নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ২৭
দু মাস পর…
সকালের মৃদু বাতাস সাথে মিষ্টি রোদের লুকোচুরি খেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করছি। ইদানীং নিজেকে বেশ অন্যরকম লাগে, কেমন যেন নিজেকে গুছিয়ে নিতে পেরেছি। এখন আর মেঘের কথা ভেবে রোজ রাতে চোখের নোনাজলে বালিশ ভিজাই না। হ্যাঁ মাঝে মাঝে কষ্ট হয় মেঘের সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো ভেবে, আবার তোহার কথা ভেবেও কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় লুকিয়ে গিয়ে একবার তোহাকে দেখে আসি, একবার কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে ওর মুখে নতুন আম্মু ডাক শুনি। কিন্তু এসব কিছুই করতে পারিনা মেঘের প্রতি একটু একটু করে জমা হওয়া অভিমান গুলো আমাকে এসব করতে দেয় না। এখন নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছি মেঘের কাছে এখন আর ছুটে যেতে ইচ্ছে করে না। সেদিনের পর আর কখনো মেঘের সাথে যোগাযোগ করিনি, অবশ্য করবোই বা কিভাবে সেদিন রাতেই তো আমার ফোনটা ভেঙে ফেলেছিলাম। মাঝে মাঝে আমার অজান্তেই আমার অবচেতন মন মেঘের জন্য অপেক্ষা করতো, মনে হতো এই বুঝি মেঘ এসে বলবে কণা ফিরে চলো। কিন্তু মেঘ আসেনি, এখন আমার অবচেতন মনটাও বুঝে ফেলেছে তাই এখন আর অপেক্ষাও করে না। দু মাসের মধ্যে মেঘ আমার সাথে কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি, হ্যাঁ মাঝে মাঝে ওই বাসা থেকে ফোন আসতো মা বাবা অথবা দাদী কেউনাকেউ ফোন করতো কিন্তু আমি কথা বলতাম না আজো বলিনা আর হয়তো বলা হবেও না।
জোহা: আপু আপু… (জোহার ডাকে ভাবনা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম, নিজেকে স্বাভাবিক করে পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: কিরে কিছু বলবি?
জোহা: নিচে চলো দেখো কারা এসেছে।
আমি: কে এসেছে?
জোহা: নিচে চলো তাহলেই দেখতে পাবে।
জোহা চলে গেল, পিছু পিছু আমিও চলে আসলাম।
দুমাস পর প্রিয় মানুষ গুলোকে আবারো দেখতে পাবো ভাবিনি। মা, বাবা, দাদী আর রুহানকে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম, এ কান্না তো কোনো কষ্টের কান্না নয় প্রিয় মানুষ গুলোকে আবারো একনজর দেখার আনন্দের কান্না।
আম্মু: কণা দেখ কারা এসেছে। (ওদের সবার দিকে তাকিয়েই এক পা দুপা করে সিঁড়ি দিয়ে নামছি)
বাবা: বৌমা সাবধানে পরে যাবে তো। (বাবার কথায় যেন ঘোর কাটলো, মৃদু হাসলাম মানুষ গুলো আমাকে নিয়ে এখনো এতো ভাবে)
মা: কেমন আছ মা? (মায়ের প্রশ্নে কোনো জবাব দিতে পারলাম না চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম)
দাদী: অনেক রোগা হয়ে গেছিস।
আমি: কেন এসেছেন আপনারা? (হুট করে আমার এমন প্রশ্ন করা বোধহয় ঠিক হয়নি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে)
রুহান: এইটা কেমন প্রশ্ন কণা?
বাবা: রুহান থাম, মা তোমার এমন প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। আমিও সহজভাবেই উত্তর দিচ্ছি, আমরা এসেছি তোমাকে ফিরিয়ে নিতে।
আম্মু: মানে?
চাচ্চু: ভাবি আজ সবকিছু কণাকে বলতে দাও, ওর সিদ্ধান্তের উপর আজ অনেক কিছু নির্ভর করছে।
আম্মু: হুম।
দাদী: কিরে ফিরে যাবিনা আমাদের সাথে?
আমি: কেন যাবো কার কাছে যাবো?
মা: মেঘ ওর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাইতো…
আমি: (মৃদু হাসলাম)
মা: হাসছ যে?
আমি: এমনি। (আমিতো জানতামই মেঘ একদিন ওর নিজের ভুল ঠিক বুঝতে পারবে আর ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনায় ভোগবে)
বাবা: মা অনেক হয়েছে এবার ফিরে চলো।
আমি: না ওই বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো কোনো পিছুটান আমার নেই।
রুহান: তোহা? তোহার জন্যও ফিরে যাবে না?
আমি: তোহার মা হবার অধিকার মেঘ আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে।
দাদী: কিন্তু দাদুভাই তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
আমি: তাতে আমার কিছু করার নেই আমি ফিরে যাবো না।
বাবা: যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনায় ভোগে তাকে একটা সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বৌমা।
আমি: সেদিন আমার কোনো ভুল ছিল না তাও বারবার ভিখারির মতো মেঘের হাত ধরেছিলাম পা ধরেছিলাম একবার আমাকে বুঝার জন্য অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু মেঘ আমাকে কোনো সুযোগ দেয়নি সেদিন।
মা: তাই বলে তুমিও…
আমি: হ্যাঁ আমিও মেঘকে কোনো সুযোগ দেবো না। আপনারা আসতে পারেন।
দাদী: আরে কণা আমার কথা তো শুন।
রুহান: কণা শুনো..
কারো ডাকে না দাঁড়িয়ে রুমের দিকে দৌড়ে চলে আসলাম।
রুমের দরজা লাগিয়ে চুপচাপ ফ্লোরেই বসে পড়লাম। কেন এসেছে ওরা? আমিতো সব ভুলেই গিয়েছিলাম নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম তাহলে কেন ওরা আবার এসে নতুন করে যন্ত্রণা দিচ্ছে আমাকে?
জোহা: আপু চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি। (চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম জোহার কথায় চোখ খুলে তাকালাম ওর দিকে)
আমি: হঠাৎ বাইরে কেন?
জোহা: আঙ্কেল আন্টি চলে যাওয়ার পর থেকে তো এই বিছানাতেই শুয়ে আছ, সকাল গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো শুয়েই আছ। বাইরে থেকে ঘুরে আসলে তোমার মন ভালো হবে।
আমি: আমার আবার মন, চাচ্চু বকা দিবে।
জোহা: আব্বু আর চাঁচি তো বাসায় নেই তাইতো যেতে চাচ্ছি।
আমি: বাসায় নেই? কোথায় গেছে?
জোহা: তাতো জানিনা দুজন একসাথেই বেরিয়েছে।
আমি: হুম।
জোহা: চলোনা আপু প্লিজ! এইতো আশেপাশেই ঘুরবো একটু।
আমি: হুম চল।
জোহাকে নিয়ে বাসার থেকে কিছু দূরে একটা পার্কে আসলাম, জোহা আর আমি পাশাপাশি হাটছি। জোহা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে শুধু।
আমি: কিরে কিছু বলবি?
জোহা: হ্যাঁ যদি বকা না দাও।
আমি: বল।
জোহা: তুমি কিন্তু চাইলে ফিরে যেতে পারতে।
আমি: তুই বলছিস এই কথা?
জোহা: হ্যাঁ। আগে আমি ভাইয়াকে ভুলে যেতে বলেছি কারণ ভাইয়া তখন ভুল করেছিল কিন্তু এখন তো ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে…
আমি: তুই জানিস মেঘ..
জোহা: আসলে আপু ভাইয়া আমাকে ফোন করেছিল।
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: ভাইয়া খুব কাঁদছিল প্লিজ আপু তুমি…
আমি: বাসায় চল।
জোহা: আপু শুনোনা..
আমি: বাসায় যাবি কিনা?
জোহা: ভাইয়া আসছে এখানে তোমাকে দেখার জন্য। (কথাটা বলে জোহা মাথা নিচু করে ফেললো, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে)
আমি: এসবের মানে কি জোহা?
জোহা: ভাইয়া খুব রিকুয়েস্ট করছিল তা…
আমি: তাই তুই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস? ওর সাথে আমি কেন দেখা করবো ও কে আমার?
জোহা: আপু শুনো প্লিজ যেও না।
পার্ক থেকে বেরুতেই সামনে মেঘকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম, মেঘের কোলে তোহা। মেঘ এসে আমার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
তোহা: নতুন আম্মু। (নিজেকে সামলে নিয়ে তোহাকে মেঘের কোল থেকে আমার কোলে নিয়ে আসলাম)
তোহা: তুমি কোথায় ছিলে নতুন আম্মু?
আমি: কোথাও না মামুনি এইতো আমি।
মেঘ: কণা.. (মেঘের ডাকে ওর দিকে তাকালাম, মেঘ শান্ত হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে ফেললাম মেঘের দিক থেকে)
মেঘ: কথা বলবে না আমার সাথে?
তোহা: তুমি কি আবার হারিয়ে যাবে?
জোহা: না মামুনি তোমার আম্মু আজ থেকে তোমার সাথেই থাকবে।
তোহা: সত্যি?
আমি: না আম্মু আমি আবার হারিয়ে যাবো তবে চিরত… (মেঘ আমার মুখ চেপে ধরলো, ওর দিকে তাকালাম নিশ্চুপে কাঁদছে মেঘ)
মেঘ: প্লিজ এসব বলো না, তুমি হারিয়ে গেলে…
আমি: আমি হারিয়ে গেলে কারো কিচ্ছু না। (ধাক্কা দিয়ে মেঘ’কে সরিয়ে দিলাম। তোহার কপালে একটা চুমু খেয়ে হনহন করে চলে আসলাম ওদের সামনে থেকে)
জোহা: আপু শুনো প্লিজ।
আমি: হাত ছাড় আমার।
জোহা: আমার কথা তো শুনো প্লিজ।
আমি: বল কি বলবি। (জোহার দিকে ঘুরে তাকালাম, আমার রাগি চোখ দেখে জোহা ভয়ে চুপসে গেল)
আমি: মেঘ’কে ক্ষমা করে ওর কাছে ফিরে যেতে বলবি তো? কেন ফিরে যাবো? তুই তো বলতি এমন ছেলের সাথে সারাজীবন কাটানো যায় না তাহলে এখন কে…
জোহা: আপু ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আমাকে সব বলেছে।
আমি: ও কেঁদে কেঁদে বললো আর এমনি তুই সব বিশ্বাস করে নিলি? শুন জোহা বিশ্বাস করি বলা সহজ কিন্তু বিশ্বাস করাটা খুব কঠিন। মেঘ তো খুব বলছে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু কাল যদি আবারো আগের মতো কিছু ঘটে তাহলে মেঘ আমাকে আবারো অবিশ্বাস করতে দুবার ভাববে না। যে একবার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে সে বারবার অবিশ্বাস করবে এটাই স্বাভাবিক।
জোহা: হুম বুঝতে পারছি তোমার ভয় হচ্ছে ভাইয়া আবারো এমন করতে পারে এইটা ভেবে কিন্তু আপু আমার মনে হয় ভাইয়াকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
আমি: পুরো দু সপ্তাহ আমার মেয়েটা হসপিটালের বেডে শুয়ে ছিল কিন্তু আমি একবারো ওর কাছে যেতে পারিনি ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারিনি। আর এসব হয়েছে শুধুমাত্র মেঘের জন্য। প্রতিদিন রাতের আধারে লুকিয়ে তোহাকে দেখতে গিয়েছি এজন্য চাচ্চুর কাছে আম্মুর কাছে কতো বকা শুনেছি তুই তো সব জানিস। এতো কষ্ট করে তোহাকে দেখতে যেতাম, মেয়েটা নতুন আম্মু বলে বারবার ডাকতো দূর থেকে শুনতে পেতাম কিন্তু একবারো ওর কাছে গিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারিনি শুধুমাত্র মেঘের জন্য। সেদিন তো মেঘ আমাকে দয়া করেনি একবার তোহার কাছে আমাকে যেতে দেয়নি তাহলে আজ কেন আমি ওকে দয়া করবো?
জোহা: আপু শু…
আমি: চুপচাপ বাসায় চল আর হ্যাঁ মেঘের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না।
জোহা: হুম।
আম্মু: কিরে কোথায় গিয়েছিলি তোরা? (বাসায় এসে ঢুকতেই আম্মু প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আম্মু আর চাচ্চু সোফায় বসে আছেন সাথে উকিল। আশ্চর্য হলাম বাসায় হঠাৎ উকিলকে দেখে)
জোহা: এইতো চাঁচি কাছেই একটু হাটতে গিয়েছিলাম।
চাচ্চু: এবার বস এখানে কথা আছে।
আমি: বাসায় হঠাৎ উকিল..
চাচ্চু: এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। অনেকদিন ধরে এই কাজটা করবো ভাবছিলাম কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছিলাম না, তবে আজ যখন তুই ও বাড়ির সবাইকে ফিরিয়ে দিলি তখন আমি সাহস পেয়ে গেছি।
আমি: তোমার কথার কোনো কিছুই আমি বুঝতে পারছি না চাচ্চু।
চাচ্চু: এইনে। (চাচ্চু আমার দিকে চারটা টিকেট এগিয়ে দিলেন, টিকেট গুলো হাতে নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছি)
আমি: টিকেট কেন চাচ্চু?
আম্মু: আমরা সবাই কানাডা চলে যাচ্ছি।
আমি: মানে?
চাচ্চু: তুই যেভাবে বেঁচে আছিস সেভাবে সারাজীবন কাটানো সম্ভব নয়, তাই আমরা ঠিক করেছি তোর আর মেঘের ডিভোর্স দিয়ে তোকে কানাডা নিয়ে যাবো। আর হ্যাঁ শুধু তাই নয় কানাডা গিয়ে ভালো ছেলে দেখে তোর আবার বিয়ে দিবো আমরা।
আমি: মানে কি চাচ্চু? আমার আর মেঘের ডিভোর্স? আবার অন্যকারো সাথে বিয়ে? কি বলছ এসব চাচ্চু তোমাদের মাথা ঠিক আছে তো?
আম্মু: আমাদের মাথা ঠিক আছে, ঠিক নেই তো তোর মাথা। একটা মরীচিকার জন্য তুই দিনের পর দিন অপেক্ষা করছিস। এভাবে জীবন চলে না কণা, এভাবে দুমাস কাটিয়েছিস হয়তো আরো কয়েক মাস কাটাতে পারবি কিন্তু সারাটা জীবন? কণা তোর সারাটা জীবন পরে আছে সামনে, তুই এভাবে থাকতে চাইলেও আমরা তোকে এভাবে থাকতে দিতে পারিনা।
আমি: কিন্তু কেন আম্মু?
চাচ্চু: কারণ আমরা তোর ভালো চাই।
আমি: আমি ভালো আছি চাচ্চু আর এভাবেই থাকতে চাই।
চাচ্চু: একদম চুপ। তোর কথামতো সবকিছু হবে না শুনেছিস তুই? এইযে ডিভোর্স পেপার সাইনটা করে দে আর আগামীকাল আমাদের ফ্লাইট।
আমি: মেঘকে ভালোবাসি আমি, কোথাও যাবো না আমি এইদেশ ছেড়ে। মেঘ আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে আমি ওকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবো শুনেছ তোমরা? আমাকে জোর করো না তাহলে কিন্তু…
চিৎকার করে কথাগুলো বলে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।
বিছানায় শুয়ে মেঘের ছবিটা দেখছি আর কাঁদছি। কেন করলো মেঘ এমন? ভালোই তো ছিলাম দুজন একসাথে, মেঘ আমাকে অবিশ্বাস করে সবকিছু কেন উলটপালট করে দিলো? এখন আমি কি করবো আম্মু আর চাচ্চু তো সবকিছু ঠিক করে ফেলেছে। ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কান্না করি আর সবাইকে বলি “আমি মেঘকে ভালোবাসি আর সারাজীবন ভালোবাসতে চাই, মেঘ আমাকে ভালো বাসুক বা না বাসুক আমি ওকে এভাবেই নীরবে ভালোবেসে যেতে চাই”
জোহা: আপু উঠনা খাবে না অনেক রাত হয়েছে তো।
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: আর কতক্ষণ এভাবে অন্ধকার রুমে শুয়ে থাকবে? কিছু খেয়ে নাও প্লিজ।
আমি: খাবো না যা তুই।
জোহা: আমিও কিন্তু খাইনি, প্লিজ চলো তুমি না খেলে খাবো না।
আমি: কেন জেদ করছিস?
জোহা: চলো না লক্ষী আপু। (জোহা কাঁদছে দেখে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না উঠে খাবার খাওয়ার জন্য চলে আসলাম)
আমি: সবাই খেয়েছে?
জোহা: উঁহু কেউ খায়নি তোমার জন্য।
আমি: আমার জন্য কারো এতো ভাবতে হবে না।
জোহা: হুম তুমি খেয়ে নাও।
চাচ্চু: পছন্দ হয় কিনা দেখতো। (খাবার মুখে দিতে যাবো তখনি চাচ্চু একটা ছবি টেবিলে ছুড়ে দিলেন)
আমি: এইটা কি চাচ্চু?
চাচ্চু: একটা ছেলের ছবি।
আমি: তাতো আমিও দেখতে পারছি কিন্তু ছেলেটা কে?
চাচ্চু: কানাডাতেই থাকে ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করছি। (চাচ্চুর কথা শুনে রাগ উঠে গেল একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না)
চাচ্চু: ছেলে খুব ভালো অনেক সুখে থাকবি তুই।
আম্মু: কণা রাগ করিস না তোর ভালোর জন্যই…
আমি: আমার ভালো ভাবতে কে বলেছে তোমাদের?
চাচ্চু: ভাইয়ার অবর্তমানে আমিই তোর…
আমি: বিয়ে করবো না আমি শুনেছ তোমরা? আর হ্যাঁ মেঘ’কেও আমি ডিভোর্স দিবো না।
চাচ্চু: তুই মেঘকে ডিভোর্স দিলেও মেঘের কাছে আর ফিরে যেতে পারবি না, ডিভোর্স না দিলেও আর ফিরে যেতে পারবি না।
জোহা: মানে কি আব্বু?
আম্মু: আগামীকাল আমরা কানাডা চলে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।
আমি: যাবো না আমি।
আম্মু: তুই যা বলবি তাইতো আমরা শুনবো না, আমরা ঠিক করেছি মেঘের কাছে আর তোকে ফিরিয়ে দিবো না। আর হ্যাঁ এই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে।
আমি: করবো না বিয়ে আর কানাডাও যাবো না। (টেবিলের সব খাবার ছুড়ে ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসলাম)
ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা পনেরো মিনিট, ঘুম আসছে না কিছুতেই। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি আর নিশ্চুপে কাঁদছি। বড্ড ভয় হচ্ছে সত্যি যদি কাল চাচ্চু আর আম্মু কানাডা নিয়ে যায় আমাকে তখন আমি কি করবো?
হঠাৎ বারান্দায় কি যেন শব্দ হলো কেঁপে উঠে আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলাম। বারান্দার দরজা খুলা দেখে বেশ অবাক হলাম, দরজা খুললো কে? দরজায় হাত রাখতেই আচমকা কে যেন আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে বারান্দায় নিয়ে আসলো, ভয়ে চিৎকার দিতে যাবো তখনি আমার মুখ চেপে ধরলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি মেঘের দিকে, একহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে অন্যহাতে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো তারপর কোমরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল।
আমি: তুতুমমি এএতো রাতে?
মেঘ: কেন ভয় পাচ্ছ?
আমি: কেন এসেছ?
মেঘ: পরে বলছি। (মেঘ আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, চুপচাপ ওর বুকের সাথে লেপ্টে রইলাম)
মেঘ: আম্মু আর চাচ্চু আমার উপর রেগে আছে দেখে ভয় পাচ্ছ?
আমি: তুমি এসব জানলে কিভাবে?
মেঘ: জোহা বলেছে সবকিছু।
আমি: কাল আমরা কানাডা চলে যাচ্ছি। (মেঘকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম। মেঘ এক পা দুপা করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি দেয়ালে আটকে যেতেই মেঘ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো)
মেঘ: আমি তোমাকে যেতে দিলে তো তুমি যাবে।
আমার কপালে আসা চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ালো, আমি চোখদুটো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি…
চলবে?