#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৮
করই গাছের মগডালে আরুকে হাঁটতে দেখা গেল। অথচ একজন মানুষ সেই ডালে পা রাখা মানেই ভেঙে পড়া ডালটা। অপূর্ব সহ বাকিরা আরুকে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কীভাবে ফিরিয়ে আনবে তাকে? তথাপি অপূর্ব প্রয়াস করল, “আরু, এদিকে তাকা। শুনছিস?”
আরু ব্যস্ত কোনো অদৃশ্য ব্যক্তির সাথে কথোপকথনে, তাই শুনল না অপূর্ব ডাক। দিশেহারা হয়ে অপূর্ব গাছে উঠার জন্য পা এগোতেই মোতাহার আহসান বলেন, “উপরে বৈদ্যুতিক তার দেখছ-না? আরু কোনো মানুষের সংস্পর্শে গেলে তার শরীরে ওজন চলে আসবে। তখন ঐ মগডাল ভেঙে নিচে পড়বে এবং তারের সাথে বাঁধবে।”
মাথায় হাত রেখে আরুর ফেরার অপেক্ষায় রাস্তার কিনারায় বসে রইল অপূর্ব। দীর্ঘক্ষণ সেই ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে গাছের উঠার প্রস্তুতি নিল। করই গাছের মগডালে মেহগনি গাছের ডালপালা এসে ভিড় করেছে। মেহগনি গাছের ডালপাতা যথেষ্ট শক্তপোক্ত। তাছাড়া বিদ্যুতিক তার আরুর সামনে অপূর্ব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখলে শখ খাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ প্রবাহ অবরোধ করার মতো সময় অপূর্ব নেই।
সকলের বাধা উপেক্ষা করে অপূর্ব ধাপে ধাপে উঠে আরুর কাছাকাছি গেল। চোখ তুলে আরুর দিকে এক নজর তাকাতেই তার দেহটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল। মুখশ্রীর সেই প্রাণোচ্ছল ভাবটা নেই, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে হয়তো জট পাকিয়ে গেছে, শাড়িটা নোংরা হয়ে আছে। তবুও অপূর্ব-র প্রাণ জুড়িয়ে গেল। মগডালে এক হাঁটু তুলে কথা বলছিল আরু। অপূর্ব সন্তর্পনে তার বামহাতটা গলিয়ে দিল আরুর ফর্সা উদরে। দৃঢ় করে জড়িয়ে ধরতেই আরুর ওষ্ঠদ্বয়ে অবরোধ ঘটল। পল্লব বন্ধ হয়ে হেলে পড়তেই অপূর্ব আরুকে আগলে নিল হৃদমাঝারে। চকিতে ডালটা ভেঙে নিচে পড়ল। আরুর সম্পূর্ণ ভর তখন বহন করছে অপূর্ব। ডালটা চেপে ধীরে ধীরে কয়েকটা ফেলতেই অপূর্ব হেলে পড়ল। ঝুলন্ত দুইজন মানুষ রইল গাছের ডালে। মোতাহার আহসান অধৈর্য হয়ে উঠলেন। অবশ্য ঐদিকটায় বৈদ্যুতিক তার নেই। তিনি প্রহরীদের আদেশ করলেন, “তোরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কী করছিস, ওদের নামানোর ব্যবস্থা কর।”
প্রহরী দড়ি নিয়ে গাছে উঠল। অপূর্ব-র অবস্থানের ঠিক আগে দড়িটা বেঁধে শক্তপোক্ত গিট দিয়ে নেমে গেল। অপূর্ব হাত ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম তবুও আরুর জন্য সে সর্বোচ্চ যাতনা সহ্য করতে প্রস্তুত। আরু তার কাঁধে মুখ গুঁজে রয়েছে। দড়িটা ধরে ধীরে ধীরে নামল অপূর্ব। আরুকে মাটিতে শুইয়ে রেখে পাশে শুয়ে পড়ল সে। ঘনঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে কাত হয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে রইল। কাঁপা কাঁপা হাতে আরুর মুখমণ্ডল স্পর্শ করে অনুভূতি পূর্ণ হয় অপূর্ব। তার চোখের পানিটা টুপ করে আরুর চোখের তারায় পড়ে। দুহাত চোয়ালে রেখে গভীরভাবে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিল আরুর ললাটে। অতঃপর আরুর মাথাটা জড়িয়ে নিল বুকে। উপস্থিত সবাই ব্রীড়ানত হয়, অপূর্ব চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে আর চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকলে কানাঘুষো শোনা যেত। এক্ষেত্রে শোনা গেল না।
মোতাহার আহসান ভ্যানগাড়ি ভাড়া করলেন। বাড়ির প্রতিটি সদস্য ভ্যানে চেপে বসতেই ভ্যান চলতে শুরু করল। অপূর্ব কোলে চেতনাহীন আরুকে নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। তার প্রাণ যে জুড়িয়ে গেল।
পদ্মাপাড়ের পদ্মাবতী কী সুন্দর মুখখান, তোমার কী সুন্দর মুখখান।
দেখলে তোমায় জুড়াইয়া যায় আমার মনোপ্রাণ।
__
পল্লব যুগল মেলে উপরের দিকে চেয়ে রইল অপলক। গলা ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত। ক্ষতবিক্ষত পায়ের করতল। রিক্ত পায়ে হেঁটে গেছে বহুদূর। শরীরও যেন চলছে না। ধূপের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঘরের অন্তরভাগ। মেয়েকে হাত দিয়ে ধরে অনুভব করছেন পারুল।
মেয়েকে দেখে উত্তেজিত হয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলেছিলেন পারুল। সামলাতেও প্রয়োজন হয়েছিল মানুষ। আরুর চেতনা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে কবিরাজ। গোলাপজল পড়ে দিয়ে গেছেন গোসলের জন্য। স্বজ্ঞানে ফিরলে তাকে গোসল করানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে সবকিছুর তোরজোর করে ফেলেছেন অনিতা। উষ্ণ পানিতে হিম পানি ও গোলাপজলের মিশ্রণ করে রেখেছেন। পারুলকেকে তাড়া দিলেন, “আপা সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, মেয়েটাকে নিয়ে এসো।”
চরম আদুরে গলায় মেয়েকে উঠানোর প্রয়াস করতে করতে বলেন, “আয় মা, গোসল করে আবার শুয়ে থাকবি।”
লোকসমাগম আরু-কে দেখতে। জাগ্রত হওয়ার পর অবশ্য কানাঘুষো শুনে সবটা অনুমান করতে পেরেছে আরু, তবে সবটাই তার কাছে কল্পনা কিংবা জাল্পনা। নিশ্চল শরীর নিয়ে উঠার বিন্দুমাত্র বল নেই দেহে। অব্যক্ত স্বরে বলে, “থাক না।”
কণ্ঠনালীতে এসে দলা পাকিয়ে রইল বুলি। অনুভব করল সে কথা বলতে পারছে না। অপূর্ব আরুর অব্যক্ত ভাষার রিপিট করে, “ও গোসল করতে চাইছে না।”
“না মা, এমন বলেনা। আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি। একটু কষ্ট কর।” বলতে বলতে পারুল আরুকে শোয়া থেকে বসালেন। সেদিন কাঁকড়ার আঘাতে হাতের জখম শুকিয়ে এসেছে। পা মাটিতে রেখে মৃদু ভর প্রয়োগ করতেই টনক নড়ে উঠে ব্যথায়। পা সরিয়ে করুন চোখে চেয়ে থাকে মায়ের দিকে।
অপূর্ব সহ্য করতে পারল না। পায়ের পাতাটা গভীর দৃষ্টিতে পরখ করে নিল। রক্তও জমাট বেঁধে শুকিয়ে আছে, অথচ এই ক্ষত পা নিয়ে কিছুক্ষণ পূর্বে দিব্যি গাছের ডালে হাঁটছিল। ফুফুর দিকে তাকিয়ে বিনীত অনুরোধ জানায়, “আমি ওকে কোলে নিয়ে কলতলায় যাবো ফুফু?”
“তাহলে তো ভালোই হয় বাবা।” পারুলের প্রত্যুত্তর পেয়ে দ্বি মুহুর্ত ব্যয় না করে ঝুঁকে পাঁজাকোলা করে নিল আরুকে। আরু তার তেজহীন হাতটা অপূর্ব-র কাঁধে রাখে না, শুধু চেয়ে থাকে অপলক। অপূর্ব অতি সন্তর্পণে পা ফেলে এগোয়।
কলতলা আরুদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। তিন ভাইয়ের মাঝামাঝি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মোতাহার আহসান কলের ব্যবস্থা করে দিলেও নারাজ জানিয়েছিল ইমদাদ। সে নিজের মতো বাঁচতে চায়। এতে মোতাহার আহসান বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিল।
কলতলার ভেতরে ছোটো একটা টুল পেতে রেখেছেন অনিতা। অপূর্ব আরুকে সেই টুলে রেখে মায়ের দিকে তাকায় এক পলক। প্রসন্ন গলায় বলে, “আমি বাইরে আছি মা। গোসল শেষ হলে আমাকে ডেকো, ওকে নিয়ে যাবো। অন্য কোনো প্রয়োজন হলেও ডেকো আর হালকা পোশাক পরিও।”
অতঃপর অপূর্ব বেরিয়ে যায়। পারুল ভেতরে প্রবেশ করে দরজার খিল টেনে ব্যস্ত হলো তার কাছে। কবিরাজের বলা কথা অনুসরণ করে আরু-কে গোসল করাতে লাগল। ঘণ্টা খানেক বোধহয় লাগল সময়। দরজা ফাঁক করে অনিতা অপূর্ব-কে উদ্দেশ্য করে বলে, “আছিস অপু?”
“হম। আসব?”
“আয়।”
অপূর্ব ভেতরে পা রাখল। আরুকে যেভাবে বসিয়ে রেখেছিল ঠিক সেভাবে বসে আছে। চুলে বড়ো একটা গামছা জড়ানো, পরনে একটা ফ্রক। গায়ের উজ্জ্বল রঙটা জ্বলজ্বল করে উঠেছে আরুর। গাল দুটো অসম্ভব লাল। ময়লা আবরণ থেকে বেরিয়ে এসেছে যেন। অপূর্ব ধ্যান ভাঙতেই আরুকে পুনরায় পাঁজাকোলা করে নিল। গোসলের পর মেয়েটার ওজন সত্তর ভাগ কমে গেছে। আরু এবার হাত রাখল কাঁধে। ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে অপূর্ব। হৃৎপিণ্ড অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মাছ যেমন পানির সংস্পর্শে এসে সতেজ হয়ে উঠে তেমনি অপূর্ব-র পদ্মাফুল পানির সংস্পর্শে এসে খোলস ছেড়ে নিজের আসল রূপে ফিরে এসেছে। অপূর্ব ফিরে চাইল না আরুর পানে। বিন্দু বিন্দু পানি তাকে প্রণয়ের আভাস দিচ্ছে যে। নিজের পথে অগ্রসর হয় অপূর্ব। নুপূরের ঝুনঝুন শব্দটা অপূর্ব বেশ আগ্রহ নিয়ে শ্রবণ করছে।
অনিতা আরুর ফেলে রাখা পোশাকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “এগুলো কী করবি পারুল?”
“কবিরাজ সাহেব তো বলল পশ্চিম দিকে পুঁতে রেখে আসতে। আমার বেশ ভয় করছে ওদিকে যেতে। তুমি আমার সাথে যাবে ভাবী?”
“চল।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ] 💚
#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৯
অনিতাকে সঙ্গে নিয়ে পারুল ছুটেছিল কবিরাজের কাছে। কিছু তাবিজ দিয়েছেন, তা নিয়ে এসেছে। বাড়ির কাজের কথা ভেবে অনিতা ফিরেছে বাড়িতে। ঘরের খিল বাইরে থেকে তুলে উঠানে পায়চারি করছে অপূর্ব। আরু ঘুমাচ্ছে বিধায় সম্পূর্ণ বাড়িতে সে একা। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকায় পায়ে ব্যথা করছে। এছাড়া একা একা ব্যাকুল হয়ে উঠছে বলে, ব্যাকুল ভাবটাকে দমাতে উঠানে পায়চারি করছে অপূর্ব। পারুল ততক্ষণে নিকটে এসে পৌঁছে একটা সাদা কাগজে প্যাঁচানো প্যাকেট অপূর্ব হাতে দিয়ে বলেন, “তুই তবে যাসনি অপু, তবে আরেকটু বস। আমি ছাগলটা খোয়ারে তুলে হাঁস মুরগি খোপরে ঢুকাই।”
“তা যান ফুফু। কী বলেছে কবিরাজ, আরুর সাথের সে চলে গেছে?” অপূর্ব সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করে। পারুলকে বেশ উদাসীন লক্ষ্য করা গেল। এদের নজর একবার কারো পানে নিবদ্ধ হলে সহজে তার ব্যাঘাত ঘটানো সম্ভব নয়। কালো মুখে বলে, “তাবিজটা দিতে বলেছে সাথে। তাহলে আসবে না। সেদিন রাতে জ্বীন পরী ঘুরছে এসেছিল এদিকে। আরুর রূপে মুগ্ধ হয়ে ওর উপর আঁচড় করেছে। তাবিজ দিয়ে আপাতত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে তারা আরুর কোনো ক্ষতি করবে না, জোড়া না হলে করত।”
“তাবিজটা আপনি লাগাবেন, না-কি আমি চেষ্টা করে দেখব।”
“পারলে ঝুলিয়ে দাও। যত তাড়াতাড়ি লাগাব ততই মঙ্গল। আমি গেলাম।” বলেই শাড়ি উঁচু করে এগিয়ে গেল পারুল। অপূর্ব প্যাকেটটা মুঠো করে দরজার খিল নামিয়ে ঘরে ঢুকল। বিছানা ফাঁকা। আশেপাশে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেও আরুর সন্ধান পেল না। চারদিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে চেয়ে হতাশ হলো অপূর্ব। সবে সে বাইরে পা রাখল এবং আরু নিখোঁজ হলো। বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে জমে উঠল। উচ্চ স্বরে চ্যাঁচিয়ে অপূর্ব, “আরু, এই আরু। কোথায় গেলি আরু?”
