নীড়ের খোজে পর্ব-০৬

0
671

#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৬

আনমনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে অপরিচিত কারো সাথে ধাক্কা লাগল মাশরিনার। সম্ভিত ফিরে পেয়ে চোখ তুলে তাকায় লোকটার দিকে৷ মাশরিনার থেকে বেশ লম্বা লোকটা তাই মাশরিনার উপর দিকে তাকিয়ে লোকটাকে দেখতে হচ্ছে।

– এই মেয়ে এই কে তুমি?

লোকটার কথা শুনে তাকে দেখা বন্ধ করে কথার দিকে মনযোগ দেয় মাশরিনা।

– আমি যেই হই না কেন আপনি কে? এই বাসায় তো দাদাভাই আর দিদুন ছাড়া আর কেউ থাকেনা।

– ও হে বালিকা আমার দিদুনকে দিদুন ও বানিয়ে ফেলেছো দেখি৷ তোমার সাহস তো কম নয়।

– এই ওয়েট ওয়েট। আপনার দিদুন মানে? আপনি কি শিমুল ভাই?

– জি আমি শিমুল। তা আপনি কোন গাছের মুল শুনি?

– আরে এভাবে কথা বলছেন কেন৷ আমি আপনাদের বাসার দোতলায় থাকি৷

– ওহ আপনি সেই মেয়ে যার কথা দিদুন বলেছিল। আপনি আপনার বাবা মায়ের কাছে গিয়েছিলেন রাইট।

– জ্বি৷

– তা আপনার হাসবেন্ড কোথায়? সে আসেনি যে।

– আমি একাই গিয়েছিলাম। সে তার বাবার বাসায়। এখন আমার সাথে নেই।

– তার মানে আপনি সিঙ্গেল।

– কিসব ফালতু কথা বলছেন। সিঙ্গেল হবো কেন। আমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছি তাই কারো বাসায় কেউ যায় না।

– ওহ আচ্ছা। সে যাই হোক একা একা একটা সুন্দরী মেয়ে এভাবে থাকা কিন্তু ঠিক নয়।

এ কথা বলে মাশরিনার পা থেকে মাথা অবধি স্ক্যান করতে লাগল শিমুল। মাশরিনা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল এমন আচরনে। এই বেটা এমন করতেছে কেন৷ মাশরিনার কেন যেন মবে হচ্ছিল এই লোকটা ভালো না৷ বাজে নজরে তাকাচ্ছে ওর দিকে। তার সামনে আর দাড়িয়ে থাকাটা যুক্তিযুক্ত মনে হলো না মাশরিনার। তাই পাশ কা’টিয়ে যেতে যেতে বলল আমি অনেক দূর থেকে এসেছি টায়ার্ড। ফ্রেশ হবো সাইড দেন। শিমুল একটু পাশে যেতেই আর কোন কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে রুমে চলে এলো মাশরিনা৷
এসে ব্যাগটা রেখে আগে ঢুকল ফ্রেশ হতে। একবারে গোসল সেরে বের হলো। পুরো জার্নিতে কোন কিছু খাওয়া হয়নি। তার উপর কাল থেকে না খাওয়া। পেটের ভিতর ইদুর মনে হচ্ছে লম্ফঝম্প করতেছে। কিছু খাওয়া দরকার। কিন্তু এই মুহুর্তে তো বাসায় কিছু নেই ও৷ এরমধ্যেই দরজায় কে যেন নক করল। মাশরিমা ভিতরে বসেই শুধাল

– কে ওখানে?

– আমি শিমুল৷

এই লোকটার বদ নজর তখনই লক্ষ্য করেছে মাশরিনা। এখন দরজা খুলতে কিছুটা ভয় ভয় লাগতেছে। এই লোক আবার ওর বাসায় কেন এলো। দরজা না খুলে ভিতরে বসেই জানতে চাইল

– কি চাই আপনার।

– আসলে দিদুন খাবার পাঠিয়েছে আপনার জন্য। বলল এত দূর থেকে এসেছেন এখন আবার রান্না করবেন তাই৷

মাশরিনার ও প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছিল। এখন পেটে কিছু না পড়লে বমি হতে চাইবে তাই উঠে দরজাটা খুলে দিল। দরজা খুলে খাবার নিতে চাইলে শিমুল বলল আরে দরজা থেকেই কেন নিবেন। ভেতরে আসতে দিন আমি ভেতরে গিয়ে রেখে আসি। কথাগুলো মাশরিনার ভালো লাগল না তাই বলল

– দরকার নেই ভাইয়া। আমি নিয়ে যেতে পারব।

– কেন ভয় পাচ্ছেন বুঝি?

লোকটার এমন সোজাসাপটা কথার বিপরীতে কি জবাব দেবে ভেবে পেলনা মাশরিনা৷ তারপরেও বলল

– দেখুন আমি একা একটা মেয়ে মানুষ বাসায় একা আপনি কেন আসবেন ভেতরে। এটা খারাপ দেখায়।

– ভালো খারাপ দেখাী সময় নেই। গরমে হাত পুড়ে গেল।

মাশরিনাকে কথা বলতে না দিয়েই ঠেলেঠুলে ভিতরে ঢুকে গেল। অবশ্য শিমুল আর কোন কথা বাড়ায়নি খাবারটা রেখেই চলে গিয়েছে। শিমুল চলে যেতে মাশরিনা উঠে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।





দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল মাশরিনার এখনো কোন নড়চড় নেই। উপুড় হয়ে বিছানার মধ্যে পড়ে আছে। দুপুরে খেয়েছে সেই খাবার এর প্লেট এখন সেখানে। কি যে ভেবে চলে নিজ মনে কে জানে। তবে মাথার মধ্যে এখন একটা চিন্তাই ঘুরছে। কি থেকে কি হয়ে গেল। এখন যা শুরু হয়েছে তারই বা শেষ কোথায়। মায়ের কাছে যে যাবে সে পথও তো বন্ধ হয়ে গেল। আর এখনো মা কিছু জানেনা। তাকেই বা কীভাবে এসব বলব। তিনি তো অনেক কষ্ট পাবেন। একুল ওকুল সবকুল হারা এখন। এখন কার কাছে বা ঠাই হবে। আর আমার করা অন্যায়টা শুনলে তো কেউই আর ভালো চোখে দেখবে না। যেহেতু কাছে কাবিন এর সই করা কাগজ নেই তার মানে কেউ বিশ্বাস ও করবে না যে আমি বিয়ে করেছি। এই সন্তান এর বা কি পরিচয় হবে। ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পড়ছে।

এমন সময় দরজায় নক করার শব্দে কান্না অফ হয় মাশরিনার। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে দরজা খুলে। সামনে দিদুন দাড়িয়ে আছে। মাশরিনা সাইডে সরে গিয়ে দিদুনকে ঢুকতে জায়গা দেয়। দিদুন ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে পেছনে পেছনে শিমুল ও ঢোকে। এবার বেশ বিরক্ত হয় মাশরিনা। এই লোক শুরু করেছে কি। যখন তখন রুমে কেন চলে আসে। আর এই লোকটার আচরন ও খুব অদ্ভুত।
দিদুন ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষন গল্প করল মাশরিনার সাথে। ওর বাবা মা কেমন আছে, কি অবস্থা সবার সব জানল৷ দিদুন যতক্ষণ কথা বলছে ততক্ষণ এই লোকটা রুমে বসে ছিল এমন অদ্ভুত বিহেভ এর কোন মানে হয়। যতক্ষণ এখানে ছিল মাশরিনার দিকে তাকিয়ে ছিল। দিদুন মুরুব্বি মানুষ তিনি এত কিছু খেয়াল করেন নি।

তারপর দিদুন চলে গেলে তিনিও সাথে সাথে চলে যান।




মাশরিনা এখানে আসার পর একটা টিওশনি করাত। কয়েক দিন যাবত যাওয়া হয় না৷ ভাবল আজ থেকে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। রিফার মাকে ফোন দিয়ে বলল সে পড়াতে আসতে চায়৷ রিফার আম্মুও মাশরিনাকে অনেক পছন্দ করে। মাশরিনার পড়ানো তার ভালো লাগে। তাই আর না করল না৷ বিকেলে মাশরিনা রেডি হয়ে বের হলো রিফাকে পড়াতে যাওয়ার জন্য। মনে মনে ঠিক করল চিন্তা কম করবে৷ এত চিন্তা করে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওকে দেখার মতো কেউ নেই। শাফিন এর বাবার দেয়া টাকাটা এখনো আছে। এতে বেশ অনেক দিন যাবে। এরপর নাহয় একটা চাকরি খোজা যাবে৷ অন্যের উপর আর ডিপেন্ডেট থাকবে না। এখন নিজেকে ব্যাস্ত রাখা জরুরি।

এসব ভাবতে ভাবতেই রিফার বাসার সামনে চলে আসে৷ রিফা মাত্র ক্লাস টু তে পড়ে। ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে।দেখলেই আদর করে দিতে মন চায়৷ আর খুব পাকা পাকা কথাও বলে। সেদিন রিফাকে পড়াতে পড়াতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আগের দিন থাকলে তে শাফিন এসে এখান থেকে নিয়ে যেত। এখন দিন পাল্টেছে। একা একাই পথ চলতে হবে। একা একাই হাটা ধরে মাশরিনা। হঠাৎ ওর মনে হয় ওর পেছনে কেউ আসছে। এমনি সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর এ জায়গাটা শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় সন্ধ্যা হলেই মানুষ জন কম থাকে৷ তাই ভয় লাগতে শুরু করে মাশরিনার। মাশরিনা জোরে হাটা শুরু করে। ওর মনে হয় ওর পেছনে কেউ ওকে ফলো করে জোরে হাটতেছে৷

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে