতা প্রকাশ পেয়েছে।
– বাহ, কি গভীর চিন্তা। আচ্ছা বাদ দে তাহলে।
– হুম, মুন্নি কোথায় আজ?
– আরে ও রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেছে। অনুষ্ঠান দেখতে আসতে পারবে না বলেছে।
– ইসস, বেচারি। এতো সুন্দর অনুষ্ঠানটা মিস করলো।
– হুম, বাদ দে। ওর ইচ্ছা। চল ওর জন্য কিছু ছবি তুলে রাখি পড়ে ওকে দেখাতে পারবো।
– তুই স্কুলে ফোন নিয়ে এসেছিস?
– আরে ধুর এটা তো স্কুল না, এটা তো মাঠ, তাছাড়া এখন তো আর ক্লাস হচ্ছে না, হচ্ছে অনুষ্ঠান। ওদিকে তাকিয়ে দেখ সবাই নিয়ে এসেছে।
– হুম, তাইতো, ইসস আগে জানলে আমিও নিয়ে আসতাম রে।
– ব্যাপার না। চল সেলফি তুলি।
নীলা আর সাদিয়া সেলফি তুলতে লাগলো, আর মেঘ ও ওর ফোন দিয়ে নীলার কিছু ছবি তুলে নিল।
অনুষ্ঠান শেষে সাদিয়া নীলাকে বলল,
– নীলা, আজ তুই একাই চলে যা রে। আমার আবার স্যার এর সাথে দেখা করতে হবম্বে প্রাইভেট এর জন্য৷ তোর তো আকাশ ভাই আছে তাই চিন্তা নেই৷ কিন্তু আমার তো পড়তে হবে।
নীলা কিছুটা মন খারাপ করে আবার মুচকি হেসে বলল,
– ঠিক আছে। তুই যা। আমি একাই যেতে পারব।
.
নীলার যাওয়ার পথে আয়ান দাঁড়িয়ে ছিলো। আজ সাথে সাদিয়া কে না দেখে নীলার পাশে হাঁটতে শুরু করল,
– হাই,
– আপনি আসলে কি চান বলুন তো এভাবে ডিস্টার্ব করেন কেন আমায়? এই রোজার মাসেও একটু শান্তি দেবেন না কেমন মুসলিম আপনি?
নীলা কথাগুলো বলেই জোরে হাটতে শুরু করলো। সাথে আয়ানও মুচকি হেসে পা বাড়ালো।
নীলা রিকশার জন্য দাঁড়ালে আয়ান হাতের ইশারায় একটা রিকশা ডাক দিয়ে নীলাকে উঠতে বলে। কিন্তু নীলা মুখ ঘুড়িয়ে অন্য রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যেন আয়ানের কথা সে শুনতেই পায়নি।
– নীলা, এটাতে ওঠো, রাগিও না আমায়।
নীলা এখনো এমন ভাব করলো যেন আয়ানের কথা শুনতেই পায়নি। আয়ান এবার রেগে গিয়ে নীলার হাত ধরে টান দিলে নীলাও এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে অন্য একটা রিকশায় উঠে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।
.
বাসায় এসে সাদিয়াকে ফোন দিয়ে সব বলে নীলা।
– কি বলছিস কি? ওই বদমাইস টা তোর হাত ধরেছে৷ তুই ওকে কিছু বললি না কেন৷ তখনি ওর গালে একটা থাপ্পড় মারা উচিত ছিল। তুই একটু সাহস না করলে ওর সাহস তো দিন দিন আরো বেড়েই যাবে৷ পড়ে খারাপ কিছুও হতে পারে নীলা।
– হুম, জানি রে। আমাকে এতো বোকা হলে চলবে না৷ তাই ঠিক করেছি আমি আজই বাবাকে সব বলে দেব।
– ওয়াও, দারূন আইডিয়া। এবার আঙ্কেলই ওই বদমাস টা কে শিক্ষা দেবে।
– আচ্ছা আমি তাহলে বলে আসি। বাই।
-বাই।
.
নীলা তাড়াতাড়ি নিজের বাবার ঘরে গেল। ওর বাবা তখন ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো।
– বাবা আসবো?
মেয়েকে দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে,
– আরে আয়, কিছু বলবি?
– হুম বাবা। তোমাকে অনেকদিন থেকেই বলতে চাইছিলাম। কিন্তু তুমি এতো বিজি থাকো যে বলতেই পারছি না।
– ওমা কি বলছিস। তাড়াতাড়ি বল কি বলবি?
– আসলে কিছুদিন ধরে না একটা ছেলে আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করছে।
– কি? কে সে?
– বাবা মনে আছে আয়ান নামে একজন তোমায় বলেছিল ওর শোরুমে যেতে।
– হুম। মনে আছে।
– সেই ছেলেটাই বাবা।
– ব্যাস আর কিছু বলার দরকার নেই। এবার যা করার আমিই করব।সরি রে মা, আমি আমার কাজে এতো ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে তোকে টাইম দিতে পারিনি। আজ থেকে আগে আমার মামনি, তারপর সবকিছু। তাছাড়া সব তো তোরই জন্য।
– না বাবা, সরি বলার দরকার নেই। আমি জানি তো তুমি ব্যাস্ত।
– আই আম প্রাউড অফ ইউ মামনি। সব মেয়েদের এই সাহস টা থাকে না, তার বাবাকে সব খুলে বলার।
– তুমি তো শুধু আমার বাবা না, বন্ধুও তো।
কথাটা বলেই বাবাকে জরিয়ে ধরলো নীলা। ওর বাবাও হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
.
ঘরে এসেই শান্তিতে একটা ঘুম দিল নীলা।
.
মেঘা অনেক খুশি হয়ে স্কুলে গেল আজ। কিন্ত স্কুলে যেতেই দেখলো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে । মেঘ নীলাকে দেখে একটা শয়তানি হাসি দিল। নীলার মনে হলো মেঘ নিশ্চয়ই কিছু কিছু না কিছু খারাপ মতলব করেছে। নীলা মেঘ কে দেখে ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল, মেঘ নীলার দিকে এগোতে লাগলো। মেঘার কাছে এসে মেঘার দিকে একটা বোতল ধরে বলল,
– অনেক অহংকার তোমার ওই রূপ নিয়ে তাই না? এটা লাগিয়ে নাও মুখে আরো বেশি সুন্দর হয়ে যাবে।
নীলা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ মুচকি হেসে বলল,
– ঠিক আছে আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি,
কথাটা বলেই বোতলের মুখ খুলে ভেতরের তরল ছুঁড়ে মারলো মেঘার মুখে। সাথে সাথে নীলার মুখ জ্বলতে শুরু করলো। নীলা চেচাতে শুরু করলো কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে না।
.
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে