নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৬

0
2609
ভালোবাসি

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

আম্মু: কণা আর কতক্ষণ এখানে পাগলের মতো বসে কাঁদবি?
আমি: তোহা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
আম্মু: এসব পাগলামি কেন করছিস?
জোহা: ভাইয়া তোমাকে কেবিনের ভিতর যেতে দিচ্ছে না আর তুমি বারান্দায় বসে এমন পাগলামি করছ এসবের কোনো মানে হয় আপু?
আমি: তুই তো জানিস আমি তোহাকে কতোটা ভালোবাসি?
চাচ্চু: কিন্তু মেঘ তো সেটা বুঝতে চাইছে না। রাত এগারোটা বাজে আর কতক্ষণ এখানে বসে থাকবি এবার বাসায় চল মা।
আমি: ওই তো ভাবি আসছে। (ভাবিকে রুম থেকে বেরুতে দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসলাম)
আমি: তোহা কেমন আছে?
ভাবি: ভালো আছে এখন, তুমি বাসায় চলে যাও অনেক রাত হয়েছে।
আমি: তোহাকে একবার দেখতে চাই আমি।
ভাবি: কিন্তু কিভাবে সম্ভব মেঘ তো তোহার পাশে বসে আছে।
আমি: আচ্ছা তোহা আমাকে দেখতে চাইছে না?
ভাবি: হুম অনেক বার নতুন আম্মু বলে ডেকেছে কিন্তু মেঘ তোহাকে বলেছে ওর নতুন আম্মু মারা গেছে।
আমি: ওহ আমি মারা গেছি ওর কাছে।
ভাবি: তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও তোমার শরীর একদম ভালো নেই।
আমি: আর ভালো হয়ে কি হবে সব তো হারিয়ে ফেললাম।
ভাবি: আরে কোথায় যাচ্ছ দৌড়ে? (ভাবির ডাকে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে হসপিটালের বাইরে চলে আসলাম। আমাদের গাড়ি পার্ক করা দেখেই গাড়িতে উঠে বসলাম, পিছু পিছু আম্মু জোহা আর চাচ্চু আসলেন)
চাচ্চু: কণা তুই পিছনে যা আমি ড্রাইভ করছি।
আমি: (নিশ্চুপ)
চাচ্চু: আরে এক্সিডেন্ট করে ফেলবি তো।
আমি: এটাই তো চাই আমি, কেন এসেছ তোমরা?
আম্মু: এটাই চাস মানে? পাগল হয়ে গেছিস নাকি এমন একটা ছেলের জন্য মরতে চাইছিস যে তোকে বিশ্বাসই করে না।
আমি: ওর কাছে নাকি আমি মৃত…
জোহা: তাই বলে মরে যেতে হবে? জীবন থাকলে এমন দুটাকার ছেলে অনেক আসবে।
আমি: জোহা..
জোহা: চিৎকার করো না, তুমি ওর জন্য কাঁদছ আবার? আমি হলে তো ডিভোর্স পেপারটা ওর মুখে ছুড়ে দিয়ে আসতাম। যে আমাকে বিশ্বাস করে না সবার সামনে আমার ভালোবাসাকে ছোট করে তার জন্য কেন কাঁদবো আমি? এসব আবেগ ছাড়ো আপু আর ওকে ভুলে যাও।
চাচ্চু: জোহা একদম ঠিক বলেছে, এবার বাসায় চল আর পাগলামি করিস না। (চুপচাপ পিছনে এসে বসে পড়লাম। সত্যিই তো মেঘ আমার ভালোবাসাকে সবার সামনে ছোট করেছে। হ্যাঁ ওর থেকে দূরে থাকতে পারবো যতো কষ্টই হউক। কিন্তু ভুলতে পারবো না ওকে, কারণ মেঘকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি)

ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা বাজে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি। দুচোখের পাতা কিছুতেই এক হচ্ছে না, জানিনা আমার তোহা এখন কি করছে। মেঘকে ফোন করলে তো রেগে যাবে কিযে করি। আচ্ছা ভাবিকে তো ফোন করতে পারি? ভাবির কথা মনে পড়তেই সাথে সাথে ফোন দিলাম।
ভাবি: কণা..
আমি: ভাবি তোহা কি করছে কেমন আছে ও?
ভাবি: শান্ত হও বলছি, তোহা ভালো আছে ঘুমুচ্ছে তুমি টেনশন করো না।
মেঘ: শায়লা কার সাথে কথা বলছ?
ভাবি: না মামানে…
মেঘ: তুমি কি চাইছ আমি তোমাকেও তোহার কাছে আসতে না দেই?
ভাবি: না না…
মেঘ: তাহলে ফোনটা রেখে দাও কাউকে আমার মেয়ের খবর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ভাবি: হুম। (ভাবি ফোনটা কেটে দিলো। বিশ্বাসই করতে পারছি না মেঘ আমার সাথে এমন করছে)

বারান্দায় রেলিং এ হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছি আর মেঘের সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলোর কথা ভাবছি, হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো রাত সাড়ে তিনটার দিকে কে ফোন দিলো ভাবতে ভাবতে রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যাল…
মামা: মামুনি রাতের ঘুম কেড়ে নিলাম তো?
আমি: (নিশ্চুপ)
মামা: আরো করবো মেঘ আর তোমাকে পুরোপুরি আলাদা করে তবেই আমার শান্তি হবে।
আমি: মানুষ এতোটাও খারাপ হয় মামা?
মামা: আমি খারাপ আর আমার খারাপি আরো দেখবে জাস্ট ওয়েট করো।
আমি: আর কি করার বাকি আছে তোমার?
মামা: অনেক কিছু বাকি আছে এখনো তো কিছুই করিনি, তোর আম্মু আমাকে যতটা যন্ত্রণা দিয়েছে তারচেয়ে বেশি যন্ত্রণা আমি তোকে দিবো।
আমি: তুমি অন্যায় করেছিলে আম্মু তো মামিকে মেনে নিয়েছিল এমনকি সবাইকে বুঝিয়েছিল তাহলে আম্মুর দোষ কোথায় আম্মুর উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছ কেন?
মামা: সম্পত্তি পাওয়ার জন্য তোর আম্মু বাবা মা’কে বলে আমাকে পুলিশে দিয়েছিল..
আমি: ভুল ভাবছ মামা, আম্মুর যদি সম্পত্তির লোভ থাকতো তাহলে সবকিছু নিজের নামে করে নিতো ডোনেট করতো না।
মামা: সব মিথ্যে নাটক আমি জানি এখন তোদের যা কিছু আছে স…
আমি: সব আব্বুর গড়ে তুলা তুমি আম্মুকে ভুল ভাবছ।
মামা: আমি ভুল নই তোর আম্মুর শাস্তি আমি তোকে দিবো। মেঘ আর তোকে তো আলাদা করেছি শুধু এখন তোদের ডিভোর্স হবে।
আমি: সে সুযোগটা আমি তোমাকে দেবো না মামা, অনেক পাপ করেছ এবার তো আমি তোমাকে শাস্তি দিবোই।
মামা: ট্রাই করতে পারো মামুনি।
ফোন কেটে দিলাম, এবার সব আমাকেই করতে হবে।

চাচ্চু: আমি যখন বলেছি তাহলে আজকের মধ্যেই ওকে এরেস্ট করতে হবে নাহলে…(সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখি চাচ্চু কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছেন, পাশে আম্মু বসে কাঁদতেছেন। কিছু না বুঝে আম্মুর পাশে এসে বসলাম)
চাচ্চু: হ্যাঁ আজকেই আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে। (চাচ্চু ফোন রাখতেই চাচ্চুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম)
চাচ্চু: ওহ তুই উঠে পড়েছিস?
আমি: কার সাথে কথা বলছিলে চাচ্চু?
চাচ্চু: পুলিশের সাথে।
আমি: কাকে এরেস্ট করার কথা বললে?
চাচ্চু: কাকে আবার সামাদ কে, অনেক জ্বালিয়েছে আর সেটা পুলিশের বোকামির জন্য। এতোদিন হয়ে গেল এখনো এরেস্ট করতে পারছে না…
জোহা: আব্বু চা, আপু নাও..
আমি: ভালো লাগছে না খাবো না।
জোহা: এমন করলে হবে নাকি?
আম্মু: রাতে তো ঘুমাসনি ভোরবেলায় ঘুমিয়ে এখনি উঠে পড়েছিস চা’টা খেয়ে গিয়ে রেস্ট নে।
আমি: একটু হসপিটালে যা…
চাচ্চু: আর একবার যদি তোর মুখে এই কথা শুনেছি তাহলে…
আম্মু: আহ বকো না ওকে, বুঝিয়ে বলো।
জোহা: আপু পিচ্ছি নাকি যে বুঝাতে হবে? গতকাল ভাইয়া আপুকে সবার সামনে এতো অপমান করলো আপু ভাইয়ার পা ধরলো আর ভাইয়া কি করলো আপুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, এতোকিছুর পরও আপুকে নতুন করে বুঝাতে হবে?
আমি: আমিতো গিয়েই চলে আস…
চাচ্চু: যেতে হবে না চুপচাপ রুমে যা।
আমি: হুম।

হাটুতে মাথা নিচু করে রেখে রুমের এক কোণে ফ্লোরে বসে আছি কিছু ভালো লাগছে না, তোহাকে একটাবার দেখার জন্য মন চটপট করছে। মেঘের এমন ব্যবহারের পর চাচ্চু বা আম্মু কেউই আমাকে হসপিটালে যেতে দিবে না সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। কিন্তু মন যে মানছে না তোহাকে একবার দেখার জন্য মন পাগল হয়ে আছে। ভাবিকেও ফোন দিতে পারছি না মেঘ যদি রেগে গিয়ে ভাবিকে তোহার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মেঘ এমন কিভাবে করতে পারলো ভাবতেই পারছি না, এতগুলো মাস মেঘের সাথে ছিলাম কিন্তু মেঘ আমাকে এতটুকুও বিশ্বাস করতে পারেনি উল্টো কিসব বাজে বাজে কথা বলেছে আমাকে সবার সামনে।
জোহা: আপু.. (জোহার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
জোহা: জানালা গুলো বন্ধ করে রুম এতো অন্ধকার করে রেখেছ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: আপু আমি বুঝতে পারছি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তুমিই বলো যে তোমাকে সম্মান করেনা বিশ্বাস করেনা তোমার ভালোবাসাকে সম্মান করেনা তার সাথে কি তোমার সারাজীবন কাটানো সম্ভব? (জোহা জানালা গুলো খুলে দিয়ে এসে আমার পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিলো, ওর দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি)
জোহা: এভাবে অন্ধকার রুমের এক কোণে পরে থাকলে হবে না আপু নিজেকে শক্ত করো।
আমি: হুম।
জোহা: আচ্ছা তুমি কয়েকটা দিন ভাইয়ার থেকে দূরে থাকো তারপর দেখো ভাইয়া তোমার কাছে ফিরে আসে কিনা, কি এইটুকু তো পারবে নাকি?
আমি: হুম পারবো কিন্তু তোহার থেকে দূরে থাকতে পারবো না।
জোহা: আরে কেঁদো না, দেখো ভাইয়া যদি তোমাকে তোহার কাছে যেতে না দেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই, নিজেকে শক্ত করো দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: এবার উঠে খাবারটা খেয়ে নাও আমি টেবিলের উপর রেখে গেলাম।
জোহা খাবার রেখে চলে গেল। পাশে রাখা ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি মেঘের ফোনের, হয়তো মেঘ ফোন করবে না কিন্তু মন চাইছে ওর ফোনের অপেক্ষা করতে।

সকাল পেরিয়ে বিকেল নেমে আসলো কিন্তু মেঘ একটা ফোনও করলো না, হয়তো আর কখনো করবেও না কারণ আমাদের পথ যে এখন আলাদা।
চাচ্চু: কণা মা একটা গুড নিউজ আছে। (জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম চাচ্চুর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, চাচ্চু হাসি হাসি মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন)
আমি: কি বলো।
চাচ্চু: সামাদ এরেস্ট হয়েছে আ..
আমি: অহ!
চাচ্চু: কিরে তুই খুশি হসনি?
আমি: আমার যা ক্ষতি হবার তাতো হয়েই গেছে এখন আর খুশি হয়ে কি লাভ।
চাচ্চু: দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে, এখন চল তো খুনিটাকে একবার দেখে আসি।
আমি: না চাচ্চু আমার ভালো লাগছে না তুমি গিয়ে দেখে এসো।
চাচ্চু: আমিতো ভেবে ছিলাম তুই গিয়ে ওকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে আসবি।
আমি: (মৃদু হাসলাম)
চাচ্চু: আসছি তাহলে।
চাচ্চু চলে গেলেন, এখন আর ওকে থাপ্পড় দিয়ে কি হবে মেঘ তো আর আমার জীবনে ফিরে আসবে না।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে একটু পর চারদিক অন্ধকার হয়ে আসবে, ফ্লোরে বসে মেঘের ফোনের অপেক্ষা করছি আর ভাবছি মেঘ ফোন না করলে এই অন্ধকারে লুকিয়ে একবার তোহাকে দেখতে যাবো। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, মেঘ নয় ভাবি ফোন করেছে হয়তো তোহার কোনো খবর দিবে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম।
আমি: হ্য..
ভাবি: তুমি তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে এসো।
আমি: কেন?
ভাবি: মেঘ বাসায় গেছে ঘণ্টা দুয়েক এর মধ্যে আসার সম্ভাবনা নেই। এখানে আমি আর পপি ছাড়া আর কেউ নেই তোহাকে দেখার জন্য তাড়াতাড়ি চলে আসো।
আমি: ঠিক আছে আমি এক্ষণি আসছি।
ফোন রেখে বেরিয়ে পড়লাম চাচ্চু থানায় গেছে এটাই সুযোগ।

আমি: আমার তোহা কোথায়? (দৌড়ে এসে কেবিনের ভিতর ঢুকলাম, আমার কন্ঠ শুনেই তোহা চোখ খুলে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলো)
তোহা: নতুন আম্মু তুমি এসেছ?
আমি: হ্যাঁ আম্মু এসেছি। (তোহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, তোহা আমার হাত ওর একটা হাত দিয়ে ধরে আমার দিকে তাকালো)
আমি: কি মামুনি?
তোহা: তুমি তো বলেছিলে কেউ আকাশের তারা হয়ে গেলে আর ফিরে আসতে পারে না তাহলে তুমি ফিরে আসলে কিভাবে? আব্বু তো বলেছে তুমি আকাশের তারা হয়ে গেছ।
আমি: (নিশ্চুপ)
পপি: তোমার আব্বু তো পঁচা তাই তোমাকে মিথ্যে বলেছে।
মেঘ: বাহ্ অসাধারণ… (মেঘের কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠে পিছনে তাকালাম, মেঘ রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
পপি: ভাইয়া প্লিজ আমার কথা শুনো।
মেঘ: আমি বেরিয়ে যেতেই ওকে খবর দিয়ে আনা হয়েছে? তারমানে আমার আন্দাজ ঠিক ছিল..
ভাবি: আন্দাজ?
মেঘ: কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর আমার মনে হলো আমি নেই এই সুযোগে তোমরা ওকে ফোন করে আসতে বলতে পারো তাইতো ফিরে আসলাম আর এসেই…
আমি: মেঘ আমার কথা শুনো ওদের কোনো দোষ নেই আমি নিজে থেকেই এসেছি।
মেঘ: একদম চুপ আমি তোমার সাথে একটা কথাও বলতে চাই না।
তোহা: আব্বু নতুন আম্মুকে বকো না থাকুক না আম্মু আমার কাছে।
মেঘ: ওর হাতটা ছেড়ে দাও তোহা, এমন খারাপ কোনো মেয়ের সাথে আমি তোমাকে…
পপি: কাকে খারাপ বলছ তুমি ভাইয়া?
মেঘ: যার নষ্টামির জন্য আমার মেয়ে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।
আমি: মেঘ ওই লোকটা আমাকে আটকে রেখেছিল তোহাকে যেন আটকাতে না পারি আর তুমি কিনা এসব খারাপ কথা ভাবছ ছিঃ।
মেঘ: আটকে রেখেছিল? আচ্ছা মানলাম আটকে রেখেছিল কিন্তু কাজটা তো তোমার মামা করেছে আমার মামা নয়।
ভাবি: আজ যদি এই একি কাজ কণার মামা না করে তোমার মামা করতো তাহলে কি করতে মেঘ?
মেঘ: আর যাই করতাম নষ্টামি… (ঠাস করে মেঘের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম)
আমি: দুদিন ধরে তোমার মুখে এসব খারাপ কথা শুনছি কিন্তু আর নয়, আর শুনবো না। কেন শুনবো আমি খারাপ নাকি? তোমাকে যখন বারবার ফাঁসানো হয়েছিল তখন তোমাকে আমি বুঝার চেষ্টা করেছি দুজন মিলে সবটা সামলে নিয়েছি কিন্তু তুমি? সবার সামনে আমাকে অসম্মান করছ, আমাকে বিশ্বাস করছ না উল্টো খারাপ কথা বলে আমার ভালোবাসাকে ছোট করছ…
মেঘ: বেশ করেছি আরো করব, তুমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নও।
আমি: ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য তো তুমি না, যে মনের দিক থেকে এতো ছোট তাকে আর যাই হউক ভালোবাসা যায় না।
মেঘ: বেসো না কে বলেছে ভালোবাসতে? আ…
আমি: বাসি না তোমার মতো ছোট মনের মানুষকে আমি ঘৃণা করি। আজ থেকে তোমার আর আমার পথচলা আলাদা। তোহাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছ তো? আর কখনো আমাকে ফিরে পাবে না। যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাউমাউ করে কাঁদবে তখন আর আমি ফিরে আসবো না।
তোহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।

এলোপাথাড়ি ভাবে গাড়ি চালাচ্ছি ইচ্ছে হচ্ছে এক্সিডেন্ট করে মরে যাই, এমন অপমান অবহেলার চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু নিজের মনকে শক্ত করে নিলাম আমাকে বাঁচতে হবে, মেঘের অনুশোচনায় ভোগা আর হাউমাউ করে কান্না দেখার জন্য আমি বেঁচে থাকবো। কিন্তু সেদিন আর মেঘের কাছে ফিরে যাবো না। মেঘকে সেদিন বুঝাবো অবহেলার যন্ত্রণা কতটুকু।

রাতের আধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বারবার চোখের পানি মুছে ফেলার বৃথা চেষ্টা করছি। মেঘকে তো খুব করে বলে আসলাম ওর মতো ছোট মনের মানুষকে আমি ঘৃণা করি কিন্তু সত্যি তো এটাই আমি মেঘকে আগের মতোই ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবো। চাইলে তো আমি মেঘকে ডিভোর্স দিয়ে কানাডা চলে যেতে পারি কিন্তু আমি এসব করতে পারবো না কারণ মেঘকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। কিন্তু মেঘ? মেঘ আমাকে ভালোবাসে না ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো… “আমাকে তুমি যতো দূরেই ঠেলে দাওনা কেন মেঘ তোমাকে আমি সারাজীবন এভাবেই নীরবে ভালোবেসে যাবো”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে