নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২০

0
2630

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

হসপিটালে কি ঘুম হয়? রাতে একদম ঘুম হয়নি। ইচ্ছেই হচ্ছে না অফিসে যেতে তাও যেতে হবে। ঝটপট একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখান থেকে অফিস তারপর রাতে সোজা বাসায়।
মেঘ: একা যাবে নাকি আমিও আসি।
রুহান: হ্যাঁ ভাইয়া আমি আছি এখানে তোমরা দুজন অফিসে চলে যাও। তাছাড়া বিকেলে তো পপিকে রিলিজ করে দিবে আমরা বাসায় চলে যাবো।
আমি: ঠিক আছে চলো।
মেঘকে নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম।

মেঘ: তুমি তো সকালে নাশতা করনি আমি কিছু নিয়ে আসছি তুমি বসো। (অফিসে এসেই মেঘ খাবার আনতে চলে গেল)
আসিফ: মেডাম আসবো?
আমি: হ্যাঁ আসুন।
আসিফ: এখন থেকে রোজ আসবেন তো? অফিসের কিন্তু এই কয়দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
আমি: বসুন।
আসিফ: হুম।
আমি: আমার এইসব অফিস কাজকর্ম একদম ভালো লাগে না তাছাড়া এসব তো আমি তেমন বুঝিও না তাই ভাবছি সবকিছুর দায়িত্ব মেঘকে বুঝিয়ে দিবো।
আসিফ: এই বয়সে এসব সামলানো একটু কঠিন তবে আমার মনে হয় মেঘ স্যার এর চেয়ে আপনি ভালো পারবেন।
মেঘ: আমার বদনাম করা হচ্ছে? (মেঘ খাবার নিয়ে চলে আসলো)
আসিফ: একদম না স্যার, মেডামকে শুধু বলছিলাম…
মেঘ: আমি বোকা তাইতো?
আসিফ: মেডাম স্যার কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন।
আমি: আরে না ও তো ফাজলামো করছে।
মেঘ: তবে আসিফ কিন্তু মিথ্যে বলেনি, আমার চেয়ে এই পিচ্ছি মেয়ের মাথায় কিন্তু অনেক বুদ্ধি। এই পিচ্ছি মেয়ে যেভাবে সব বিপদ কাটিয়ে সবকিছু সামলিয়ে নিচ্ছে আমার পক্ষে তো তা সম্ভবই হতো না।
আসিফ: আমিতো এটাই বলতে চাইছিলাম। কে না কে আপনাকে ফোন করে হুমকি দিলো আর আপনি ভয় পেয়ে মেডামকে কিছু জানালেন না আর মেডাম দেখুন এসেই মেয়েটিকে পুলিশে দিয়ে দিলেন। (মেঘ আর আসিফ কথা বলছে আমি ভাবছি মেয়েটিকে তো জেলে দিলাম কিন্তু মেঘকে ভয় দেখালো কে? আর আম্মুকে মেরে ফেলার ভয় দেখালো কেন আম্মু তো কানাডায়। তবে কি কেউ কানাডায় আম্মুকে ফলো করছে আমাকে জব্দ করার জন্য? যদি তাই হয় তাহলে তো এটা শায়লারই কাজ)
মেঘ: কি ভাবছ? (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, তাকিয়ে দেখি আসিফ চলে গেছে আর মেঘ দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
আমি: দরজা লাগালে কেন?
মেঘ: তোমার তো আবার লজ্জা বেশি যদি লজ্জা পাও।
আমি: লজ্জা পাবো মানে?
মেঘ: ভয় নেই খাইয়ে দেবো মাত্র। (ভেংচি দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম)
মেঘ: খেয়ে নাও।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
আমি: দেখছি কতোটা ভালোবাস।
মেঘ: একটা মাত্র বউ ভালো না বাসলে হবে? (মৃদু হেসে মেঘের হাত থেকে খাবার খেয়ে নিলাম)

মেঘ আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে আর আমি ল্যাপটপে কাজ করছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, জোহা ফোন করেছে।
আমি: হ্যাঁ জোহা বল।
জোহা: তোমার মেয়ে কথা বলবে।
আমি: দেতো।
তোহা: নতুন আম্মু তুমি কবে আসবে?
আমি: আর কিছুক্ষণ মামুনি চলে আসবো।
তোহা: তুমি খুব পঁচা শুধু আমার থেকে দূরে দূরে থাকো।
আমি: এখনি আসছি মামুনি।
তোহা: সত্যি?
আমি: হ্যাঁ সত্যি। (ফোন রাখতেই দেখি মেঘ আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি?
মেঘ: এখনি চলে যাবে?
আমি: সবকিছুর আগে আমার মেয়ে বুঝেছ? আমার মেয়ে বলেছে আমি নাকি পঁচা ওর থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকি তাই চলে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ শুনো এসবের দায়িত্ব এখন তুমি নাও আর পারবো না এতোদিক সামলাতে।
মেঘ: ওকে মহারাণী।
আমি: আসছি।
মেঘ: সাবধানে যেও।

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই জোহা দরজা খুলে দিলো সাথে তোহা। আসার সময় চকলেট আর বেলুন নিয়ে এসেছিলাম তোহা এসব দেখেই হেসে দিলো, এই হাসিটা যেন সব কষ্ট মুছে দেয়।
তোহা: তুমি তোমার কথা রেখেছ উম্মম্মম্মম্মম্মম্মমাহ। (জোহার কোল থেকেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলো)
আমি: পাগলী মেয়ে।
মা: অন্যকারো মেয়েকে কেউ এতোটা আপন করে নিতে পারে আগে কখনো দেখিনি।
আমি: অন্যকারো মেয়ে মানে? কে অন্যকারো মেয়ে?
মা: সরি সরি ভুল হয়ে গেছে তোহা তো তোমারই মেয়ে।
আমি: আপনারা কেন আমাকে তোহার মা ভাবতে পারেন না?
মা: সেটা বলতে চাইনি এখন যা যুগ এমন ভালো কেউ বাসে না।
আমি: এই তোহার জন্যই তো আমি মেঘকে পেয়েছি আপনাদের সবাইকে পেয়েছি এমন একটা সুন্দর পরিবার পেয়েছি।
মা: সুন্দর পরিবার আর থাকলো কোথায়? তোমার শশুড় যখন গ্রাম থেকে ফিরে এসে এই অবস্থা দেখবে জানিনা মানুষটা এই আঘাত সহ্য করতে পারবে কিনা।।আমি: আমার কি করার ছিল মা, চাঁচি এতো অন্যায় করেছেন যে উনাকে শাস্তি না দিলে উনি প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায় আরো বেশি করতেন।
দাদী: যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, এমন মানুষ বাড়িতে না জেলে থাকাই মানায়। কি কান্ডটাই না করল।
মা: বৌমা রুহান আর পপি কবে ফিরবে?
আমি: বিকেল তো হয়ে এলো কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।
মা: ঠিক আছে।
জোহার থেকে তোহাকে এনে রুমে চলে আসলাম।

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তোহা বিছানায় বসে বেলুন আর চকলেট নিয়ে খেলছে। খুব ক্লান্ত লাগছে তাই তোহার এক পাশে শুয়ে পড়লাম।

মেঘের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, কবে যে চোখ দুটু বুজে এসেছিল বুঝতেই পারিনি। পাশ ফিরে তাকালাম তোহা এখানে নেই, মেঘ সোফায় বসে জুতো খুলছে।
মেঘ: তোহা আম্মুর কাছে, এই অসময়ে ঘুমাচ্ছ কেন?
আমি: বুঝতে পারিনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
মেঘ: তাই? (মেঘ টাই খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
মেঘ: এতো ঝর ভয়ে যাচ্ছে যে তোমাকে একটু ভালোবাসাও হয় না। (মেঘ আমার উপর শুয়ে আমার নাকে ওর নাক ঘষে দিলো)
আমি: কি করছ দরজা খুলা।
মেঘ: সবাই পপির কাছে কেউ আসবে না এখন।
আমি: সরো আমি ফ্রেশ হবো।
মেঘ: উঁহু! (মেঘ আমার কপালে চুমু খেলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট দুটু আলতো করে ছুয়ালো)
আমি: মেঘ কি করছ সরো বলছি। (কোনো কথা না বলে আমার গলায় ওর নাক ঘষে যাচ্ছে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওকে)
মেঘ: এইটা কি হলো?
আমি: সঠিক কাজ হয়েছে।
মেঘ: বুঝাবো পরে। (মেঘকে ভেংচি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

পপি: মা আর কেঁদো না আমি ঠিক আছি। (পপির রুমে সবাই ভীড় জমিয়েছে, মা পাশে বসে কাঁদছেন। বারান্দার দরজা খুলা দেখে ওদিকে চোখ পড়লো রুহান দাঁড়িয়ে আছে, ওর দিকে ওগিয়ে গেলাম)
আমি: রুহান।
রুহান: হুম।
আমি: কাঁদছ তুমি?
রুহান: নাতো। (রুহান চোখের পানি মুছে নিয়ে বাইরে রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারছি রুহান চাঁচির জন্য কাঁদছে। বাবা নেই ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে বড় হয়েছে এখন মা’কে ছাড়া থাকতে কষ্ট তো হবেই)
আমি: আমাকে ক্ষমা করে দিও এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। তুমি চাইলে আগামীকাল চাঁচির সাথে দেখা করে আসতে পারো। কথা দিচ্ছি উনি যদি নিজেকে এতটুকু শোধরে নেন তাহলে আমি উনাকে ছাড়িয়ে আনবো।
রুহান: হুম। (এই মুহূর্তে রুহানকে শান্তনা না দেওয়াটাই ভালো একা থাকুক কিছুটা সময়। চলে আসলাম ওদের রুম থেকে)

যেভাবেই হউক ইকবালকে ধরতে হবে নাহলে কোনো কিছুই সম্ভব হবে না। একবার ইকবালকে ধরতে পারলে আমার সব শত্রু বেরিয়ে আসতো কিন্তু ইকবালকে পাবো কোথায়?
মেঘ: আরে এভাবে আনমনা হয়ে কেউ হাটে? এখনি পরে যেতে তো। (এসব ভাবলে মাথা ঠিক থাকে না, হুচট খেয়ে পরে যাচ্ছিলাম মেঘ ধরে ফেললো)
আমি: ধরার জন্য তুমি আছতো।
মেঘ: সবসময় কি আমি থাকবো মেডাম? (মেঘ আমার কোমরে ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল)
আমি: আজ তোমার হয়েছে কি বলতো এতো রোমান্স আসছে কোথা থেকে?
মেঘ: রোমান্টিকতা প্রতিদিন থাকে শুধু রোমান্স করার মতো সুযোগ আর সময় হয় না।
দাদী: যেখানে সেখানে রোমান্স ভালো না বাসায় ছোটরা আছে। (দাদীর কথায় দুজন আলাদা হয়ে গেলাম, দাদী চোখে হাত দিয়ে হাসছেন)
মেঘ: বুড়ী তুমি বুঝি এভাবে প্রেম করনি? (মেঘ যে কি.. দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।)

গভীর রাত মেঘ আর তোহা ঘুমাচ্ছে আমি রুমের মধ্যে পায়চারী করছি, ঘুম কিছুতেই আসছে না। শায়লাকে পুলিশে না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না। যেভাবেই হউক ইকবালকে ধরে শায়লার কাছে পৌঁছতে হবে কিন্তু কিভাবে? আচ্ছা শায়লাকে এরেস্ট করালে কি ইকবালকে ধরা যাবে? হ্যাঁ হতেই তো পারে শায়লাকে এরেস্ট করলে ইকবাল বেরিয়ে আসবে। এইটা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই, যা করার আগামীকালই করতে হবে।
মেঘ: কণা তুমি ঘুমাওনি?
আমি: হু ঘুম আসছে না।
মেঘ: এদিকে এসো। (বিছানায় এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম, মেঘ আমার চুলে একটা হাত রাখলো)
মেঘ: কি হয়েছে এতো রাতে না ঘুমিয়ে পায়চারী করছিলে কেন?
আমি: আমার ভালো লাগছে না মেঘ, এতোদিন হয়ে গেল অথচ আব্বুর খুনিদের এরেস্ট করাতে পারলাম না।
মেঘ: কেঁদো না প্লিজ তুমি তো চেষ্টা করছ।
আমি: আর চেষ্টা করলে হবে না শায়লাকে আমি প্রমাণ ছাড়াই এরেস্ট করাবো তারপর পুলিশ ওর থেকে সব বের করবে।
আমি: শায়লাকে পুলিশ জিজ্ঞেস করলে হয়তো ইকবালের কথা বলে দিতে পারে।
আমি: হুম তাই করতে হবে।
মেঘ: সকালে ভেবো এখন ঘুমাও প্লিজ।
আমি: হুম।

আমি: আঙ্গেল আমি শায়লাকে জেলের অন্ধকার রুমে দেখতে চাই।
আঙ্গেল: কিন্তু কণা মা…
আমি: এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে বলে এরেস্ট করুন তারপর কয়েকটা দিলে সব সত্যি গড়গড় করে বলে দিবে।
আঙ্গেল: ঠিক আছে আমি দেখছি। (ফোন রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, এবার শায়লাকে ধরতে পারলে শান্তি পাবো।)
মেঘ: কণা কি শুরু করেছ সকাল হতে না হতেই…
আমি: প্রমাণ জোগাড় করার তো কম চেষ্টা করিনি এখন এটাই রাস্তা।
মেঘ: যা খুশি করো।
আমি: এতো রেগে যাচ্ছ কেন নাকি শায়লাকে অন্ধকার রুমে দেখতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে তোমা…
মেঘ: এই শুনো আমি তোমাকে ভালোবাসি শায়লা মরলো না বাঁচলো আমি জানতে চাই না। (মেঘ দুহাতে জোড়ে আমার মাথা চেপে ধরলো)
আমি: তাহলে এতো রেগে যাচ্ছ কেন?
মেঘ: তোমাকে হারানোর ভয়ে বুঝেছ? এসবের মধ্যে যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।
আমি: আমার কি হবে কিছু হ…
মেঘ: যদি হয়ে যায় তখন? (মেঘ আমাকে টেনে নিয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, কি বলবো এখন ওকে? ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পাওয়াটা যে স্বাভাবিক)
মেঘ: যা করো সাবধানে করো আমার কণার যেন কোনো ক্ষতি না হয়। (মেঘ আচমকা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেল)

সবার সাথে বসে নাশতা করছি হঠাৎ রুম থেকে ফোনের রিংটোন ভেসে আসলো, পুলিশ আঙ্গেল ফোন দিয়েছেন মনে হয়। তাড়াতাড়ি উঠে রুমে চলে আসলাম।
আমি: আঙ্গেল…
আঙ্গেল: শায়লা ইকবাল দুজনই এরেস্ট হয়েছে।
আমি: সত্যি?
আঙ্গেল: হ্যাঁ চাইলে তুমি একবার আসতে পারো।
আমি: আসছি আমি। (ফোন রেখে পিছন ফিরতে দেখি মেঘ দাঁড়িয়ে আছে)
মেঘ: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: পুলিশ ষ্টেশন।
মেঘ: একা?
আমি: হ্যাঁ তোমার তো অফিস আছে।
মেঘ: আমিও যাবো তোমার সাথে চলো।
আমি: অফিস…
মেঘ: তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না আমি। (কবে যে তুমি আমাকে এতো ভালোবেসে ফেলেছ বুঝতেই পারিনি)
মেঘ: কি ভাবছ?
আমি: কিছুনা চলো।

শায়লাকে জেলের ভিতরে দেখে নিজের ভিতরে শান্তি লাগছে। আমাদের দেখেই শায়লা এগিয়ে আসলো।
শায়লা: খুব শান্তি লাগছে তাই না?
আমি: প্রচুর শান্তি।
শায়লা: আমাদের কেন এরেস্ট করালি?
আমি: মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না?
শায়লা: প্রমান জোগাড় করেছিস এরেস্ট যে করালি?
আমি: ভেবেছিলাম প্রমাণ জোগাড় করে তারপর তোদের এরেস্ট করাবো কিন্তু তুই তো তার সুযোগ রাখলি না তাই এখন তোদের পিঠিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে প্রমাণ জোগাড় করবো।
শায়লা: তোকে…
ইকবাল: শায়লা কেন ওদের সাথে বকবক করছ আর তো কিছুক্ষণ তারপর আমরা বাসায় চলে যাবো। (ইকবাল সামনে এসেই জোড়ে হেসে উঠলো)
মেঘ: মানে কি?
ইকবাল: বাসায় চলে যাও এতো খুশি হওয়ার কিছু হয়নি। (ওদের কথার কিছুই বুঝতে পারছি না এতোটা কনফিডেন্স নিয়ে কিভাবে ওরা বলছে বাসায় চলে যাবে)
ইকবাল: কণা তোমাকে বিয়ে করার অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম কিন্তু আফসোস হুট করে মেঘের সাথে তোমার বিয়েটা হয়ে গেল।
মেঘ: কণা তুমি ওকে চিনতে?
আমি: নাতো এর আগে কখনো দেখিনি।
ইকবাল: কিন্তু আমি তোমাকে দেখেছি কারণ তুমি যে আমাদের আপন কেউ একজন।
আমি: মানে?
ইকবাল: এতো মানে খুঁজ না বাসায় চলে যাও আর কিছুক্ষণ পর ফোন করে তোমার পুলিশ আঙ্গেল কে বলো আমাদের ছেড়ে দিতে।
আমি: এতো কাঠখড় পুড়িয়ে এরেস্ট করিয়েছি কি ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
ইকবাল: ছাড়বে ছাড়বে কণা সোনা এখন বাসায় চলে যাও।
মেঘ: কণা ওদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে চলো তো এখান থেকে।
আমি: হুম চলো।

ইকবাল আমাকে ওর আপন কেউ কেন বললো? আমি তো ওকে এর আগে কখনো দেখিনি অথচ ও আমাকে বিয়ে করার প্ল্যান করেছিল।
মেঘ: কণা ওই ইকবাল কিনা কি পাগলের মতো বকবক করলো আর তুমি এসব নিয়ে ভাবতে বসে গেলে। বাসায় এসে তো ফ্রেশও হওনি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
আমি: ইকবাল আমার কে হয়? আমাকে আপন কেউ বললো কেন?
মেঘ: আরে ও হয়তো তোমাকে চিন্তায় ফালানোর জন্য মিথ্যে বলেছে।
আমি: না আমি এই নামটা আগে কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না।
মেঘ: দুনিয়ায় কি ইকবাল নামে শুধুমাত্র একটি মানুষই আছে আর কারো নাম ইকবাল হতে পারে না?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: ফ্রেশ হয়ে এসো।

মেঘ: কণা তাড়াতাড়ি এসো। (ফ্রেশ হতে এসেছিলাম মেঘের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম)
আমি: কি?
মেঘ: ভিডিওটা দেখো। (মেঘের হাত থেকে আমার ফোন এনে ভিডিও দেখতে শুরু করলাম। আম্মু আর চাঁচিআম্মা শপিংমলে, কে যেন আম্মুদের ফলো করছে আর সেটা ভিডিও করে আমার হোয়াটস এ্যাপে দিয়েছে)
আমি: এইটা কোথায় পেলে?
মেঘ: কে যেন ফোন করে বললো হোয়াটস এ্যাপ অন করতে তারপর অন করে দেখি এই ভিডিও। (মেঘ কথা শেষ করার সাথে সাথে ফোন বেজে উঠলো, অচেনা নাম্বার)
–কণা মামুনি ভিডিওটা দেখেছ?
আমি: আপনি…
–তুমি চিনবে না তবে তোমার আম্মু ভালো করেই চিনে।
আমি: আম্মু ক…
–বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমার ছেলে আর বৌমাকে ছেড়ে দাও নাহলে তোমার আম্মু…
আমি: ওহ আপনি দুই বদমাইশ এর…
–বললাম তো এতো কথা ভালো লাগেনা। দেখো তোমার আম্মুকে মারতে আমার অনেক কষ্ট হবে আপনজনদের মারতে যেমনটা হয় আরকি কিন্তু আমার ছেলের জন্য তো এইটুকু কষ্ট সহ্য করতেই হবে। ভেবে দেখো কি করবে।

লোকটা ফোন রেখে দিলো দফ করে বিছানায় বসে পড়লাম। এবার কি করবো? আম্মুর জন্য ওদের ছেড়ে দিতে হবে? কিন্তু পরে যদি আর ওদের শাস্তি দিতে না পারি? কিন্তু আম্মুকেও তো বাঁচাতে হবে…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে