নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২১

0
2668

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আম্মুকে সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আম্মু ফোন রিসিভই করছে না। শপিংমলে আছে নাকি বাসায় পৌঁছেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কিযে করবো এখন…
মেঘ: একটু স্থির হয়ে বসো প্লিজ।
আমি: আমার আম্মু মৃত্যুর মুখে আর তুমি…
মেঘ: না মানে অস্থিরতার সময়… (রাগি চোখে তাকালাম মেঘের দিকে, চুপ হয়ে গেল একদম)

ফোন হাতে নিয়ে রুমে পায়চারী করছি আর আম্মুর ফোনের অপেক্ষা করছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম।
আমি: আম্মু কোথায় ছিলে?
আম্মু: কেন কি হয়েছে?
আমি: তুমি বাসায় আছ তো?
আম্মু: হ্যাঁ একটু শপিং এ গিয়েছিলাম বাসায় আসছি মাত্র।
আমি: যাক নিশ্চিন্ত হলাম।
আম্মু: হয়েছে কি বলবি তো?
আমি: সব বলবো আগে তুমি দেশে আসো।
আম্মু: দেশে?
আমি: হ্যাঁ আজ বিকেলের ফ্লাইটেই চলে আসো। কোনো প্রশ্ন করবা না, আমি এয়ারপোর্টে তোমাকে রিসিভ করার জন্য থাকবো।
আম্মু: তোর চাচ্চুকে জিজ্ঞেস করে নেই?
আমি: জিজ্ঞেস করতে হবে না শুধু বলো তুমি দেশে আসছ আমার কাছে।
আম্মু: কখন যে কি তোর মাথায় ঘুরপাক খায় কিছুই বুঝিনা।
আমি: তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নাও।
আম্মু: ঠিক আছে রাখছি।

ফোনটা বিছানার উপর রেখে একটা সস্থীর নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলাম। আম্মুকে কোনোভাবে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারলে শায়লা আর ইকবালকে ছাড়ে কে। একবার শুধু আম্মুকে এয়ারপোর্ট থেকে ভালোভাবে বাসায় নিয়ে আসি তারপর শায়লার শশুড়কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো আমি।
মেঘ: আম্মু বিকেলের ফ্লাইটে আসলে তো রাত হয়ে যাবে।
আমি: হ্যাঁ এগারোটা বাজবে।
মেঘ: এয়ারপোর্ট থেকে এতো রাতে নিয়ে আসাটা রিস্ক হয়ে যাবে না?
আমি: তাইতো।
মেঘ: কি করবে?
আমি: সমস্যা নেই পুলিশ আঙ্গেলকে বলে সঙ্গে করে দুজন পুলিশ নিয়ে যাবো।
মেঘ: ঠিক আছে।

মা রান্না করছেন আমি হাতে হাতে সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছি কিন্তু কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না। আব্বুকে হারিয়েছি এখন যদি আম্মুর কিছু হয়ে যায় আমিতো শেষ হয়ে যাবো। আম্মুর কিছু হবার কথা ভাবতেই ভিতরে ছ্যাঁত করে উঠে।
মা: বৌমা তোমার কি হয়েছে বলতো তোমাকে এতো অস্থির অস্থির লাগছে কেন?
আমি: কিছু হয়নি তো মা।
মা: কিছু নিয়ে টেনশনে আছ?
আমি: আসলে আজ আম্মু আসছেন তাই একটু টেনশন হচ্ছে।
মা: তোমার মায়ের তো আর কোনো বিপদ হবে না শায়লা তো জেলে তাহলে এতো ভয় পাচ্ছ কেন?
আমি: ভয়টা তো শায়লার শশুড়কে নিয়ে মা কখন কি করে বসবে বুঝতেই পারছি না।
মা: কলিংবেল বাজছে দেখতো কে এসেছে।
আমি: দেখছি।

দরজা খুলে বাবাকে দেখে থমথম খেয়ে গেলাম, জানিনা বাবাকে বুঝিয়ে সবকিছু ঠিক করবো কিভাবে।
বাবা: কেমন আছ মা? বাসার সবাই কোথায় ডাকো সবাইকে, পাক্কা তিনদিন পর বাসায় আসলাম সবাইকে দেখি একটু।
আমি: ডাকছি বাবা।
বাবা: আমার তোহা দাদুভাই কোথায়?
তোহা: এইতো আমি। (পপির হাতের আঙ্গুল ধরে হাটছিল তোহা, বাবাকে দেখে দৌড়ে এসে কোলে উঠে বসলো। বাবার কন্ঠ শুনে সবাই একে একে ড্রয়িংরুমে আসতে শুরু করলো)
বাবা: পপি তোর হাতে কি হয়েছে?
পপি: আসলে বাবা…
বাবা: রুহান তোর আবার কি হলো মুখটা এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেন?
দাদী: আমি বলছি তোকে সবকিছু তবে আগে বল তুই টেনশন করবি না হুট করে রেগে যাবি না।
বাবা: ঠিক আছে বলো আগে কি হয়েছে।
দাদী বাবাকে প্রথম থেকে সবকিছু বলতে শুরু করলেন। জানিনা বাবা কেমন রিয়াক্ট করবেন, ভয় হচ্ছে আমিতো বাবাকে কথা দিয়েছিলাম। বাবার চোখের সামনে থেকে রান্নাঘরে চলে আসলাম মায়ের কাছে।

মা: মানুষটার আবার না কিছু হয়ে যায় এসব শুনে।
আমি: কিছু হবে না মা একটু ধৈর্য ধরুন।
বাবা: এতোগুলো বছর ধরে আমি কাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসলাম? হ্যাঁ সেদিন একটা এক্সিডেন্ট ঘটেছিল কিন্তু আমিতো ওদের আপন করে নিয়েছিলাম আর ও কিনা আমাকে শত্রু ভেবে এসেছে সবসময়? (বাবার কথা গুলো শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। সত্যিই তো যাকে এতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখলেন সে কিনা এমন করলো। আপন মানুষ গুলো আঘাত করলে সত্যি খুব কষ্ট হয়)
মেঘ: আব্বু এসব নিয়ে টেনশন করোনা তো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও। (বাবার দিকে একবার তাকালাম মাথা নিচু করে রুমের দিকে চলে গেলেন)

আর কিছুক্ষণ পর আম্মুর ফ্লাইট এখন পর্যন্ত তো সব ভালোই চলছে বাকি সময়.. হুট করে ফোন বেজে উঠলো, কেঁপে উঠলাম ফোনের শব্দে। আগের সেই লোকটির নাম্বার দেখে ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম।
–কণা মামুনি বয়সে তো একটা পিচ্ছি মেয়ে তুমি আমাকে টপকে যাওয়ার কথা ভাবছ কিভাবে?
আমি: মানে?
–ভেবেছিলে আমার ছেলে আর বৌমাকে না ছেড়েই তোমার আম্মুকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমিতো তোমার আম্মুর ঠিক পিছনের সিটে বসে আছি, আমাদের ফ্লাইট একসাথেই। (ভেবেছিলাম লোকটা জানতে পারবে না কিন্তু ও তো আম্মুকে ফলো করছে, এখন কি করবো)
–কি হলো মামুনি চুপ হয়ে আছ যে? দেখবে তোমার আম্মুকে ভিডিও করে পাঠাবো?
আম: কি চান আপনি?
–ওই এটাই আমার ছেলে আর বৌমাকে ছেড়ে দাও।
আমি: ওদের ছেড়ে দিলে পর যে আপনি আম্মুর ক্ষতি করবেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
–বললাম তো আপনজনদের মারতে আমার আবার একটু কষ্ট হয়।
আমি: কে আপনি? আমাদের কে হন?
–জানতে চাও তাহলে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করো সামাদ কে?
আমি: সামাদ?
–হ্যাঁ আমি সামাদ বাকিটা তোমার আম্মুর থেকে জেনে নিও রাখছি এখন। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন ইকবাল আমাকে ফোন করে নাহলে তোমার আম্মু…
আমি: না না আমি ফোন করে বলছি ছেড়ে দিতে।
–লক্ষী মামুনি।
লোকটা ফোন রেখে দিলো। পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে এতো কষ্টের পর ওদের ধরা গেল আর এখন কিনা ছেড়ে দিতে হবে।

ফোনটা সমানে বেজেই চলেছে ইচ্ছে করেই রিসিভ করছি না। মাত্র পাঁচ মিনিট আগে পুলিশ আঙ্গেলকে ফোন করে বলেছি ওদের ছেড়ে দিতে আর গুনে গুনে পাঁচ মিনিট পরেই শায়লা ফোন করলো। এখন ফোন রিসিভ করলেই শায়লা হাসবে আর আমার বোকা হয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
মেঘ: কি হলো ফোন রিসিভ করছ না কেন?
আমি: থাকুক না শায়লার তাচ্ছিল্যের হাসিটা শুনতে চাই না।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি হেরে গেছি মেঘ।
মেঘ: দূর পাগলী কাঁদছ কেন আর হেরে যাবে কেন? ওরা তো আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে না, তুমি আম্মুকে আগে তোমার কাছে নিয়ে এসো তারপর আবার ওদের শাস্তি দিবে।
আমি: সে সুযোগটা কি ওরা আমাকে দিবে?
মেঘ: দেখো সব কিছুর মূলে তোমাদের সম্পত্তি আর এই সম্পত্তি পাওয়ার জন্যই ওরা এতোকিছু করছে, ওরা এই সম্পত্তি না নিয়ে দেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। আবার ফিরে আসবে ওরা আর তখন আম্মুও তোমার কাছে থাকবে তখন ওদের আবার এরেস্ট করাতে পারবে।
আমি: পারবো তো নাকি ওরা এভাবে অন্যায় করেও খুলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াবে?
মেঘ: নিজের উপর ভরসা রাখো কণা, তুমি ঠিক পারবে।
আমি: হুম

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি আম্মুকে রিসিভ করার জন্য। সঙ্গে করে দুজন পুলিশ এনেছি ভয় হচ্ছে সামাদ এর লোকজন হয়তো আমাদের আশে পাশেই আছে।
মেঘ: ওইতো আম্মু। (মেঘের কথা শুনে সামনে তাকালাম, আম্মু আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। আমার দুচোখ সামাদ নামের লোকটাকে খুঁজছে কিন্তু সন্দেহজনক কাউকে তো দেখছি না। তবে কি সামাদ আমাকে বোকা বানালো? না না বোকা বানাবে কি করে ও তো বলেছিল এয়ারপোর্টে আম্মুর পিছনের সিটে বসা, যদি না আসবে তাহলে জানবে কিভাবে)
আম্মু: কণা কাকে খুঁজছিস আমিতো তোর সামনে।
আমি: কাউকে না আম্মু গাড়িতে চলো।
আম্মু: আচ্ছা তুই আমাকে এভাবে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললি কেন?
আমি: সব বলবো বাসায় চলো।
আম্মু: ঠিক আছে।

বাসায় আসতে আসতে রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেল, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি: আম্মু তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
আম্মু: ঠিক আছে।
আমি: মেঘ তুমিও ফ্রেশ হয়ে এসো।
মেঘ: ওকে।

টেবিলে খাবার এনে সাজাচ্ছি আর ভাবছি ভালোয় ভালোয় তো আম্মুকে বাসায় নিয়ে আসলাম কিন্তু ওই লোকটা কি আমাদের পিছু ছাড়বে? সম্পত্তি চাইছে তারমানে সবকিছু নিজের নামে না নেয়া পর্যন্ত সে আমাদের পিছু ছাড়বে না। আব্বুর এতো কষ্টের সম্পত্তি ওই খারাপ লোকটাকে দিয়ে দিতে হবে নাকি? ফোনের স্কিনে চাচ্চুর নাম্বার ভেসে উঠলো, ফোনটা রিসিভ করলেই চাচ্চু নানা প্রশ্ন করবেন তাও রিসিভ করলাম।
আমি: চাচ্চু…
চাচ্চু: কি হয়েছে কণা তোর মা’কে এভাবে হুট করে দেশে যেতে বললি? ভাবি ঠিকমতো পৌঁছেছে তো?
আমি: হ্যাঁ চাচ্চু আম্মুকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছি।
চাচ্চু: এখন বলতো কি হয়েছে তোর কন্ঠটাও আমার ঠিক লাগছে না। (কি করে বলি চাচ্চু আমার সন্দেহের তালিকায় তুমি ছিলে তাই তোমাকে কিছু জানাইনি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এসবের পিছনে তুমি নেই)
চাচ্চু: কি হলো বল।
আমি: আসলে চাচ্চু আব্বুকে যারা খুন করেছিল তারা আম্মুকেও মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছিল আমাকে তাই আমার কাছে নিয়ে এসেছি।
চাচ্চু: আমার কাছে কি তোর আম্মু সেইফ থাকতো না?
আমি: ছিল না চাচ্চু, ওখানে আম্মুকে ফলো করা হচ্ছিল তাইতো ভয় পেয়ে…
চাচ্চু: আমাকে একবার বলতে পারতি।
আমি: আসলে বলিনি…
চাচ্চু: আমি আগামীকাল আসছি।
আমি: চাচ্চু শুনো…
চাচ্চু তো রেগে গিয়ে ফোন রেখে দিলেন। আমাদের আপন কেউ বলাতে ভেবেছিলাম সবকিছু চাচ্চু করছেন কারণ চাচ্চু ছাড়া আমাদের আপন কেউ নেই। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে চাচ্চু এমন করতেই পারেনা। তাহলে কে করছে এসব আমাদের আপন আর কে আছে?

মেঘ: কণা তুমি খাবে না?
আমি: হুম তোমরা খাও আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আম্মু: এতো কিসের টেনশন করছিস?
আমি: কিছুনা আম্মু ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি।

রুমে এসে লোকটার নাম্বারে ফোন দিলাম, রিং হয়েই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করলো।
–মামুনি তোমার দেখছি বড্ড কৌতূহল।
আমি: কে আপনি পরিচয় দিন।
–এতো তাড়া কিসের আস্তে আস্তে পরিচয় দিবো…
আমি: কি চান আপনি?
–সবকিছু।
আমি: মানে?
–আসলও চাই শোধও চাই এক কথায় সবকিছু চাই।
আমি: আপনার কি মনে হয় আমার আব্বুর এতো কষ্ট করে গড়ে তোলা সবকিছু আপনাকে আমি দিয়ে দিবো?
–আগে বোকা ছিলাম তাই জোড় করিনি কিন্তু এখন জোড় করবো প্রয়োজন হলে তোমাকে আর তোমার আম্মুকে খুন করবো।
আমি: আগে মানে?
–বহু বছর আগে।
মেঘ: কণা কি হলো এতো দেরি হচ্ছে কেন? (দ্যাত মেঘ ডাকছে)
আমি: আসছি।
–এতো কৌতূহল ভালো না মামুনি। সময় হলে আমিই তোমার সামনে আসবো এয়ারপোর্টে দুচোখ দিয়ে আমাকে তোমার খুঁজে বেড়াতে হবে না। (তারমানে লোকটা আমাকে এয়ারপোর্টে দেখেছে কিন্তু আমিতো দেখিনি। অবশ্য দেখলে তো চেনারও কথা না, জন্মের পর ওকে দেখেছি বলেতো মনে হয় না)
–আচ্ছা মামুনি এক কাজ করলে কেমন হয় একসাথে বসে সবকিছু যদি মিটমাট করে নেই? দেখো আমাকে সবকিছু দিয়ে দিলে কিন্তু আমি আর তোমাদের জ্বালাবো না।
আমি: একটা কানাকড়িও দিবো না আমি আপনাকে।
ফোন কেটে দিলাম। লোকটা তো কোনো ভাবেই পরিচয় দিচ্ছে না, আম্মুকে কি জিজ্ঞেস করবো?

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই আম্মু আর মেঘ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো।
আমি: কি হয়েছে?
আম্মু: ফ্রেশ হতে এতো সময় লাগে?
মেঘ: আমাদের খাওয়া তো শেষ।
আমি: সমস্যা নেই আমি একা খেতে পারবো।
আম্মু: হ্যাঁ সেটা আমিও জানি এবার বল কি বলবি।
আমি: আম্মু খেতে দাও সারাদিন খাওয়া হয়নি তাছাড়া আমি খুব ক্লান্ত ঘুম পাচ্ছে, এসব নিয়ে সকালে কথা বলবো। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
আম্মু: তোর মতিগতি বুঝার সাধ্য কারো নেই। (আম্মু রুমের দিকে চলে গেলেন)
মেঘ: কি হলো আম্মুকে এসব বললে না কেন?
আমি: লোকটার কথায় যা বুঝতে পেরেছি লোকটা আমাদের আপন কেউ আর আম্মু ওকে চিনেন। যেহেতু লোকটা এমন করছে তারমানে ও আমাদের শত্রু। আম্মু এতোটা জার্নি করে এসেছেন এখন এসব বলে আম্মুকে টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না আম্মুর ঘুম প্রয়োজন।
মেঘ: ঘুম তো তোমারও প্রয়োজন কণা, একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছ এসব টেনশনে নিজের কি অবস্থা করেছ?
আমি: (মৃদু হাসলাম)

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই ফ্রেশ হয়ে আম্মুর রুমে আসলাম, এখন আম্মুকে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন কে এই সামাদ। কিন্তু আম্মু আর জোহা সবকিছু গুছগাছ করছে কেন?
আমি: আম্মু কি করছ?
আম্মু: জোহার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছি।
আমি: কেন?
আম্মু: আমি দেশে চলে এসেছি জোহা আর এখানে থাকবে কেন?
আমি: তারমানে তোমরা বাসায় চলে যাচ্ছ?
আম্মু: হ্যাঁ, মেয়ের শশুড় বাড়িতে থাকা যায় নাকি? তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই ডাকিনি সব গুছিয়ে নিয়ে তোকে ডাক দিতাম।
আমি: কিন্তু আম্মু তোমরা একা ওই বাসায়…
জোহা: আব্বু আসছেন তো আজ।
আম্মু: হ্যাঁ তোর চাচ্চু আসছে কিছুদিন আমাদের সাথে থাকবে।
আমি: ঠিক আছে চলো আমিও যাবো তোমাদের সাথে।
আমি: তুই?
আমি: বিকেলে চলে আসবো।
আমি: ঠিক আছে।

আম্মু আর জোহাকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসলাম সাথে মেঘও এসেছে। যদিও চাচ্চু আসছেন তারপরও খুব ভয় হচ্ছে আম্মুকে এই বাসায় রাখতে।
জোহা: আমি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।
আম্মু: ঠিক আছে।
আমি: আম্মু বসো এখানে তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আম্মু: বল কি কথা? (সোফায় বসতে বসতে বললেন আম্মু, আমিও বসলাম)
আমি: আম্মু যারা আব্বুকে খুন করেছিল তাদের আমি জেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার জন্য ওদের আবার ছেড়ে দিতে হয়েছে।
আম্মু: আমার জন্য…
আমি: যে সবকিছু করছে সে তোমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিল আমাকে তাই ছাড়তে হয়েছে।
আম্মু: এজন্যই তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে আসলি? কিন্তু লোকটা কে?
আমি: তোমাকে চিনে আম্মু তুমিও হয়তো চিনো, লোকটা তো বলছে আমাদের আপন কেউ।
আম্মু: আপন…
আমি: সামাদ নামে কাউকে চিনো আম্মু?
আম্মু: সামাদ? (আম্মু চমকে গিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন)
আমি: চিনো তুমি? উনার ছেলের নাম ইকবাল।
আম্মু: সামাদ, ইকবাল? হ্যাঁ চিনি তো।
আমি: কে উনি?
আম্মু: তোর মামা। (এবার আমার চমকে যাওয়ার পালা, এতো বড় হয়েছি কখনো শুনিনি আমার কোনো মামা আছে। সবসময় শুনে এসেছি আম্মু একা, আর কয়েক বছর আগে তো নানা নানু দুজনই মারা গেছেন)
আমি: আম্মু কখনো তো বলনি আমার কোনো মামা আছে, সবসময় তো বলেছ তুমি একা তোমার কোনো ভাইবোন নেই।
আম্মু: বলবো কিভাবে সামাদ তো… (কলিংবেল বেজে উঠলো, এই সময় কে আসলো)
আম্মু: আমি দেখছি।

আম্মু দরজা খুলতে গেলেন, কে এসেছে দেখার জন্য আমিও দরজার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আম্মু দরজা খুলে আচমকা পিছিয়ে আসলেন, একজন লোক এসেছে। আম্মু ভাইজান বলেই আচল দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন। দাঁড়িয়ে পড়লাম, তারমানে এই লোকই সামাদ মানে আমার মামা? কিন্তু কেন এসেছে এই লোক? আম্মুর কোনো ক্ষতি করবে নাতো…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে