নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ৯
তোহা: ছাড়ো আমাকে।
শায়লা: না মা তুমি আমার…
তোহা: ছাড়ো বলছি। (তোহা শায়লার বুকে কিল দিতে শুরু করলো, শায়লা ওকে ছেড়ে দিলো। তোহা দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো, আমার পাশে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিলো)
তোহা: আর কেঁদো না।
আমি: মামুনি। (তোহাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম)
শায়লা: এসব কি হচ্ছে?
পপি: আমরা তোহাকে ভাবির হাতে তুলে দিয়েছি এখন ভাবিই তোহার মা বুঝেছ?
শায়লা: তাহলে আমি কে? তোমাদের কি মনে হয় আমি এসব মেনে নিবো। (শায়লা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে তোহাকে কোলে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম)
শায়লা: এই মেয়ে শুনো একদম আমার মেয়ের দিকে নজর দিবা না।
তোহা: তুমি পঁচা দূরে যাও বলছি।
শায়লা: তোমার কারণে আমার মেয়ে আমাকে পঁচা বলেছে। তোমাকে… (শায়লা আমাকে থাপ্পড় দিতে আসছিল পিছন থেকে কে যেন ওর হাত ধরে ফেলেছে, পিছনে তাকিয়ে দেখি রুহান। হসপিটাল থেকে সবাই চলে এসেছে)
রুহান: কণার গায়ে হাত দিতে চাইলে হাত ভেঙ্গে ফেলবো। তোমার সাহস হয় কি করে এই বাসায় ঢুকার?
শায়লা: এইটা আমার স্বামীর বাসা।
রুহান: আসছে স্বামীর বাসা বলতে। ডিভোর্স দেওয়ার সময় মনে ছিল না এখন স্বামী বলো কেন লজ্জা করেনা?
শায়লা: না করেনা কারণ আমি মেঘ’কে ভালোবাসি, ফিরে আসতে চাই ওর কাছে।
মা: তুমি বললেই হবে নাকি?
বাবা: শায়লা তোমাকে তো ফোনে আমি বলেছি তুমি তোহাকে ছাড়া যা চাইবে তাই দিবো তার পরও তুমি জামেলা কেন করছ বলতো?
শায়লা: আমি তো আপনাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি আমার মেঘ কণা দুজনকেই চাই। (এখন বুঝেছি আব্বু কেন তোহাকে নিয়ে এতো টেনশন করছেন। শায়লা আব্বুকে ভয় দেখিয়েছে। ওদের জামেলা আর ভালো লাগছে না, ওদের ঝগড়াঝাঁটির মাঝেই শায়লার চোখের আড়ালে তোহাকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম)
মেঘ এখনো মাতালের মতো ঘুমুচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে…
আমি: মেঘ উঠনা প্লিজ। (মেঘের চোখেমুখে পানির ছিটা দিলাম কিন্তু ও উঠার নাম নেই। আর ও উঠেই বা কি হবে ভালোবাসে তো শায়লাকে)
নিচ থেকে শায়লার চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে আমি রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম, করুক ওরা ঝগড়া তোহা আমার কাছে থাকলেই হবে। কিছুক্ষণ পর নিচ থেকে আর কোনো শব্দ ভেসে আসলো না মনে হয় শায়লা চলে গেছে। এবারের মতো তো বাচঁলাম কিন্তু পরে যদি তোহাকে নিয়ে যায় আমি কিভাবে আটকাবো?
তোহাকে আমার পাশে বসিয়ে রাখলাম পুতুল নিয়ে খেলছে ও আর আমি ভাবছি শায়লা হঠাৎ ফিরে আসলো কেন। যে ছয় মাসের ছোট বাচ্চা ফেলে চলে গিয়েছিল আর এতো বছরে তোহাকে নিতে আসেনি সে কি হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া ফিরে এসেছে নাকি কোনো কারণ আছে? কোনো কারণ থাকলে কি সে কারণ?
অনেক ভেবে একটাই কারণ ফেলাম শায়লা হয়তো কোনো ভাবে জানতে পেরেছে তোহার নামে সবকিছু দিয়ে দিয়েছি। উফফফ আগে জানলে এই ভুল করতাম না, তোহাকে কতোটা ভালোবাসি মেঘ’কে এইটা বুঝাতে গিয়ে তোহার জন্য বিপদ ডেকে এনেছি সাথে নিজেরও। আমার তো মনে হচ্ছে এই সম্পত্তির জন্যই আব্বুকে খুন করা হয়েছে, কিন্তু খুন করালো কে?
জোহা: আপু আসবো?
আমি: হুম আয়।
জোহা: ভাইয়া এখনো ঘুমুচ্ছে?
আমি: ড্রিংক করলে যা হয়।
জোহা: আপু আমার এসব জামেলা আর ভালো লাগছে না।
আমি: আমার কি ভালো লাগছে? ভুল তো সব আমি করেছি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি।
জোহা: তুমি কি ভুল করলে?
আমি: প্রথম ভুল মেঘ’কে বিয়ে করা দ্বিতীয় ভুল তোহার নামে সবকিছুর উইল করা। আমার তো এখন মনে হচ্ছে আমার ভুলের কারণে আব্বুকে জীবন দিতে হয়েছে।
জোহা: চাচ্চুকে খুন করে খুনির কি লাভ হলো?
আমি: তোহার আঠারো বছর হবার আগে পর্যন্ত সবকিছু আব্বু দেখাশুনা করবেন এটাই উইলে লেখা ছিল, যে খুন করেছে তার লাভ তোহার আঠারো বছর হওয়া পর্যন্ত সবকিছু সে লুটপাট করে খেতে পারবে আর পরে তোহার থেকে সব কেড়ে নিবে।
জোহা: এই লাভ কার হতে পারে এইটা খুঁজো তাহলেই তো খুনি কে জানতে পারবে।
আমি: লাভ এখানে তিনজনের, মেঘ, শায়লা আর রুহান। কিন্তু আমার মনে হয় না মেঘ আর রুহান এমন কাজ করবে।
জোহা: তাহলে শায়লা, এই মহিলা যা খারাপ ওর পক্ষে খুন করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমি: কিন্তু আমি ভাবছি শায়লা আব্বুকে খুন করাবে কেন? সম্পত্তির জন্য? উইল এর কথা তো আমি আর আব্বু ছাড়া কেউ জানতো না তাহলে শায়লা জানলো কিভাবে?
জোহা: জেনেছে আপু কোনোভাবে নাহলে হুট করে মেয়ের জন্য এতো ভালোবাসা দেখাতো না।
আমি: ভুল যেহেতু আমি করেছি শুধরেও নাহয় আমিই নিবো। খুব তাড়াতাড়ি আমি নতুন উইল করবো আর এই উইল এমনভাবে তৈরি করবো না তোহার জন্য বিপদ আসবে না আমার জন্য।
জোহা: তোহার জন্য তুমি এতোকিছু করছ কিন্তু ভাইয়া তো তোমাকে ভালোই বাসে না।
আমি: ও আমাকে কখনো ভালোবাসবে এই কথা তো বিয়ের সময় ছিল না, তোহা আমার কাছে থাকলেই হবে।
জোহা: শুধু তোহাকে নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিবে? ভাইয়া তো শায়লাকে এখনো ভালোবাসে।
আমি: (মৃদু হাসলাম)
জোহা: আপু তুমি হাসছ?
আমি: এছাড়া কি করার আছে?
জোহা: আপু তুমি নিজেকে শক্ত করো প্লিজ।
আমি: হুম।
জোহা কিছুক্ষণ মন খারাপ করে বসে থেকে রুমে চলে গেল। সত্যি এখন আমাকে শক্ত হতে হবে তোহাকে তো আমার কাছে রাখবো সাথে আব্বুর খুনি কে খুঁজে বের করবো।
তোহাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, সন্ধ্যা নেমে এসেছে। মেঘ সারাদিন ঘুমিয়েই কাটালো জানিনা কতোটুক ছাইপাঁশ খেয়েছিল। এমন একজন কে বিয়ে করলাম যার সব ধরণের বাজে অভ্যাস আছে আর শায়লার মতো খারাপ মেয়েকে ভালোও বাসে আবার।
মেঘ: কণা, তোহা কোথায় তোমরা?
আমি: এখানে। (উঠেছে আজ তো ওর সাথে আমি ভালো ভাবেই বুঝাপড়া করবো)
তোহা: নতুন আম্মু আব্বু এতো পঁচা কেন?
আমি: ছিঃ আম্মু এসব বলতে নেই।
তোহা: তাহলে তোমাকে কাঁদায় কেন?
আমি: কোথায় আম্মু কাঁদি নাতো আর কেন কাঁদবো তুমি তো আমার কাছেই আছ।
তোহা: যদি দুষ্টু মেয়েটা আমাকে নিয়ে যায়।
আমি: নিতে দিবো নাতো। (তোহা দুহাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, ছোট মেয়েটাও ভয় পায় এখন)
মেঘ: কণা?
আমি: কি?
মেঘ: (চুপচাপ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। তোহার গালে হাত দিয়ে আদর করতে চাইলো তোহা হাত সরিয়ে দিলো)
তোহা: তোমরা সব পঁচা তোমরা খুব দুষ্টু।
মেঘ: আমার মামুনি এতো রেগে আছে কেন?
আমি: চোখের সামনে বাবার খারাপ অভ্যাস গুলো দেখছে তো তাই।
মেঘ: মানে?
আমি: ড্রিংক করে মাতালের মতো বাসায় ফিরেছ, শায়লা এসে তোহাকে নিয়ে টানাটানি করে গেছে, সবকিছু তো মেয়েটার চোখের সামনেই ঘটছে। তোমার কি মনে হয় এসবের প্রভাব ছোট মেয়েটার উপর পরছে না?
মেঘ: শায়লা এসেছিল?
আমি: অবাক হওয়ার তো কিছু নেই তুমি শায়লাকে ভালোবাস তাই সে অধিকার ফলাতে এসেছিল। শুনো মেঘ যদি আর কখনো ড্রিংক করে বাসায় এসেছ আর তোহা এসব দেখেছে তাহলে কিন্তু আমি তোহাকে নিয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।
মেঘ: শায়লা চলে গেছে?
আমি: নাহ তোমার জন্য বাসর সাজিয়ে বসে অপেক্ষা করছে যাও ওর কাছে।
মেঘ: এভাবে কথা বলছ কেন?
আমি: তোমার মতো মানুষের সাথে এরচেয়ে ভালোভাবে কথা বলা যায়না।
মেঘ: কি করেছি?
আমি: কিছুনা তুমি তো ধোয়া তুলসী পাতা। এই শুনো তুমি শায়লাকে ফিরিয়ে আনো বা যা খুশি করো তোহাকে যদি আমার থেকে দূরে নেওয়ার চেষ্টাও করেছ তাহলে কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে জেলে দিবো, ভুলে যেওনা বিয়েটা তোহার জন্যই হয়েছে আর সেটা সেদিন যারা উপস্থিত ছিল সবাই জানে।
মেঘ: কণা আ…
আমি: তোমার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার যাওনা যাও তোমার শায়লার কাছে যাও। (মেঘ চুপচাপ রুমে চলে গেল, ওকে এভাবেই শাস্তি দিতে হবে)
মেঘ চলে যেতেই উকিল চাচ্চুকে ফোন দিলাম, সবকিছু ঠিকঠাক করে মেঘ আর শায়লাকে বুঝাবো।
চাচ্চু: হ্যালো কণা।
আমি: হ্যাঁ চাচ্চু কেমন আছ?
চাচ্চু: ভালো তুমি ভালো আছ তো মা।
আমি: হ্যাঁ, চাচ্চু নতুন করে একটা উইল করতে হবে।
চাচ্চু: কদিন আগেই তো তোমার বাবা করলেন।
আমি: আবার নতুন করে করতে হবে।
চাচ্চু: কিন্তু কিছুদিন সময় লাগবে।
আমি: যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি করে দাও আমি তোমার কাছে আসতে পারবো না সবকিছু মেসেজে বলে দিচ্ছি।
চাচ্চু: ঠিক আছে আমি তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করছি।
ফোন রেখে রুমে এসে দেখি মেঘ সোফায় মাথা নুয়ে বসে আছে।
আমি: তোমার শায়লাকে কাল একবার বাসায় আসতে বলো। (মেঘকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তোহাকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম)
তোহাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি বাবা এসে আমার পাশের চেয়ারটা টান দিয়ে বসলেন, কিছু বলতে চাইছেন মনে হয়।
আমি: বাবা কিছু বলবেন?
বাবা: অপদার্থটা কোথায়?
আমি: (নিশ্চুপ)
বাবা: কতোবার বিয়ের কথা বললাম করলো না, ও নাকি দুনিয়ার সব মেয়েকে ঘৃণা করে। আর এখন নিজের ঘরে এমন ভালো একটা বউ রেখে আবারো সেই ডাইনীর পিছনে ছুটছে।
আমি: বাদ দিন না বাবা এসব।
বাবা: রায়হানের এমন মৃত্যু আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছে জানিনা সামনে আর কি কি হবে।
আমি: কিছু হবে না বাবা আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
বাবা: একটা কথা বলবো মা শায়লার হঠাৎ ফিরে আসাটা আমার ভালো লাগছে না।
আমি: কারণটা আমি খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করবো বাবা আপনি শুধু সকালের অপেক্ষা করুন।
বাবা: সকালে কি করবে?
আমি: যা হয় তাতো দেখতেই পারবেন।
তোহাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি ঘুম আসছে না চটপট করছি শুধু, ওদিকে মেঘও চটপট করছে। মেঘ তোহাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো আমার হাতের উপর ওর হাত পড়তেই হাত সরিয়ে নিলো। পাশ ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ, ডিম লাইটের আলোতে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি সেটা।
মেঘ: কণা..
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কথা বলবে না?
আমি: সকালে বলবো শায়লা যখন সামনে থাকবে।
মেঘ: সবকিছুতে শায়লাকে টানছ কেন?
আমি: কারণ তুমি শায়লাকে ভালোবাস।
মেঘ: আমি শায়লাকে ভালোবাসি না।
আমি: নেশার ঘোরে মানুষ সত্যি কথাই বলে।
মেঘ: মানে?
আমি: ড্রিংক করে এসে তুমি বলেছ তুমি শায়লাকে ভালোবাস এদিকে আমি থাকায় তুমি দুটানায় পরে গেছ।
মেঘ: এসব কখন বললাম এসব মিথ্যে।
আমি: হয়েছে আর একটা কথাও নয়। এখন শুধু সকালের অপেক্ষা করো।
মেঘ: হুম।
মেঘ চুপ হয়ে গেল, চিন্তা করোনা মেঘ তোমাকে আমি এখন থেকে এতো অবহেলা করবো যে তুমি মাতাল অবস্থায় নয় নিজের মুখে সজ্ঞানে স্বীকার করবে কাকে ভালোবাস আমাকে নাকি শায়লাকে।
আজ সকালটা অন্যরকম লাগছে কারণ সবাই একসাথে বসে নাশতা করছে অন্যান্য দিন বাবা থাকেন না কখনো কখনো মেঘ আর রুহানও থাকে না। কলিংবেল এর শব্দ শুনেই সবাই দরজার দিকে তাকালো।
বাবা: নাশতা খাওয়ার বারোটা বেজে গেছে।
দাদি: এই সকালবেলা কে আসলো।
আমি: মেঘ যাও তোমার শায়লা এসেছে ভিতরে নিয়ে এসো।
মেঘ: আমার শায়লা মানে…
মা: এই বজ্জাত মেয়ে আবার আসলো কেন? (মেঘ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দরজা খুলতে গেল)
আমি: পপি তোমার আর তোহার নাশতা নিয়ে রুমে চলে যাও তোহাকেও খাইয়ে দিও।
পপি: ঠিক আছে ভাবি।
শায়লা: আমার তোহা কোথায়?
আমি: আরাম করে সোফাটায় বসো আর আমাদেরও শান্তিতে নাশতা করতে দাও।
নাশতা শেষে সবকিছু গুছাতে গুছাতে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম…
আমি: বাবা আমি আব্বুর খুনি কে তা জানতে পেরেছি। (আড়চোখে শায়লার দিকে তাকালাম ও চমকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
জোহা: কি বলছ আপু তাহলে পুলিশে দিচ্ছ না কেন?
আমি: আমার হাতে কিছু প্রমাণ আছে আরো কিছু প্রমাণ ফেলেই পুলিশে ধরিয়ে দিবো। (সত্যি বলতে তো আমার হাতে শায়লার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই যদি থাকতো তাহলে তো ওকে আমি ফাঁসিতে ঝোলাতাম)
বাবা: কণা মা…
আমি: যে কথা বলতে আমি সবাইকে এখানে ডেকেছি তা হলো তোহা আমার কাছে থাকবে ওকে আমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলে আমি সবাইকে পুলিশে দিবো।
মা: কি?
আমি: অবাক হওয়ার কিছু নেই আপনারাই তোহার জন্য আমাকে বিয়েতে জোর করেছিলেন এখন ওকে কেড়ে নিবেন আমি চুপচাপ বসে থাকবো এতোটা ভালো মেয়ে আমি নই।
দাদি: একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই।
আমি: মেঘ যেহেতু আব্বুর বিশ্বস্ত লোক ছিল সবকিছুর দেখাশুনা ও করবে।
শায়লা: সত্যি? তাহলে আমিও মেঘের সাথে তোমার অফিসে কাজ করবো। (শায়লার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখে সবাই খুব অবাক হলো। আমাকে তো চিনো না শায়লা তোমার সব মতলব আমি ধরে ফেলেছি)
আমি: করতেই পারো তবে প্রতিমাসে আমাকে সবকিছুর হিসেব দিতে হবে আর যদি হিসেবে কোনো গড়মিল থাকে তাহলে মেঘ আর তোমাকে আমি জেলে দিতে দ্বিধা করবো না।
শায়লা: কোনো গড়মিল হবে না। (শায়লা হয়তো ভাবছে অফিস সামলানোর কথা বলে সবকিছু নিয়ে নিবে ও তো আর জানেনা নতুন উইল আমি কিভাবে তৈরি করছি)
আমি: সম্পত্তি তো আর কম না যথেষ্ট সম্পত্তি তাই সবকিছু মেঘ’কে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে আমি তোহার দায়িত্ব নিচ্ছি। আর মেঘ যেহেতু শায়লাকে এখনো ভালোবাসে তাই ও কখনো আমার আর তোহার ধারেকাছে আসতে পারবে না।
মেঘ: মানে?
আমি: আশা করি আবার বুঝাতে হবে না।
মা: তোমার কথা আমরা সবাই শুনবো কেন?
আমি: জেলে যেতে না চাইলে শুনতে হবে।
বাবা: আমি কণার কথায় রাজি। (বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন তারমানে বাবা সব বুঝে ফেলেছেন)
আমি: শায়লা এবার তুমি আসতে পারো।
শায়লা: আমি কাল থেকে তোমার অফিসে জয়েন করছি তো?
আমি: হ্যাঁ।
একে একে সবাই ড্রয়িংরুম থেকে চলে গেল আমিও চলে আসতে চাইলাম তখনি বাবা পিছন থেকে ডাক দিলেন।
বাবা: বুদ্ধিটা কিন্তু দারুণ।
আমি: (মুচকি হাসলাম)
বাবা: শায়লা সম্পত্তির লোভে তোমার অফিসে কাজ করবে আর ততদিনে তুমি প্রমাণ জোগাড় করে ফেলবে অন্যদিকে তোহার থেকে শায়লাকে দূরে রাখা হবে। মেঘ’কে অবহেলা করছ যেন খুব তাড়াতাড়ি ও বুঝতে পারে কাকে ও ভালোবাসে শায়লাকে নাকি তোমাকে? তাছাড়া মেঘ’কে দিয়েই সম্পত্তি দেখাশোনা করাবে কারণ তোমার সবকিছু তো মেঘেরই। আমার বিশ্বাস মা মেঘ ঠিক তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারবে।
আমি: আমার কাজটা শুধু আপনিই বুঝতে পারলেন মা তো রেগে গেলেন।
বাবা: ওসব ঠিক হয়ে যাবে সবাই একদিন তোমাকে বুঝবে।
মৃদু হেসে রুমে চলে আসলাম।
আমি রুমে আসা মাত্রই মেঘ আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
আমি: কি হচ্ছে এসব?
মেঘ: আগে তুমি বলো তুমি কি করছ এসব কেন করছ?
আমি: কি করেছি?
মেঘ: সবকিছুর দেখাশোনা নাহয় আমিই করবো কিন্তু তোমার আর তোহার থেকে দূরে থাকবো কেন?
আমি: কারণ তুমি শায়লাকে ভালোবাস। অন্য কাউকে ভালোবাস তারপরও…
মেঘ: কতোবার বলবো আমি শায়লাকে ভালোবাসি না।
আমি: কাকে ভালোবাস?
মেঘ: তোম…
আমি: থেমে গেলে কেন?
মেঘ: আমি তোমাকে ভালোবাসি শুনেছ তুমি।
আমি: বিশ্বাস করি না তাছাড়া আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না।
মেঘ: ভালোবাস না?
আমি: মেঘ লাগছে আমার হাতে।
মেঘ: লাগুক বলো ভালোবাস কিনা।
আমি: আমার মুখ থেকে পরে শুনো আগে নিজেকে প্রশ্ন করো কাকে ভালোবাসে তোমার মন। একবার আমাকে ভালোবাস বলবে আবার শায়লাকে ভালোবাস বলবে আমি তো এসব মেনে নিবো না। তাছাড়া আমি…
মেঘ: চুপ আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
আমি: একবার আমি একবার শায়লা এসব কি মেঘ?
আমি: বললাম তো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
মেঘ আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘের এমন দুরকম রূপ সত্যি আর নিতে পারছি না, ওকে অবহেলা করা প্রয়োজন। অবহেলা থেকেই ও সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝতে পারবে, জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওকে তাল সামলাতে না পেরে মেঘ টেবিলের উপর গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেল। মাথা তুলে মেঘ আমার দিকে তাকাতেই দেখি কপাল কেটে প্রচুর রক্ত পড়ছে।
চলবে?