নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_10
#adrin_anisha
.
নীলা ভয়ে ভয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছে আর নিজের মাথা নিজেই চাপড়াচ্ছে। আশেপাশে কোথাও আয়ানকে দেখতে পাচ্ছে না। তবুও ভয় করছে, আয়ান এর থ্রেট দেয়ার পরেও যে নীলা কিভাবে একা একা আসার সাহস করেছে সেটা নীলা নিজেও জানে না। সাদিয়া কে নিয়ে এলে অন্তত এই ভয় টা অনেক টাই কমে যেত।
কিন্তু দেখতে দেখতে স্কুলের সামনে এসে পড়লেও আয়ানকে কোথাও দেখতে পেল না নীলা। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচল। তাড়াতাড়ি ক্লাসের ভিতর ঢুকে গেল। আজ অনেক বেশিই তাড়াতাড়ি এসে পরেছে নীলা। এখনো তেমন কেউই ক্লাসে আসে নি। নীলা নিজের ব্যাগ রেখে বসতে বসতেই মুন্নি এলো ক্লাসে। মুন্নি কে দেখে নীলা একটা হাসি দিয়ে নিজের পাশে জায়গা করে দিল। মুন্নিকে আয়ান এর থ্রেট আর রাব্বির কথা বলতে যাবে তখনি ক্লাসে মেঘ এসে ঢুকলো।
কারোর দিকে কোনো খেয়াল না করেই নীলার দিকে ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করে মেঘ। মেঘের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে সবাই ভয়ে দূরে চলে গেল। মুন্নি দূরে না গেলেও কাছে যাওয়ার ও সাহস পাচ্ছে না। মেঘ নীলার দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো,
– আকাশ কে?
নীলাও ভয়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে যেতে বলল,
– কেন?
মেঘ রেগে গিয়ে চেচিয়ে উঠলো,
– আমি জানতে চাই আকাশ কে?
নীলাও এবার অনেক ভয় পেয়ে যায় কিন্তু তবুও নিজেকে সামলানোর জন্য মুচকি হেসে বলে,
– আকাশ ভাইয়া আমার বন্ধু হয়, এবং ভাই ও, তাতে তোমার কি?
– ভাই?
– হ্যা ভাই।
– তাহলে তুমি আকাশের সাথে প্রেম করো না?
নীলার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল। কিন্তু মেঘ এগিয়েই চলেছে। নীলার ভয় আরো বাড়ছে, আর হার্টবিট এতো জোড়ে হচ্ছে যে নীলার মনে হচ্ছে ক্লাসের সবাই ওর হার্টবিট শুনতে পারছে। তবুও নিলা নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
– না।
একদম নীলার মুখের উপর এসে থেমে যায় মেঘ। ওদের মাঝে বড়জোর ২-৩ ইঞ্চি ফাকা আছে। মেঘ আবারো জিজ্ঞেস করে,
– সত্যিই তোমার সাথে আকাশের কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক নেই?
নীলা ভাবলো আকাশই হয়তো মেঘকে বলেছে যে ওরা প্রেম করে। যাতে মেঘ আর নীলাকে ডিস্টার্ব না করে। তাই নীলাও এবার বলল,
-আমরা প্রেম করলেই বা তোমার কি।
নীলার কথা শুনে মেঘ জোড়ে নীলার মাথার কাছের দেয়ালে এক ঘুষি মারে। নীলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ খুলে দেখে মেঘ ওর মুখের কাছে ঝুকে আসছে, নীলা তারাতাড়ি পাশ কাটিয়ে বেঞ্চের উপর উঠে যায়। মেঘ এবার যা করলো তা দেখে পুরো ক্লাস থমকে গেল।
মেঘ নীলার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম নিজের বুক কেটে,
মেঘ নিজের শার্ট বুকের উপর থেকে কিছু সরিয়ে দেখায়, সেখানে নীলার নাম লেখা। নীলার চোখ ছানা-বড়া হয়ে গেল।
মেঘ আবারো বলল,
– এবং তোমার ভালোবাসা শেষ করব নিজের হাত কেটে।
কথাটা বলার সাথে সাথেই মেঘ নিজের হাতে থাকা ব্লেড দিয়ে নিজের হাতের পার্লসের একটু উপরে একের পর এক আঘাত করতে শুরু করল।
নীলা ভয়ে চেচিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ক্লাসের বাকি মেয়েরাও ভয়ে এক কোনায় চলে গেল। কিছুক্ষন পর চোখ খুলেও নীলা দেখলো তখনো মেঘ হাত কেটেই যাচ্ছে। নীলা জোরে চেচিয়ে উঠলো
– স্টপ
কিন্তু তবুও মেঘ কমপক্ষে ৩০-৪০ বার হাত কেটে তারপর ব্লেড টা পাশে ছুড়ে মেরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। ওর পেছন পেছন ওর বন্ধুরাও ছুটে গেল।
মেঘ যেতেই ক্লাসে সব মেয়েরা নীলার কাছে এলো। নীলা বেঞ্চের উপর ধপাস করে বসেই কাঁদতে শুরু করল। মুন্নি ওকে নানার ভাবে সান্ত্বনা দিতে থাকলো কিন্তু তবুও নীলার কান্না থামছেই না। সাদিয়া ক্লাসে আসতেই দেখে ক্লাসের পুরো থমথমে অবস্থা। নীলাকে কাঁদতে দেখেই তাড়াতাড়ি ওর কাছে যায় সাদিয়া। মুন্নি কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলে মুন্নি সব খুলে বলে।
– বাপ রে, আমি তো শুনেই ভয়ে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। তোরা কিভাবে দেখলি এসব।
.
কিছুক্ষন পর, মেঘ নিজের হাতে ব্যান্ডেজ করে ক্লাসে ঢুকলো। নীলা মেঘকে দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকালেও মেঘ সোজা ক্লাসের এক কোণায় গিয়ে বসে পড়ে যেখান থেকে নীলা মেঘকে দেখতে পাচ্ছে না।
মন খারাপ করেই ক্লাস করতে থাকে নীলা।
.
স্কুল ছুটি হলে আজকে স্কুলের সামনে থেকেই রিকশায় উঠে পরে নীলা আর সাদিয়া। আজকে এতো কিছুর পর নীলার আর শক্তি নেই আয়ান বা রাব্বি কাউকে সহ্য করার।
আয়ান যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা সেখান থেকে যেতেই পেছন থেকে কেউ জোরে নীলা বলে চেচিয়ে উঠলো। নীলা পেছনে তাকিয়ে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। নীলা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।
.
.
বাসায় এসেই ফ্রেস হতে চলে যায় নীলা। শাওয়ার অন করে নীলা শাওয়ারের নিচে বসে পড়ল। আর মেঘ, আয়ান, রাব্বি সবার কথা ভেবে কাদতে শুরু করে।
এভাবে অনেক্ষন থাকায় নীলার শরীর কাপতে শুরু করলো ঠান্ডায়। কিন্তু তবুও নীলা উঠলো না।
কিছুক্ষন পর বাইরে থেকে আকাশের গলা শুনতে পায় নীলা। নীলার মেঘের বলা কথাগুলো মনে হতেই রেগে উঠে যায় নীলা। ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসতেই আকাশ ওকে বকতে শুরু করে,
– এই মেয়ে, এতোক্ষন কি করছিলি শুনি? আন্টি বলল তুই নাকি সেই ১ ঘন্টা ধরেই ওয়াশরুমে বসে আছিস। কাহিনি কি? ঠান্ডা লাগলে পরে কি হবে শুনি?
আকাশ নীলার কাছে গিয়ে ওর হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে নীলার চুল মুছে দিতে লাগল। নীলার রাগ আরো বাড়তে লাগলো, কোথায় ভেবেছিল ও আকাশ কে বকা দেবে আর সেখানে আকাশ ওকে বকা দিচ্ছে।
নীলার চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ আকাশ লক্ষ্য করল নীলাকে অপরূপ লাগছে দেখতে। গোসলের পর মেয়েদের আরো সুন্দরী লাগে এটা এতোদিন বইয়ের পাতায়ই পড়েছে আকাশ, আজ নিজের চোখে দেখছে। নীলার গালে কপালে পানির ফোটা লেগে আছে। আকাশের সেদিকে নজর যেতেই সে যেন ঘোরে চলে গেল। ধীরে ধীরে নীলার গালের কাছে ঝুকতে লাগলেই নীলা এক ধাক্কায় আকাশকে দূরে ঠেলে দেয়৷ কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করল,
– তুই মেঘ কে কি বলেছিস?
– কি বলেছি?
– তুই মেঘ কে বলেছিস তুই আমার বয়ফ্রেন্ড?
আকাশ মুচকি হেসে নীলার গাল টেনে বলল,
– রাগ করলে যে তোকে আরো সুন্দর লাগে এটা জানিস তুই?
নীলা আকাশের হাত সরিয়ে চেচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আমি যেটা জানতে চাইছি সেটা বল।
– না বলি নি আমি।
নীলা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
– বাহ, এখন তাহলে তুই আমাকে মিথ্যে কথাও বলছিস? তুই জানিস না আমি মিথ্যে কথা আর মিথ্যেবাদী দুজনকেই ঘৃণা করি।
আকাশ এবার মুখ শক্ত করে বলল,
– হ্যাঁ বলেছি তাতে কি হয়েছে? এই কথা শুনে ও আর তোকে ডিস্টার্ব করবে না। তুই আমাকে ঝামেলা করতে বারণ করেছিলি। আমি তো কোনো ঝামেলা করিনি।
– ঝামেলা করিস নি? আসলে সব দোষ আমারই। আমারই উচিত হয়নি তোকে বিশ্বাস করা। তোকে বলাই আমার ভুল হয়েছে।
আকাশ অবাক হয়ে বলল,
– নীলা, কি বলছিস তুই? ওই মেঘের জন্য তুই আমাকে ভুল বুঝছিস?
– ভুল না ঠিক সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ তো আমার মেঘকে দেয়া উচিত ও না থাকলে তো আমি জানতাম ই না তুই কত বড় মিথ্যাবাদী
– নীলা, মাথা ঠিক আছে তোর? কি হয়েছে আমাকে বল তো।
নীলা আকাশ কে সব বলে কাদতে শুরু করল। আকাশ নীলাকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলল,
– দেখ নীলা। ও যা করেছে তাতে এটাই প্রমান হয় যে ও একটা পাগল। আর তুই ওর জন্য কাদছিস কেন? তুই তো ওকে বলিস নি এসব করতে।
নীলা উঠে ধাক্কা দিয়ে আকাশ কে ঘর থেকে বের করে দিল।
– হ্যাঁ ঠিক। ওর ক্ষতির জন্য আমি দায়ী, কারণ আমি তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। আর কখনো বিশ্বাস করতে চাই না তোকে। I hate you.
কথা গুলো বলেই আকাশের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল নীলা।
.
.
.
.
চলবে….