নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ১
বেশি বড় না আবার বেশি ছোটও না মাঝারি আকারের একটি রুম, পুরো রুম জুড়ে নীল সাদা অর্কিড ফুলের ছড়াছড়ি। সাথে পুরো রুম জুড়ে জ্বলছে অনেক গুলো ক্যান্ডেল লাইট। খাটের চারপাশে চোখ বোলালাম, পুরো খাটটি সাজানো হয়েছে শুধু নীল সাদা অর্কিড দিয়ে। আচ্ছা নীল সাদা অর্কিড তো আমার পছন্দের ফুল তাহলে কি আমার জন্যই আজ এই বাসর ঘর আমার মনের মতো করে সাজানো হয়েছে? কিন্তু কে সাজাবে, মেঘ? নাহ মেঘ আমার মনের কথা জানবে কিভাবে আর মেঘ আমার মনের মতো করে বাসরঘরই বা সাজাবে কেন? এই বাসর ঘরের তো কোনো প্রয়োজন নেই কারণ মেঘ তো বিয়েটাই করেছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্বে। অবশ্য আমারো এই বিয়েতে তেমন মত ছিলনা। নিজের দিকে একবার চোখ বোলালাম সবুজ রঙের বেনারসিতে বউ সাজে আমাকে দারুণ লাগছে। আচ্ছা আমি যে বিয়ের সময় সবুজ রঙের বেনারসি পড়ার স্বপ্ন দেখতাম সেটা তো কেউ জানতো না তাহলে এই রঙের বেনারসি কেন? খাটের একপাশে ঘোমটা দিয়ে বসে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসলাম। মেঘ এসেছে, বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে ওকে বর সাজে একবার দেখতে। ঘোমটাটা আলতো করে একটু সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম, মেঘ মাথার পাগড়ীটা খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো তারপর হনহন করে হেটে বারান্দায় চলে গেলো। মেঘের এমন আচরণে আমি মুটেও অবাক হইনি এমনটাই তো হবার ছিল।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত দুটু বাজে। এখনো খাটের একপাশে চুপচাপ বসে আছি, মেঘ এখনো বারান্দায় ভাবতেই ভীতরটায় একটু কষ্ট অনুভব হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের মাঝখানে থাকা ঘুমন্ত পরীটার দিকে তাকালাম। নিষ্পাপ এই শিশুটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। তোহার মায়াবী মুখটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম, এই নিষ্পাপ মুখ দেখলে সব কষ্ট যেন ভুলে যাই।
চার বছরের ছোট্ট মেয়ে তোহা, মেঘ এর একমাত্র রাজকন্যা তোহা। সেই ছোট্ট বেলায় তোহাকে ফেলে রেখে মেঘ এর প্রথম স্ত্রী চলে গিয়েছিল, মেঘ ওর আদর ভালোবাসা দিয়ে তোহাকে একটু একটু করে বড় করে তুলছে। আজ তোহার বার্থডে, মেঘ আব্বুর বন্ধু আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে তাছাড়া মেঘ এখন আব্বুর অফিসে চাকরি করে সেই সুবাদে আব্বুর সাথে তোহার বার্থডে পার্টিতে এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে আমার জীবনের মুড় এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি।
এইতো আজ সকালে ঘটে যাওয়া কাহিনী…
বারান্দায় বসে পড়ছিলাম হুট করে আব্বু এসে পিছনে দাঁড়ালেন।
আমি: কি কিছু বলবে?
আব্বু: হ্যাঁ এক জায়গায় যেতে হবে।
আমি: কোথায়?
আব্বু: মেঘ’কে তো তুই চিনিস।
আমি: হ্যাঁ আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে।
আব্বু: হ্যাঁ আর ও তো এখন আমার অফিসেই চাকরি করছে মাঝে মাঝে বাসায়ও আসে, আজ ওর মেয়ের জন্মদিন তা…
আমি: তুমি যাও আমি যেতে পারবো না।
আব্বু: কেন?
আমি: আব্বু তুমি কি ভুলে গিয়েছ তোমার কণা এখন ইন্টার পড়ছে সামনে ওর পরীক্ষা।
আব্বু: ভুলিনি মা কিন্তু আমার সঙ্গে তুই গেলে ওরা সবাই খুব খুশি হতো আর মেঘ এর মেয়েটা একটু সময়ের জন্য হলেও তোর মতো একজন বন্ধু পেতো।
আমি: আব্বু একটি বাচ্চার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার মা, তোহার তো মা নেই আমি কিভাবে…
আব্বু: মা নেই বলছিস কেন? বল রাক্ষসীটা তোহাকে ফেলে চলে গেছে।
আমি: ওই একি হলো।
আব্বু: চল না মা সবাই তোকে দেখে খুব খুশি হবে, আহসানুল যখন গ্রামে থাকতো তখন একবার গিয়েছিলি তখন তো তুই ছোট ছিলি, চলনা মা। জানিস তো তোহা মেয়েটাকে দেখলে বড্ড মায়া হয়। (তোহাকে তো আগে কখনো দেখিনি শুধু ওর গল্পই শুনেছি আব্বুর মুখে, আজ গেলে মন্দ হয় না তোহাকে দেখা হবে)
আমি: ঠিক আছে যাবো।
আব্বু: রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।
রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আব্বু আম্মু আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আম্মু: আমার কণা মামুনিকে শাড়িতে কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছে।
আমি: সত্যি বলছ নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছ?
আব্বু: সত্যি মা তোকে খুব সুন্দর লাগছে।
আম্মু: হ্যাঁ মেয়ে কিন্তু বড় হয়ে গেছে…
আব্বু: বিয়ে দিয়ে দিতে হবে হাহাহা।
আমি: আব্বু, আম্মু আমি কিন্তু তোমাদের আগেই বলেছি এই বিয়ে টিয়ে আমি এতো তাড়াতাড়ি করছি না।
আব্বু: ওকে ওকে এখন চল।
একমাত্র রাজকন্যার বার্থডে বলে কথা, পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম হুট করে মেঘ এসে সামনে পড়লো।
মেঘ: কণা আপনি আমার বাসায় আসবেন আমিতো ভাবতেই পারিনি।
আমি: তোহাকে দেখতে এসেছি কোথায় ও?
মেঘ: আপনি একটু ওয়েট করুন আমি নিয়ে আসছি। (মেঘ তোহাকে আনতে চলে গেলো)
পুরো বাসা জুড়ে মেহমানের আনাগোনা, আব্বু আম্মু আহসানুল আঙ্কেল ও সাবিরা আন্টির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
মেঘ: কণা এইযে আমার রাজকন্যা তোহা। (মেঘ এর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, মুগ্ধ হয়ে গেলাম তোহার মায়াবী চেহারা দেখে। এমন নিষ্পাপ শিশুকে রেখে মেঘ এর স্ত্রী চলে গেলো কিভাবে)
মেঘ: তোহা মামুনি এইযে এইটা তোমার কণা আন্টি। (তোহা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি হলো মামুনি? আন্টিকে হাই বলো।
তোহা: এইটা তো আমার আন্টি না। (আধোআধো কন্ঠে বলে উঠলো তোহা, বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে)
তোহা: এইটা তো আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন কথায় মেঘ আমি দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না। তোহা এসে আমার শাড়ির আচল ধরে চিৎকার করে উঠলো)
তোহা: সবাই শুনো এইটা আমার নতুন আম্মু।
সবাই বেশ অবাক হয়ে আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে খুব অসস্থি হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চলে যাই এখান থেকে কিন্তু পারছি না তোহার নিষ্পাপ চেহারা আমাকে বাধা দিচ্ছে।
মেঘ: কণা আমি সত্যি দুঃখিত আমার মেয়ে এমন কিছু বল…
আব্বু: কণা মা কি হয়েছে? তোহা এসব কি বলছে?
মেঘ: স্যার, তোহা বাচ্চা মেয়ে তো তাই ভুল করে…
তোহা: আমি মুটেও ভুল করে বলিনি, এটাই আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন আচরণে শুধু অবাকই হইনি খুব অসস্থিও হচ্ছে, খুব কান্না পাচ্ছে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে)
মেঘ: আম্মু তোহাকে নিয়ে যাও তো এখান থেকে। (সাবিরা আন্টি এসে তোহাকে কোলে তুলে নিলেন, তোহা যাবে না বলে হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করছে)
আব্বু: দাঁড়ান তোহার সাথে আমি কথা বলছি।
আমি: আব্বু কোনো কথা বলতে হবে না বাসায় চলো।
তোহা: নতুন আম্মু তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে আমি কিন্তু কিছুই খাবো না। (তোহা কাঁদছে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে আবার ওর মুখে নতুন আম্মু ডাক শুনে রাগও হচ্ছে খুব)
তোহা: আজ থেকে এইটা আমার নতুন আম্মু, তুমি এক কাজ করো তো এই পরীটাকে এক্ষণি বিয়ে করে ফেলো। (তোহার এমন কথা শুনে মেঘ ধমক দিয়ে উঠলো, মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দাদুর কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো)
সবাই আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে দেখে আব্বুর হাত ধরে টান দিলাম।
আমি: চলো আব্বু এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।
আব্বু: দাঁড়া মা, কোথায় যাবি বাসায়? মেয়েটাকে কাঁদিয়ে চলে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবি? (সত্যিই তো এমন একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কাঁদিয়ে কি আমি ভালো থাকতে পারবো)
আব্বু: কণা মা জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা জিনিস কিন্তু আল্লাহ্…
আমি: কি বলতে চাইছ আব্বু?
“রায়হান যা চাইছে তা কিন্তু আমরাও চাইছি” (কথাটা শুনে পাশে তাকালাম, মেঘ এর আব্বু আম্মু আমার সামনে দু হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন)
আব্বু: আহসানুল আমি কিন্তু…
আহসানুল আঙ্গেল: তুই আমার বন্ধু তাই বলে তোর মেয়েকে তো আমি জোড় করে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে পারি না, আজ কণার উপর সব ছেড়ে দিলাম। মা তুমি যা চাইবে তাই হবে।
আমি: কি বলছেন এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় আপ…
সাবিরা আন্টি: হয়তো আল্লাহ্ চাইছেন তোমাদের দুজনের চারহাত এক হউক তাইতো এই বাচ্চা মেয়ের দ্বারা…
আমি: এ হয় না আন্টি আমি…
“কেন হয় নারে কণা, তুই বড় হয়ে গেছিস বলে আমাদের কথা শুনবি না? নাকি আমরা তোদের চেয়ে গরীব বলে আমাদের পরিবারে আসতে চাইছিস না” (পিছনে দাদিকে দেখে সালাম করলাম, সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম উনাকে)
আমি: দাদি এসব কিছুই না, আপনারা কেন বুঝতে চাইছেন না…
দাদি: এসব নয়তো কি? আমার মেঘ দাদুভাই দেখতে খারাপ? (দাদির কথা শুনে মেঘের দিকে তাকালাম, ও রাগে ফুঁসছে)
মেঘ: সবাই যারযার মতামত জানিয়ে দিচ্ছ হচ্ছেটা কি এসব? একটা বাচ্চা মেয়ে বললো আর তোমরাও ওর সাথে বাচ্চা হয়ে গেলে? ভালো করে শুনে রাখো আমি বিয়ে করতে পারবো না। (মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেলো)
দাদি: কণা তোর কি মতামত?
আম্মু: অনেক্ষণ ধরে চুপচাপ সবার কথা শুনে যাচ্ছি, কি পেয়েছেন আমার মেয়েটাকে? আপনারা বললেই আমরা বিয়ে দিয়ে দিবো নাকি?
আব্বু: শারমিন আমি কিন্তু এই বিয়েতে রাজি।
আম্মু: কিন্তু আমি রাজি না। (আব্বু আম্মুর তর্কাতর্কি দেখে দূরে সরে আসলাম, তোহাকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না মেয়েটা কি কাঁদছে নাকি)
তোহা: আজ থেকে তুই আর আমার আম্মু না, আমি তোকে ফেলে দিবো। আম্মুরা খুব দুষ্টু হয়, প্রথম আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আজ নতুন আম্মুও আমাকে রেখে চলে যেতে চাইছে। আর আব্বু তো আরো দুষ্টু, আজ আমাকে বকা দিয়েছে। (তোহাকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে চলে এসেছিলাম, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তোহার কন্ঠে এসব শুনে ভিতরে চোখ রাখলাম। তোহা হাতের পুতুলটা ছুড়ে ফেলে দিতে যেতেই মেঘ তোহাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো)
তোহা: ছাড়ো আমাকে, তুমি আমাকে বকা দিয়েছ কথা বলোনা আমার সাথে। (তোহার কান্নাভেজা কন্ঠে মেঘের কান্না যেন আরো বেড়ে গেলো)
মেঘ: মামুনি আমি আর তোমাকে বকা দিবো না, তুমি এই পুতুলটা ফেলে দিওনা। এই পুতুল তো তোমার মা তাই না?
তোহা: চাই না আমার আম্মু, সব আম্মুরা দুষ্টু হয় সব আম্মুরা পঁচা। (তোহার এই কথাটা যেন আমার কলিজায় এসে লাগলো। ছোট মেয়েটির মা নেই, একটু মায়ের ভালোবাসা চাইছে ওর মন আর আমি কিনা…)
মেঘ: মামুনি তুমি যা চাইছ তা হয়না মা। কণা আন্টিটা অনেক বড় লোক আর বড়লোক মেয়েরা বাচ্চা ফেলে চলে যায় কণা আন্টি খুব পঁচা তোমাকে ফেলে চলে যাবে। তুমি আর জেদ করো না।
তোহা: বললাম তো এই পরীটাই আমার নতুন আম্মু হবে নাহলে আমি না খেয়ে খেয়ে মারা যাবো তখন বুঝ…
মেঘ: চুপ কর মা, এসব কি বলছিস? তুই ছাড়া আমার আর কি আছে তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে। (মেঘের মেয়েকে এমনভাবে জরিয়ে ধরে কান্না দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না)
আমি: মেয়েকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না যখন মেয়ের কথা মেনে নিচ্ছেন না কেন? (মেঘ আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি বলছেন এসব? এইটা হয় না।
আমি: কেন হয় না? আমি যদি ছোট্ট তোহার জন্য নিজের সব স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হতে পারি তাহলে আপনি বাবা হয়ে পারবেন না কেন?
মেঘ: আপনি রাজি মানে?
আমি: হ্যাঁ আমি এই বিয়েতে রাজি। আমি তোহা মামুনির নতুন আম্মু হতে চাই।
তোহা: এ্যা আমার নতুন আম্মু পঁচা না খুব ভালো। (তোহা এতোক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আমার কথা গুলো শুনছিল, বিয়েতে রাজি বলতেই দৌড়ে এসে আমার কোলে উঠলো)
মেঘ: আমি পৃথিবীর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করি না বুঝেছেন? এই বিয়ে হবে না, আমি ঘৃণা করি মেয়ে জাতিকে।
আমি: তোহার নতুন আম্মু হবো বলেছি যখন তখন হবই পারলে আটকান।
তোহা: হিহিহি পরীটা। (তোহা হাসতে হাসতে আমার নাক টেনে দিলো, ওকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম)
আব্বুর সাথে আম্মু এখনো তর্ক করছেন দেখে আমি গিয়ে আব্বুর পাশে দাঁড়ালাম।
আমি: আব্বু আমি বিয়েতে রাজি। (সবাই অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার আমার কোলে থাকা তোহার দিকে তাকাচ্ছে)
আম্মু: কণা কি বলছিস ভেবে চিন্তে বলছিস তো?
আমি: হ্যাঁ আম্মু।
দাদি: আমি জানতাম কণা এই বিয়েতে রাজি হবে।
মেঘ: কিন্তু আমি রাজি না। (মেঘের কথা শুনে ওর পরিবারের সবাই ওর কাছে গিয়ে বুঝাতে শুরু করলো। আম্মু এসে তোহাকে আমার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসলেন)
আম্মু: কণা তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
কণা: না আমি ঠিক আছি আর আমি তোহার আম্মু হতে চাই।
আম্মু: এই পরিবারে তুই থাকবি কিভাবে? তাছাড়া মেঘ বিবাহিত।
কণা: কেন থাকতে পারবো না এই পরিবারে? কি কম আছে ওদের? আমাদের চেয়ে অনেকটা গরিব এটাই তোঁ? আমি মানিয়ে নিতে পারবো। আর মেঘ এর কথা কি বললে ও বিবাহিত? তাতে কি হয়েছে আম্মু, ওর বিয়েটা টিকেনি এতে কি ওর দোষ?
আম্মু: কিন্তু মেঘ তো বিয়েতে রাজি না, তুই সুখী হবি নারে মা।
আমি: আজ রাজি না কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে পর হয়তো একদিন মেনে নিবে তাছাড়া আমি তোহার জন্য বিয়েটা করছি তাই তোহা আমার কাছে থাকলে আমি আর কিছুই চাই না।
আম্মু: তোর যা মন চায় কর।
আম্মু চলে গেলেন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি আমি কি ঠিক করছি এসব? পরক্ষণেই তোহার মায়াবী মুখটার দিকে নজর পড়লো, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নাহ এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে শুধুমাত্র তোহার জন্য, আর মেঘ তো খারাপ ছেলে নয়, শুধু মেয়েদের জন্য ওর মনে একটু ঘৃণা জন্মে গেছে, আমি নাহয় আমার ভালোবাসা দিয়ে সব ঘৃণা ধুয়ে মুছে দিবো।
মেঘ: ওকে আমি রাজি। (মেঘের কথা শুনে তাকালাম ওর দিকে, স্পষ্ট বুঝতে পারছি ও পরিবারের সবার কথায় রাজি হয়েছে)
কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিয়ের আয়োজন করা হলো, সন্ধ্যাবেলা মেঘের বাড়িতেই বিয়েটা হয়ে গেলো। আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমিও বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু আজ সবকিছু…
বারান্দার দরজা খুলার শব্দ শুনে ঘোমটাটা পুরোপুরি সরিয়ে মেঘের দিকে তাকালাম। এতোক্ষণ হয়তো একের পর এক সিগারেট টেনেছে, ওর চোখ মুখ তো তাই বলছে। এলোমেলো পায়ে হেটে এসে মেঘ দফ করে সোফায় বসে পড়লো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ চেঁচিয়ে উঠলো…
মেঘ: এই মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আর বউ সেজেই বা বসে আছ কেন? খবরদার একদম অধিকার ফলাতে আসবা না আমি মেয়েদের ঘৃণা করি। (বিয়ে তো জীবনে একটাই হয় তাই মেঘের কথার পাত্তা না দিয়ে খাট থেকে নেমে ওকে সালাম করতে গেলাম)
সালাম করতে যেতেই মেঘ আমার দুহাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলো আমার গালে। থাপ্পড়ের শব্দে তোহা ঘুম থেকে উঠে বসে গেছে আর আমি বোবার মতো গালে হাত দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রথম রাতেই এমন, জানিনা বাকি জীবনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
চলবে?