#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৮
“এখন ওখানে নেই। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় থাকে শুধু।” নম্র ভাষা।
অপূর্ব ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তুরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে ইশারায় যাওয়ার ইঙ্গিত করে। তুর নিঃশব্দে প্রস্থান করে।
“তবে আমার একটা শর্ত আছে। তুই যদি আমার একটা শর্ত মানিস তবে আমি কালাচাঁনকে আচ্ছা করে পি/টা/বো।” শর্তের প্রসঙ্গ তুলে আরুর মুখমণ্ডলের ভঙ্গিমা দেখল অপূর্ব। শর্তের কথা শুনে জড়সড়ো হয়ে আছে আরু। কিছুক্ষণ প্যাঁচা মুখ করে থেকে বলে, “ঠিক আছে, তবে শর্তটা কী?”
জয়ের হাসি ফুটে উঠল অপূর্ব-র ঠোঁটের কোণে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, “আমার প্রথম শর্ত, তুই কখনো কোনো পুরুষের কাছাকাছি যাবি না। অন্তত চার ফুট দূরত্ব বজায় রাখবি।”
বলা বাহুল্য আরুর দূরত্ব বজায় রাখতে মিলি সেকেন্ডই যথেষ্ট। চার বেশিও বজায় রাখল। অপূর্ব বিরাগী হয়ে হাত টেনে দূরত্ব ঘোচাল। অতঃপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “আমি আমার সাথে দূরত্ব দেখাতে বলিনি। আমি ব্যতিত অন্যরা। বিশেষ করে মিহির।”
“আপনার সবাই তো আমার ভাই। আমি দুচোখামী করতে পারব না।”
“তাহলে এক চোখামী করবি। মামা বাড়ির সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে না, শুধু দাদা বাড়ির সাথে রাখলেই যথেষ্ট। আমার দ্বিতীয় শর্ত, আমাকে জড়িয়ে ধরে একশো একটা চুমু খেতে হবে।”
আরু নাক কুঁচকালো। চোখে তার অপ্রত্যাশিত চাওনি। জ্ঞান হারিয়ে ফেলল এই বুঝি। সম্পর্কে ভাই না হলে অপূর্ব-কে সে চাচা হিসেবে সম্বোধন করতো। জড়িয়ে ধরা অবধি ঠিক ছিল, তাই বলে দুদিনের চেনা ছেলেকে চুমু? তাও একশো একটা। আরু ইতস্তত করে বলে, “এই শর্ত না মেনে অন্য শর্ত মানলে হবে?”
“তাহলে কালাচাঁন আর ওর সাঙ্গপাঙ্গদের না মে/রে অন্য কাউকে মা/র/লে হবে?”
আরুর মুখশ্রী আঁধারে ঢেকে গেল। অপূর্ব-র রাগ জাগল। তবুও বলে, “তোকে বিশ্বাস নেই, কাজ করার পর যদি বেঁকে বসিস। তাই আগে কিছু অগ্ৰিম দিতে হবে।”
আরুর ওড়নায় গিট দেওয়া অংশ খুলে টাকা বের করল। ত্রিশ টাকা আছে। টাকাগুলো এগিয়ে দিয়ে বলে, “আমার কাছে ত্রিশ টাকাই আছে বিশ্বাস করুন। ওরা পাঁচজন। পাঁচ টাকা করে নিয়ে বাকি পাঁচ টাকা ফিরত দিন।” অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল অপলক। আরু পুনরায় বলে, “ফিরত দিতে হবেনা। প্রয়োজনে আপনি আমার সব টাকা নিয়ে যান। টাকার বিনিময়ে মা/রু/ন। তবুও..”
“অন্য কাউকে দেখ, আমার যা লাগবে আমি বলে দিয়েছি।” বলেই অপূর্ব অগ্রসর হলো। আরুর দীর্ঘক্ষণ ভেবে অপূর্ব হাত ধরে বলে, “এমন করছেন কেন?”
অপূর্ব ফিচেল হেসে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেল। আরুও নামল পিছুপিছু।বাড়ির সব মহিলারা ও ছোটরা তৈরি হয়ে নেমেছে তখন। আরুকে দেখে একদফা চমকে উঠল সকলে। জাহানারা আরুকে কাঁদতে দেখে বলে, “কি-রে আরু, কাঁদছিস কেন মা?”
অপূর্ব আগ বাড়িয়ে জবাব দেয়, “আমার বউ না-কি সে পছন্দ করে আনবে। আমাদের সাথে যেতে চাইছে, তাই কাঁদছে।”
“এজন্য কাঁদা লাগে। পাগল মেয়ে, আয় তৈরি করে দেই।” জাহানারা আরুকে টেনে গেল কক্ষে।
নীল রঙে চওড়া সাদা পাড় বিশিষ্ট শাড়ি আরুর জন্য আলমারি থেকে নামিয়েছে জাহানারা। আরু সেটা গ্ৰামে মতো করে পরিধান করে নিল অঙ্গে। দীর্ঘ চুলগুলো দুপাশে বেনুনি করে নীল রঙের ফিতা দিয়ে বাঁধল। খয়েরি গাঁদা ফুল গুঁজে দিল ফাঁকে-ফাঁকে। চোখে চওড়া কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ও হালকা পাউডার মুখে, কপালে বিন্দুর মতো টিপ। আরুর জন্য অপেক্ষারত ছিল সবাই। আরু এই সাদামাটা রূপে নেত্রপল্লব স্থির রইল সকলের। অনিতা এগিয়ে এসে আরুর চোখ থেকে কাজল কনিষ্ঠ আঙুল নিয়ে লেপ্টে দিলেন কানের পশ্চাৎ-এ। ‘রূপবতী, গুনবতী মেয়ের সন্ধানে যাচ্ছি অথচ সেই মেয়ে আমার ঘরে’ বলেই অনিতার হাত নিশ্চল হয়ে গেল।
অনিতা তাড়া দিয়ে বললেন, “চল, চল বেরিয়ে পড় সকলে। আমি দরজায় তালা ঝুলিয়ে প্রহরীদের বলে আসছি।”
অনিতা কক্ষে প্রবেশ করতেই এক এক করে বাইরে বেরিয়ে গেল সকলে। নূপুরের শব্দ তুলে অগ্ৰসর হয়ে অপূর্ব-কে অতিক্রম করার সময় আশাতীত কাজ করে ফেলল অপূর্ব। অশান্ত কণ্ঠে বলে, “আরু, এটা পরিপাটি সাজ নয়। আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। এই সাজ একদমই বেমানান। শাড়ির সাথে ব্লাউজ বা থ্রী পিস পরে নে।”
“আমার কাছে শাড়িই স্বস্তিদায়ক। তাছাড়া ব্লাউজ এই বাড়িতে নেই।”
“তুর বা শেফালী কারো তো নিশ্চয়ই আছে, এনে দেই।”
“না, আমি এতেই ঠিক আছে।” হাত ছাড়িয়ে পুনরায় অগ্রসর হলো আরু। অপূর্ব বাঁধা দিল না, দমিয়ে রাখল শুধু। নখ দিয়ে আঁচড় কেটে ফেলল আরুর ব্লাউজ বিহীন নগ্ন পিঠে। অচল হলো আরু, বিলম্ব হলো রক্ত ঝরতে। পিঠে হাত দিয়ে দেখল, রক্ত। ফিচেল হেসে অপূর্ব যেতে যেতে বলে, “বড়দের কথা না শুনলে এমন হবেই। বেশি করে হবে। তুরকে পাঠাচ্ছি। আমার আদেশ মেনেই আসবি। নতুবা..
আষাঢ়ে ভেসে আসা পদ্ম তুমি। নীলপদ্ম। উন্মুক্ত করার অধিকার শুধুই আমার।
পারুল ও অয়ন এসেছে। তাঁরাও আজ যাবে অপূর্ব-র মেয়ে দেখতে। আহসান বাড়িতে পা রেখে আরুকে দেখা মাত্র তাঁর মস্তিস্ক অগ্নিতে প্রজ্বলিত হলো। সেই অনলে ঘি ঢেলে পারুলের আঁচল টেনে বলে অয়ন, “দেখো মা, বুবু কাজের ভয়ে এখানে এসেছে। বুবু দিনদিন অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দিলে জামাই এক দরজা দিয়ে নেবে অন্য দরজা দিয়ে ফেরত দিয়ে যাবে।”
পারুল ক্রোধে ফুঁস করে উঠে। আরুর গাঁথা দুই বেনুনি ধরে টেনে পরপর তিন খানা চড় বসালো। আরুর শুভ্র ও উজ্জ্বল গাল অবিলম্বে রক্ত জমে রক্তিম হয়ে উঠল। তাতেও ক্ষান্ত হলো না পারুল, বরং বেনুনি টেনে লাঠি খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠল চারপাশে। ছোটো একটা মগডাল হাতের নাগালে পেতেই, সেটা দিয়ে কয়েক ঘা লাগালো। আরু ব্যথায় কুঁকড়ে উঠার পাশাপাশি প্রস্থান করার চেষ্টা করল, কিন্তু বেনুনির কারণে সম্ভব হলো না। বাজখাঁই গলায় বলেন, “সারাদিন এপাড়া-ওপাড়া করিস। বাড়ির কাজ কে করবে? কে ছাগল গোয়ালে ঢুকাবে? তোর ময়নাকে কে খাওয়াবে? হাঁস মুরগি কে খোপরে ঢুকাবে? গৃহস্থালির কাজ কে করবে?”
মা-কে খুঁজতে অপূর্ব এলো। আরুকে এভাবে আ/ঘা/ত করতে দেখে ছুটে এলো। ফুফুর হাত থেকে বেনুনি ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর চ্যাঁচিয়ে বলে, “হয়েছে কী এখানে? ওকে মা/রছ কেন?”
আরু মাটিতে নুয়ে হাউমাউ করছে। অশ্রু চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। বেনুনিতে গাঁথা গাঁদা ফুলের পাপড়ি মাটিতে ছড়ানো ছিটানো।
লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতে আসতে বলে, “ওর এপাড়া ওপাড়া বেড়ানো বন্ধ করছি। মেয়ে মানুষ স্কুল থেকে বাড়িতে যাবে, খাবে কাজ করবে আর ঘুমাবে। কেন টইটই করবে?”
অপূর্ব লাঠি আয়ত্ত করে চূর্ণ করে ফেলল। চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনে সবাই এলো। চম্পা মেয়ের গালে কষে চড় বসালেন এবং বললেন, “আরু আর তোর বাড়িতে যাবে না। ইমদাদুল আসলে এখানে পাঠিয়ে দিবি। ও যদি মেয়ের যত্ন নিতে পারে, তবেই আরু-কে ঐ বাড়িতে পাঠাবো। আরু ঘরে যা।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]