নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ৮
মেঘ আমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
মেঘ: দেখতো কণা আমাকে দেখে কি খুনি মনে হয়?
আমি: খুনি কি কখনো গায়ে লিখে বেড়ায় যে আমি খুনি আমি খুনি?
মেঘ: তুমি অযতা আমাকে সন্দেহ করছ যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন নিজেই অনুশোচনায় ভুগবে।
আমি: তোমাকে পুলিশে দেওয়া উচিত তাহলেই সব সত্যি বেরিয়ে আসবে।
মেঘ: কাকে ফোন করছ?
আমি: পুলিশকে।
মেঘ: ফোন দাও বলছি। (মেঘ আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো)
মেঘ: রাগের মাথায় কোনো কাজ করতে নেই কণা পরে পস্তাতে হয়।
কণা: আমি তো ভুল কিছু করছি না।
মেঘ: তুমি ভুলই করছ। চোখের সামনে প্রমাণ দেখেই আমাকে সন্দেহ করছ একবার ভেবে দেখেছ এসবের আড়ালেও কোনো সত্যি থাকতে পারে।
আমি: মানে?
মেঘ: মানে খুব সহজ, এই ফোন থেকে আমার ফোনে কখনো কল আসেনি আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। (মেঘের কথা শুনে ফোনে থাকা মেঘের নাম্বারটা ভালো করে দেখলাম। শুধু ডায়াল লিস্টেই নাম্বারটা আছে তাছাড়া এই নাম্বারে ফোন দিয়ে কখনো কথা বলেনি কল দিয়েই কেটে দিয়েছে কিন্তু এমন ভাবে রেখেছে যেন দেখেই মনে হয় এই ফোন দিয়ে মেঘকে বারবার কল করা হয়েছে। তারমানে যে আসল খুনি সে মেঘকে ফাঁসানোর জন্য ইচ্ছে করেই মেঘের নাম্বারটা ডায়াল লিস্টে রেখে দিয়েছে আর ফোনটাও আমাদের বাসায় ইচ্ছে করেই ফেলে গেছে যেন আমি মেঘকে সন্দেহ করি)
মেঘ: কি হলো কণা?
আমি: তোমাকে ফাঁসানোর জন্যই কেউ এমনটা করেছে।
মেঘ: তাতো আমিও বুঝতে পারছি কিন্তু কে করবে এই কাজ।
আমি: রুহান হবে হয়তো।
মেঘ: মানে? কণা ও আমার ভাই হয়।
আমি: ভালোবাসার জন্য মানুষ সব করতে পারে মেঘ, তোমাকে আমার জীবন থেকে সরানোর জন্যই হয়তো রুহান এমন করেছে।
মেঘ: আমি বিশ্বাস করিনা আমার ভাই আর যাই করুক কাউকে খুন করার মতো জঘন্য কাজ করতে পারে না।
আমি: সেটা তো আস্তে আস্তে প্রমাণ হয়েই যাবে।
মেঘ: হ্যাঁ করো প্রমাণ। (মেঘ রাগ দেখিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো)
যতোই রাগ দেখাও মেঘ সত্যিটা তো আমি খুঁজে বের করবোই আর খুনি যদি হয় রুহান তাহলে তো ওকে আমি বুঝিয়ে দিবো ভালোবাসা কি।
দুদিন পর…
আজ আম্মুরা কানাডা চলে যাবে এয়ারপোর্ট এসেছি আম্মুদের সাথে। মধ্যে যে কিভাবে দুটু দিন কেটে গেল। আম্মুকে নিয়ে ভয় হচ্ছে যদি আম্মুকেও আব্বুর মতো… না না আম্মু কানাডা চলে যাওয়াই ভালো। কষ্ট তো হচ্ছে একটাই আব্বুর খুনি কে তা এখনো জানতে পারলাম না।
আম্মু: কণা তোর কোনো অসুবিধা হবে নাতো?
আমি: না আম্মু তুমি নিশ্চিন্তে যাও আর জোহা তো আমার কাছে আছেই।
চাচ্চু: একা বাসায় থাকবি না কিন্তু এখান থেকে সোজা তোর শশুড় বাড়ি চলে যাবি। ভয় হচ্ছে তোকে রেখে যেতে সম্ভব হলে তোকেও নিয়ে যেতাম কিন্তু তোর তো এখন বিয়ে…
আমি: আমাকে নিয়ে টেনশন করো না আম্মুকে দেখে রেখো।
চাঁচিআম্মু: তোর আম্মুর চিন্তা করিস না আমরা আছি তো।
চাচ্চু: আসছি মা।
আম্মু পিছন ফিরে বারবার আমাকে দেখছেন আর চোখের পানি মুচ্ছেন। নিয়তি আমাদের এমন জায়গায় এনে দাঁড় করাবে কখনো ভাবিনি, সত্যি নিয়তি খুব কঠিন।
জোহাকে নিয়ে মেঘদের বাসায় চলে আসলাম, বাসার দরজা খুলা কিন্তু কাউকে তো দেখতে পারছি না।
মেঘ: আশ্চর্য সবাই কোথায়?
আমি: দরজা খুলা অথচ কেউ…
পপি: ও তোমরা চলে এসেছ।
মেঘ: বাসার সবাই কোথায়রে পপি?
পপি: আব্বু অসুস্থ সবাই হসপিটালে আছে।
মেঘ: মানে কি হয়েছে আব্বুর? আমাকে জানালি না কেন?
পপি: আজ সকালে আব্বু হঠাৎ করেই স্ট্রোক করেন, তোমাদের অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু দুজনের মোবাইলই বন্ধ। (তাড়াতাড়ি আমার মোবাইল দেখলাম সত্যি বন্ধ হয়ে আছে চার্জ নেই মনে হয়)
মেঘ: সকালে আব্বু স্ট্রোক করেছেন আর আমি এই সন্ধ্যাবেলায় জানতে পারলাম।
আমি: মেঘ কথা না বাড়িয়ে হসপিটালে চলো।
মেঘ: হ্যাঁ চলো।
আমি: জোহা তুই বাসায় থাক পপি আছে আর তোহাকে রেখে দাও পপি।
তোহা: আমি যাবো।
আমি: না মামুনি আম্মু চলে আসবো কিছুক্ষণ পর।
তোহাকে রেখে মেঘ আর আমি বেরিয়ে পড়লাম।
হসপিটালে বাবার কাছে বসে আছি, বাবা ঘুমিয়ে আছেন। সবাই এখানে কিন্তু মেঘ বারবার কেবিনের বাইরে যাচ্ছে আবার ভিতরে আসছে, চটপট করছে শুধু।
মা: কিরে মেঘ কি হয়েছে এমন চটপট করছিস কেন?
মেঘ: কিছুনা আম্মু আসছি একটু। (মেঘ বেরিয়ে গেল তাড়াতাড়ি কোথায় গেল এভাবে)
আমি: মা হঠাৎ করে বাবার স্ট্রোক হলো কিভাবে?
মা: বুঝতে পারছি নারে মা।
দাদি: এইতো আহসানুল এর ঘুম ভেঙ্গেছে।
বাবা: কণা তুমি কখন আসলে?
আমি: এইতো কিছুক্ষণ আগে। আপনার কি হয়েছে হঠা…
বাবা: তোমাকে আমি বলতে পারবো না শুধু এইটুকু অনুরোধ তোহাকে তুমি আগলে রেখো।
আমি: তোহা তো আমার কাছেই আছে বাবা ওকে নিয়ে টেনশন করছেন কেন?
বাবা: কারণ আছে মা। (কি এমন হলো হঠাৎ বাবা তোহাকে নিয়ে টেনশন করছেন যার ফলে উনি স্ট্রোক পর্যন্ত করলেন)
দাদি: কণা তোরা বাসায় চলে যা রাতে থাকার প্রয়োজন নেই।
আমি: ঠিক আছে।
মা: মেঘ কোথায় দেখো তো।
আমি: আছে হয়তো বাইরে আমরা আসছি।
মা: ঠিক আছে।
কেবিনের বাইরে তো মেঘ’কে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না গেল কোথায়? হঠাৎ একটু দূরে বারান্দায় চোখ পড়লো, মেঘ একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে মনে তো হচ্ছে কথা কাটাকাটি করছে। কে এই মেয়ে? ওদের কাছে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতেই মেঘ আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
মেঘ: চলো।
আমি: হুম।
মেঘ ড্রাইভ করছে বারবার ওকে আড়চোখে দেখছি, খুব টেনশনে আছে মনে হচ্ছে।
আমি: কি হয়েছে?
মেঘ: কিছু নাতো।
আমি: মেয়েটি কে ছিল?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
মেঘ চুপ হয়ে আছে তাই আর কথা বাড়ালাম না।
রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসলাম মেঘকে দেখতে পারছি না, রাতের খাবারো খেলো না। বারান্দার দরজা খুলা দেখে বারান্দার দিকে আসলাম। মেঘ দাঁড়িয়ে আছে, হাতে সিগারেট ছিল আমাকে দেখেই ফেলে দিলো। ওর পাশে এসে দাঁড়াতেই আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি।
মেঘ: কণা আমি কখনো তোমার জীবনে যদি না থাকি আমার তোহাকে তুমি দেখে রেখো।
আমি: মানে?
মেঘ: কিছুনা। (মেঘ আমার চুল গুলো মুঠো করে ধরে কপালে চুমু খেলো, ওর এমন আচরণে খুব অবাক হলাম)
মেঘ: তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু বুঝতে দাওনা কেন?
আমি: কে বললো ভালোবাসি?
মেঘ: বাসো তো আমি জানি কিন্ত আমি…
আমি: আরে কাঁদছ কেন?
মেঘ: একটু চুপ হয়ে আমার বুকের সাথে মিশে থাকো প্লিজ। (মেঘ আবারো আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বুঝতেই পারছি না কি হলো ওর। বাবা আর মেঘ দুজনই তোহাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে কেন সেটাও বুঝতে পারছি না)
অনেক্ষণ পর মেঘ আমাকে ছেড়ে দিলো তারপর কোলে তুলে নিলো।
আমি: কি করছ?
মেঘ: আর কখনো তোমাকে এভাবে ভালোবাসতে পারবো না আজকে একটু ভালোবাসতে দাও।
মেঘ আমাকে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো হা হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এসব পাগলামি কেন করছে ও?
মেঘ: তোহাকে পপির কাছে দিয়ে আসি…
আমি: এই খবরদার আমার মেয়েকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করোনা।
মেঘ: এতো ভালোবাস কেন তোহাকে?
আমি: প্রত্যেক মা’ই তার সন্তানকে এভাবে ভালোবাসে।
মেঘ: হুহ।
আমি: কি করছ?
মেঘ: বলেছি তো চুপ হয়ে থাকো আজ তোমাকে অনেক ভালোবাসবো।
আমি: কি হয়েছে তোমার হঠা… (মেঘ আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে কথা বলতে নিষেধ করলো। বুঝতে পারছি না ও কি হুশে আছে নাকি নেশাটেশা করেছে)
মেঘ মাতালের মতো আমার ঠোঁট চুষছে ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। সত্যি আমি বুঝতে পারছি না মেঘ হঠাৎ করে এমন কেন করছে।
আচমকা মেঘ আমাকে ছেড়ে দিলো তারপর আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো।
মেঘ: ঘুমিয়ে পড়ো আসছি আমি। (মেঘ মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল)
আমি: আরে এতো রাতে কোথায় যাচ্ছ? (মেঘের পিছু পিছু বাসার বাইরে আসলাম, ওর কাছে আসার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। কোথায় গেল এতো রাতে কিছুই বুঝতে পারছি না)
সকাল দশটা বাজে মেঘ এখনো বাসায় ফেরেনি। সারারাত চটপট করেছি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।
পপি: ভাবি আর কতক্ষণ এভাবে বসে বসে অপেক্ষা করবে?
আমি: কি করবো বলতে পারো?
জোহা: ভাইয়ার কোনো বন্ধুর বাসায় যায়নি তো?
পপি: আমি তো সবাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কোথাও নেই। আম্মুকে ফোন করে বলি।
আমি: পাগল হয়েছ আব্বুকে নিয়েই তো সবাই টেনশনে আছে এখন আবার… (কলিংবেল বেজে উঠলো দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। মেঘ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ দুটু লাল হয়ে আছে)
আমি: কোথায় ছিলে তুমি?
মেঘ: সরো। (মেঘ ভিতরে আসতে চাইলো কিন্তু হাটতে পারছে না, মুখ থেকে গন্ধ আসছে তারমানে মেঘ ড্রিংক করেছে)
আমি: তুমি ড্রিংক করেছ?
পপি: ভাইয়া তো এসব ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আবা…
আমি: আগে ড্রিংক করতো মেঘ?
পপি: হ্যাঁ শায়লা ভাবি চলে যাওয়ার পর অনেকদিন এসব ছাইপাঁশ খেয়েছে কিন্তু এখন কেন খেলো বুঝতে পারছি না।
আমি: রুমে চলো।
মেঘকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে আসলাম বেশিই ড্রিংক করেছে হাটতেই পারছে না।
খাটে এনে বসাতেই মেঘ ধপাস করে খাটে শুয়ে পড়লো সাথে আমাকেও টান দিয়ে ওর বুকে শুয়ে দিলো।
আমি: ছাড়ো আমাকে কি গন্ধ ছিঃ মেঘ এসব মানুষে খায়? দূর কাকে কি বলছি ও তো নেশার ঘোরে আছে। (মেঘের হাত আমার কোমর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলাম। ওর শার্ট জুতো খুলে দিয়ে ভালোভাবে শুয়ে দিলাম, বিঘোরে ঘুমুচ্ছে ও। উঠে চলে আসতে চাইলাম মেঘ আমার এক হাত ধরে রেখেছে দেখে আবার ওর পাশে বসলাম। কি মায়াবী লাগছে ওর মুখটা, মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব কষ্ট এসে ভর করেছে ওর চোখেমুখে। মদের গন্ধের তোয়াক্কা না করে মেঘের একদম কাছে চলে আসলাম, ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম। আমার ফোন বেজে উঠেছে দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)
আমি: হ্যালো আম্মু।
আম্মু: কেমন আছিস মা?
আমি: এইতো তুমি ভালো আছ তো?
আম্মু: হ্যাঁ আমাকে নিয়ে তুই টেনশন করিস না। পুলিশ কি কিছু জানিয়েছে?
আমি: নাতো।
আম্মু: কিছু বুঝতে পারছি নারে মা কে আমাদের এতো বড় শত্রু তোর আব্বুকে…
আমি: কেঁদো না আম্মু সব ঠিক হয়ে যাবে আর পুলিশ তো তদন্ত করছে। (রুম থেকে মেঘের কন্ঠ ভেসে আসছে কি যেন আবোলতাবোল বলছে)
আমি: আম্মু আমি তোমাকে পরে ফোন করছি।
আম্মু: ঠিক আছে।
আম্মুর ফোন রেখে রুমে আসলাম। মেঘ চোখ বন্ধ রেখেই নেশার ঘোরে আবোলতাবোল বকছে।
মেঘ: আমি আর পারছি না দুটানায় পরে গেছি আমি। (কি বলছে মেঘ এসব কিসের দুটানা?)
আমি: মেঘ কি হয়েছে তোমার? (মেঘের পাশে বসে ওকে ধাক্কা দিতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে শুয়ে দিলো)
মেঘ: আমি শায়লাকে এখনো ভালোবাসি এদিকে কণার প্রতি কেমন যেন অনুভূতি হয় আমার, মেয়েটা খুব লক্ষী মায়া জন্মে গেছে কণার প্রতি। শায়লা ফিরে আসতে চাইছে এখন আমি কি করবো আমি যে দুটানায় পরে গেছি।
মেঘের কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। শায়লা ফিরে আসতে চাইছে তারমানে মেঘ তোহা দুজনই আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে, তাহলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে। মেঘ এখনো আবোলতাবোল কি যেন বলে যাচ্ছে ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম। কি করবো এখন আমি? কাকে নিয়ে বাঁচবো? মেঘ তো এখনো শায়লাকে ভালোবাসে তারমানে মেঘ শায়লাকেই বেছে নিবে, তাহলে আমার কি হবে? হ্যাঁ মেঘ আমার হবে না জেনেও ওকে বিয়ে করেছি কিন্তু তোহা? তোহার জন্যই তো এই বিয়ে, যদি তোহা না থাকে আমার কি হবে? উফফফ আর ভাবতে পারছি না মাথা প্রচুর ঘুরছে, আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসলাম।
টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি নিয়ে এক গ্লাস পানি ডগডগ করে খেলাম। কলিংবেল বাজছে চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে নিজেই এলোমেলো পায়ে দরজা খুলতে আসলাম। দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে আছি একটি মেয়ে এসেছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে খুব চেনা লাগছে মেয়েটিকে। ওহ এইটা তো সেই মেয়ে হসপিটালে মেঘ যে মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটি করছিল কিন্তু এই মেয়ে বাসায় এসেছে কেন?
আমি: কাকে চাই?
–মেঘ আর তোহাকে।
আমি: আপনি কে?
–শায়লা হায়দার। (নামটা শুনে যেন আমার নিঃশ্বাস আটকে গেল, এতো তাড়াতাড়ি শায়লা ফিরে আসলো)
শায়লা: মেঘ কোথায় ওকে ডাকো আর তুমি কে? নিশ্চয় কণা।
আমি: হ্যাঁ আমি কণা।
শায়লা: তোমাকে দেখার খুব সখ ছিল। মানুষ এতো বেহায়া হয় জানতাম নাতো।
আমি: মানে?
শায়লা: এইযে মেঘের বউ বাচ্চা আছে জেনেও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছ।
আমি: শুধু বাচ্চা ছিল বউ না। আর তোমাকেও আমার দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।
শায়লা: কেন?
আমি: যে ছয় মাসের একটি ফুটফুটে বাচ্চা ফেলে অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যায় তাকে দেখার ইচ্ছে হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি?
শায়লা: একদম বাজে কথা বলবে না।
আমি: সত্যি কথা গুলোই তো বললাম।
পপি: ভাবি এভাবে কে বাইরে চিৎকার কর… (পপি শায়লাকে দেখে ভয়ে আতকে উঠলো, পপির কোলে তোহাকে দেখে শায়লা আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাসতে হাসতে বাসার ভিতরে ঢুকে গেল)
শায়লা: তোহা মা।
পপি: তোহাকে ছুবে না তুমি বলে দিলাম।
শায়লা: আমার মেয়ে আমি যা খুশি করবো।
পপি: তখন মনে ছিল না এখন কেন ফিরে এসেছ?
শায়লা: কারণ মেঘ আমাকে এখনো ভালোবাসে।
শায়লা তোহাকে পপির কোল থেকে কেড়ে নিজের কাছে নিয়ে গেল। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে চুপ হয়ে এসব দেখছি। কি করবো এখন আমি? তোহা যে শায়লারই মেয়ে আমি জোড় করবো কিভাবে তাছাড়া মেঘ সত্যিই তো শায়লাকে এখনো ভালোবাসে। আমি কোন অধিকারে তোহাকে আমার মেয়ে বলে দাবী করবো? আমি যে তোহাকে ছাড়া সত্যি থাকতে পারবো না। শায়লা তোহাকে কোলে নিয়ে আদর করছে চুমু খাচ্ছে দেখে বুকে ব্যথা অনুভব হলো, দরজার কাছেই ফ্লোরে বসে পড়লাম। চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে, আমি বোধহয় মেঘ তোহা দুজনকেই হারিয়ে ফেললাম…
চলবে?