নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৪

0
2911

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাজে, চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি মেঘ সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন কাজ করছে। মেঘের দিকে বারবার তাকাচ্ছি সন্ধ্যার পর থেকে মেঘ কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছে, আমার সাথে তেমন কথা বলছে না কি যেন শুধু ভাবে। সন্ধ্যায় কার আর কি মেসেজ এসেছিল জানিনা তবে এইটুকু বুঝতে পারছি এই মেসেজের কারণেই মেঘ এতো অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মেঘের ফোন আমি অনেক সময় ঘাটাঘাটি করেছি কিন্তু মেসেজটা পাইনি, মেঘ হয়তো ডিলিট করে ফেলেছে। মেসেজটা কি ছিল আর কার ছিল জানতে পারলে ভালো হত।
মেঘ: ঘুমাচ্ছ না কেন? (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, পাশ ফিরে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: তুমি ঘুমাবে না?
মেঘ: হু পরে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: রাগ করছ কেন ঘুমিয়ে পড়ো আমার কিছু কাজ আছে দেরি হবে।
কিছুনা বলে চুপচাপ পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। মেঘ যখন লুকাতে চাইছে তাহলে আমি কেন জানতে চাইবো? যতো খুশি লুকিয়ে রাখুক।

মেঘ: কণা এই কণা উঠো। (মেঘের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে আস্তে আস্তে ওর দিকে তাকালাম)
মেঘ: গুড মর্নিং।
আমি: হু!
মেঘ: অবাক হচ্ছ যে?
আমি: না দেখছি।
মেঘ: কি দেখছ? (অবাক হয়ে মেঘকে দেখছি রাতের মেঘ আর এখনের মেঘের মধ্যে এতো পার্থক্য। রাতে মুখ গোমরা করে ছিল অন্যমনস্ক ছিল আর এখন পুরো স্বাভাবিক)
মেঘ: কথা বলছ না কেন?
আমি: এখন তো তুমি স্বাভাবিক বলবে কাল কি হয়েছিল?
মেঘ: অফিসে যাবো মিটিং আছে পারলে সবকিছু একটু গুছিয়ে দাও।
আমি: এড়িয়ে যাচ্ছ?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: কিসের মিটিং?
মেঘ: তোমার চাচ্চু জানেন। (চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম)

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেঘের দিকে তাকালাম, মেঘ আমার ফোন টিপছে আবার সেই কালকের চিন্তিত মুখ।
আমি: আমার ফোনে কি দেখছ?
মেঘ: কিছুনা তো।
আমি: দ্যাত সবসময় শুধু কথা লুকায়। (রাগে গজগজ করতে করতে ওর ঘড়ি ফাইল শার্ট প্যান্ট সবকিছু বিছানায় ছুড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

বেশ বুঝতে পারছি মেঘ আমাকে এড়িয়ে চলছে, মেঘ এইটা কেন বুঝতে পারছে না এভাবে এড়িয়ে চললে আমাদের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরবে। আর আমিতো ওর বউ তাহলে আমার কাছে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখবে কেন আমাকে এড়িয়ে চলবে কেন?
মেঘ: কাঁদছ কেন তুমি? (মেঘ এসে আমার পাশে দাঁড়ালো, কিছুনা বলে চোখের পানি মুছে নিলাম)
মেঘ: বলনা কাঁদছ কেন?
আমি: তাতে তোমার কি?
মেঘ: আমারই তো সবকিছু আমার পাগলী কাঁদবে কেন? (মেঘ আমার দুগালে ধরে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকালো)
আমি: ইদানীং তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছ।
মেঘ: কখন এড়িয়ে চললাম?
আমি: এইযে এখন নিজেই টাই বেঁধে নিলে।
মেঘ: তুমিই তো বলো রোজরোজ টাই বেঁধে দিতে পারবে না।
আমি: এসব তো এমনি বলি।
মেঘ: ওকে.. (মেঘ আমাকে ছেড়ে টাই খুলে নিলো)
মেঘ: নাও এবার বেঁধে দাও।
আমি: পারবো না। (একটানে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল, আমার ঠোঁটের একদম কাছে ওর ঠোঁট দুটু আনলো)
মেঘ: অফিসে যাবো প্লিজ মুখ গোমড়া করে থেকো না, একটা মিষ্টি হাসি দাও।
মৃদু হেসে ওর টাই বেঁধে দিলাম, আমার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে মেঘ বেরিয়ে গেল।

ফোনের কোনো কিছু বাকি রাখিনি মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটএ্যাপস সবকিছু দেখলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না, আশ্চর্য মেঘ তাহলে সকালে আমার ফোনে কি দেখছিল? নাকি ও দেখে ডিলিট করে ফেলেছে?
রুহান: কণা আসবো? (রুহানের ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, রুহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: হ্যাঁ এসো। (রুহান এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো)
আমি: কিছু বলবে?
রুহান: আম্মুর ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাইছিলাম।
আমি: গতকাল থানায় গিয়েছিলাম চাঁচিকে দেখে এসেছি।
রুহান: আম্মু…
আমি: শুধরাননি উনি।
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি কিন্তু ভেবে রেখেছিলাম উনি নিজেকে কিছুটা শুধরিয়ে নিলে আমি উনাকে ছাড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসবো কিন্তু…
রুহান: আমি আম্মুর সাথে একবার কথা বলতে চাই।
আমি: চাইলে বলতেই পারো কিন্তু আমার মনে হয় না কোনো লাভ হবে। কাল উনি আমার সাথে যেভাবে কথা বলেছেন তাতে বুঝতে পেরেছি উনি এতটুকুও নিজেকে বদলাননি আগের মতোই আছেন।
রুহান: একটু চেষ্টা করে দেখি।
আমি: হুম আজ থানায় চলে যাও।
রুহান: আমি আম্মুকে বুঝাতে পারলে তুমি…
আমি: হুম ছাড়িয়ে আনবো।
রুহান: ঠিক আছে আসছি।
রুহান বেরিয়ে যেতেই পিছু পিছু আমিও বেরিয়ে আসলাম।

পপি: ভাবি তুমি নাশতা করবে না?
মা: মেঘ তোমাকে জাগাতে মানা করলো তাই সবাই তোমাকে রেখেই নাশতা করে নিলাম।
আমি: এখন কিছু খাবো না মা পরে খেয়ে নিবো।
মা: খেয়ে নিও কিন্তু।
দাদী: এই এদিকে আয় তো। (দাদী আমার হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালেন)
আমি: কি হয়েছে দাদী?
দাদী: তুই আর মেঘ কি বুঝেছিস বলতো?
আমি: মানে?
দাদী: বিয়ে হয়েছে এতোদিন হয়ে গেল অথচ কোনো খুশির সংবাদ শুনতে পাচ্ছি না কেন?
আমি: দাদী…
দাদী: আরে বাবা লজ্জা কিসের? তোহার একটা ভাই লাগবে না?
আমি: দ্যাত আপনি থাকুন আমি চলে যাচ্ছি।
দাদী: আমি কিন্তু মেঘকে বলবো খুব শীঘ্রই খুশির সংবাদ চাই। (দাদী জোরে জোরে কথাটা বললেন মা আর পপি হাসছে দেখে দৌড়ে উপরে চলে আসলাম)

তোহা: নতুন আম্মু চলনা আমার সাথে। (রুমের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ তোহা পিছন থেকে আচলে ধরলো)
আমি: কোথায় মামুনি?
তোহা: বাগানে যাবো।
আমি: কেন?
তোহা: চলই না।
তোহা আমার হাত ধরে টেনে বাগানের দিকে এগিয়ে গেল।

আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তোহা ফুল গাছের দিকে এগিয়ে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্ড দেখছি। তোহা একটা একটা করে বেলী ফুল গাছ থেকে নিচ্ছে দেখে আমিও এগিয়ে আসলাম।
আমি: ফুল দিয়ে কি করবে তোহা?
তোহা: উফফ মেয়েটা বড্ড বেশি কথা বলে, এতো কথা না বলে কিছু ফুল তুলে দাওতো। (মেয়ের কথা শুনে না হেসে পারলাম না)
তোহা: এই দেখো এখনো বসে আছে আরে কিছু ফুল তুলে দাও আমার অনেক ফুল লাগবে।
আমি: কিন্তু মামুনি গাছ থেকে ফুল ছেঁড়া তো ঠিক না গাছ কষ্ট পায়।
তোহা: আম্মু আব্বুর জন্য একটু ছেঁড়া যা… (তোহা জিহ্বায় কামর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
তোহা: এই যাহ্‌ বলে দিলাম।
আমি: গণ্ডগোল আছে মনে হচ্ছে? আমার আম্মুর মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে?
তোহা: বলা যাবে না।
আমি: খুব পেকে গেছ আম্মুর থেকে কথা লুকানো হচ্ছে?
তোহা: উঁহু আমি পঁচা মেয়ে নই কথা লুকাবো কেন?
আমি: তাহলে বলো ফুল দিয়ে কি করবে?
তোহা: পরে বলবো সারপ্রাইজ।
আমি: ওলে বাবা আমার আম্মু সারপ্রাইজ দিতে শিখে গেছে?
তোহা: হ্যাঁ ফুফি শিখিয়েছে। আর কথা নয় এখন ঝটপট ফুল তুলে দাওতো।
আমি: দিচ্ছি দিচ্ছি।
ঝুড়ি ভরে ফুল তুলে দিলাম। ফুলের ঝুড়িটা হাতে নিয়ে তোহা লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠে গেল, মেয়েটাই জানে এতো বেলী ফুল দিয়ে কি করবে।

তোহা ফুল নিয়ে পপির রুমের দিকে চলে গেল, আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
রুমে আসতেই শুনতে পেলাম আমার ফোন বাজছে হাতে নিয়ে দেখি আম্মু।
আমি: হ্যালো আম্মু।
আম্মু: একটু বেরুতে পারবি?
আমি: কেন আম্মু?
আম্মু: একটু উকিলের কাছে যেতাম।
আমি: হঠাৎ উকিলের কাছে কেন?
আম্মু: ইকবালকে নিয়ে একটু কথা বলে দেখতাম। আসলে শায়লার মুখের দিকে তাকানো যায়না মেয়েটা শুধু কাঁদে।
আমি: ঠিক আছে তুমি আবার কেঁদো না তো।
আম্মু: ঠিক আছে চলে আসিস।
আমি: আচ্ছা।
ফোন রেখে ভাবছি মেঘকে ফোন করবো কিনা। মেঘকে তো বলে যাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু মেঘ তো এখন মিটিং এ ফোন দিলে তো রেগে যাবে। থাকুক আম্মুর সাথেই তো যাচ্ছি এসে বলে দিবো।

রেডি হয়ে দাদী আর মা’কে বলে বেরিয়ে পড়লাম। উকিলের কাছে তো যাচ্ছি অযতা, কোনো লাভ হবে না। শুধু আম্মুর মনের অশান্তিটা দূর করার জন্য যাচ্ছি। পুলিশ আঙ্কেল তো বলেছেন তিন-চার বছরের আগে সম্ভব না কিন্তু এ কথা আম্মুকে বুঝাই কি করে?

বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিলো।
আমি: ভালো আছ?
ভাবি: হ্যাঁ তুমি?
আমি: ভালো, আম্মু কোথায় রেডি হয়েছে?
ভাবি: হ্যাঁ।
আম্মু: কিরে চলে এসেছিস?
আমি: হ্যাঁ চলো।
আম্মু: ভিতরে এসে কিছু খেয়ে যা।
আমি: খিদে তো আছে কিন্তু সম্ভব না সন্ধ্যার আগে বাসায় পৌঁছাতে হবে।
আম্মু: ঠিক আছে চল।
আম্মুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

উকিল: দেখুন আপনারা যা যা বলেছেন সে অনুযায়ী মনে হচ্ছেনা কাজটা এতো সহজ হবে, চার- পাঁচবছর এর আগে তো কোনোভাবেই সম্ভব না। (উকিলের কথা শুনে আম্মু কেঁদে ফেললেন, আগেই বলেছিলাম কিন্তু আম্মু শুনেনি)
আম্মু: কোনো ভাবেই কি সম্ভব না?
আমি: আম্মু তুমি কথা বলো আমি একটু আসছি।
রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, আম্মুর কান্নাকাটি দেখতে ভালো লাগেনা। আমিও তো চেয়েছিলাম ভাইয়াকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পাপ যে বেশি করে ফেলেছে তাতে আমাদের কি করার আছে, পাপ করলে শাস্তি পেতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আমিতো ভাবছি আমার শ্রদ্ধেয় মামা কবে এরেস্ট হবেন, উনি এরেস্ট হলেই আমি চিন্তা মুক্ত হবো। আচ্ছা পুলিশ আঙ্কেল কে একটা ফোন করবো? করেই দেখি কি বলে।

আঙ্কেল: হ্যাঁ কণা মা…
আমি: কিছু করতে পারলেন?
আঙ্কেল: না তবে ইকবাল একটা জায়গার নাম বলছিল যেখানে ওর বাবা সবসময় থাকে আগামীকাল আমরা সেখানেই যাবো।
আমি: যতো দ্রুত সম্ভব ওকে ধরার চেষ্টা করুন।
আঙ্কেল: ঠিক আছে।
আমি: রাখছি।
আম্মু: কণা চল। (ফোন রাখতেই আম্মু এসে পিছন থেকে ডাক দিলেন)
আমি: কথা বলা শেষ?
আম্মু: হুম।
আমি: হবে না বললো তো? আমিতো তোমাকে আগেই বলেছিলাম শুননি আমার কথা।
আম্মু: মেয়েটার কথা ভেবে এসেছিলাম কিযে হবে মেয়েটার।
আমি: কেন তোমার কাছে থাকবে।
আম্মু: তাতো থাকবেই চল বাসায় ফিরে যাই।
আমি: আম্মু আমার খুব খিদে লেগেছে কিছু না খেলে আমি আর থাকতে পারবো না।
আম্মু: ঠিক সময় না খেয়ে অসময়ে খাওয়ার অভ্যাসটা ছাড়িসনি দেখছি। চল রাস্তায় কোনো রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়ে নিবি।
আমি: ঠিক আছে।

পাশের একটা রেস্টুরেন্টে খেতে আসলাম। যদিও আমি বাইরের খাবার অপছন্দ করি পেটের জন্য আসতে হলো, কেন যে সকালে কিছু খেলাম না, এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে খিদে তো লাগবেই।
আম্মু: তুই খাবার অর্ডার কর আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আমি: ঠিক আছে। (পা নাচাচ্ছি আর খাবারের মেনু দেখছি হুট করে কে যেন আমার সামনে এসে বসলো। সামনে তাকিয়ে দেখি কালকের সেই লোকটা যে আমার হাত ধরেছিল। চোখ বড়বড় করে তাকালাম ওর দিকে)
আমি: কি ব্যাপার আপনি?
–চিনতে পেরেছ তাহলে?
আমি: চিনবো না কেন? কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?
–আসলে আমি তোমাকে ফলো করছিলাম। দেখলাম তুমি রেস্টুরেন্টে ঢুকেছ তাও আবার তোমার আম্মু পাশে নেই তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এখানে এসে বসলাম।
আমি: ফলো করছিলেন মানে? আপনি কি আমাকে চিনেন? তারমানে গতকাল ভুল করে নয় আপনি ইচ্ছে করেই আমার হাত ধরেছিলেন।
–বোকা মেয়ে এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছ?
আমি: কি চান আপনি?
–আসলে তোমাকে ফাঁসানো হচ্ছে আমিতো তোমাকে হেল্প করতে এসেছি। (লোকটা ফিসফিসিয়ে কথাটা বললো, আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি)
–জায়গাটা নিরাপদ নয় তাই এখানে সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব না, এইযে চিঠিটা নাও এখানে সবকিছু লেখা আছে। (লোকটা আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো, ভাবছি নিবো কিনা)
–আরে নাও আমি বেশি সময় তোমার কাছে থাকতে পারবো না। (কাগজটা আনার জন্য হাত বাড়াতেই কাগজ দিতে দিতে লোকটা আমার হাত ধরে ফেললো)
আমি: একি করছেন হাত ছাড়ুন।
–না ছাড়লে?
আমি: না ছাড়লে? দাঁড়া দেখাচ্ছি। (আমি পায়ের জুতা খুলছি দেখে লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল)
আম্মু: কণা কি হয়েছে কাকে দৌড়াচ্ছিস?
ওয়েটার: মেডাম কোনো সমস্যা?
আমি: না। আম্মু চলো জায়গাটা আমাদের জন্য সেইফ না।
আম্মু: ঠিক আছে চল।

গাড়িতে বসে ভাবছি লোকটা কে ছিল আর কেনই বা এমন করছিল? লোকটা দুদিন আমার হাত ধরলো কিন্তু কেন? আচ্ছা এমন নয়তো মেঘকে যেভাবে বারবার ফাঁসানো হয়েছিল সেভাবে আমাকে এখন ফাঁসানো হচ্ছে? হয়তো লোকটা আমার হাত ধরার সময় আড়াল থেকে কেউ ছবি তুলেছিল আর সেটা গতকাল মেঘকে পাঠিয়েছিল যার কারণে মেঘ আমার সাথে এমন করেছে। যদি আমার ধারণা ঠিক হয় তাহলে তো আজও ছবি তুলেছে আর সে ছবি অবশ্যই মেঘকে দিবে। যে এই কাজ করছে তার আসল উদ্দ্যেশ্য মেঘ আর আমাকে আলাদা করে ফেলা। কিন্তু কে সে মামা নয়তো?
আম্মু: কণা কি ভাবছিস? আমরা তো চলে এসেছি নেমে আয়। (হঠাৎ আম্মুর ডাকে হকচকিয়ে উঠলাম, তাকিয়ে দেখি বাসার সামনে চলে এসেছি)
আমি: না আম্মু ভিতরে যাবো না বাসায় চলে যাবো। বিকেল হয়ে এসেছে তোহা আমাকে খুঁজবে।
আম্মু: ঠিক আছে সাবধানে যাস।
আমি: আচ্ছা।
আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

দাদী: কিরে চলে এসেছিস? তোর মা কেমন আছে? (ড্রয়িংরুমে আসতেই দাদী বসা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে প্রশ্ন করলেন)
আমি: ভালো দাদী।
দাদী: আচ্ছা তোর আর মেঘের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে?
আমি: নাতো কেন?
দাদী: এই অসময়ে অফিস থেকে ফিরে আসলো মুখটা দেখলাম গম্ভীর।
আমি: কি মেঘ চলে এসেছে?
দাদী: হ্যাঁ এইমাত্র আসলো।
আমি: ঠিক আছে আমি আসছি।
দাদী: যা গিয়ে দেখ কি হয়েছে।
দৌড়ে রুমের দিকে আসলাম।

মেঘ দরজা খুলা রেখেই বেডে বসে আছে, মাথায় হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে রেখেছে।
আমি: মেঘ.. (আমার ডাকে মাথা তুলে সামনে তাকালো)
মেঘ: কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: আম্মুর সাথে উকিলের কাছে।
মেঘ: সত্যি নাকি অন্য কোথাও গিয়েছিলে? আমাকে বলে যাওনি কেন? (আমার সন্দেহটাই ঠিক, মেঘকে আজকের ছবি দেওয়া হয়েছে আর মেঘ এসব দেখে বাসায় চলে এসেছে)
আমি: তুমি মিটিং এ ছিলে তাই ফোন করে বিরক্ত করিনি।
মেঘ: আমি যদি বলি তুমি অন্য কোথাও গিয়েছিলে?
আমি: আমাকে বিশ্বাস না করাটা তোমার ব্যর্থতা তবে আম্মুর থেকে জেনে নিতে পারো।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমাকে সন্দেহ করার আগে তোমার আমাকে একবার সবকিছু জানানোর প্রয়োজন ছিল, এসব সত্যি কিনা জানতে চাওয়া উচিত ছিল।
মেঘ: তারমানে তুমি…
আমি: জানিনা তবে আন্দাজ করে নিয়েছি।
মেঘ: আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না তবে এটাও সত্যি রোজ রোজ একি জিনিস দেখলে…
আমি: বউকে অবিশ্বাস করা যায় তাইতো?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে কিছু জানাওনি তাই শুধু এইটুকু বলে রাখছি তোমাকে যেমন বারবার ফাঁসানো হয়েছিল ঠিক সেভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
তোহা: এই তোমরা এতো দুষ্টু কেন সবসময় শুধু ঝগড়া করো। (মেঘ কিছু বলার জন্য আমার দিকে এগিয়ে আসছিল তোহা মাঝখানে চলে আসাতে মেঘ থেমে গেল)
আমি: তোমার হাত পিছনে কেন আম্মু হাতে কি আছে?
তোহা: বলেছিলাম না সারপ্রাইজ। (তোহা হাসতে হাসতে হাত দুটু সামনে নিয়ে আসলো, দু হাতে দুটু বেলী ফুলের মালা)
আমি: এই মালা কে বানিয়ে দিলো?
তোহা: ফুফি।
মেঘ: খুব সুন্দর হয়েছে মামুনি এবার তুমি খেলতে যাও।
তোহা: না আমিতো মালাগুলো তোমাদের দেওয়ার জন্য এসেছি। তোমরা মালা গুলো নিয়ে একে অপরকে পড়িয়ে দিবে আর বিনিময়ে আমাকে কিছু দিবে।
মেঘ: কি চাও তুমি?
তোহা: আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।
মেঘ: কিন্তু..
আমি: থাকুক না মেয়েটা চাইছে যখন তখন নাহয় যাবো।
মেঘ: তোহা এসব তোমাকে কে শিখিয়ে দিয়েছে?
তোহা: নাম বলা যাবে না তুমি বলো যাবে কিনা?
মেঘ: ঠিক আছে আগামীকাল যাবো।
তোহা: এবার মালাটা নাও আর নতুন আম্মুকে পড়িয়ে দাও।
মেঘ: পরে পড়িয়ে দিবো তুমি যাও। (মেঘ তোহার থেকে মালা আনতেই তোহা দৌড়ে চলে গেল)
মেঘ: বয়েই গেছে তোমাকে মালা পড়াতে। এসব যদি সত্যি হয়…(মেঘ আঙ্গুল তুলে আমাকে শাসাচ্ছিল ওর আঙ্গুলটা নামিয়ে দিলাম)
আমি: ওইযে ওয়াশরুমটা ওইদিকে মাথায় পানি ঢেলে আসো তাহলে হয়তো মাথায় ঢুকবে যে এসব আমাকে ফাঁসানোর জন্য করা হচ্ছে।

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে এখনো আমি বারান্দায় চলে এসেছি। যে বুঝেও না বুঝে তাকে কি বুঝানো যায়? আমাদের সাথে বারবার এমন হচ্ছে তাও মেঘ কিভাবে আমাকে সন্দেহ করতে পারলো? আমাকে সন্দেহ করার আগে তো ওর একবার ভাবা উচিত ছিল এসব পিক শুধু ওকে দেওয়া হয় কেন আর আমাকেও তো জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। এসব না ভেবে আমাকে জিজ্ঞেস না করে মেঘ নিজে নিজে ভেবে আমাকে সন্দেহ করে বসে আছে। থাকুক আমিও কোনো কিছু বুঝাতে বা বিশ্বাস করাতে যাবো না। সন্দেহ খুব খারাপ জিনিস যখন এই সন্দেহের কারণে আমাকে হারাবে তখন বুঝবে। আমি বুঝাতে যাবো কেন ও যদি আমাকে সন্দেহ করতে পারে তাহলে আমিও অভিমান করতে জানি…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে