নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_1

0
2770

রাস্তার উপর নীলার রক্তাক্ত দেহ টা পড়ে আছে৷ চারপাশে এতো মানুষ, কিন্তু কারো এগিয়ে আসার সাহস নেই। দূর থেকেই যতটা সম্ভব জুম করে ছবি বা ভিডিও করার চেষ্টা করছে। মিটিমিটি চোখ দিয়ে সেসব তামাশা দেখছে নীলা। প্রচন্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। দূর থেকে তার বন্ধুদের দেখতে পেল, আর কিছু দেখতে পারল না তার আগেই পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এলো৷
কিছুক্ষন আগেই অনেক গুলো লাথি আর ছুরির আঘাত সহ্য করতে হয়েছে তাকে। যে শরীরে কখনো ভালো করে একটা থাপ্পড় ও লাগেনি সে শরীরে এতো গুলো জখম সহ্য হবে কি করে.?
.
.
২ মাস আগে…..
জে.এস.সি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছে নীলা। আজ তার বৃত্তির রেজাল্ট আসবে কিছুক্ষন পর। তাই সকাল থেকেই সবাই এসে ভীর জমিয়েছে নীলার বাড়িতে৷ বিরাট বড় দোতলা বাড়ি নীলাদের৷ নীলার বাবা মোঃ কবির আহমেদের নিজের বিজনেস আছে। গারমেন্টস ফেক্টরির মালিক তিনি। তবে তিনি একা নন, তার সাথে ফিফটি ফিফটির পার্টনার আছেন তার ছোট বেলার বন্ধু রাকিব আহমেদ৷ কথায় বলে টাকা নাকি আপন ভাইয়েদের ও শত্রু বানিয়ে দেয়, কিন্তু তাদের মধ্যে আজ পর্যন্ত কোনো বিবাদ দেখা দেয়নি। কিছুক্ষন পড়েই বৃত্তির রেজাল্ট হাতে নিয়ে মুখ গোমরা করে ঘরে ঢুকলো রাকিব সাহেবের একমাত্র ছেলে আকাশ।
আকাশের মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায় নীলা। নীলার মা নীলাশা বেগম এগিয়ে গেলেন নীলের দিকে,
– কি রে? কি এসেছে রেজাল্টে, নীলা পায়নি বৃত্তি?
– হুম, পেয়েছে তো।
মুখ গোমড়া করেই নিচের দিকে তাকিয়ে বলল আকাশ

– “তাহলে মনে হয় সাধারনে পেয়েছে টেলেন্ট ফুলে পায়নি তাই তোর মন খারাপ তাই না? ”
চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন তিনি
– “নাহ টেলেন্টফুলেই পেয়েছে ”
এখনো মুখ গোমড়া করেই বলছে আকাশ
এবার আকাশের উত্তরে থমকে গেল সবাই। যদি টেলেন্ট ফুলে বৃত্তি পেয়েই থাকে তাহলে আকাশের মুখটা অমন কেন। দূর থেকে সোফায় বসে আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নীলা। কিছুই বুঝতে পারছে না সে। এবার রাকিব সাহেব গিয়ে আকাশের কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি রে কি হয়েছে তোর মন খারাপ কেন?
এবার আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল,
– ” কি করব বলো তো। নীলা এতো ভালো রেজাল্ট করেছে অথচ ওর জন্য যে ওর প্রিয় রসমালাই নিয়ে আসব তার কোনো উপায় নেই। আশেপাশের একটা দোকানেও রসমালাই নেই। তাই, শুধু দই আর স্পঞ্জ মিষ্টি নিয়েই আসতে হলো। ”
আকাশের কথায় সবাই হো হো করে হেসে দিল। আকাশের মা ফারজানা এসে ছেলের মাথায় একটা আস্তে করে চড় দিয়ে বললেন,
– এই সামান্য বিষয়ের জন্য এতো ড্রামা করিতে হয়। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি সবাইকে৷
এরপর নীলার দিকে তাকিয়ে বললেন
– কিরে তুই ওখানে দাড়িয়ে কি করছিস? এখানে আয় মা তোকে একটু আদর করে দেই এতো ভালো রেজাল্ট করেছিস।
নীলা মুখ গোমড়া করে বলল
– লাগবে না আমার আদর, তোমার ছেলেকেই করো। আজ আমার দিন ছিল, আমি ভালো রেজাল্ট করেছি, অথচ কি সুন্দর আজকেও সব এট্যানশন ও ই নিয়ে নিলো। আড়ি তোমাদের সাথে।
নীলা কথাগুলো বলে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো, আবার পিছু ফিরে একটা দৌড় দিয়ে দইয়ের বক্স টা নিয়ে চলে গেল।
কিছুক্ষন পার হয়ে গেলেও কেউ নীলাকে দেখতে আসে নি বা ওর রাগ ভাঙাতে আসেনি। তাই দেখে নীলার আরো রাগ হলো। মনে মনে ঠিক করল আর কথাই বলবে না কারো সাথে।
তখনি একে একে সবাই এসে নীলার ঘরে ঢুকলো। সবার হাতে একটা করে গিফট বক্স। সবার আগে আকাশের মা এসে বক্স টা নীলার হাতে দিয়ে ওকে কনগ্রেটস বলল। এরপর আকাশের বাবা, তারপর নীলার বাবা, তারপর নীলার মা। আর সবার শেষে আকাশ।
আকাশ এসে নীলার হাতে বক্স টা দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিল। নীলা সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলল,
– আন্টি এই দেখো তোমার ছেলে চোখ টিপ মারে।
নীলার কথায় আকাশের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কোনোমতে নিজেকে সামলে বলল,
– পাগল হয়েছিস, চোখ কি যেন পড়ল তাই চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। তোকে চোখ মারতে আমার বয়েই গেল।
কথাটা বলেই সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল আকাশ৷ আর বাকিরা সবাই মুচকি হাসতে লাগল।
নীলার মা নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– দোয়া করি এভাবেই আমাদের মুখ উজ্জ্বল কর সবসময়। এবার একটু বড় হো মা। পাগলি আমার।
নীলার গালের পাশ থেকে হাত নিয়ে তাতে একটা চুমু খেলেন তিনি। তারপর সবাই চলে গেল নীলার রুম থেকে। নীলা একে একে সবার গিফট খুলে দেখতে লাগল।
সবার আগে ওর বাবার টা খুললো। বাবা ওকে একটা ল্যাপটপ গিফট করেছে। খুশিতে লাফিয়ে উঠলো নীলা। কিছুদিন আগেই বাবাকে ল্যাপটপ এর কথা বলেছিল নীলা। এবার আকাশের বাবার টা খুলে দেখলো ওখানে একটা আইফোন রাখা। নীলার যেন খুশির শেষ নেই। এবার তাড়াতাড়ি বাকি গুলো খুলতে লাগল, না জানি আর কি কি রাখা আছে ওর জন্য। নীলার মা ওকে একটা ঘড়ি দিয়েছে। আর আকাশের মা দিয়েছে সোনার একটা চেইন। আকাশের মায়ের উপহারটা তেমন পছন্দ হয়নি নীলার। এসব স্বর্ন ওর ভালো লাগে না।
এবার আকাশের গিফট বক্স টা খোলার পালা। আকাশ কে নিয়ে কোনো আশা নেই নীলার। হয়তো দেখা যাবে ভিতরে একটা খালি বক্স রাখা। কিন্তু না, আকাশের গিফট দেখে অবাক হলো নীলা। আকাশ ওকে একটা স্কেচ গিফট করেছে। নীলার স্কেচ। হুবুহু নীলার মতোই দেখতে। নীলার মনে পড়ে অনেক আগে একদিন ইউটিউব এ একটা স্কেচ আকার ভিডিও দেখে নীলা খুশিতে বলেছিল “ইসস, আমার ছবিও যদি কেও এভাবে একে দিত!” চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন পর।আবার লাফিয়ে উঠে বলে ” ডিসিশন ফাইনাল আমি একটা স্কেচ আরটিস্ট কেই বিয়ে করব”
.
– আকাশ তাহলে ভোলেনি সেই কথা। কিন্তু কথা হলো স্কেচ টা আকলো কে? আকাশ একেছে বলে তো মনেই হয়না। কারন ও এতো ভালো স্কেচ কিছুতেই আকতে পারার কথা না। নিশ্চই অন্য কাউকে দিয়ে আঁকিয়েছে। যাই হোক এটাই ছিল আজকের বেস্ট গিফট।
কথাগুলো বলেই স্কেচটা তে একটা চুমু খেল নীলা।
.
.
নীলার বাড়ির ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।
হাতে ফোন, আর ফোনে নীলার ছবি। যে ছবিটার স্কেচ বানিয়েছে।
– কবে বড় হবি রে তুই? তোর জন্য আর কি কি করতে হবে শুনি? তুই বললি তুই একজন সিঙ্গারকেই বিয়ে করবি, তাই সিঙ্গিং টা শিখলাম। এরপর আবার বলিস তুই স্কেচ আর্টিস্টকে বিয়ে করবি। তাই কতো কষ্ট করে স্কেচ আঁকা শিখলাম। আর তুই কিনা চোখ টিপলেই বিচার দিস? উফফ আর যে কতো ওয়েইট করতে হবে তোর জন্য কে জানে?
.
.
চলবে…..

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_1
#adrin_anisha

( গল্পটা আশা করি ভালোই ভালোই লাগবে। একতরফা ভালোবাসার চরম পরিণতি নিয়ে লিখতে চাইছি। আপনাদের মতামত চাইছি)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে