#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৯
সাজিদ যে এভাবে পুলিশ নিয়ে চলে আসবে এটা যেন পুতুল অনুমান ও করতে পারেনি। ঘুনাক্ষরেও যদি টের পেত তাহলে ওই দুই হাজার টাকা নেয়ার ভুল করত না৷
সাজিদ গিয়ে সরাসরি রানি বেগমের সামনে দাড়ালেন৷ তিনি অনেক শক্ত মহিলা। এত বড় অন্যায় করার পরও তার মধ্যে সামান্যতম অনুশোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তিনি ইন্সপেক্টর এর সামনে দাড়িয়ে কাঠকাঠ গলায় বলতে লাগল
– আপনারা এখানে কেন এসেছেন?
– আমরা মিসেস চৌধুরি এর খোজে এসেছি৷ আমাদের ইনফরমেশন মতে তিনি এখানেই আছেন। আপনারা হসপিটাল থেকে তাকে নিয়ে এসেছেন
– আমাদের একটা মেয়ে অসুস্থ ছিল তাকে আমরা হসপিটাল নিয়েছিলাম এখানে সমস্যা কোথায়?
– ভালো ভাবে কথা বলতেছি সোজা ভাবে জবাব চাই। সমস্যা কোথায় মানে কি। ওভার স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না রানি। ওই মেয়েটাকে এখানে জোড় করে নিয়ে আসা হয়েছে৷ ভালোয় ভালোয় তার সাথে আমাদের দেখা করার সুযোগ করে দিন নয়ত খারাপ হবে।
রানি বেগম ইশারা করলে ওখানে দাড়িয়ে থাকা একটা মেয়ে মাশরিনার ঘরে তাদের নিয়ে যায়।
কিন্তু মাশরিনা অসুস্থ থাকায় তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারে না। শুধু কোন ভাবে কষ্ট করে বলে আমাকে এখানে থেকে নিয়ে যান স্যার।
।
।
।
।
– শিমুলকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে?
– জানিনা আমি।
– আমি সোজা ভাবে উত্তর চাচ্ছি৷ মেয়েমানুষ কেনা বেচা করিস৷ তোদের যে কি শাস্তি হবে তা কল্পনাও করতে পারতেছিস না। শিমুলকে এখনি এখানে ডাকার ব্যাবস্থা কর নয়ত এখানের সবগুলোকে বেধে থানায় নিয়ে যাব। তেদের এগেনিস্টে প্রমান ও আছে। পুতুল এর বলা কথাগুলার রেকর্ড শোনায় ইন্সপেক্টর।
রানি বেগম একবার কটমট করে পুতুল এর দিকে তাকায়। চোখ দিয়েই যেন ভস্ম করে দিবে।
এরপরও অনেক মোচড়ায় রানি বেগম। তারপর যখন ইন্সপেক্টর বাধ্য হয়ে সবাইকে থানায় নিয়ে যেতে চায় তখন রানি বেগম রাজি হয় শিমুলকে ডাকতে। শিমুলকে ফোন দিয়ে বলে বাকি বিশ হাজার টাকা যেন এখনি এসে নিয়ে যায়। টাকার কথা শুনে শিমুল ও খুব তাড়াতাড়ি সেখানে চলে আসে। এরপর রানি বেগম আর শিমুল দুজনকেই পুলিশ নিয়ে যায়। আর সাজিদ সেখানে থাকা মেয়েদের সাহায্য নিয়ে মাশরিনাকে নিয়ে আসে। মাশরিনা কথা বলতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও অনেক কষ্টে জানতে চায় যে ওকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাজিদ বলে নিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ভাবি সাহেবা।
সাজিদ ওকে নিয়ে একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে দাড়ায়। বাড়ির সামনেই দাড়িয়ে ছিলেন শাফিন এর মা রুবি হোসেন। তাকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায় মাশরিনার। তিনি এগিয়ে এসে মাশরিনাকে ধরে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করেন। মাশরিনাও তার সাহায্যে উপরে ওঠে। খুব গোছানো একটা রুমে মাশরিনাকে নিয়ে যাওয়া হয়। আশপাশে সব কিছু খুব সুন্দর করে গোছানো। মাশরিনা রুবির কাছে জানতে চায় ওকে এখানে কেন আনা হয়েছে। কিন্তু তিনি বলে গেলেন যে এখন রেস্ট করো মেয়ে। শাফিন এর কাছ থেকে শুনলাম তেমার উপর থেকে তো কম ধকল গেল না। এখন রেস্ট করো সব উত্তর পেয়ে যাবে। মাশরিনারও এখন আর কথা বাড়াতে মন চাচ্ছে না তাই চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইল। ওকে চোখ বন্ধ করতে দেখতে রুবি হোসেইন সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় দরজা ভেজিয়ে রেখে গেলেন।
চোখ বন্ধ করে জীবনের হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত মাশরিনা।জীবনটা কেমন খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এখন আর নিজের নীড় বলে কিছু নেই ওর। এক সময় কত সপ্ন ছিল। একটা খুব ভালো মানুষের সাথে ওর দেখা হবে৷ যে তার সর্বস্বটা দিয়ে ওকে ভালোবাসবে। তার খুব বড় বাড়ি না থাকলেও ছোটখাট একটা থাকার জায়গা থাকলেও হবে। সেখানে ও ওর সুখের সংসার গুছিয়ে নিবে। এই শাফিন বজ্জাত এ-র পাল্লায় পড়ে ছোট ছোট সেই সপ্ন গুলোও মাটি হয়ে গেল। এখন শেওলার মতো এখানে ওখানে ভাসছে ও। যাওয়ার মতো নিজস্ব কোন জায়গা নেই। খুব বড় কিছু কি চাওয়া ছিল ওর। উপরওয়ালা চাইলেই তো ছোট খাট ইচ্ছে গুলো পূরন করে জীবনটা সুন্দর করে দিতে পারতেন। এখন কোথায় থাকবে কি করবে কিছু জানা নেই। যে আসছে সে বা কীভাবে সারভাইব করে। এসব ভেবেই চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
– এতসব ভেবে লাভ নেই মেয়ে। তোমার কোথাও যেতে হবে না। তুমি আজ থেকে এখানেই থাকবে।
– কিন্তু আন্টি এটা তো সানওয়ার চৌধুরীর বাসা। আর আমি কীভাবে তার মুখোমুখি হবো।
– কে বলেছে এটা তার বাসা। তিনি আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে এটা উপহার স্বরুপ দিয়েছিলেন। তবে এখানে আমরা থাকি না। একবার ভাড়া দিয়েছিলাম কিন্তু ভাড়াটিয়ার ছোট একটা বাচ্চা ছিল ও দেয়াল নষ্ট করে ফেলত তাই সাজিদ এর বাবা আর ভাড়াটিয়া রাখতে দেয় নি। আমরা মাঝে মাঝে আসতাম এখানে। আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে।
মাশরিনা তার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন একটা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে। ওর ভয় লাগছে যে সেদিন শাফিনকে আঘাত করার অপরাধে হয়ত রুবি বেগম কোন শাস্তি দিতে ওকে এখানে এনেছেন।
– হ্যা সেদিন আমি একটু কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে সেটা সন্তান এর আঘাত লাগার কারণে। তবে তোর উপর আমার কোন অভিযোগ নেই। তোর জায়গায় আমি থাকলে হয়ত আরও বেশি কিছু করতাম। আগে জানতাম আমার দুই ছেলে আছে। এখন জানব আমার একটা মেয়েও আছে। আর মেয়েকে ইতোমধ্যে তুই বলে ফেলছি রাগ করিসনি তো৷
মাশরিনা মাথা নেড়ে না বোঝায়। তবে ও অবাক হয়েছে। এটা কেমন ফ্যামিলি দেখছে ও। অর্ধেক লোককে ভালো মনে হচ্ছে আবার অর্ধেক ভিন্ন কোয়ালিটি। আবার এই নারী কেমন রহস্যময়ী। ও কিছু না বলার আগেই সব যেন বুজে ফেলছে। মনে হচ্ছে তিনি ওর মন পড়তে পারছে।
রুবি রুমে মাশরিনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে৷ মাশরিনা শোয়া ছিল। মাশরিনাকে উঠে বসতে সাহায্য করে। স্যুপ করে এনেছে তিনি৷ নিজ হাতে চামচে তুলে মাশরিনার মুখের সামনে ধরে। মাশরিনা মুখে না নিয়ে তার মুখের দিকে তাকায়। তিনি বলেন
– আরে বোকা মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন। খা। মা সাধলে বুঝি তার হাতে খাবার মুখে নিতি না৷ আমিও তো তোর মায়ের মতোই খা তো এখন।
মাশরিনা তার হাত থেকে খাবার খায়। সে ধৈর্য সহকারে পুরো খাবারটা মাশরিনার মুখে তুলে দেয়। মাশরিনাও আদুরে মেয়ের মতো সবটা খেয়ে নেয়। খাওয়ানো শেষ হলে তিনি নিজ হাতে টিস্যু নিয়ে মাশরিনার মুখ মুছে দেন।
এরপর তিনি রুম থেকে বেরিয়ে যান।
।
।
।
।
।
দরজায় নক করার শব্দে সেদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকায় মাশরিনা। দরজার সামনে সাজিদ আর রুবি বেগম দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। মাশরিনা ভেতরে আসতে বললে দুইজনই ভেতরে আসে৷ সাজিদ বলে
– ভাবি আমাদের তো এখন যেতে হবে। আর আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনাী দেখা শোনার জন্য একজন মেইড রয়েছে। তিনিই সব কাজ করে দিবেন। আপনি কোন কিছু করতে যাইয়েন না আবার। আর টাইমলি ঔষধ খেয়ে নিয়েন।
রুবি হোসেইন পাশে বসে মাশরিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর বলে
– আজ আসি মা। কাল আবার এসে একবার দেখে যাব কেমন। খেয়াল রেখ।
তারপর তারা দুজন বেরিয়ে যায়। মাশরিনা কেমন যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে গেল। এর হিসেব মিলছে না কেন যেন। এই দুজন মানুষের রহস্য ও উদঘাটন করা মুশকিল। যেখানে সানওয়ার চৌধুরী নিজে ওকে পছন্দ করে না বলেছিল সেখানে তারই স্ত্রী সন্তানরা ওর খাতির যত্ন কীভাবে করছে। এরা চাইছেই বা কি মাশরিনার কাছে।
#চলবে