কণ্ঠটা ততটা প্রকট হলো না অথচ অপূর্ব-র গলা ছিঁড়ে যাচ্ছে। শব্দ হারিয়ে গেছে অজানায়। চিন্তিত অপূর্ব পেছনে ফিরতেই এক টুকরো কাঠ এসে পড়ল তার পিঠে। অপূর্ব তা লক্ষ্য করে উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই আরুর পরনের জামাটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মাথা বের করে রেখেছে সে। অপূর্ব ঠান্ডা অথচ বিধ্বস্ত কণ্ঠে বলে, “ওখানে কী করছিস তুই, মাত্র না তোকে শুয়ে থাকতে দেখলাম?”
“শরীরটা অস্থির লাগছে অপূর্ব ভাই। মনে হচ্ছে ভেতরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। দরজা তো বন্ধ তাই উপরে উঠে হাওয়া নিয়ে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করবি।” আরু মাথা ঝুঁকিয়ে বলে। অপূর্ব হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “হয়েছে এবার নাম।”
আরু সন্তর্পণে খুঁটিতে পা রেখে নামতেই অপূর্ব তাকে আঁকড়ে নামিয়ে নিল নিচে। বন্ধন আলগা না করেই ওভাবে দৃঢ় করে বসে অগোছাল বিছানায়। আরু কেঁপে উঠে তার স্পর্শ। বিলম্ব হলো তার ভেতর হিম হয়ে আসতে। অপূর্ব অনেক যত্নে তার হাতে তাবিজ বেঁধে দিল। আরু এক ধ্যানে অপূর্ব-র মুখশ্রীর পানে চেয়ে আনমনা হয়, আপনার সংস্পর্শে আমার দেহ ক্ষান্ত হবে জানলে আপনাকে আবদ্ধ করে নিতাম হৃদমাঝারে। মুখে বলে, “তাবিজ লাগালে নিজেকে রোগী রোগী লাগে অপূর্ব ভাই। আমি কখনো এই তাবিজ বাঁধি না।”
আরুর নাকটা আলতো করে ছুঁয়ে বলে, “তুই তো রোগী নয়, মহারোগী। রোগ হলে ওষুধ খেলে তা সেরে যাবে, কিন্তু তোর ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে যাবে। পদ্মাবতী ব্যতিত অপূর্ব-র কোনো মূল্য নেই আরু।”
প্রেমময় দৃষ্টিতে চেয়ে নিজের কষ্টি পাথরের আংটিটা খুলে আরুর তর্জনীতে পরিয়ে দিল। অতঃপর চিবুকে দুই হাত বন্দি করে বলে, “অন্তত আমার জন্য একটু কর।”
“আপনি কি আমাকে প্রপোজ করছেন অপূর্ব ভাই?” আঙুলের পানে অপলক দৃষ্টি আরুর। অচেনা আবেশে জর্জরিত হয়েছে আজ, পরিচয় হয়েছে নতুন অনুভূতির। ঈষৎ উঁচু করে চোখদুটো নিজের চোখে স্থির করে অপূর্ব বাক্য তোলে, “না, তোমাকে আমার হতে হবে তার ক্ষুদ্র চেষ্টা করলাম মাত্র।”
_
সময়টা এগিয়ে বসন্তের মাঝামাঝি। চারিদিকে ফুলে সুবাস বইছে। গাছে গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা। তিনজন কিশোরী মৃদু গতিতে ছুটতে ছুটতে কুউ কুউ কুউ করে চলেছে। তার সাথে মিলিত হয়েছে কোকিল। সাড়া দিচ্ছে ডাকে। আরু অনেকটাই পিছিয়ে। ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে একটা হাত বের হয়ে আরুর কোমল হাত টেনে নিয়ে গেল ঝোপে। আচমকা ঘটা ঘটনায় হতভম্ব সে। অতঃপর কালাচাঁনকে দেখে স্তম্ভিত আরু। নক ডেবে গেছে। আরু চিৎকার করে বলে, “কালাচাঁন তুই আমাকে এখানে কেন এনেছিস?”
“আমি তোকে শেষবারের মতো কইতাছি, আমার ভালোবাসা গ্ৰহণ করে নে গোলাপী। আমি তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।” কঠিন তার গলা। আরু নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে প্রত্যুত্তর করে, “দেখ কালাচাঁন। আমিও তোকে শেষবারের মতো বলছি, আমি তোকে ভালোবাসি না।”
বাক্য শেষ হওয়া পরই আরুর উপর নেমে এলো নির্যাতন। দৃঢ় করে চেপে ধরে আরুর চোয়াল। যেন ভেঙে আসার জোয়ার। হুংকার দিয়ে বলে, “আর একবার আমার সাথে দেখা হলে, আমি তোর থেকে উত্তর নিবো। আমাকে ভালোবাসলে তো ভালো, নাহলে এই নদীতে তোরে নিয়ে আমি ঝাঁপ দিবো।”
আরুকে না পেয়ে তুর ও শেফালী সন্ধান করতে করতে এসে পৌঁছেছে সেখানে। ততক্ষণে বিদায় নিয়েছে কালাচাঁন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। আরুর কাঁধে হাত রেখে সংশয় নিয়ে বলে, “এখানে কী করছিস? আমরা ওদিকে তোকে খুঁজছি।”
আরুর গালে হাত রেখে বলে শেফালী, “এগুলো কীসের রাগ? রক্ত বের হচ্ছে তো।”
সন্তর্পনে আড়াল করে সবটা আরু, “পা পিছলে কখন এখানে পড়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে তোরা চলে এলি। তখনই হয়তো লেগেছে। মা হয়তো বাড়িতে চিন্তা করছে, আমি আজ যাই।”
শেফালী ও তুর পালটা প্রশ্ন গুছিয়েছে, ততক্ষণে আরু এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। ফিরে চায়নি পিছু।
কিছুটা পথ পেরিয়ে যেতেই আরুর চোখে পরল একটা ডোবা। সেখানে ফুটে আছে অজস্র শাপলা ফুল। একমাত্র বর্ষার সময় আরুদের বাড়ির সামনের ধানক্ষেতে শাপলা হয়, তখন বেশ তৃপ্তি করে ভাজি করে খায়। আরু বইখাতাগুলো মাটিতে রেখে অতি সাবধানে ঝুঁকে ঝুঁকে শাপলা সংগ্রহ করে। অনেকগুলো শাপলা সংগ্রহ করে প্যাঁচিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় আরু।
পারুল উঠানে কাঁথা সেলাই করছে তিস্তার জন্য। বিয়ের সময় এই নকশিকাঁথা তিস্তার শ্বশুর বাড়িতে পাঠাবে। আরু বইখাতাগুলো রোয়াকে রেখে পারুলকে উদ্দেশ্য করে বলে, “রান্না শেষ মা?”
“এখন বাজে দুইটা বিশ, তোর আশায় কি রান্না ফেলে রাখব?” বলতে বলতে দৃষ্টি মেলালেন আরুর দিকে। কপালে ভাঁজ ফেলে বলেন, “তুই আবার ঝোপঝাড়ে গিয়েছিলি? বারণ করিনি যেখানে সেখানে যাবি না।”
“যেখানে সেখানে যাইনি। ফেরার সময় দেখলাম আর তুলে নিয়ে এলাম।” উঠানে রোদে মেলে দেওয়া ফ্রকটা নিয়ে দিঘির দিকে অগ্রসর হলো আরু। পারুল অতিষ্ঠ হলেন। দ্রুতহাতে শাপলার আঁশ ছাড়াতে লাগলেন। হাতে গলায় তাবিছ লাগিয়েছে বলে কি দূর থেকে তারা আকর্ষণ করতে পারবে না? মেয়েটাকে শত বুঝিয়েও লাভ হয়না তার।
আরুর গোসল সেরে খেতে বসতে অনেকটা সময় লাগল। তদানীং পারুলের শাপলা ভাজির করা শেষ। কিছুটা মুখে তুলতে গিয়ে থামল আরু। অপূর্ব-র কথা তার মস্তিষ্কে হানা দিল। অপূর্ব-র সাথে দেখা হয় না বহুদিন, রাতে ফিরে সকালে যায় হাসপাতালে। আগামীকাল শুক্রবার শাপলা দেওয়ার অজুহাতে গেলে আজ রাত পার করে আগামীকাল ফিরবে। কালাচাঁনের ব্যাপারে নালিশ জানাবে। অপূর্ব-র দেওয়া শর্তে রাজি হয়ে উচিত শিক্ষা দিবে কালাচাঁনকে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৯ [বর্ধিতাংশ]
‘অপূর্ব ভাই নিশ্চয়ই শাপলা ভাজি খায়নি।’
“মা, আরও কি শাপলা আছে? অপূর্ব ভাইয়ের জন্য নিয়ে যেতাম। তোমার হাতে শাপলা খেলে শুধু খেতেই চাইবে।” বলতে বলতে লোকমা তুলে মুখে।
পারুল আগেই বাটিতে সরিয়ে রেখেছেন আলাদা করে। কলা পাতায় ঢাকা দিয়ে আরুকে বলে, “খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে অয়নকে সাথে নিয়ে যাস।”
খাওয়ার ইতি টেনে অপূর্ব-র দেওয়া একটা ফ্রক পরে নিল, মৃদু ভেজা চুলগুলো দুই বেনুনি করে রাখল, কপালে লাগায় মাঝারি সাইজের লাল টিপ, চোখে কাজল ও ঠোঁটে লিপস্টিক, পায়ে ছোঁয়াল আলতা। অতঃপর বাটি নিয়ে নাচতে নাচতে একাই অগ্রসর হলো আহসান বাড়ির দিকে।
আলতা রাঙা পা, আবার নূপুর পরেছে
আরু তোমায় পা/গল করেছে।
.
মাসটা পেরিয়ে গেছে অতিদ্রুত। অপূর্ব এখন নিজের কাজে মগ্ন থাকে। বাবা মায়ের কাছে বিয়ের জন্য ধার চেয়েছে আরও কয়েকমাস। ‘আরুর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই আয়োজন করে ঘরে বধূ রুপে তুলবে সে’ – আহসান বাড়ির সবাই জানলেও পারুল এ বিষয়ে অবগত নয়।
নিজ কক্ষে প্রবেশ করে ঘুমন্ত আরুকে দেখে একটু বিস্মিত হলো অপূর্ব, তবে নিজেকে বেশ সামলে নিল। ইদানীং তার স্বপ্নে আরুর প্রবেশ ঘটছে। আগ বাড়িয়ে স্পর্শ করার প্রয়াস করলে অদৃশ্য হয়ে যায়। অপূর্ব তাই আরুর কাছাকাছি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বলে, “আমার অঙ্গনে তোমার প্রবেশ ঘটুক, কিন্তু তোমার অঙ্গনে আমার প্রবেশ কেন নিষিদ্ধ করে রেখেছ প্রেমবতী?”
অপূর্ব ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে তোয়ালেটা কাঁধে নেয়। দেহ থেকে তীব্র ঘামের গন্ধ নিঃসৃত হচ্ছে, প্রেমবতী যদি সেই দুর্গন্ধে পালিয়ে যায় অন্যথ? অনিচ্ছার সত্ত্বেও পা ফেলে কলতলার উদ্দেশ্যে। গোসল সম্পন্ন করে ফিরে এসে আরুকে অন্য ভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে। আজ এতক্ষণ আছে ভেবেই অপূর্ব মুগ্ধকর হাসে, “আজকাল আমার কাছে তোমার থাকতে ভালো লাগে পদ্মাবতী, তাই না?”
আরুর ঘুমের রেশ তখন কাটিয়ে উঠে বসেছে। অপূর্বকে দেখে আঁচলটা ঠিক করে অপলক চেয়ে থাকে তার ভাঁজকাটা দেহে। অপূর্ব জড়ানো তোয়ালেটা খোলার প্রয়াস করতেই আরু চঞ্চল গলায় বলে, “কী করছেন? আমি যেয়ে নেই আগে, তারপরে আপনি পোশাক পালটান।”
“সেদিন তো বিছানায় বসে দিব্যি সবকিছু দেখছিল, আজ হঠাৎ লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আগে কথাও বলতি না। বোবার মতো চেয়ে থাকতি। আজ দেখছি বুলিও ফুটেছে।” বলতে বলতে অপূর্ব তোয়ালে-তে হাত রাখতেই আরু দিল চিৎকার। অবিলম্বে ছুটে গেল। অপূর্ব এখনো ধ্যানে রয়েছে, পর্দা এখনও নড়ছে। কানে চিৎকারের শব্দগুলো স্পষ্ট বাজছে। এতদিন আরুর গায়েব হতে দরজা লাগত না, আজ কেন লাগল? অপূর্ব মাথায় হাত রেখে অব্যক্ত স্বরে বলে, “ও শেট। দাঁড়া আরু।”
টিশার্ট আর লুঙ্গিটা পরে শপিং ব্যাগগুলো সমেত বৈঠকখানায় পা রাখল অপূর্ব। আরু ডাগর ডাগর চোখ করে বোবার মতো বসে আছে আর তাকে ঘিরে রয়েছে বাকিরা। গলায় হাতে তাবিজ বাধা আরুর। সন্ধ্যা নেমে আসায় আরুকে বাড়ির দিকে এগোতে দেয়নি পারুল। অপূর্ব-র ঘরেই ঘুমিয়েছে।
অনিতা উদ্বিগ্ন হয়ে আরুকে শান্ত করতে বলে, “কতবার বললাম ও ঘরে যাস না। পেলি তো ভয়।”
“কিচ্ছু হবেনা, শান্ত হ। তোর সাথে তাবিজ আছে। আর ঘরের ভেতরে ভুত থাকে না।” চম্পার কথায় আরু টু শব্দটি না করে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, কীভাবে বলবে অপূর্ব ভাই এমন কাজ করেছিল। অপূর্ব এবার আগ বাড়িয়ে বলে, “ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে। নাও মা দেশে ফিরে প্রথমবার স্যালারী পেয়েছি। তাই সবার সবার জন্য শপিং করে এনেছি, শুধু তিস্তা বাদে। (তিস্তাকে উদ্দেশ্য করে) কাল আমার খোলা আছে। বিকালে তোকে নিয়ে বের হবো। তৈরি হয়ে থাকিস।”
তিস্তার বিয়ে ঠিক হয়েছে সুজনের সাথে। পরিবারের বড় মেয়ের ভালোবাসা সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে সবাই। সুজনদের টিনের শোরুম রয়েছে। অর্ডার করা টিন গাড়ির মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠানোই তার কাজ। পড়াশোনা শেষ করে সেখানে যোগদান করেছে। মা, চাচি ও দাদির জন্য অপূর্ব আজ পোশাক নিয়ে এসেছে। আগামীকাল বোনদের নিয়ে যাবে। আহসান বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা, সবকিছুর তুলে নিয়ে আসবে অপূর্ব।
উপস্থিত সবাই অপূর্ব কথা মেনে নিয়ে মৃদু হাসছে। ব্যাগগুলো খুলে একে একে সবাইকে দিতে ব্যস্ত হলো অপূর্ব। অনিতার হাতে দিতেই সে বলে, “আমার জন্য আনার কী দরকার ছিল অপু?”
“তোমার জন্য আনিনি, মায়ের জন্য এনেছি।”
তুর শেফালী তো খুশিতে উৎফুল্ল। ভাইকে জড়িয়ে ধরে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিল। আরুর দিকে না চেয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে, “এটা তোর নীল শাড়ি। সুন্দর করে পরবি তিস্তার বিয়েতে।”
“নিজের জন্য আনেননি?” প্যাকেকটা না ধরেই আরু পালটা প্রশ্ন করে। মেয়েটা তার দিকে নজর রাখে ভেবে অপূর্ব হাসে, “হু এনেছি।”
অপূর্ব নিজের পোশাকটা বের করে এগিয়ে দেয়। আরু লক্ষ্য করে জিন্স বেশ কিছুটা ছেঁড়া। সবার জন্য উত্তম জিনিসটা এনে নিজের জন্য ছেঁড়া জিনিসটা এনেছে ভেবেই আরুর চোখমুখ শুকিয়ে গেল। সুঁই সুতা দিয়ে সেলাই করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরু বলে, “আপনার পোশাকটা আমাকে দিন, আমি যথা স্থানে গুছিয়ে রাখব।”
নিঃসন্দেহে ভরসা করে আরুর হাতে তুলে দিল তার পোশাক। আরু সেই পোশাক নিয়ে তুরের ঘরের দিকে অগ্রসর হলো। অপূর্ব সুন্দর নকশিকাঁথা সেলাই করতে পারে আরু। সুঁই দিয়ে ছেঁড়া অংশটুকু স্বযত্নে সেলাই করে ডিজাইন তৈরি করল। অতঃপর শুভ্র হৃদয়ে মনমতো সাজায় শব্দ গুচ্ছ।
অপূর্ব-র আলমারিতে পোশাক রাখতে গিয়ে একটা জিন্সে নজরবন্দি হলো আরুর। সেই জিন্স ও নতুন কিনে আনা জিন্সের একই স্থানে ছেঁড়া। মাথা হাত রেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরু অব্যক্ত স্বরে বলে, “ছেঁড়া জিন্স পরে না, অথচ সবাইকে শান্তনা দিতে সেই ছেঁড়া জিন্স কিনে এনেছে। পুরনো জিন্সটা বের করে আলমারির ছিটকিনি তুলে দেয়। পানিতে ভিজিয়ে অপূর্ব-র আসবাবপত্র মুজতে ব্যস্ত হলো।
আরু কি জানে, এটাই যে বিদেশি ফ্যাশন?
অপূর্ব ঘরটা নিজের মতো সাজিয়ে অপূর্ব-র অপেক্ষায় রইল আরু। খাওয়া শেষে অপূর্ব ঘরে প্রবেশ করে ক্ষান্ত রইল। আগ বাড়িয়ে দু চারটে কথা উচ্চারণ সে করল না বরং এগিয়ে যেয়ে তর্জনী দিয়ে আরুর বাহুতে দিল মৃদু চাপ। আরু মৃদু ঘসতে ঘসতে বলে, “উফ অপূর্ব ভাই, ব্যথা দিলেন কেন?”
অপূর্ব-র ঠোঁট প্রসারিত হলো আরু অদৃশ্য না হওয়াতে। আয়েশ করে বসে বলে, “বিছানায় যেভাবে বসে ছিলি ভেবেছি বোবা ভূতে ধরেছে তোকে। অন্যের স্পর্শ ব্যতিত বোবা ভূত যায় না, তাই ছুঁয়ে দিলাম। মাত্র এক আঙুল দিয়ে ছুঁয়েছি কিন্তু। ব্যথা লেগেছে?”
“না।” ইতস্তত করে আরু। মূল কথাটা না বলেই উঠে ধীর পা ফেলে। অপূর্ব ডাকে পেছন থেকে, “তুই কি খুব বেশি ব্যস্ত আরু?”
“না।” পিছু ফিরে আরু।
“গরমে থাকতে থাকতে পিঠটা ঘামাচিতে ভরে গেছে। চিরুনি দিয়ে পিঠটা আঁচড়ে একটু পাউডার দিয়ে দিতে তোর কোনো সমস্যা আছে আরু?”
আরু প্রফুল্ল হলো। ইতস্তত কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় তার লাগবে, লজ্জাদায়ক কাজটা হুটহাট করা কি সম্ভব? অপূর্ব-র সান্নিধ্য পেতে হবে যে। অপূর্ব চিরুনি ও মিল্লাদ ঘামাচি পাউডার দিয়ে বসল।
অপূর্ব শার্ট খুলে নগ্ন পিঠে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। আরু স্তম্ভিত হয়ে বলে, “পিঠ তো যা ইচ্ছে তাই হয়ে গেছে। কাউকে বললে আঁচড়ে ঠিক পাউডার লাগিয়ে দিত। তাহলে এতটা হতো না।”
আরুর তার হাতটা অপূর্ব-র পিঠে রেখেছে। হাতের রুপার বালার সেই শব্দে মন জুড়িয়ে গেল অপূর্ব-র। আবেশে পল্লব ঢেকে ফেলে। আরু বলে, “ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি যখন পড়বে-না? তখন আপনি খালি গায়ে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এতে ঘামাচি চলে যায়।”
“বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে আরু, তবে পদ্মাবতীর ব্যক্তিগত বৃষ্টিতে ভিজলে অপূর্ব-র জ্বর আসবে না, ব্যধি আসবে। যার নাম প্রেম ব্যধি।” অপূর্ব চোখ মেলে তাকাল। আরু এক দৃষ্টিতে অপূর্ব-র দিকে চেয়ে আছে। চোখ মা/রতেই আরু লজ্জানত হলো।
“পড়াশোনা কেমন চলছে তোর?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। একটা কথা বলব, শুনবেন?”
“বল।” অপূর্ব-র অনুমতি পেয়েও আরু বাক্য তোলে না। নিজের কাজ শেষ করতে ঝুঁকে গেল। দু-কাঁধে হাত রেখে দুগালে পাঁচবার ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করে সরে এলো। অপূর্ব উদাসীন হয়ে ফিরল পিছু। আরুর মুখমণ্ডল জুড়ে তখন রাজ্যের ব্রীড়া। অপূর্ব উঠে দ্রুতি কণ্ঠে বলে, “কী হলো এটা?”
“আমি অগ্রিম পাঁচটার বেশি দিতে পারব না। কাজ শেষ হলে বাকিগুলো দিবো?”
“অগ্রিম? কীসের পাঁচটা?” সংকোচ নিয়ে প্রশ্ন অপূর্ব-র। ততক্ষণে বিস্মৃতি হয়েছে বুলি, ভুলেছে তার দেওয়া শর্ত। আরু বাক্য তোলে, “সেদিন আপনি বলেছিলেন-না, একশো একটা চুমু আপনাকে জড়িয়ে ধরে খেলে আপনি কালাচাঁনকে পি/টু/নি দিবেন। তারজন্য।”
“কিছু করেছে কালাচাঁন?”
“আমি যদি ওকে ভালোবাসার কথা না বলি, তাহলে ও আমাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিবে। জানেন আমাকে সে ব্যথা দিয়েছে।” বলতে বলতে আরু তার চিবুক উঁচু করল ঈষৎ। গোসলের ফলে দেখা গেল না স্পষ্ট। দীর্ঘক্ষণ চেয়ে গর্ত খুঁজে পেল অপূর্ব। আলতো স্পর্শ করে বলে, “খুলে বল সবটা।”
অতঃপর আরু খুলে বলে সবটা। অপূর্ব উঠে আলমারি থেকে মলম বের করে আঙুলের ডগায় নেয়। অতঃপর তা আরুর চিবুকে লম্বা একটা টান দিয়ে বলে, “আগামীকালের পর সে আর কখনো তোর সামনে আসবে না। এলেও তোর দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। নত দৃষ্টিতে এড়িয়ে যাবে। তবে কাজ শেষ হওয়ার পর আমার পাওনা যাতে আমি বুঝে পাই।”
“একদম অপু সোনা।” বলেই অপূর্ব-র গাল টেনে ছুটে যাওয়ার প্রয়াস করতেই অপূর্ব বলে, “শাপলা ভাজিটা খুব স্বাদের লেগেছে। প্রথমবার খেলাম। এতটা পথ পেরিয়ে আমার জন্য শাপলা নিয়ে আসার জন্য তোকে নীলপদ্মটা জীবনের তরে দিয়ে দিবো ভাবছি।।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]