নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৫

1
3113

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর ভাবছি ঘুরতে না গেলেই ভালো হতো। যে আমাকে এতো সন্দেহ করে তার সাথে ঘুরতে যাবো কেন? কিন্তু উপায় নেই তোহার জন্য যেতেই হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে হয়ে চুলে খোঁপা করছিলাম হুট করে মেঘ এসে পিছনে দাঁড়ালো, দেখেও না দেখার ভাণ করে খোঁপা ঠিক করতে মন দিলাম। উঠতে চাইলাম তখনি মেঘ পিছন থেকে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, বসতেই ও বেলী ফুলের মালা দুটু চুলের খোঁপায় পেঁচিয়ে দিলো। আয়নায় মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি, মেঘ মুচকি হেসে সরে গেল। আমি উঠে শাড়ি ঠিক করছি কুচিগুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে, হুট করে মেঘ এসে আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো।
মেঘ: দাও আমি ঠিক করে দিচ্ছি। (কিছুনা বলে সরে আসলাম, মেঘ আবারো আমার কাছে আসলো)
মেঘ: সব গুলো কুচি এলোমেলো হয়ে গেছে দাও ঠিক করে দিচ্ছি।
আমি: লাগবে না আমি একাই পারবো।
মেঘ: কণা এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমিতো সব ভুলে রাতে তোমার রাগ ভাঙাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে? তোহা আর আমাকে রেখে সোফায় গিয়ে ঘুমালে।
আমি: বেশ করেছি সোফায় ঘুমিয়েছি বেশি কথা বললে ঘুরতে যাবো না।
মেঘ: কণা আর কতোবার সরি বলবো?
আমি: যে মনের মধ্যে সন্দেহ পুষে রেখে উপরে সরি বলে তার সাথে আমার কোনো কথা নেই সরো এখান থেকে।
মেঘ: এতো পাগলামি করো কেন? (চলে আসছিলাম মেঘ পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলো)
আমি: ছাড়ো তো!
মেঘ: ঘুরতে যাচ্ছি কোথায় হাসি মুখে থাকবে তা না প্যাচির মতো মুখ করে রেখেছ।
আমি: প্যাচিই ভালো, হয়েছে?
মেঘ: না হয়নি তোমাকে হাসি মুখে যেতে হবে। (আমাকে টেনে ওর কাছে নিয়ে গেল, আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তুমি বুঝনা কেন তোমাকে যেমন বারবার ফাঁসানো হয়েছিল আমাকেও সেভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আচ্ছা তুমি ভাবলে কিভাবে আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি তারপরও অন্য কারো সাথে.. ছিঃ এসব ভাবতেই তো রাগ হচ্ছে।
মেঘ: বললাম তো সরি।
আমি: লাগবে না। (মেঘ আমাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো, ইচ্ছে হচ্ছে কান্না করি কিন্তু বেরুনোর সময় কাঁদলে মেঘ রেগে যাবে)
মেঘ: তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। (মেঘ আমার নাকে গালে ঠোঁটে ওর ঠোঁট ঘষছে, চোখ দুটু বুজে ফেললাম। মেঘ আলতো করে ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের ভিতরে নিয়ে গেল)
পপি: এএএ আমি কিছু দেখিনি। (পপির কন্ঠ শুনে মেঘ আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল, ইসস কি লজ্জাটাই না পেলাম মেঘটা যে কি হুটহাট এসব শুরু করে)
রুহান: আমরা রেডি চলো। (রুহান শার্টের হাত ঠিক করতে করতে রুমে এসে ঢুকলো, আমার আর পপির দিকে তাকিয়ে আছে)
রুহান: কি ব্যাপার দুজনেই নীরব কেন?
পপি: সেদিনেরটা শোধ হয়ে গেছে।
রুহান: মানে?
আমি: দাঁড়াও ফাজি মেয়ে।
তোহা: আমি রেডি।
রুহান: তোহাকে তো আজ একদম পরীর মতো লাগছে।
তোহা: আমিতো পরীই আমার আব্বু আম্মুর পরী।
আমি: চলো মামুনি।
রুহান: ভাইয়া এসো।

ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখি বাবা মা আর দাদী বসে গল্প করছেন।
মেঘ: আম্মু যাচ্ছি।
মা: সাবধানে..
আমি: আপনারা গেলে ভালো হতো।
পপি: হ্যাঁ আম্মু তোমরা না করলে কেন?
বাবা: বুড়ো বয়সে ঘুরাফেরা ভালো লাগেনা তোরা ঘুরে আয়।
রুহান: ঠিক আছে।
মেঘ আমি তোহা আর রুহান পপি সবাই বেরিয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য তোহাকে নিয়ে শিশু পার্কে যাওয়া।

রিক্সায় বসে আছি আর বারবার মেঘের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি, সন্দেহ করে আবার ভালোও বাসে। একহাতে তোহাকে ধরে আছে অন্যহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে, মনে হচ্ছে আমি তোহার মতো ছোট বাচ্চা যেকোনো সময় রিক্সা থেকে পড়ে যেতে পারি তাই ও এভাবে আগলে রেখেছে।
মেঘ: এভাবে বারবার দেখোনা তো নজর লেগে যাবে। (মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম, ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
মেঘ: পপির কথামতো রিক্সায় করে না আসলে এতো সুন্দর মুহূর্তটা মিস করে ফেলতাম।
তোহা: হ্যাঁ ফুফিই তো আমাকে বলেছিল ঘুরতে যাওয়ার কথা তোমাদের বলার জন্য।
মেঘ: ওরে ফাজি মেয়ে এখন নাম বলা হচ্ছে?
তোহা: ফুফি নিষেধ করেছিল। (তোহা ওর ছোট ছোট কোমল হাত দুইটা মুখে চেপে ধরে হাসছে মনে হচ্ছে ও সব বুঝে, মুগ্ধ হয়ে ওর এই হাসি দেখছি আমি)
মেঘ: কণা সরি।
আমি: কেন?
মেঘ: আসলে এসব পিক দেখে মাথা ঠিক ছিল না…
আমি: এসব ওরা ইচ্ছে করেই করেছে আমাদের আলাদা করার জন্য।
মেঘ: হুহ বললেই হলো নাকি? আমাদের দুজনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা ভালোবাসি তোমায়।
তোহা: আমি শুনে ফেলেছি। (কণা হাত তালি দিচ্ছে দেখে ওর দুহাত মুঠো করে ধরলাম)
আমি: মামুনি চুপ।
তোহা: হিহিহি..
আমি: মেঘ তুমিও না।
মেঘ: আমি কি করে জানবো এই পুঁচকে মেয়ে যে বুঝে ফেলবে।
তোহা: আমি সব বুঝি আমাকে ফুফি সব শিখিয়েছে।
মেঘ: আজ পপির খবর আছে এই মেয়েকে ফাজি পপিই বানাচ্ছে।
তোহা: ফুফিকে কিছু বললে তোমার কান মলে দিবো হুম।
আমি: মামুনি চুপ করো তোমার আব্বু রেগে গেলে কিন্তু ঘুরতে নিয়ে যাবে না।
তোহা: ওকে চুপ। (তোহা একটা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো আসলেই ফাজি মেয়ে একটা)

পার্কে আসতেই তোহা ছুটাছুটি শুরু করে দিলো। পপি আর রুহান আলাদা গিয়ে বসলো, মেয়েকে এভাবে একা ছাড়া ঠিক হবে না তাই আমি তোহার কাছে চলে আসলাম।
তোহা: নতুন আম্মু চলো খেলবো। (তোহা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল)

তোহার সাথে আমিও ছুটাছুটি করছি, মনে হচ্ছে অনেক দিন পর একটু শান্তি পাচ্ছি। হঠাৎ মেঘের দিকে চোখ পড়লো একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। মেঘের দিকে এগিয়ে আসলাম।
আমি: থ্যাংকস!
মেঘ: কেন?
আমি: এইযে এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসলে, মনে হচ্ছে সব বাচ্চাদের মতো আমিও বাচ্চা হয়ে যাই।
মেঘ: তুমি তো বাচ্চাই যেভাবে ছুটাছুটি করছিলে মনে হচ্ছিল কোনো বাচ্চা মেয়ে অনেকদিন পর তার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। অবশ্য তুমি তো স্বাধীনতা পেয়েই বড় হয়েছ, শুধু বিয়ের পর আমি তোমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছি।
আমি: মানে কি?
মেঘ: এইযে তোমার কতো সুন্দর একটা জীবন ছিল, হুট করে আমাদের বিয়ে হলো তারপর একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে।
আমি: তাতে তো তোমার দোষ নেই এসব তো আমারই মামা করেছে।
মেঘ: হুম তবুও…
আমি: ঘুরতে এসেছ কি এসব শুনানোর জন্য?
মেঘ: এই রাগ করনা প্লিজ তোহার কাছে যাও আমি মা মেয়ে দুজনকে মুগ্ধ হয়ে দেখি। (মেঘের কথা শুনে মুচকি হেসে তোহার দিকে এগিয়ে গেলাম)

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসবে এবার যাওয়া প্রয়োজন। মেঘের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমি: বিকেল হয়ে এসেছে বাসায় চলো।
মেঘ: রুহান আর পপিকে ডাক দাও আমি তোহাকে নিয়ে আসছি। (রুহানদের হাত দিয়ে ইশারা দিতেই ওরা উঠে চলে আসলো)
তোহা: আমি যাবো না আমি এখানে আরো কিছুক্ষণ থাকবো। (তোহা মেঘের কোল থেকে জোড় করে নেমে যাচ্ছে দেখে এগিয়ে গিয়ে ওকে আমার কোলে আনলাম)
আমি: মামুনি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তো আর এখানে থাকা যাবে না আমরা আর একদিন আসবো কেমন?
তোহা: সত্যি আসবে তো?
আমি: হ্যাঁ আসবো।
তোহা: তাহলে বাসায় চলো।

পার্ক থেকে বেরিয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি, রুহান রিক্সা ডাকতে গেল। পপির ফোন বাজছে ফোন নিয়ে পপি কিছুটা দূরে চলে গেল।
তোহা: আব্বু ওইযে বেলুন। (তোহা আঙ্গুল দিয়ে রাস্তার অপর পাশে বেলুন দেখাচ্ছে)
মেঘ: তোমার আম্মুর কাছে দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।
তোহা: ঠিক আছে। (মেঘ চলে যেতেই তোহা আমার আঙ্গুল ধরে আমার দিকে তাকালো)
আমি: কি মামুনি?
তোহা: কিছুনা। (তোহা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
তোহা: তোমার মতো আম্মু যেন সবার হয়। (তোহা মুচকি হাসলো আমিও হেসে তোহার নাক টেনে দিলাম)
–এইযে (পিছন থেকে কেউ ডাকছে শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, তাকাতেই দেখি সেই লোকটা। আতকে উঠে মেঘের দিকে তাকালাম ও বেলুন কিনছে এদিকে তাকাচ্ছেই না)
আমি: আপনি?
তোহা: নতুন আম্মু এই পঁচা লোকটা কে? (তোহার কথা শুনে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম)
–বলেছিলাম তো আমি সবসময় তোমাকে ফলো করি। পিক দিয়ে কোনো কাজ হয়নি কিন্তু আজ হবে, আমি তোদের আলাদা করব আজ। (লোকটা জোড় করে আমার হাত দুটু চেপে ধরলো, তোহার হাত আমার হাত থেকে ছুটে গেল। তোহার দিকে তাকালাম ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না)
আমি: মেঘ.. (মেঘকে ডাক দিতে গিয়ে মাঝ রাস্তায় নজর পড়লো তোহা মাঝ রাস্তায় চলে গেছে, মেঘ আমার হাত লোকটার হাতের মুঠোয় দেখে দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: মেঘ তোহা..(মেঘ তো আমার ডাক শুনছেই না রাস্তার দিকেও তাকাচ্ছে না যে তোহাকে দেখবে)
আমি: পপি তোহা মাঝ রাস্তায় চলে গেছে। (পপি পিছন ফিরে তাকিয়েই তোহার দিকে দৌড় দিল, পপির দৌড়ানো দেখে মেঘও তোহার দিকে তাকালো। দুজনেই দৌড়ে আসছে কখন জানি গাড়ি চলে আসে)
আমি: ছাড় বলছি আমার মেয়ে…
–তোর মামার গাড়ি এসে তোর মেয়েকে পিষে ফেলবে তারপর ছাড়বো। (ওর কথা শুনে তোহার দিকে তাকালাম একটা প্রাইভেট কার একদম তোহার কাছে, চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিলো সব কেমন যেন নীরব লাগছে, চোখ খুলে তোহার দিকে তাকালাম রক্তে লাল হয়ে নিথর হয়ে পরে আছে তোহা। দৌড়ে তোহার দিকে এগিয়ে আসলাম)

মেঘ বোবার মতো বসে আছে রুহান কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসলো চারপাশে শুধু মানুষ, তোহার মাথাটা আমার কোলের উপর রাখলাম।
পপি: তোহা কথা বল মামুনি।
আমি: তোহা…(তোহা তো নিথর হয়ে পরে আছে চোখ খুলছে না)
রুহান: ছাড়ো ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। (রুহান আমার থেকে তোহাকে নিয়ে একটা গাড়িতে উঠে বসলো, সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা লাগছে। পপি আমার হাত ধরে টান দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। গাড়ি হসপিটালের দিকে ছুটছে, এক মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু কেমন যেন উলটপালট হয়ে গেল)

তোহাকে নার্সরা অপারেশন থিয়েটারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমি দূরে দাঁড়িয়ে আছি। যতক্ষণ তোহাকে দেখা যায় তাকিয়ে রইলাম, হুট করে মাথাটা ঘুরে উঠলো দফ করে পড়ে গেলাম।

চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি পাশে আম্মু জোহা আর চাচ্চু। তোহার কথা মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠলাম।
আম্মু: উঠিস না তোর শরীর ভালো নেই।
আমি: আম্মু আমার তোহা..
আম্মু: ও ভালো হয়ে যাবে মা।
আমি: ছাড়ো আমি ওর কাছে যাবো।
জোহা: তোহা তো অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে কি করবে?
আমি: মেঘ কোথায়?
চাচ্চু: বাইরেই আছে। (জোহার হাত ছাড়িয়ে উঠে দৌড়ে বাইরে চলে আসলাম)

অপারেশন থিয়েটারের সামনে মেঘ আর ওদের পরিবারের সবাই বসে আছে। আস্তে আস্তে মেঘের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমি: মেঘ..
পপি: এদিকে এসো। (পপি আমাকে একটু দূরে নিয়ে আসলো)
পপি: ভাইয়া তোমার উপর রেগে আছে এখন ভাইয়ার সাথে কথা বলতে যেও না। এখানে বসো তোমার শরীর ঠিক নেই। (চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়লাম, চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে। কি থেকে কি হয়ে গেল এক মুহূর্তের মধ্যে)
ভাবি: আমার মেয়েটাকে তোমরা আগলে রাখতে পারলে না? (ভাবির চিৎকার শুনে সামনে তাকালাম তোহাকে রক্ত দিয়ে এসেছে হয়তো। নার্স ভাবিকে এনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো)
এখন তো সবাই আমাকে ভুল বুঝবে বলবে আমার মামা করেছে এসব, কি জবাব দিবো আমি মেঘকে? কি জবাব দিবো আমি ভাবিকে?

চারদিকে শুধু কান্নার আওয়াজ সবাই কাঁদছে তোহার জন্য, শুধু আমিই শব্দ করে কাঁদতে পারছি না। হঠাৎ অটি থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসলো দৌড়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম।
আমি: ডক্টর আমার মেয়ে…
ডক্টর: কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে কিন্তু ওর একটা পা ভেঙ্গে গেছে একটু বেশিই ভেঙ্গেছে, পা’টা ভালো হবে তবে অনেক দেরিতে।
আমি: তোহার কাছে যাবো আমি…
ডক্টর: কিছুক্ষণ পর আপনারা দেখা করতে পারবেন। (ডক্টর চলে গেল ফ্লোরেই বসে পড়লাম)
মা: বৌমা উঠো।
দাদী: তুই এভাবে ভেঙে পড়লে হবে? মেঘকে সামলাবে কে?
মেঘ: ওকে আমার প্রয়োজন নেই দাদী। (মেঘের কথা শুনে সবাই কান্না থামিয়ে ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো)
বাবা: কি বলছিস এসব?
মেঘ: ঠিক কথা বলছি আব্বু, আমার জীবনে ওর আর কোনো প্রয়োজন নেই।
মা: মেঘ বুঝেশুনে কথা বল।
মেঘ: আমি সবদিক ভেবেই বলছি আম্মু।
আম্মু: হঠাৎ এই কথা কেন বলছ বাবা?
মেঘ: হঠাৎ নয় দুদিন ধরে ওর নষ্টামি আমি দেখছি ও বলেছিল এসব ওকে ফাঁসানোর জন্য করা হচ্ছে, বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম কিন্তু আজ তো ওর নষ্টামি নিজের চোখেই দেখেছি)
আমি: মেঘ এসব তুমি কি বলছ?
মেঘ: অস্বীকার করতে পারবে আজ তোমার জন্য তোহার এই অবস্থা হয়নি? তোমার কাছে তোহাকে রেখে বেলুন আনতে গিয়েছিলাম আর তুমি তোহার হাত ছেড়ে দিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে নষ্টামি করছিলে, ভেবেছিলে আমি রাস্তার অন্যপাশ থেকে তোমার নষ্টামি দেখতে পাবো না।
চাচ্চু: মেঘ মুখ সামলে কথা বলো, তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে এমন নোংরা কথা বলার?
মেঘ: আপনার মেয়ে নোংরামি করলে দোষ নেই আর আমি বললে দোষ?
বাবা: মেঘ..(বাবা এসে মেঘের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন)
বাবা: বাবার বয়সি লোকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এইটাও শিখিসনি?
আমি: ওকে বকছ কেন তোমরা? বলতে দাও ওকে, ওর মাথা ঠিক নেই। তোহাকে খুব ভালোবাসে তো তা…
মেঘ: আমার মাথা ঠিক আছে কণা।
আমি: না ঠিক নেই তোমার মাথা, ঠিক থাকলে তুমি এসব বলতে পারতে না।
নার্স: আপনারা চাইলে বাচ্চাটির সাথে দেখা করতে পারেন। (নার্সের কথা শুনে কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম কিন্তু মেঘ আমার হাত ধরে ফেললো)
মেঘ: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: আমার মেয়ের কাছে।
মেঘ: তোহা তোমার মেয়ে নয়, যদি মেয়ে হতো তাহলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোহার হাত ছেড়ে অন্য পুরুষের হাত ধরতে না।
আমি: প্লিজ আমাকে তোহার কাছে যেতে দাও।
মেঘ: বললাম তো না। শায়লা তুমি যাও তোহার কাছে।
আমি: ছাড়ো আমাকে। (ঝটকা দিয়ে মেঘের থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে আনলাম)
আমি: দাদী, বাবা আপনারা মেঘকে বলুন না আমাকে একবার তোহার কাছে যেতে দিতে, আমি তোহাকে একনজর দেখবো শুধু।
বাবা: মেঘ…
মেঘ: আমি কারো কথা শুনতে চাই না।
আমি: মেঘ আমি তোমার পায়ে পড়ছি আমাকে একটাবার তোহার কাছে যেতে দাও।
মেঘ: বললাম তো না, আমার মেয়ের কাছে যাওয়ার ওকে স্পর্শ করার কোনো অধিকার নেই তোমার। (মেঘের পা থেকে আমার হাত সরিয়ে আমাকে তুলে ধাক্কা দিয়ে আম্মুর দিকে ফেলে দিলো। আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে মেঘকে রাগ দেখালেন)
আম্মু: মেঘ তুমি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ।
মেঘ: আজ থেকে কণার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার মেয়ের ধারেকাছে যেন ওকে না দেখি, আমার চোখের সামনে যেন আর ওকে না দেখি।
মেঘের কথাগুলো শুনে ফ্লোরে বসে পড়লাম, কি বলছে মেঘ এসব? মেঘের কথা গুলো বারবার কানে বাজছে, বুঝতে পারছি আমি মেঘ আর তোহাকে হারিয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য…

চলবে?

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে