নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৩০/অন্তিমপর্ব

1
3564

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৩০/অন্তিমপর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

কয়েক মাস পর…

মেঘের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটা মাস, মেঘ হয়তো নিজেকে বদলে নিয়েছে অনেক। জানিনা মেঘ কোথায় আছে আমাকে এখনো ভালোবাসে কিনা। আজ তোহাকে খুব মনে পড়ছে একটাবার ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। মেঘ’কে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ও কি আমাকে এখনো ভালোবাসে নাকি চোখের আড়াল হতেই ভুলে গেছে কণা নামের এই পাগলীটাকে। মেঘ হয়তো ভাবছে আমি কানাডায় আছি আর নতুন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি, মেঘ তো আর জানেনা আমি যে আজ ওর সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। আজ আমার ডেলিভারির ডেইট সন্ধ্যায় সিজার করা হবে, এইতো আর দু একঘণ্টা পর হসপিটালে এডমিট হয়ে যাবো। আজ আমার বড্ড ভয় হচ্ছে শুধু মনে হচ্ছে আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার বেবির কি হবে। আজ মেঘ’কে পাশে পেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আজ মেঘ আমার পাশে থাকলে আমার হাতটা ওর দুহাতের মুঠোয় পুরে রাখলে বুঝি আমি অনেক বেশি সাহস পেতাম, প্রত্যেকটা নারীই বোধহয় এই সময় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পাশে পেতে চায়। মেঘ আসবে কিভাবে ও যে জানেই না আমি ওর সন্তানের মা হবো আজ। ইচ্ছে হচ্ছে আম্মুকে একবার বলি মেঘ’কে জানাতে কিন্তু ভয়ও হচ্ছে কারণ আজ চাচ্চু আর চাঁচিআম্মা আসছেন। চাচ্চু যদি রেগে যান তা…
জোহা: আপু এই আপু.. (জোহা আসছে শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, মেঘের ছবির সামনে থেকে সরে এসে বিছানায় বসলাম)
জোহা: আব্বুরা চলে এসেছেন নিচে যাবে?
আমি: নারে ভালো লাগছে না।
জোহা: আপু তুমি কাঁদছিলে?
আমি: কই নাতো।
জোহা: তোমাকে কতোবার বলবো এই অবস্থায় হাসিখুশি থাকবে একদম মন খারাপ করবে না। (মৃদু হাসলাম, কিভাবে বুঝাই ওদের আজ যে মেঘ’কে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে)
জোহা: আসছি আমি, একা একা একদম সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতে যেওনা কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো।
আমি: ঠিক আছে।
জোহা চলে গেল। এই কয়েকমাস জোহা আর আম্মু আমাকে আগলে রেখেছেন। জোহা তো আমাকে একদম মন খারাপ করতে দেয়নি সারাক্ষণ এইটা ওইটা করে আমাকে হাসিখুশিতে মাতিয়ে রেখেছে। আর আম্মু তো সারাক্ষণ আমি কি খেলে ভালো হবে কোন খাবারটা খেলে বেবি ভালো থাকবে এসব নিয়েই পরে থাকতো। সত্যি এমন পরিবার পাওয়া সবার ভাগ্যে জোটে না, আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতী।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আনমনে হয়ে বিকেলের আকাশ দেখছি, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি একটু পর হসপিটালে চলে যেতে হবে। কেন যেন মনে হচ্ছে আজ আমার কিছু একটা হয়ে যেতে পারে, প্রত্যেক মেয়েরই বোধহয় এই সময় এমনটা মনে হয়। আচ্ছা সত্যি যদি আজ আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তো মেঘ’কে শেষ দেখাটুকুও দেখতে পারবো না, তোহাকে শেষবারের মতো বুকে জড়িয়ে নিতে পারবো না, তোহার মুখে নতুন আম্মু ডাকটাও আর শুনা হবেনা।
আস্তে আস্তে টেবিলের পাশে এসে চেয়ারটা টেনে বসলাম। ডায়েরীর একটা পাতা ছিঁড়ে ছোট একটা চিরকুট লিখতে বসলাম। “মেঘ তুমি হয়তো ভাবছ আমি কানাডা গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছি কিন্তু না মেঘ তুমি তো জানোনা আজ আমি তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। কোথায় যেন শুনেছিলাম প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সবসময় যাকে দেখবে বেবি ঠিক তারমতো হবে, জানো মেঘ আমি সবসময় তোমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে তাকতাম যেন বেবিটা দেখতে ঠিক তোমার মতো হয়। জানিনা এসব কথা সত্যি কিনা তবুও নিজের অজান্তেই এমন পাগলামি করতাম। সবসময় চেয়েছি আমার যেন আরেকটা তোহা হয় মানে মেয়ে বেবি যেন হয়। আজ সেই খুশির দিন যে দিনটার জন্য প্রত্যেক নারী অপেক্ষা করে। আজ খুব ভয় হচ্ছে মেঘ তোমাকে পাশে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু তাতো সম্ভব নয়, আমার যদি কিছু হয়ে যায় আমার তোহা আর দোহা’কে তুমি দেখে রেখো। ওহ হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি আমার মেয়ে বেবি হলে দোহা নাম রেখো তোহার বোন তো নাম মিলিয়ে না রাখলে হয় বলো? আম্মুকে বলে যাবো আমার কিছু হলে যেন এই চিঠিটা আর বেবি তোমাকে দিয়ে দেয়। আমায় ক্ষমা করে দিও মেঘ তোমার থেকে দূরে থাকতে চাইনি পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল। ভেবো না দূরে আছি বলে তোমায় ভুলে গেছি, ভুলিনি মেঘ তোমায় এক মুহূর্তের জন্যও। যেমনটা আগে ভালোবাসতাম তোমায় এখনো ঠিক তেমনি ভালোবাসি শুধু এখন আর আগের মতো প্রকাশ করতে পারিনা নীরবে ভালোবাসি তোমায়”

চাঁচি: জোহা কণাকে সাবধানে নিয়ে আয়।
আমি: আরে আমি একাই যেতে পারবো।
চাঁচি: একদম চুপ বোকা মেয়ে এসময় কেউ একা চলাফেরা করে? (ওদের পাগলামি দেখে খুব হাসি পাচ্ছে বাসা থেকে বের হয়ে একা নাকি গাড়িতে উঠতে পারবো না)
আম্মু: কণা সাবধানে।
আমি: হুম।
চাচ্চু: কিরে কণা তুই কি আমার উপর রেগে আছিস? (গাড়িতে উঠে বসতেই চাচ্চুর এমন প্রশ্ন শুনে বোকা হয়ে গেলাম)
আমি: কেন চাচ্চু রাগ করবো কেন?
চাচ্চু: আমার সাথে কথা বলছিস না যে।
চাঁচি: এখন কি মেয়ের বকবক করতে ইচ্ছে হবে তুমিও না।
চাচ্চু: মা আমি যা করেছিলাম তোর ভালোর জন্যই করেছিলাম।
আমি: জানি চাচ্চু, আর তোমাদের কারো উপর আমার কোনো রাগ নেই। তোমরাই তো আমার সবকিছু আপন মানুষের উপর কি রাগ করা যায়?
চাচ্চু: এইতো লক্ষী মেয়ে।

গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, গাড়ি চলছে হসপিটালের দিকে। যদিও জানি এই রাস্তা দিয়ে মেঘ কখনো আসবে না তবুও অবচেতন মন রাস্তার চারপাশে শুধু মেঘ’কে খুঁজছে। শুধু একটা বার আজ মেঘ’কে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ সবাই যেভাবে আমাকে নিয়ে পাগলামি করছে ভাবছে কিসে ভালো হবে আমার, মেঘ পাশে থাকলে হয়তো এভাবেই পাগলামি করতো।

একটু পর নাকি আমাকে অটি’তে নেওয়া হবে, চুপচাপ বসে চাচ্চুর এইটার জন্য ওইটার জন্য দৌড়াদৌড়ি দেখছি আর ভাবছি সবাই আমাকে কতো ভালোবাসে।
আম্মু: কিরে মন খারাপ কেন?
আমি: নাতো আম্মু।
আম্মু: ভয় পাচ্ছিস তোর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, পাগলী মেয়ে ভয় কিসের আমরা সবাই আছিতো তোর পাশে।
আমি: একজন মানুষের শূন্যতা সবার পাশে থাকার আনন্দটাকে ফিকে করে দিচ্ছে।
আম্মু: কার? (আনমনে কি বলে ফেললাম আম্মুতো আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: কিছুনাতো আম্মু। এক গ্লাস পানি দিবে বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে।
আম্মু: দাঁড়া নিয়ে আসছি।

দুজন নার্স এসেছে আমাকে অটি’তে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এটাই সুযোগ আম্মুর হাতে চিঠিটা দেওয়ার। আম্মু আমার পাশেই দাঁড়ানো, আম্মুর হাতে চিঠিটা গুঁজে দিলাম। আম্মু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন দেখে মৃদু হাসলাম।
আমি: জানো আম্মু প্রত্যেক নারী এই সময়টায় নিজের স্বামীকে পাশে পেতে চায় আমারো ইচ্ছে হচ্ছে মেঘ’কে একবার দেখতে কিন্তু কি করবো বলো আমার যে এই ভাগ্য নেই। আজ মেঘ এখানে থাকলে হয়তো আমার হাতে চুমু খেয়ে বলতো “ভয় পেয়ো না পাগলী আমি আছিতো” জানো আম্মু এই একটা কথা আজ খুব মিস করছি, হয়তো এই কথাটা আমার মনে অনেক বেশি সাহস যুগিয়ে দিতো। চিঠিটা তুমি খুলো না, যদি আমার কিছু হয়ে যায় আর বেবিটা বেঁচে থাকে তাহলে এই চিঠি আর বেবি মেঘ’কে দিয়ে দিও। তোহা সবসময় আমার কাছে একটা পুঁচকে পুতুল চাইতো, মায়ের ভালোবাসা তো দিতে পারিনি মেয়েটাকে পুঁচকে পুতুলটাই নাহয় দিয়ে দিও ওকে। (আম্মুর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে, এখনো আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। নার্সরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি আম্মুর মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি)

দুচোখ মেলে যখন তাকালাম চারপাশ কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা লাগলো, অক্সিজেন মাস্ক মুখে লাগানো হাতে কিসব লাগানো সাথে পেটে খুব ব্যথা অনুভব হচ্ছে। সামনের দেয়ালে রাখা দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো বারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাজে। সন্ধ্যায় সিজার হবার কথা ছিল তারমানে মধ্যে কেটে গেছে কয়েক ঘন্টা, আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম বলে ডক্টর আমার শরীরে একটা ইনজেকশন পোষ করেছিল ব্যাস আর কিছু মনে নেই। মিটমিট করে রুমের চারদিকে চোখ বোলাচ্ছি হঠাৎ রুমের এক কোণে আমার চোখ আটকে গেল, মেঘ মোনাজাতে দুহাত বাড়িয়ে পাগলের মতো কাঁদছে। মেঘের পাশেই তোহা বসে আছে তোহার কোলে ছোট বেবি, তোহা আর বেবিকে পপি দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছে। জ্ঞান ফেরার পর এমন সারপ্রাইজ পাবো আমিতো ভাবিইনি। হুট করে জোহা রুমে এসে ঢুকলো হাতে কিছু ওষুধ আর ইনজেকশন, আমাকে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোহা দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
জোহা: আপু তোমার জ্ঞান ফিরেছে তুমি ঠিক আছ তো? (জোহার চেঁচামেচি শুনে মেঘ ঘুরে আমার দিকে তাকালো)
জোহা: আপু কষ্ট হচ্ছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে ডক্টর ডাকবো? (জোহা তাড়াতাড়ি কেবিনের বাইরে চলে গেল। মেঘ এসে আমার পাশে ফ্লোরেই হাটু গেড়ে বসে পড়লো, মেঘের দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে)
আম্মু: কোথায় কণা জ্ঞান ফিরেছে আমার মেয়ের? (আম্মুকে দেখে চমকে উঠলাম কি অবস্থা হয়েছে আম্মুর, সবাই এতো অস্থির হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না)
ডক্টর: সবাই এভাবে চেঁচামেচি করলে কিন্তু প্যাসেন্টের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। (জোহা ডক্টরকে ডেকে নিয়ে এসেছে, ডক্টর এসেই আমার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিলো)
ডক্টর: এখন আর ভয়ের কোনো কারণ নেই।
আম্মু: কিরে কষ্ট হচ্ছে?
আমি: না আম্মু আমি ঠিক আছি, তোমরা এতো অস্থির হচ্ছ কেন?
আম্মু: অস্থির হবো না কতো ঘন্টা পর তোর জ্ঞান ফিরেছে জানিস তুই? ডক্টর তো সোজা বলে দিয়েছিল আল্লাহ্‌ কে ডাকতে। আমার মনে হয় মেঘের ভালোবাসার জোড়েই আল্লাহ্‌ তোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানিস মেঘ নামাজ পড়ে পাগলের মতো কেঁদেছে, এক মুহূর্তের জন্য জায়নামাজ ছেড়ে উঠেনি। (মেঘের দিকে তাকালাম আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
চাচ্চু: পরে এসব বলো এখন ওদের একটু একা থাকতে দাও। (চাচ্চুর কথা শুনে সবাই কেবিনের বাইরে চলে গেল)

মেঘ আমার পাশে বসে আমার দুগালে আলতো করে ধরলো, আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো।
আমি: কাঁদছ কেন এভাবে?
মেঘ: (নিশ্চুপে কেঁদেই যাচ্ছে)
আমি: মেঘ আমার দিকে তাকাও। (মেঘ এখনো কাঁদছে দেখে ওর একটা হাত ধরলাম এবার মেঘ আমার দিকে তাকালো)
আমি: কি হয়েছে কাঁদছ কেন?
মেঘ: এমনি, আমাদের দোহা হয়েছে দেখবে না? (মেঘ চোখের পানি মুছে নিয়ে তোহার দিকে এগিয়ে গেল, তোহার কোল থেকে বেবিকে এনে আমার পাশে শুয়ে দিলো)
মেঘ: আল্লাহ্‌ তোমার কথা শুনেছেন এইযে দেখো আমাদের মেয়ে বেবি হয়েছে। (আমি দোহার কপালে চুমু দিতেই মেঘ আমার কপালে ওর ঠোঁট ছুঁয়ালো)
তোহা: এইযে নতুন আম্মু শুনো আমি কিন্তু ওকে পুঁচকে পুতুল বলেই ডাকবো। (তোহার কথা শুনে মেঘ আমি দুজনেই হেসে দিলাম)
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে এবার তুমি আমার এ পাশে এসে বসো। (তোহাকে হাত বাড়িয়ে ডাকতেই তোহা বেডে উঠে আমার বুকে মাথা রাখলো, তোহাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় আলতো করে চুমু খেলাম)
পপি: বাব্বাহ্ তুমি তো দুই মেয়ের মা হয়ে গেছ।
আমি: হ্যাঁ এখন থেকে আমার দুটু মেয়ে।
পপি: হয়েছে এবার একটু রেস্ট নাও, তোহা চলো আমরা বাইরে যাই সবাই আছে তো ওখানে।
তোহা: চলো।

পপি তোহাকে নিয়ে চলে যেতেই মেঘ আমার একটা হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেলো।
মেঘ: কষ্ট হচ্ছে?
আমি: তোমাকে আর তোহাকে ফিরে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেছি।
মেঘ: আমাদের নতুন মেহমানের জন্যই তো আমাদের তুমি ফিরে ফেলে।
আমি: আচ্ছা তুমি জানলে কিভাবে আমি হসপিটালে?
মেঘ: চাচ্চু বাসায় গিয়েছিলেন, সবকিছু বলার পর আমরা সবাই হসপিটালে চলে এসেছি।
আমি: তুমি হয়তো ভেবেছিলে আমি… (মেঘ আমার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে আটকে দিলো)
মেঘ: চিঠিতে এসব কি লিখেছিলে? কণা আমি একবার ভুল করেছিলাম তারমানে এই নয় যে আমি বারবার তোমাকে অবিশ্বাস করবো। জানো আমি রোজ তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম, আমার মন বলতো তুমি ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবে।
আমি: চাচ্চু নিষেধ করেছিল আর তোমার প্রতি অনেক অভিমান ছিল তাই ফোন করিনি।
মেঘ: অভিমান হওয়াটা তো স্বাভাবিক। তবে তোমার অভিমানের পাহাড় এতো বেশি হবে ভাবিনি, আমি বাবা হবো অথচ আমাকে জানাওনি। তোমার এমন অবস্থায় আমি তোমার পাশে থাকতে পারিনি।
আমি: এসব নিয়ে আর মন খারাপ করো না।
দাদী: এইযে আসবো? (দাদীর কন্ঠ শুনে দরজায় তাকালাম দাদী আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন)
মেঘ: এসো।
দাদী: আমার দাদু ভাইকে তো শাস্তিটা ভালো ভাবেই দিলি।
আমি: ও বুঝি একা কষ্ট পেয়েছে আমার কষ্ট হয়নি?
দাদী: কষ্ট তো পেয়েছিস দুজনেই, এখন আর কোনো কষ্ট নয় দুই মেয়েকে নিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করো।
আম্মু: নতুন করে তো শুরু করতেই হবে আমাদের সবার রাগ যে কমে গেছে মেঘের উপর থেকে।
চাচ্চু: মেঘ’কে এতোটা ভালোবাসিস অথচ আমাদের সামনে প্রকাশ করিসনি, আজ তোর লেখা চিঠি না পড়লে তো আমাদের রাগ কমতো না।
আমি: চিঠি তোমরা পড়েছ?
আম্মু: হ্যাঁ তোর কান্না দেখে চিঠিটা প্রথম আমি পড়েছিলাম তারপর তোর চাচ্চুর হাতে দেই। তোর চিঠি পড়েই আমাদের রাগ কমে যায়, তোর চাচ্চু গিয়ে মেঘদের নিয়ে এসেছে।
বাবা: তবে আপনারা কিন্তু কণাকে দূরে নিয়ে ভুল করেননি, কণা দূরে ছিল বলেই মেঘ নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শোধরে নিতে পেরেছে। এখন মেঘ আর আগের মতো নেই অনেক বদলে গেছে। মেঘ প্রতি মুহূর্তে কণার জন্য অপেক্ষা করেছে, ওর এই অপেক্ষার ফল যে নতুন মেহমান হবে আমরা তো ভাবতেই পারিনি। (মেঘের দিকে তাকালাম ও আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আমিতো ভেবেছিলাম মেঘ আমাকে ভুল বুঝবে কিন্তু না মেঘ আমার জন্য প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করেছে)
ভাবি: আমিও চলে এসেছি নতুন মেহমানকে দেখতে।
আম্মু: খুব ভালো করেছ। (ভাবি এসে দোহা’কে কোলে তুলে নিলো, আজ মনে হচ্ছে সবকিছু একদম ঠিক নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে)
জোহা: ডক্টর এর সাথে কথা বলেছি এক সপ্তাহ হসপিটালে থাকতে হবে।
আমি: এক সপ্তাহ?
মেঘ: সমস্যা নেই আমি আছি কণার পাশে। (খুব ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু মেঘের এই কথায় সব ভয় কেটে গেল, সত্যি প্রিয়জনের ছোট ছোট কথায় অনেক বেশি ভরসা পাওয়া যায়)

এক সপ্তাহ পর…

বাসায় চলে আসলাম, আজ হসপিটাল থেকে আমাকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই এক সপ্তাহ মেঘ আমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্য দূরে যায়নি এমনকি বাসায় পর্যন্ত আসেনি। সবসময় মেঘ আমার পাশে থেকেছে, মেঘের বদলে যাওয়া, আমার প্রতি ওর ভালোবাসা বিশ্বাস আর কেয়ার সবকিছু দেখে নতুন করে মেঘের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বারবার।
মেঘ: এইযে মেডাম একা একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছ? (জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম মেঘ এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: কি হচ্ছে তোহা আছে তো রুমে।
মেঘ: তোহা তো ওর পুঁচকে পুতুল নিয়ে ব্যস্ত আছে।
তোহা: এইযে পুঁচকে পুতুল ওদিকে তাকাস না, দেখতে পাচ্ছিস না আব্বু আর নতুন আম্মু রোমান্স করছে। (তোহার কথা শুনে মেঘ আমি দুজনে হেসে উঠলাম)
মেঘ: মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষ গুলোর থেকে কিছুটা দূরে যাওয়া প্রয়োজন। তুমি আমার থেকে দূরে গিয়েছিলে বলেই আমি তোমার শূন্যতা অনুভব করতে পেরেছি। আর তাইতো নিজেকে শোধরে নিতে পেরেছি।
আমি: কষ্ট যে হয়েছে দুজনেরই।
মেঘ: সারাজীবনের সুখের জন্য একটু কষ্ট করলে মন্দ কিসের?
আমি: (মৃদু হাসলাম)
মেঘ: এই কয়েক মাস শুধু তুমি আমাকে নীরবে ভালোবাসনি আমিও তোমায় নীরবে ভালোবেসে গেছি।
মেঘ আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিলো, আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ালো। একটা সস্থীর নিঃশ্বাস ফেলে মেঘের বুকে মাথা রাখলাম, মেঘ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আজ আর কোনো ভয় নেই, নেই আমার প্রতি মেঘের অবিশ্বাস। এই বুকে মাথা রেখে অনায়াসে কাটিয়ে দিতে চাই হাজারটা শতাব্দী।

সমাপ্ত?

(বেঁচে থাকুক প্রতিটি ভালোবাসার বন্ধন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য। নতুন গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো টাটা?)

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে