নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৩

0
2819

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

ভোরবেলা কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো, এতো ভোরে কে আসলো? উঠতে চাইলাম মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, ওর হাত দুটু সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু ও আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আমি: মেঘ হচ্ছে কি ছাড়ো কে যেন এসেছে।
মেঘ: হু..
আমি: দ্যাত কাকে কি বলছি ও তো পুরো ঘুমে।
মেঘ: ঘুমে না আমি তোমাকে যেতে হবে না অন্যকেউ ঠিক দরজা খুলে দিবে।
আমি: আর কারো ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা কে জানে কলিংবেল তো সমানে বেজেই চলেছে।
মেঘ: ওইযে শুনো কলিংবেল বাজা বন্ধ হয়ে গেছে এবার শান্তু হয়ে ঘুমাও তো।
মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো, ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এই মায়া ভরা মুখটা যেন সারাজীবন দেখতে পারি মেঘ, কখনো যেন কোনো কিছু আমাদের আলাদা করতে না পারে। মেঘকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলাম।

আম্মু: সব তো শুনলে এখন বলো কণাকে এমন পরিস্থিতিতে একা রেখে আমি কিভাবে কানাডা থাকি। (ঘুম থেকে উঠে নিচে আসতেই দেখি আম্মু আর চাচ্চু ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছেন)
আমি: চাচ্চু কখন এলে?
চাচ্চু: এইতো ভোরবেলা। এসে যা শুনছি ইচ্ছে হচ্ছে তোকে আর তোর আম্মুকে আমার সাথে নিয়ে যাই। কিন্তু তোকে নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না।
আমি: কানাডা গিয়েও তো আম্মু নিরাপদে থাকতে পারছে না।
শায়লা: আর তো মাত্র কয়টা দিন বদমাইশ লোকটা এরেস্ট হয়ে গেলেই সবাই শান্তিতে থাকতে পারবে। (শায়লা চা নিয়ে এসে টেবিলে চায়ের কাপ রাখতে রাখতে বললো। সত্যি মেয়েটাকে যত দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি)
চাচ্চু: সামাদ এরেস্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি আছি তোমাদের সাথে ভয় নেই।
আমি: কিন্তু চাচ্চু ওদিকে তোমার ব্যবসা…
চাচ্চু: ওসব তোর চাঁচি সামলে নিবে।
জোহা: আব্বু আমি কবে যাচ্ছি?
আমি: তুই কোথায় যাবি?
জোহা: কোথায় আবার কানাডা।
আম্মু: আপাতত তুই আমার কাছে থাক পরে যাবি। (শায়লার দিকে চোখ পড়লো সমানে কাজ করে যাচ্ছে। উঠে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম)
আমি: তুমি এতো কাজ করছ কেন কাজের লোক আছে তো।
শায়লা: একটু করি সমস্যা কোথায়?
আমি: না চলো আমাদের সাথে বসে গল্প করবে। (শায়লাকে টেনে এনে আম্মুর পাশে বসিয়ে দিলাম)
শায়লা: একটু কাজ করলে কি এমন হতো?
আম্মু: তুমি তো এ বাড়ির বউ তুমি কাজ করবে কেন? (শায়লা মুখ গোমরা করে ফেললো, হয়তো ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। সত্যি মেয়েটা ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে)
আম্মু: কি হলো আবার মুখ গোমরা করলে কেন?
আমি: এই চলো তো তুমি আমার সাথে। (শায়লাকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে আসলাম)

শায়লা বাগানে এসে দোলনায় বসে ঢুকরে কেঁদে উঠলো।
আমি: আরে কি হলো?
শায়লা: তোমরা কতো ভালো আর আমি তোমাদের সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করেছি।
আমি: আমিও তো তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আর তুমি তো এসব পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করেছ।
শায়লা: তুমি তো জানতে না আমি অভিনয় করছিলাম কিন্তু আমিতো জানতাম তোমরা খুব ভালো। তাছাড়া মেঘকে তো আমি ছিনতাম ওর সাথেও তো খারাপ ব্যবহার করেছি বারবার ওকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছি।
আমি: বাদ দাওনা এসব। (শায়লা সমানে কেঁদেই চলেছে কি যে করি)
আমি: আমার মিষ্টি ভাবির মুখে কান্না নয় মিষ্টি হাসি মানায়। (শায়লার গাল টেনে দিলাম ও ফিক করে হেসে দিলো)
আমি: হাসছ কেন?
শায়লা: শত্রু থেকে ভাবি?
আমি: হ্যাঁ আজ থেকে তুমি আমার ভাবি আর আমি তোমার ননদিনী। আজ থেকে কোনো শত্রুতা নয়। (বারবার ওকে শায়লা ডাকতে এখন নিজের মুখেই বাঁধছে, আগে যাই করে থাকুক এখন তো ও আমার ভাইয়ের স্ত্রী)
ভাবি: ঠিক আছে ননদিনী।
মেঘ: এইযে মেডাম ভাবির সাথে আড্ডা দিলে হবে রুমে যে নিজের স্বামীকে রেখে গেছ সে খেয়াল আছে? (মেঘের কথা শুনে ছাদের দিকে তাকালাম, ছাদে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে)
আমি: আসছি।
ভাবি: আমি এখানে একটু সময় বসি তুমি রুমে যাও।
আমি: আচ্ছা তুমি তো মেঘের সাথে দুবছর সংসার করেছ মেঘের পছন্দ অপছন্দ কি একটু বলবে আমাকে? (ভাবি আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো)
আমি: হাসছ যে..
ভাবি: একজন কে ভালোবেসে অন্য জনের সাথে সংসার করার মতো কষ্ট যন্ত্রণা আর কিছুতে নেই অথচ এই কষ্টটাকেই পরিস্থিতির চাপে পরে আমাদের মেনে নিতে হয়। দুবছর অনেক সময় কিন্তু এতোটা সময়ের মধ্যেও মেঘের সাথে আমার তেমন কোনো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি, ওর পছন্দ অপছন্দ কখনো জানতে চাইনি। মেঘকে ইকবালের কথা বলতে পারিনি আর মেঘের মায়ের কথায় বেবি নিতে হয়েছিল। আসলে তো মেঘ আর আমার মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোনো কথাই হতো না। বুঝতাম মেঘ আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু কিছু করার ছিল না কারণ আমি যে ইকবালকে ভালোবাসি।
আমি: (নিশ্চুপ)
ভাবি: জানো তো ভালোবাসা এমন এক জিনিস যার জন্য মানুষ সব করতে পারে যেমনটা আমি করেছি। ইকবাল আমাকে প্রথমেই তোমার কথা বলেছিল মানতে কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছিলাম আর বলেছিলাম আমি ওর ঘরের এক কোণে পরে থাকবো তোমাকে বিয়ে করার পরও, ইকবাল আমাকে ভালোবাসে তো তাই তোমাকে বিয়ে করতে চাইতো না কিন্তু ওর আব্বু সবসময় আমাদের আলাদা করে দেয়ার ভয় দেখাতো। ইকবালের বাবার অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম তাইতো উনি যা বলতেন তাই করতে হতো আমাকে। মেঘ আর তোমাকে আলাদা করার জন্য উনি ডিভোর্স পেপার মেঘের ফাইলের ভিতর রেখেছিলেন মেয়েটিকে দিয়ে, আর ফোনে সব কথা আমাকে দিয়ে বলিয়েছেন। তোমাদের আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি আ…
আমি: ইচ্ছে করে তো আর দাওনি বাদ দাও এসব। বিকেলে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবো তোমাকে নিয়ে কেমন?
ভাবি: সত্যি?
ওর মুখে হাসির ছলক দেখে মৃদু হেসে চলে আসলাম।

মেঘ: এই আমাকে একা রেখে বাগানে কি করছিলে? (রুমে আসতেই মেঘ আমার দুগালে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো)
আমি: কি হয়েছে এমন করছ কেন?
মেঘ: তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও একা থাকতে পারিনা। (মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম)
মেঘ: হাসছ যে?
আমি: সত্যি আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও একা থাকতে পারোনা?
মেঘ: বললাম তো পারিনা।
আমি: যদি কখনো দুজন আলাদা হয়ে যাই তখন?
মেঘ: আলাদা হয়ে যাবো মানে?
আমি: না মানে যদি কখনো এমন কোনো পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় আমাদের যে দুজন আলাদা হয়ে যেতে হবে তখন কিভাবে থাকবে?
মেঘ: পারবো না আর এমন পরিস্থিতি আমি আমাদের জীবনে আসতে দিবো না। (মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো)
আমি: আরে পাগল কাঁদছ কেন আমিতো কথাটা এমনি বলেছি।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে যাবো।
মেঘ: আমি যেতে দিলে তো। (মেঘ আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে চুমু দিলো)
আমি: এতো ভালোবাস আমায় এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে?
মেঘ: যতদিন আমি তোমার পাশে আছি ততদিন দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (মৃদু হেসে মেঘের বুকে মাথা রাখলাম)
আমি: বিকেলে একবার থানায় যাবো ভাইয়া আর চাঁচির সাথে দেখা করবো।
মেঘ: বাসায় যাবে না?
আমি: হ্যাঁ যাবো থানা থেকে সোজা বাসায়।
মেঘ: আমাকে তো অফিসে যেতে হবে।
আমি: হুম যাও কাল থেকে চাচ্চু সবকিছুর দায়িত্ব নিবে তোমার আর এতো টেনশন করতে হবে না শুধু চাচ্চুর সাথে সাথে থাকলেই হবে।
মেঘ: ঠিক আছে।
আমি: রেডি হয়ে এসো আমি নাশতা দিচ্ছি।
মেঘ: ওকে মহারাণী।

মেঘকে অফিসে পাঠিয়ে জোহা আর ভাবির সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আজ মনে হচ্ছে সত্যি সব ঠিক হয়ে গেছে। এতোদিন পর আবার সেই হাসি আড্ডা। এখন শুধু মামা এরেস্ট হবার অপেক্ষা, থানায় গিয়ে পুলিশ আঙ্গেলের থেকে জানতে হবে কবে এরেস্ট করতে পারবে ওরা মামাকে।
আম্মু: কণা তুই কি থানায় যাবি?
আমি: হ্যাঁ আম্মু।
আম্মু: একটু কথা বলে দেখিস তো ইকবালে…
আমি: আম্মু কেঁদো না আমি কথা বলে দেখবো।
আম্মু: ঠিক আছে একটু তাড়াতাড়ি চলে যা।
আমি: আচ্ছা।

জোহা আর আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি ভাবি ভাইয়ার হাত ধরে পাগলের মতো কাঁদতেছে। ভালোই হয়েছে ভাবিকে নিয়ে থানায় এসেছি, অন্তত ওদের দুজনের দেখা তো হলো। ভাইয়াকে যে কবে বাসায় ফিরিয়ে নিতে পারবো, ভাবির কান্না সত্যি এখন অনেক কষ্ট দেয়।
আমি: জোহা তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি।
জোহা: ঠিক আছে।

আমি: আঙ্গেল কোনো ভাবেই কি সম্ভব না?
আঙ্গেল: না যদিও ইকবাল আত্মসমর্পণ করেছে তারপরও তিন-চার বছরের কমে সম্ভব না। আর ওর নিজের দেওয়া জবানবন্দীই তো সবচেয়ে বড় প্রমাণ। (আঙ্গেল এর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল, তিন-চার বছরের কমে ভাইয়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না এই কথা ভাবিকে বলবো কিভাবে? ভাবি তো এই কথা শুনে আরো ভেঙ্গে পড়বে)
আঙ্গেল: আর হ্যাঁ ইকবাল ওর বাবার সম্পর্কে সবকিছু বলেছে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ওকে এরেস্ট করার চেষ্টা করবো।
আমি: ঠিক আছে আমি চাঁচির সাথে দেখা করতে চাই।
আঙ্গেল: কি করবে দেখা করে? এই বজ্জাত মহিলা এতটুকুও শুধরায়নি।
আমি: একবার দেখা করেই যাই এসেছি যখন।
আঙ্গেল: ঠিক আছে।

চাঁচির সামনে আসতেই উনি আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন।
চাঁচি: বজ্জাত মেয়ে এখানে কেন এসেছ?
আমি: দেখতে এসেছিলাম আপনি কিছুটা শুধরিয়েছেন কিনা। আসলে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
চাঁচি: এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বল।
আমি: সামলেই তো বলতে এসেছিলাম আপনিই তো বজ্জাত মেয়ে বলে আমার মাথাটা গরম করে দিলেন।
চাঁচি: বজ্জাত মেয়েকে বজ্জাত বলবো নাতো কি বলবো?
আমি: যদি নিজেকে কিছুটা শুধরে নিতেন তাহলে এখান থেকে আপনাকে নিয়ে যেতাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনাকে এখানেই থাকাটা মানায়।
চাঁচি: চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে।
আমি: রুহানের জন্য এসেছিলাম নাহলে.. দ্যাত আপনার সাথে কথা বলে শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট হচ্ছে।

ভাবির কাছে চলে আসলাম, মেয়েটা এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।
আমি: অনেক কেঁদেছ এখন থামো তোমরা।
ভাইয়া: কণা ওকে বাসায় নিয়ে যা।
আমি: হুম নিয়ে যাচ্ছি আর তোমাকেও খুব তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাবো। (ভাইয়া মুচকি হাসলো তাহলে কি ভাইয়া জানে এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব না)
ভাইয়া: বাসায় যা।
আমি: হুম।

গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছি, বুঝতে পারছি না ভাবিকে কিভাবে সত্যিটা বলবো আর আম্মুকেই বা কি বলবো। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গেছে এখন দেখছি আমার জীবনের সবকিছু ঠিক করতে গিয়ে ভাইয়া আর ভাবির জীবনের সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে।
জোহা: আপু দেখো পুতুল গুলো কি সুন্দর। (জোহার কথা শুনে গাড়ির গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকালাম, দোকানে পুতুল রাখা এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে)
আমি: গাড়িতে বস আমি আসছি।

জোহা আর তোহা দুজনের জন্য দুটু পুতুল কিনলাম।
আমি: আরে আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? (টাকা দিতে যাবো তখনি অচেনা একটি লোক আমার হাত ধরে ফেললো, লোকটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি)
–আসলে আমার স্ত্রী ঠিক এমনি একটা শাড়ি পড়েছে তাই ভুল করে আমার স্ত্রী মনে করে আপনার হাত ধরে ফেলেছি। (লোকটা চলে গেল আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। লোকটার কথা কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না লোকটা মিথ্যে বললো নাকি সত্যি)
জোহা: আপু কি হয়েছে?
আমি: আর বলিস না লোকটা নাকি ভুল করে ওর স্ত্রী ভেবে আমার হাত ধরে ফেলেছে।
জোহা: ভুল করে…
আমি: ঠিক এমন শাড়িই নাকি ওর স্ত্রী পড়েছে তাই ভুল হয়ে গেছে নাকি।
জোহা: হতেই তো পারে।
আমি: আমার কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না লোকটার কথা।
জোহা: এতো ভেবো নাতো চলো।
আমি: হুম।

জোহা আর ভাবিকে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় ফিরে আসলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মেঘ হয়তো অফিস থেকে চলে এসেছে। কলিংবেল চাপতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমি: মা তোহা কোথায়?
মা: রুহানের কাছে দেখেছিলাম।
আমি: ঠিক আছে।
দাদী: এসেই মেয়ের দিকে ছুটছিস আমরা বুঝি কেউ না?
আমি: দুদিন হলো মেয়েটাকে দেখিনা পরে আসছি আপনাদের কাছে। (দৌড়ে রুহানের রুমে আসলাম, রুহান আর পপিকে রোমান্টিক অবস্থায় দেখে ফেললাম)
আমি: এই সরি সরি ভুল হয়ে গেছে।
রুহান: সমস্যা নেই।
আমি: দরজা খুলে রোমান্স মুটেও ঠিক না, আমার ননদিনী তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
পপি: ভাবি তুমি না..
আমি: চলে যাচ্ছি ডিস্টার্ব করবো না আমার মেয়ে কোথায়?
রুহান: ভাইয়া নিয়ে গেছে রুমেই হয়তো।
আমি: ঠিক আছে ছুটিয়ে রোমান্স করো হিহিহি।

রুমে এসে দেখি তোহা বেডে বসে বসে খেলছে আর মেঘ জুতো খুলছে। পুতুলটা মুখের সামনে ধরে তোহার দিকে এগিয়ে গেলাম।
তোহা: নতুন আম্মু এসেছে। (তোহা খুশিতে হাত তালি দিচ্ছে। মেয়ের কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছি, পুতুলটা তো অনেক বড় মুখের সামনে ধরলে চেনার কথা না কে এসেছে অথচ তোহা কিভাবে যেন আমাকে ছিনে ফেললো)
মেঘ: তুমি তোহার আত্মার সাথে মিশে গেছ বুঝতে পেরেছ আর হা হয়ে তাকিয়ে থেকো না। (মেঘ হাসছে দেখে ওকে ভেংচি দিয়ে তোহাকে কোলে তুলে নিলাম)
তোহা: এতো বড় পুতুল আমার জন্য?
আমি: হ্যাঁ আমার মামুনিটার জন্য।
তোহা: কিন্তু আমার তো এত্তো বড় পুতুল চাই না আমার তো পুঁচকে পুতুল চাই।
মেঘ: তোহা কোন পুতুলের কথা বলছে বুঝতে পেরেছ?
আমি: এই হাসবা নাতো বাপ মেয়ে দুটু এক রকম। (মেঘ হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে চলে যাচ্ছিল হঠাৎ ওর ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠতেই থেমে গেল)
মেঘ: কণা দেখো তো।
আমি: আমার মেয়েকে নিয়ে বিজি আছি দেখতে থাকো। (মেঘ নিজেই এসে ফোন হাতে নিলো। কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করার পর আমার দিকে তাকালো)
আমি: কি হয়েছে?
মেঘ: কিছুনা।
আমি: চলে যাচ্ছ যে কি হয়েছে বলবে তো, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
মেঘ: বললাম তো কিছু হয়নি।
আমি: বলো প্লিজ কি হয়েছে। (মেঘের কাছে এসে ওর হাত ধরে ফেললাম। মেঘ আমার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে আমার দুগালে ধরলো)
মেঘ: এসব নিয়ে কথা বলে তোমাকে আমি হারাতে চাই না।
আমি: মানে?
মেঘ: তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।
মেঘ মৃদু হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল, আমি হা হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলে গেল মেঘ এসব আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে