নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৪

0
3000

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

হুট করে কেউ ভালোবাসার কথা জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দেওয়া যায়? চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি দেখে মেঘ আমার হাত ওর দুহাতের মুঠোয় নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো।
মেঘ: উত্তরটা দাও। (কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না, বলে দিবো সত্যিটা)
আমি: আসলে আমি আপনাকে…
মেঘ: জানি ভালোবাসেন না। (মেঘের এমন কথা শুনে চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম, ও দিব্যি হাসছে। কি বলছে ও এসব)
মেঘ: দুদিনে ভালোবাসা হয় না কণা সেটা আমিও জানি।
আমি: তা নয় আমি…
মেঘ: জানি তুমি তোহার জন্য বিয়েটা করেছ। তুমি খুব ভালো মেয়ে কণা, নাহলে নিজের পুরো ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে তুমি আমার মেয়ের জন্য বিয়েটা করতে না। হ্যাঁ মানছি আমি রুহানের এমন ব্যবহারে তোমাকে খারাপ ভেবেছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তুমি সত্যি খুব ভালো মেয়ে। আজ সারাদিন আমি নিজেকে সময় দিয়েছি তোমাকে নিয়ে ভেবেছি সবশেষে এটাই বুঝতে পেরেছি আমাদের দুজনের…
আমি: আলাদা হতে বলবেন না প্লিজ। (আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে মেঘ হেসে দিলো)
মেঘ: না না আলাদা হতে বলবো না তুমি তোহার আম্মু হয়েই থাকো সাথে আমার বন্ধু।
আমি: বন্ধু?
মেঘ: হ্যাঁ কণা আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না আবার ডিভোর্সও দিতে পারবো না, তবে তুমি যদি কখনো ডিভোর্স চাও তাহলে আমি তোমাকে বাঁধাও দিবো না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আমি চাই তুমি তোমার পড়াশুনা চালিয়ে যাও নিজের মতো করে বাঁচো, আমি কখনো তোমার উপর কোনো অধিকার খাটাবো না। আর তুমিও না।
আমি: হুম।
মেঘ: একসাথে যখন থাকতেই হবে ঝগড়াঝাঁটি করে তো লাভ নেই তাই আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু।
আমি: বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু কি কখনওই হতে পারবো না? (আমার এমন প্রশ্ন শুনে মেঘ মৃদু হাসলো)
মেঘ: সম্ভব না কারণ আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল শায়লা, আর কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
আমি: এখনো ভালোবাসেন শায়লাকে?
মেঘ: জানিনা। (মেঘ ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো)
আমি: আপনি যা চাইছেন তাই হবে, কখনো জোড় করবো না আপনাকে।
মেঘ: বন্ধু বলে যখন মেনেই নিয়েছ তাহলে আপনি করে বলছ কেন? (মৃদু হাসলাম)
আমি: এসব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘ: রুমে চলো খাবে।
আমি: হুম।
মেঘ চলে গেল, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আমার জীবনের সবকিছু এভাবে উলটপালট হয়ে যাচ্ছে কেন? আমি কি কখনো মেঘের মনে জায়গা করে নিতে পারবো না?

রুমে এসে দেখি মেঘ শুয়ে পড়েছে পাশে তোহা ঘুমিয়ে আছে। লাইট বন্ধ করে দিয়ে তোহার অন্যপাশে এসে শুয়ে পড়লাম।
মেঘ: কি হলো খাবে না?
আমি: উঁহু খিদে নেই।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: একটা কথা বলবো রাখবে?
মেঘ: হ্যাঁ বলো।
আমি: কাল একবার আমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে?
মেঘ: হাহাহা না হেসে পারলাম না।
আমি: মানে কি? এতে হাসার কি আছে?
মেঘ: স্বামী মেনে নেয়নি তাই কালই পালিয়ে যেতে চাইছ আসলে তোমরা…
আমি: বলে ফেলো সব মেয়েরা এক। আসলে তোমার মনের ভিতর শায়লা যে বীজ রুপন করে দিয়েছে তা কখনো দূর হবে না। আমি তো মানুষ নাকি? আমারো তো নিজের বাবা মাকে দেখতে ইচ্ছে হয়। আর আমার যদি পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতো তাহলে একাই চলে যেতাম এই বাড়ির সম্মানের কথা ভেবে তোমাকে নিয়ে যেতে বলতাম না।
মেঘ: চেঁচামেচি করছ কেন?
আমি: তো কি করবো, তুমি এমন কেন একবার ভালো তো পরমুহূর্তেই খারাপ।
মেঘ: সরি আসলে আ…
আমি: চুপ করো আর কিছু শুনতে চাই না।

মেঘ চুপ হয়ে গেলো, নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছি। ভাগ্যের চাকা এভাবে ঘুরে যাবে বুঝতেই পারিনি। যাই হয়েছে সব মেনে নিয়ে তো আমি মেঘকে ভালোবাসতে শুরু করেছি কিন্তু মেঘ, ও পারছে না কেন? উল্টো কতো সুন্দর করে বলে দিলো বন্ধু হয়ে থাকবে, বন্ধু হয়েও তো থাকছে না। একবার ভালো ব্যবহার করছে তো দুবার খারাপ ব্যবহার করছে। এতো অদ্ভুত মানুষ ও।
মেঘ: বাইরে গিয়ে কাঁদো আমার ঘুমে ডিস্টার্ব হচ্ছে।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা কান্না থামাও নাহয় বাইরে চলে যাও।
আমি: চলেই যাবো।
বারান্দায় এসে কাউচে শুয়ে পড়লাম, খুব কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় হয়েছি আব্বু আম্মু কখনো আমাকে কষ্ট কি সেটা বুঝতে দেননি আর আজ…

কপালে কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি তোহা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার মুখে হাত বুলাচ্ছে।
আমি: মামুনি তুমি?
তোহা: পঁচা মেয়ে আমাকে রেখে এখানে ঘুমিয়েছ কেন? জানোনা তোমাকে জড়িয়ে না ধরে আমি ঘুমুতে পারিনা। আর আব্বুটা তো আরো বেশি পঁচা শুধু মিথ্যে বলে।
তোহা: কি মিথ্যে বলেছে?
তোহা: বলেছে তুমি ফুফির কাছে আছ আসলে তো তুমি…
মেঘ: তোহা তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো বাসায় খুঁজে বেড়াচ্ছি। (তোহা দৌড়ে গিয়ে মেঘের একটা হাত চেপে ধরলো)
তোহা: এদিকে এসো।
মেঘ: কোথায়? (তোহা মেঘ’কে টেনে আমার কাছে নিয়ে আসলো)
তোহা: দেখো তো তোমার পরীটার অসুখ হয়েছে কিনা।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
তোহা: দেখো না। (মেঘ কিছুটা অসস্থি নিয়ে মেয়ের কথা রাখার জন্য একটা হাত আমার কপালে রাখল তারপর এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলো)
মেঘ: জ্বর আসলো কিভাবে? (এতো ঠান্ডার মধ্যে রুম থেকে বের করে দিয়ে এখন আবার জিজ্ঞেস করছে জ্বর আসলো কিভাবে? এমন ঠান্ডা বাতাসে সারারাত পরে থাকলে তো অসুস্থ হবই)
আমি: আমি ঠিক আছি।
মেঘ: না তুমি ঠিক নেই জ্বর অনেক বেশি।
আমি: আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
মেঘ: আমরা কিন্তু বন্ধু তো…
আমি: আসছে বন্ধুত্ব দেখাতে! একবার ভালো ব্যবহার করলে দুবার খারাপ ব্যবহার করে আবার বন্ধু। চলো মামুনি।
তোহাকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

মা মেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দাদি হাসিমুখে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।
দাদি: তোর কোলে তোহাকে দেখলে বুঝার উপায় নেই ও যে শায়লার মেয়ে। (কথাটা শুনে বুকের ভিতর কেমন যেন এক অদ্ভুত ব্যথা শুরু হয়ে গেলো)
দাদি: আরে মুখটা কালো করে ফেললি যে, আমি ওভাবে বলিনি এখন তো তোহা তোরই মেয়ে।
আমি: হ্যাঁ তোহা শুধু আমার মেয়ে আর কখনো কেউ শায়লার মেয়ে বলবেন না প্লিজ।
দাদি: আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
মা: কণা তোমার বাবা ফোন করেছিলেন তোমার মোবাইল নাকি বন্ধ।
আমি: হতে পারে দেখিনি।
মা: বিয়েটা তো হুট করেই হলো মা কোনো অনুষ্ঠান বা কোনো নিয়মই পালন করা হয়নি, তোমার বাবা বলছিলেন নিয়ম অনুসারে আজ যেন তুমি আর মেঘ তোমাদের বাসায় যাও।
আমি: কিন্তু…
দাদি: মেঘের কথা ভাবছিস? চিন্তা করিস না ও যাবে।
আমি: ঠিক আছে।

তোহাকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছি, বাসার সবাই আস্তে আস্তে ডাইনিং এ আসতে শুরু করেছে কিন্তু মেঘ তো এখনো এলো না।
চাঁচি: কি ব্যাপার নতুন বউয়ের হাতে রান্না কি খেতে পারবো না, নাকি বড় লোকের মেয়ে বলে শশুড় বাড়ির লোকজন কে রেঁধেও খাওয়াবে না। (উনার এমন কথা শুনে বেশ অবাক হলাম এমন ভাবে কেউ কথা বলে, নাকি চাঁচিশাশুড়িরা এমনই হয়)
রুহান: মা কণা রান্না করতে পারে না। (রুহান চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বললো)
চাঁচি: তুই কিভাবে জানিস?
রুহান: আমি তো ওকে ভালোবাসি মা তাই আন্দাজ করেছি তাছাড়া ও রান্না জানলেও আমি ওকে রান্না করতে দিবো না।
চাঁচি: কেন দিবি না?
রুহান: ওর হাত পুড়ে যায় যদি।
মেঘ: বাব্বাহ্ ভালোবাসার মানুষের জন্য এতো মায়া। (মেঘের কথাটা যেন বুকে এসে বিঁধল চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম, ওর সাথে বসে খাওয়া সম্ভব না)
দাদি: কণা কোথায় যাচ্ছিস চুপ করে বস।
আমি: আমার খিদে নেই দাদি।
দাদি: রাতেও কিন্তু খাসনি।
রুহান: কি কণা রাতে খায়নি? তোমরা কি করছিলে ওকে খাও…
আমি: রুহান আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।
রুহান: হাজার বার আসবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি: কিন্তু আমি বাসি না।
রুহান: বাসতে তো তোমাকে হবেই, না বাসলে জোড় করবো।
মা: রুহান এসব কি ধরণের কথা?
রুহান: চাঁচি আমি কিন্তু…
বাবা: রুহান একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? (বাবা আসছেন দেখে সবাই নীরব হয়ে গেলো। পপি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে শুধু, রুহান আমাকে নিয়ে যা শুরু করেছে পপির তো কষ্ট হবেই। সব সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষের অবহেলা আর নিজের চোখের সামনে অন্য মেয়ের প্রতি ভালোবাসা সহ্য করা যায় না)
দাদি: মেঘ কণা’কে নিয়ে ওদের বাসা থেকে ঘুরে আয়।
মেঘ: আচ্ছা দাদি।

সবার সাথে একটু আড্ডা দিয়ে রুমে আসতেই মেঘ’কে রুমের মধ্যে পায়চারী করতে দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। কে জানে আবার কেন রেগে আছে।
আমি: তোহা কোথায়?
মেঘ: ওহ আপনি এসেছেন মহারাণী।
আমি: তোহা তো তোমার সাথে রুমেই এসেছিল কোথায় ও?
মেঘ: পপির কাছে।
আমি: ওহ।
মেঘ: এই তুমি কি জাদু জানো নাকি? (মেঘ হঠাৎ করে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো, ওর চোখ দুটু রাগে লাল হয়ে আছে)
আমি: মানে কি?
মেঘ: রুহানকে নাহয় নিজের রুপের জ্বালে বস করে রেখেছ কিন্তু দাদি আম্মু? ওদের কিভাবে বস করেছ?
আমি: ছিঃ এসব কি ধরনের কথা?
মেঘ: তুমি যা বলছ পরিবারের সবাই তাই শুনছে কি জাদু করেছ ওদের উপর? আমি তোমার বাবার অফিসে চাকরি করি বলে তোমার চাকর নাকি যে তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে আমাকে। শুধু আজকেই নিয়ে যাবো তোমাকে এর পর ভুলেও কখনো আমাকে তোমার চাকর ভাবতে যেও না, পারবো না তোমার জন্য কিছু করতে বা তোমার কথা শুনে চলতে।
আমি: আমার হাত ছাড়ো লাগছে।
মেঘ: লাগার জন্যই এতো শক্ত করে ধরেছি, ভবিষ্যৎ এ আমাকে চাকর ভাবার আগে হাতের দাগটা দেখে নিও। (মেঘ আমার হাত ছেড়ে দিলো হাতে সত্যি দাগ পড়ে গেছে, খুব ব্যথা করছে)
মেঘ: এই একদম ন্যাকা কান্না কাঁদবে না এসব আমি সহ্য করতে পারিনা।
আমি: নিয়ম অনুসারে আজ আমাদের বাসায় যেতে হবে দাদি তো এটাই বলেছেন আমি তো কিছু…
মেঘ: বিয়েটাই মানিনা আমি সাথে তোমাকেও না তাহলে নিয়ম আবার কিসের? শুনো ভুল করেও আমাকে তোমার স্বামী ভাবতে যেও না (নিশ্চুপ হয়ে ওর কথা গুলো শুনছি আর রাগি চেহারা দেখছি। কোনো মানুষ এমন হতে পারে ভাবতেই পারছি না। এখনি ভালো ব্যবহার করছে আবার পরক্ষণেই খারাপ আর এতোটাই খারাপ যে ওকে মানুষ ভাবতেই দ্বিধা হচ্ছে আমার)
মেঘ: এই তুমি এতো বেহায়া কেন? রুহান তো তোমাকে ভালোবাসে যাও না ওর কাছে চলে যাও আমাকে রেহাই দাও।
আমি: রুহানের কাছে যদি আমি ফিরে যাই তাহলে তুমি তোমার খুব আপন একজন কে হারাবে।
মেঘ: মানে? (ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

পপি তোহাকে নিয়ে বাগানে হাটছে দেখে ওদের কাছে আসলাম। কেউ আসছে টের পেয়েই পপি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো।
আমি: পপি তুমি কাঁদছিলে?
পপি: নাতো।
আমি: তোহা ফুফি কি কাঁদছিল মা।
তোহা: হ্যাঁ।
পপি: ভাবি এই ছোট মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?
আমি: ছোট মেয়েটার সামনেই কেঁদেছ তাই। আমার উপর ভরসা রাখো পপি প্লিজ, আর তোমার কি নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নেই?
পপি: পারছি না ভাবি আমি আর পারছি না। এতোদিন তো শুধু ওর অবহেলা সহ্য করেছি কিন্তু এখন তুমি আমি রুহান একি ছাদের নিচে বাস করছি, রুহান সবসময় তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছে এসব আমি নিতে পারছি না।
আমি: সেদিন তুমি ফোন করার পর আমি রুহানকে বুঝিয়েছিলাম কিন্তু ও যে বুঝেনি তাতো জানতাম না তাছাড়া তোমাদের বাড়িতেই বউ হয়ে আসবো এইটাও তো জানতাম না, এখন একি ছাদের নিচে বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে তুমি চিন্তা করো না রুহান তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিবে আজ হউক বা কাল।
পপি: হুম তাই যেন হয়।
আমি: এখন বাসায় চলো আমাদের রেডি হতে হবে।

তোহার চুল আছড়িয়ে দিচ্ছি হুট করে বিছনায় একটা শাড়ি এসে পড়লো পিছনে তাকিয়ে দেখি মেঘ, তারমানে ও শাড়িটা ছুড়ে দিয়েছে।
মেঘ: শাড়িটা পড়ে আমাকে উদ্ধার করো।
আমি: শাড়িটা বুঝি দাদি তোমার হাতে দিয়ে দিয়েছেন।
মেঘ: হ্যাঁ যত্তোসব আধিক্যেতা। (যাক দাদির ভয়ে অন্তত সবার সামনে তো ভালো ব্যবহার করে নাহলে রুমে যা করে তা যদি সবার সামনে করতো তাহলে তো মান সম্মান সব যেতো)
মেঘ: এই তুমি হাসছ কেন?
আমি: তুমি পুরুষ নাকি অন্য কিছু এইটা ভেবে।
মেঘ: মানে?
আমি: এইযে দাদির ভয়ে সবার সামনে ভালো মানুষ আর খালি রুমে বউয়ের সামনে যতো খারাপি।
মেঘ: এই বউ বলেছ কেন? আর কখনো যেন না শুনি।
শাড়িটা হাতে নিয়ে মেঘ’কে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর ভাবছি মেঘ আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করে তারপরও আমি ওকে ঘৃণা করতে পারিনা কেন? উল্টো ওকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
মেঘ: মায়াবতীর চুলগুলো সত্যি খুব সুন্দর। (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, আয়নাতেই তাকালাম মেঘ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে)
মেঘ: দাদির পছন্দ আছে বলতে হয় বেগুনী রঙের শাড়িটায় তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। (ওর মুখে কথা গুলো শুনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম, ব্যাপার কি হঠাৎ ভূতের মুখে রাম নাম)
মেঘ: এভাবে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছ কেন আমি বুঝি আমার বউকে সুন্দরও বলতে পারিনা? (ওর কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওর কপালে হাত দিলাম)
মেঘ: কি দেখছ?
আমি: না জ্বর ট্বর তো নেই।
মেঘ: আমি ঠিক আছি কণা। (মেঘ আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো, দুজনের নিঃশ্বাস ভারী খাচ্ছে)
মেঘ: তোমাকে সত্যি খুব সুন্দর লাগছে।
আমি: তুতুতুমি ঠিঠিক আছ তো।
মেঘ: হ্যাঁ তোতলাচ্ছ কেন, নাকি আমি এভাবে আদর করাতে লজ্জা পাচ্ছ।
আমি: সত্যি বলছি আমি তোমাকে এখন একদম ছিনতে পারছি না।
মেঘ: একটু পর ঠিক ছিনতে পারবে। (মেঘ ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আনছে দেখে ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলাম)
আমি: তোহা কিন্তু সব দেখছে।
মেঘ: উঁহু তোহা পুতুল নিয়ে খেলছে।
আমি: ছাড়ো আমাকে।
মেঘ: ছেড়ে দিবো তো একটু আদর করতে দাও।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘ আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট দুটু আলতো করে রাখলো, ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মেঘ আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এই মেঘ’কে আমি একদম ছিনতে পারছি না, ও কি সেই মেঘ যে কিনা একটু আগে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমার হাত জোড়ে চেপে ধরেছিল? হাতের দাগটা তো এখনো রয়ে গেছে কিন্তু মেঘ এতো তাড়াতাড়ি পাল্টে গেলো কিভাবে….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে