নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_11
#adrin_anisha
.
নীলা আজ সাদিয়াদের বাসায় যাওয়ার সময় দেখলো আজও রাব্বি দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু নীলা ভয় না পেয়ে মনে মনে ঠিক করলো, আজ যদি ও নীলাকে কিছু বলে তাহলে নীলাও ভালো করে কিছু শুনিয়ে দেবে। রাগ নিয়েই এগোতে লাগলো নীলা। কিন্তু রাব্বির কথা শুনে অবাক হয়ে গেল নীলা।
নীলা রাব্বির কাছাকাছি আসতেই রাব্বি বলল,
– সরি আপু, ওই দিন আসলে মজা করে বলেছিলাম কথা টা।
বলেই নিজের কাজে চলে গেল রাব্বি। নীলাও নিজের মতো হেটে চলে গেল। সাদিয়া কে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা হয়। কিছুদুর আসতেই সব বলল সাদিয়া কে,
– রাব্বি আমাকে সরি কেন বললো বলতো?.
– আমি কি করে জানবো? তবে আমার কি মনে হয় জানিস? ও হয়তো কারোর সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলো তোকে আই লাভ ইউ বলেছিল।
– তাহলে আবার সরি কেন বলতে আসলো?
– হ্যাঁ ও তো আমাকে ফোন দিয়েছিলো সরি বলার আগে। পাগল,ও কেন সরি বলেছে আমি কি জানি? আর বলেছে তো বলেছে এতে এতো ভাবার কি আছে? নাকি তুই চাইছিস ও আবার তোকে জ্বালাক।
– না না বাবা, আর দরকার নাই। এমনিতেই আমার লাইফ টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
.
নীলা আর সাদিয়া কথা বলতে বলতে স্কুলে যেতে লাগলো। অথচ নীলা জানতেও পারলো না কেও তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে এতো ভালোবাসে যে তার আশেপাশে আর কাউকে সহ্য করতে পারে না। তাই তো রাব্বিকে বাধ্য করিয়েছে নীলাকে সরি বলতে।
.
আজ অনেকদিন হয়ে গেল আকাশের সাথে কথা হয় না নীলার। এর মাঝে রোজাও এসে পড়েছে। আজ ১০ রোজা। নীলা প্রতিবারই রোজার মাসে কোরআন কমপক্ষে ২ বার খতম দেয়৷ তাই এই রোজার মাস টা ওর জন্য অনেক ব্যাস্ত সময়। নামাজ পড়া , কোরআন পড়া , স্কুলের পড়া সব মিলিয়ে অনেক ব্যাস্ত। আর আকাশের সাথে রাগ থাকায় সেদিন নীলা তার বাবাকে বলেছিল যেন আকাশ কে আসতে বারণ করে। এই রোজার মাসে এতো কিছুর মাঝে ও প্রাইভেট পড়তে পারবে না।
তবে আকাশ অনেক বার নীলাকে এমনিই দেখতে এলেও নীলা দরজা লাগিয়ে বসে থাকতো আর বলতো ও পড়ছে কেও যেন ওকে ডিস্টার্ব না করে। আকাশ নীলাকে বারবার ফোন দিলেও নীলা রিসিভ করে না।
এর মাঝে মেঘের জ্বালাতন ও কমে গেছে। মেঘ এখন আর নীলাকে ডিস্টার্ব করে না। কিন্তু আয়ান এখনো নীলাকে ফলো করে।
.
বারান্দায় বসে খোলা চুলে চোখ বন্ধ করে মিষ্টি বাতাস উপভোগ করছে নীলা। হঠাৎ আকাশের মুখটা ভেসে আসে নীলার চোখে। চোখ খুলে ফেলে নীলা। আজ অনেক মনে পড়ছে তার আকাশকে। কতদিন আকাশ কে দেখেনি নীলা। মনে মনে ভাবছে আজ যদি একটু দেখা হতো আকাশের সাথে। কথাটা ভেবে চোখ বন্ধ করতেই আবার সেদিনের আকাশের মন মরা মুখটা ভেসে উঠলো নীলার চোখে। বুক টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো নীলার। চোখ খুলে ফেলল নীলা। কেমন যেন মায়া হচ্ছে আকাশের জন্য।
হঠাৎ নিচে তাকাতেই দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। নীলা নিজের চোখ ডলে সামনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আকাশের মুখটা দেখে আবারো বুকে মোচড় দিল নীলার। আকাশের মুখে কোনো হাসি নেই। আছে একরাশ বিষন্নতা। নীলা দৌড়ে নিচে নেমে এলো। আকাশে সামনে আসতেই আকাশ মুচকি হাসলো। কিন্তু তার চোখে পানি টলমল করছে।
– কি রে, কি হয়েছে? কাদছিস নাকি তুই?
আকাশ নিজের চোখ মুছে বলল,
– আরে না না, দেখছিস না কেমন বাতাস হচ্ছে। চোখে কি গেল কি জানি?
– হুম বুঝেছি, গাড়ি এনেছিস?
– হুম, কেন?
– চল
– কোথায়
– যেদিকে দুচোখ যায়।
আকাশ আর নীলা গাড়িতে উঠে পরল। আকাশ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নীলাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কোথায় যাবো বলবি তো।
– বললাম তো যেদিকে দুচোখ যায়। আমার অনেক ইচ্ছা একদিন এভাবেই কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া বেরিয়ে পড়ব। যেদিকে মন চাইবে সেদিকে চলে যাব। প্রকৃতি অনুভব করব। আজকে তোর সাথে সেই স্বপ্ন টা সত্যি করব। কেন? তুই চাস না আমার স্বপ্ন সত্যি হোক।
– এটা কেমন কথা। তোর স্বপ্ন সত্যি হোক এটাই আমার জিবনের আরেকটা স্বপ্ন।
নীলা মুচকি হেসে আকাশের হাতে একটা চিমটি কাটলো।
– আউচ, কি রে পাগল হয়ে গেলি নাকি?
– হুম, হয়ে গেছি।
– এক্ষনি এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।
-তাহলে এমন রাস্তায় যা যেখানে এক্সিডেন্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।
– এই এক মিনিট তুই আবার আমাকে পাচার করে দেয়ার প্লেন করছিস না তো? এমন নির্জন রাস্তায় যেতে বলছিস কেন?.
নীলা হাসতে হাসতে বলল,
– ছেলেদের ও যে পাচার করা যায় এটা এই প্রথম শুনলাম। আর ছেলে হয়ে তুই এতো ভীতু কীভাবে বলতো?
আকাশ ভেংচি কেটে বলে,
– কই ভীতু? খালি রাতের বেলা একটু ভয় পাই আরকি, আর তো ভয় পাই না। তাছাড়া দিনের বেলা আমি অনেক সাও্সী। কিন্তু সাথে যদি তোর মত গুন্ডি থাকে তাহলে তো যে কেও ভয় পাবে।
নীলা এবার আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
– তুই রাতের বেলা ভয় পাস মানে কি? তুই ভূতে বিশ্বাস করিস?
– দিনের বেলায় করি না তবে রাতের বেলায় করি।
নীলা এবার আরো জোড়ে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে নিজের পেট ধরে নিল। তবুও হাসি যেন থামছেই না। আকাশ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখছে। গাড়ির স্পীড কমিয়ে দিল যেন এক্সিডেন্ট না হয়, এমনিতেও এই রাস্তায় গাড়ি খুব কম। আকাশ ইচ্ছে করেই নীলার সাথে মজা করেছে। কতোদিন এই হাসিমাখা মুখটা দেখেনি আকাশ। তাই আজ প্রাণ ভরে দেখছে আকাশ।
নীলা হাসতেই হাসতেই বলল,
– এতো বড় দামড়া ছেলে নাকি ভুতে ভয় পায়? হা হা হা…..
– চুপ, এতো হাসিস না, পা পড়ে দাত কেটে যাবে।
নীলা এবার আর হাসতে পারছে না। আকাশের পিঠে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে লাগলো নীলা। হাসতে হাসতেই বলল,
– তুই চুপ করবি? আমি আর হাসতে পারছি না।
আকাশ একপাশ করে গাড়িটা থামালো। নীলা হাসতে হাসতে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। আকাশ ও নীলার দিকে তাকিয়ে হেসে নেমে দাড়ালো।
নীলা এবার হাসিটা একটু থামিয়ে হাপাতে হাপাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
– আজ কতদিন পরে এতো হেসেছি নিজেও জানি না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের একটা হাত নিজের দুহাতে দিয়ে নীলা বলল,
– সরি আকাশ ভাইয়া, তোর সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম ওই দিন। তুই যা করেছিলি আমার ভালোর জন্যই করেছিলি। তোর জন্যই এখন আর মেঘ আমায় ডিস্টার্ব করে না। আসলে ওই দিন ওর ওই রকম পাগলামো দেখে আমি মাথা ঠিক রাখতে পারি নি। নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে। আর সেই সব রাগ গিয়ে পড়েছে তোর উপর। সত্যিই সরি ভাইয়া। দেখ তুই যদি এখন আমায় ক্ষমা না করিস আমি কিন্তু বাসায় যাবো না। আর তাছাড়া তুই ছাড়া আমাকে আর কেউ হাসাতে পারে না। তাই তোকে আমার লাগবেই।
নীলার কথায় বেশ হাসি পায় আকাশের। মনে মনে বলে,
– তোর সাথে যদি আমি রাগ করেই থাকতাম তাহলে কি প্রতিদিন তোকে দেখতে যেতাম। তাছাড়া আমি তো জানি তুই এখনো অবুঝ। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ কিছুই বুঝিস না। তাই তোর সাথে করাটা আমার বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না৷।
আকাশ চুপ করে থাকায় নীলা আকাশের হাত ধরে বাচ্চাদের বায়না করার মতো লাফাতে লাফাতে বলল,
– আকাশ ভাইয়া প্লিজ, প্লিইইইইইইইইজ। আচ্ছা বলো না আমায় কি করতে হবে তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য?
আকাশ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– যা করতে বলব করবি তো?
নীলা মাথা ঝাকিয়ে বলল,
– হুম,
আকাশ নীলার দিকে গাল বাড়িয়ে দিয়ে, আঙুল দিয়ে ইশারা করে। নীলা বুঝতে পারে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? গালে কিছু নেই তো। গাল দেখাচ্ছিস কেন?
আকাশ নীলার দিকে তাকিয়ে নিজের কপাল বাড়ি দিয়ে বলে,
– তারে বলি কি? আর সে বুঝে কি?
– কি হলো? কি বললি?
– গাধী তোকে কিস করতে বলেছি। যদি আমায় কিস না করিস তাহলে ক্ষমা করবো না।
নীলা চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকালো। লজ্জায় নীলার চোখ ভরে গেল। আকাশ সে চোখে যেন নিজেকে হারাচ্ছে। কিন্তু তখনি বৃষ্টি নামলো। আকাশ নীলার হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিতে চাইলো কিন্তু নীলা গেল না। বৃষ্টিতে লাফাতে লাগলো। আকাশ আবার নীলার হাত ধরে টান দিলে, নীলা বাচ্চাদের মতো ফেস করে বৃষ্টিতে ভেজার বায়না করতে লাগলো। আকাশের খুব মায়া হলেও নীলার একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায় বলে ওকে কোনোমতো টেনেই গাড়িতে বসালো। গাড়ি স্টার্ট দিল আকাশ৷ কিছুক্ষন পর ঠান্ডায় কাপতে থাকে নীলা। আকাশ সেদিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামায়।
– আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। উফফ, তুই কি জানিস না তোর অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। এখন আন্টি যদি জানে আমার জন্য তার মেয়ের ঠান্ডা লেগেছে তাহলে আমার ১৩ টা বাজিয়ে দেবে
নীলা কাপতে কাপতে বলল,
– ধুর এভাবে বাজে না বলে, কিছু দে না গায়ের উপর দেয়ার জন্য?
– তুই কি এটা সিনেমা পেয়েছিস যে নায়িকার ঠান্ডা লাগবে আর নায়ক তার জ্যাকেট খুলে নায়িকা কে পড়িয়ে দেবে। তাকিয়ে দেখ আমার দিকে। টি শার্ট পড়ে আছি আমি, এই গরম তো আর কেউ জ্যাকেট পড়বে না।
– ধুর এতো কথা বলিস কেন? আমি কি জ্যাকেট পড়াতে বলেছি? তোর ওই টি শার্ট টা হলেও হবে।
আকাশ চোখ বড় বড় বলল,
– মানে টা কি? টি শার্ট দিয়ে দিলে আমি কি খালি গায়ে থাকবো নাকি?
– খালি গা হবি কেন? ভিতরে গেঞ্জি আছে নিশ্চয়ই।
– তাই বলে আমি শুধু গেঞ্জি পড়ে থাকবো নাকি?
নীলা আরো কেপে উঠার ভান করে গুটিশুটি মেরে বলল,
– উফফফ কি ঠান্ডা
এতেই কাজ হলো। আকাশ টি শার্ট খুলতে খুলতে বলল,
-থাক থাক বুঝেছি। আর ঢং করতে হবে না। এই নে। পড়ে নে এটা।
নীলা মুচকি হেসে টি শার্ট টা পড়ে নিল। আকাশ কে এভাবে দেখে অনেক লজ্জা লাগলো নীলার। তাই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগলো। আকাশ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
-বুঝি বুঝি সবই বুঝি, সব আমাকে খালি গায়ে দেখার ধান্দা
নীলা আকাশে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বলল,
– মাইর না খাইতে চাইলে গাড়ি চালা মনোযোগ দিয়ে।
.
.
.
.
.
চলবে…..
( আকাশকে যেহেতু সবারই একটু বেশিই ভালো লাগে তাই এই পর্বটা পুরোটাই আকাশকে নিয়েই দিলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন। আর আপনাদের কি মনে হয়? কে নীলাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসে? আকাশ, মেঘ, আয়ান নাকি অন্য কেউ)