নীড়ের খোজে পর্ব-০৭

0
561

#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৭

মাশরিনার পেছনে আর কেউ নয় বরং শিমুলই ছিল। মাশরিনা পেছনে শিমুলকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করল

– আপনি এই সন্ধ্যা বেলা এখানে কি করছেন।

– তোমাকে নিতে আসলাম।

– আপনি কি করে জানেন আমি এখানে এসেছি।

– তুমি বিকালে যখন এদিকে এসেছিলে তখনই দেখেছি।

– আপনি আমাকে ফলো কেন করছিলেন।

– আমি তোমাকে ফলো করছি সেটা তুমি আজ জানলে সুন্দরী।

– মানে….

– আমি তো তোমাকে সেই শুরু থেকেই ফলো করছি।

– কি বলতে চাচ্ছেন আপনি।

– হুম অনেক আগে থেকে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেখে রাখছি। কিন্তু ঝামেলা করছে তোমার ওই সো কল্ড হাসব্যান্ড। এখন তো আর তোমার ঢাল নেই তাই আসলাম তোমােকে নিয়ে যেতে৷ ইশশশ তুমি এত সুন্দর কেন বলো আমারে। তোমাকে দেখলে তো সে অনেক খুশি হবে।

– কিসব আবোলতাবোল বলতেছেন৷ আমাকে দেখলে আবার কে খুশি হবে।

– আছে একজন বুজলে। তিনি অনেক দয়ালু। সুন্দরী অসহায় মেয়েদের ঠাই দেন তিনি। বেশি কিছু না তুমি তোমার এই রুপ দেখিয়ে অনেক টাকা আয় করতে পারবা অনেক।

শিমুল এর কন্ঠ যেন ভয়ানক শুনতে লাগতেছে। মাশরিনা এই মুহুর্তে ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ না করে জোড়ে পা ফেলে শিমুলকে পেছনে ফেলেই হাটা শুরু করে।

– আরে আস্তে হাটো। পড়ে যাবে তো। তোমার কি মনে হয় তুমি দৌড়ালেও আমার আগে যেতে পারবে। তোমাকে ধরে ফেলা কয়েক সেকেন্ড এর ব্যাপার। আমি জোড় করতে চাই না। স্বইচ্ছায় চলো নয়ত জোর করতে বাধ্য হবো। এত মাস যাবত অপেক্ষায় আছি আমি।

মাশরিনা আর কোন দিক না তাকিয়ে সোজা দৌড় লাগাল। মাশরিনা যে দৌড়াবে সেটা যেন আগেই অনুমান করতে পেরেছিল শিমুল। তাই ও সাথে সাথে দৌড় লাগায়। মাশরিনাকে ধরতে বেশি বেগ পেতে হয়নি ওর। ওর লম্বা পা ফেলে মাশরিনা অবধি পৌছানো অতো কঠিন হয়নি৷ ঢ়খন পেছন থেকে মাশরিনার হাত টেনে ধরে মাশরিনার শুধু মনে হচ্ছিল খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে ওর সাথে। ও ফে’সে গেছে এর মধ্যে। মাশরিনা পেছন ঘুরে শিমুল এর হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। খুব জোড়েই কামড় বসায়৷ প্রতিটা দাত একদম হাতের মধ্যে বসে গেছে। ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় শিমুল। তবুও হাত ছাড়েনা। ক্লোরোফর্ম এর তীব্রতা আর বেশিক্ষণ মাশরিনাকে ঠিক থাকতে দেয়নি। সেখানেই ঢলে পড়ে মাশরিনা।

🌸🌸🌸🌸🌸

– দেখ শিমুল আমি তোকে পঞ্চাশ এর বেশি দিতে পারব না।

– এইডা ঠিক করতাছেন না রানী। এই মেয়ে আগের গুলোর থেকে যথেষ্ট সুন্দর। এক লাখ না হলে আমি এই মেয়ে দিতে পারব না।

– দেখ তোর সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়। তাই তো পঞ্চাশ দিতে চাচ্ছি। নয়ত এমন পাটকাঠির মতো মেয়ের জন্য এটা বেশিই হয়ে যাচ্ছে।

– তুমি তার সৌন্দর্য দেখছ। যেকোনো পুরুষ মানুষকে ঘায়েল করতে তার এই রুপ যথেষ্ট।

– শোন বেশি বুজিস না। শুধু সুন্দর হলেই হয় না। সুসাস্থ্যের ও দরকার আছে৷ তবুও তুই যখন বলছিস সত্তর দিবনে। এখন পঞ্চাশ নিয়ে যা। বাকিটা পরে নিস।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

– মেয়েটাকে কর্নারের রুমটায় রেখে আসতি।

– রাখছি তো। আমি তাইলে এখন আসি।

🌸🌸🌸🌸

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে একটা বদ্ধ ঘরের মধ্যে আবিষ্কার করে মাশরিনা। প্রথমে বুজতে পারেনা কোথায় আছে। উঠে বসে চোখ ঘুরিয়ে চারদিকে দেখতে থাকে। রুমে খুব কম দামী একটা খাট। পাশে ছোটো একটা টেবিলে জগ আর গ্লাস রাখা। কাঠ দিয়ে আলনার মতো বানানো। সেখানে কিছু কাপড় ঝোলানো রয়েছে। দেয়ালে একটা আয়না সেটে লাগানো। তার সামনে ছোট একটা টেবিলে সাজসামগ্রী রাখা। এসব দেখে মাশরিনার বুজতে দেরী হয় না ও এখন কোথায়। তার মানে শিমুল আসলেই এমন জঘন্য একটা কাজ করেছে। শিমুলকে দেখে প্রথম থেকেই খারাপ মনে হলেও ও যে এতটা জঘন্য একটা কাজ করবে এটা ধারণাতেও ছিল না। কিন্তু যা হয়ে গিয়েছে তা তো ফিরে পাওয়া যাবে না। এখন উপায়। কীভাবে বের হবে এখান থেকে। ও যতটুকু শুনেছে এসব জায়গায় কেউ একবার আসলে আর ফিরে যেতে পারে না। তবে উপায়। এখন কি করবে ও৷ এখান থেকে যদি সত্যি সত্যি কোন দিন বের হতে না পারে। এখন তো আর ও একা না। আচ্ছা শিমুল কি একবারের জন্যও শোনেনি যে ও মা হতে চলেছে। তারপরও এরকম একটা অন্যায় কীভাবে করল। আর ওকে যেখানে রেখে গেছে তারাও বা কেমন। এরকম একটা মেয়েকে তারা রাখবেই বা কেন। হয়ত শিমুল তাদের থেকে লুকিয়েছে। সে যাই হোক এখন এখান থেকে বের হওয়াটা জরুরি। যদিও পারবে কিনা জানা নেই। তবে চেষ্টা তো করতেই হবে। উঠে দরজার কাছে গেল। দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে খোলা৷ কিন্তু টান দিতেই দেখল সেটা বাইরে থেকে লাগানো। মাশরিনা দরজা ধাক্কাতে লাগল। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সারা শব্দ নেই। এবার বেশ জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাতে লাগল। কিছু সময় পর বাহির থেকে দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। মাশরিনা সেখান থেকে সরে দাড়ালে বাহির থেকেই ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলল৷ সামনেই দাড়িয়ে আছে জাদরেল টাইপ এক মহিলা। যেরকম লম্বা সেরকম সাস্থ্যবান। ঠোটে গাঢ় করে লিপস্টিক লাগানো। কানে ঝুমকা। গলায় বড় সেট ঝুলছে। বয়স হলেও সৌন্দর্যের ঝৌলুস এখনো আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে যৌবন কালে সেইরকমের সুন্দরী ছিল। তার পাশেই দাড়ানো আরো দুইটা মেয়ে। তাদের বয়স বেশি না। পরনে হাতাকা’টা ব্লাউজ এর সাথে গর্জিয়াস শাড়ি। তারাও বেশ সুন্দর করে সাজা৷ তাদের দেখতে বেশ আবেদনময়ী লাগতেছে। মাশরিনা খুটিয়ে খুটিয়ে তাদের দেখছিল। এসব জায়গার কথা শুধু শুনেছে বা কখনো টিভিতে দেখেছে কিন্তু এভাবে তাদের সামনা সামনি দেখবে সেটা ছিল কল্পনাতীত। ওর দেখার মাঝেই পাশ থেকে একটা মেয়ে সামনে থাকা জাদরেল টাইপ মহিলাকে দেখিয়ে বলল

– উনি রানি বেগম। এখানকার সর্দারনী। এখানকার সবার দেখা শুনা করেন। আজ থেকে আপনিও তার জিম্মি।

– আপনারা আমাকে আটকে কেন রেখেছেন। আমি এখানে থাকতে চাই না।

এ কথা শুনে রানি বেগম কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল

– তোমার নাগর তোমারে এখানে রেখে গেছে। তার বিনিময়ে সে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে। এখন তুমি আমাদের জিম্মি। কোন উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা করলে ভালো হবে না কিন্তু।

– উনি আমার কেউ হয় না। তাই উনি কি করল না করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না৷ আমি এখান থেকে যাব মানে যাবই।

– ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

মাশরিনা কোন কথা না শুনে খোলা দরজা দিয়ে সোজা বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে৷ কিন্তু রানি বেগম এর সাথে আসা মেয়ে দুটো ছুটে এসে ওর হাত ধরে ফেলে। মাশরিনা ছোটার জন্য মোচড়াতে থাকলে এর মধ্যে রানি বেগম ও সামনে চলে আসে। তিনি এসে মাশরিনার চুলের মুঠি ধরে রুমের ভেতরে ধাক্কা মে’রে ফেলে দেয়৷ শুধু শুধু জাদরেল ভাবছিল মাশরিনা। কোন মায়া দয়া কিছু নেই এই নারীর। জোরে ধাক্কা মারার কারনে খুব গতিতে ফ্লোরের উপর পড়ে যায় মাশরিনা। যার ফলে পেটে প্রচন্ড আঘাত লাগে। কোনো মতে কনুই তে ভর দিয়ে উঠে বসে মাশরিনা৷ ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। পেটে হাত চেপে বসে৷ চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। রানি বেগম সামনে এসে হাটুতে ভর দিয়ে বসে৷ তারপর তার কর্কশ কন্ঠে আবার বলে – যদি পালানোর চেষ্টা ও করো এর থেকে খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম। আমি রানি বেগম। ওত ভালো মানুষ না মনে রাখিস মেয়ে। এখানে যারা থাকে সবাই আমাকে ভালো করে চিনে। তুই তো নতুন তাই একটু উড়ছিস। ডানা কে’টে দিলেই ঠিক হয়ে যাবি।

আরো কিছু বলতে নিচ্ছিল রানি বেগম। তার আগেই নজর যায় মাশরিনার পায়ের দিকে। সেখানে ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আতকে ওঠে রানি বেগম৷ তিনি বেশ ভয় পেয়ে যান। তিনি তো শুধু ফ্লোরের উপর ফেলেছেন তাতে তো এমনটা হবার কথা নয়।

– এই মেয়ে ওঠ তো। দেখি তোর কি হয়েছে।

তার ডাক শুনে নিভু নিভু চোখে তার দিকে তাকায়।

– এই মেয়ে এমন ব্লিডিং কেন হচ্ছে?

মাশরিনা তার কথা শুনে এই অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়। এতক্ষণ আস্তে আস্তে চোখের পানি ফেললেও এবার ডুকরে কেদে ওঠে। পেটে হাত দিয়ে বলে

* আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চারা বুঝি আর নেই। আপনি মে’রে ফেলেছেন আমার বাচ্চাকে। আপনি খু’নি।

বাচ্চার কথা শুনে আতকে ওঠে রানি বেগম। তিনি কি তবে একটা নিষ্পাপ প্রাণ খু’ন করে ফেললেন। কিন্তু তিনি ও তো জানতেন না এটা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে